কুখ্যাত ধর্ষকের পক্ষেও আদালতে কেউ দাঁড়ায়!
লিখেছেন লিখেছেন নীলগীরি ২৬ নভেম্বর, ২০১৫, ০৪:৩২:১০ বিকাল
পরিমলের মত কুখ্যাত ধর্ষকের পক্ষেও আদালতে কেউ দাঁড়ায়! তার নাম 'আইনজীবী'। তাও আবার বলে আমার 'মক্কেল' সঠিক বিচার পায়নি; উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ করবো।
সত্যি সেলুকাস--- !
পরিমল ভিকারুননিসার যে ছাত্রীকে ধর্ষণের জন্য দণ্ডিত হয়েছে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪ এ; এটা হয়ত চূড়ান্ত বিচারে টিকবে না। আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ--- পরিমলের সাজার রায়টা; তাকে বন্দী জীবন থেকে অবসরে পাঠানোর ছোট্ট একটা পদক্ষেপ।
চারদেয়ালের হাঁসফাঁস(!) থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসবে--- পরিমল।
বিচারক সালেহ উদ্দিন--- ত্রিশ পৃষ্ঠার রায়টা পড়ে শোনার সময় বলেছেন, মামলার তদন্তে নিয়োজিত দুই কর্মকর্তা শাহাদাত ও মাহবুব ' চরম গাফিলতি' দেখিয়েছেন। (সূত্র বিডি নিউজ)। এটা জানার পর আর বোঝার বাকি নেই মামুরা অত্যন্ত রোমান্টিক! তারা পরিমলকে 'নায়ক' হিসাবে দেখেছেন।
নিশ্চিতভাবেই জানি--- আমাদের সমাজ ব্যবস্থা--- বল প্রয়োগে নারীর শরীর উপভোগ, সন্ত্রাস এবং খুনের বিষয়গুলো প্রশ্রয় দেয়। যারা এ সবের সমঝোতা করেন-- তারা খুব নির্বিকারভাবেই বলেন-- 'যা গেছে, তা কি আর পাবি। মেনে নাও। কিছু টাকা পয়সা রাখো।' এ মধ্যস্থতা যারা করেন, বা যারা এটাকে মেনে নিতে যুক্তিখাড়া করেন, আমি তাদের অত্যন্ত নিচু মানের নরাধম। এ রকম বহু মানুষকে আমি চিনিও!
তাদের যুক্তি (!) সোসাইটিতে মিউচুয়াল সেক্স হচ্ছে--- অগুনতি হচ্ছে। সেটাও সমাজের চোখে অপরাধ। সে অপরাধ তো দমন করতে পারছে না কেউ। তাহলে কেউ বল প্রয়োগ করলে এমন কি হয়ে গেলো.... !!
কিন্তু সমাজ যেহেতু আপসের লীলার রাশ টানতে পারছে না; তাই বলে ধর্ষণের রাশ টানতে পারবে না--- তা হতে পারে না। এটা কি মেনে নেয়া যায়? যায় না। কারণ--- সমাজ যদি এ সব মানতে থাকে তাহলে অনিরাপদ সমাজে নারীর শিক্ষা, চাকুরী, সংসার , সমৃদ্ধি সব তুড়িতে আটকে যাবে!
আমাদের কেবল এ সব নিয়ে পড়াশোনা করলেই হবে না। প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করতে হবে।
২০০২ সালে ২৩ জুলাই শামসুন্নাহার হলে পুলিশ ঢোকা নিয়ে হাঙ্গামা হয়েছিল। সে সময় ক্যাম্পাস বন্ধ করেছিল সরকার। ক্যাম্পাসে আন্দোলনকালী, পুলিশ ও ক্যাম্পাস রিপোর্টাররাই ছিলেন। অলস সময়ে বহু পুলিশ অফিসার ও কনস্টেবলের সাথে আড্ডা দেয়ার সুযোগ হয়েছিল--- তাদের আচরণ-- মমতা--- উপরের নির্দেশ (!) থাকার পরেও নিজেদের সংযত রাখা আমাদের মুগ্ধ করেছে। --- মনে আছে, স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরের সামনে পুলিশ আন্দোলনকারীদের হটিয়ে দিতে আসছিলো--- তার আগেই আমাদের ডেকে বললো--- উনাদের কিছু সময় দূরে থাকতে বলেন--- বোঝেন তো , নির্দেশ আছে; তুলে দিতে হবে। কিন্তু 'এরা তো আমাদেরই ছেলে মেয়ে!'
বিস্ময়ে বয়স্ক সেই পুলিশ কর্মকর্তার দিকে তাকালাম--- মানবিকতা এখনো অবশিষ্ট আছে! এ রকম স্বস্তির সাথে অস্বস্তিও ছিল। কারণ ওই ঘটনার দু'দিন আগে পুলিশ আমাদের ক' সহকর্মীকে পিটিয়েছিল।
তবে এ কথা তো সত্যি সব-- পুলিশ এক নয়, তবে সব আইনজীবি সম্ভবত এক। টাকা হলে এদের আর কিছু লাগে না! আমি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে কথাটা বলছি; কারণ আইন ব্যবসা যারা করেন; তারা নিজের সন্তানের মত কন্যা ধর্ষকের পক্ষে ওকালতিও করতে হয়। করেন; কিন্তু মিডিয়ায় মুখ হা করে; নিজের পেশাটাকে কলঙ্কিত করবেন না; প্লিজ।
পরিমলরা সব স্কুলেই আছে; কলেজে আছে; বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ চোখে দেখে এসেছি। কেউ ধরা পড়ে; কেউ পড়ে না! এই আর কি! --- বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের কাছেই শুনেছি সেক্স মামুলি। বিনা পয়সার দুগ্ধ পেলে গাই পুষবো কেনো।
তবে কেউ জোর করলে আমরা এটা অত্যন্ত ঘৃণা ভরে প্রতিরোধ করবো--- এটাই তো হয়। হওয়ার কথা। কিন্তু সেটি কেন হলো না পরিমল জয়ধর কিম্বা পান্না মাস্টারের ক্ষেত্রে।
পরিমলের শাস্তি উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জে টিকবে না--- এটা পুরনো মামলাগুলোর অভিজ্ঞতায় বলা চলে। কেন বলছি--- কারণ ট্রাইবুনালের বিচারক কিন্তু বলেছেন--- মামলার তদন্তে চরম গাফলিতি করা হয়েছে। এ রকম গাফেল তদন্ত দিয়ে 'শাস্তি' নিশ্চিত করা সম্ভব ? মনে হয় না। তবুও আমরা হাল ছাড়ছি না।
মজার একটা কৌতুক আদালত প্রাঙ্গনে বিডি নিউজকে পরিমল নরাধম বলেছে, 'আমি ইনোসেন্ট'! হোয়াট এ জোকস!
ধর্ষিতার বাবার করা ২০১১ সালের মামলায় ভিকারুননিসার তৎকালীন অধ্যক্ষ হোসনে আরা এবং বসুন্ধরা শাখার প্রধান লুৎফর রহমানকেও আসামি করা হয়। ২০১৩ সালের ৭ মার্চ আদালতে অভিযোগ গঠনের সময় অধ্যক্ষ ও লুৎফর অব্যাহতি পায়।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ওই ছাত্রীকে প্রলোভন দেখিয়ে ২০১১ সালের ২৮ মে প্রথম ধর্ষণ করেন পরিমল। ওই সময় ছাত্রীর নগ্ন ভিডিও চিত্র মোবাইলে ধারণ করা হয়। এরপর ওই ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে ১৭ জুন আবারও ধর্ষণ করা হয়।
বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর ভিকারুননিসার ছাত্রীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তখন পরিমলকে বরখাস্ত করে।
এরপর ৫ জুলাই ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এই মামলা দায়ের করেন।
২৫ নভেম্বর ২০১৫ আদালত মামলাটির রায় দিয়েছে। যেখানে তাকে যাবজ্জীবন কারদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং সেটি অনাদায়ে আরো ৬ মাসের জেল দিয়েছে আদালত।
বিষয়: বিবিধ
১৩০১ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বাস করে কিছু উল্লুক
মন্তব্য করতে লগইন করুন