শপথের মর্যাদা-(২য় পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন মুক্তিযোদ্ধার ভাগনে ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১২:৩৮:২৩ রাত

৪। শপথের উদ্দেশ্যঃ

সুমহান আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে শপথের মাধ্যমে মানব জাতির গুরুত্বপূর্ণ কল্যাণজনক কাজে দায়িত্ব পালনে পরস্পরের উপর আস্থা অর্জন এবং বিশ্বাস সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে অঙ্গীকার ব্যক্ত করাই শপথের উদ্দেশ্য। তবে শপথের মাধ্যমে কাউকে ক্ষতিগ্রস্থ বা প্রতারণা করা যাবে না, এবং কোন কল্যাণজনক কাজে শপথ গ্রহণ থেকে দূরে থাকাও যাবে না। সৎ কাজে শপথ গ্রহণ করা আল্লাহর নির্দেশ। এ ব্যাপারে দয়াময় আল্লাহ বলছেনঃﯵ ﯶ ﯷ ﯸ ﯹﰂ ﰃ“সৎকাজ, আত্মসংযম এবং মানুষের মাঝে মীমাংসা করে দেয়া থেকে বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যে, তোমরা নিজেদের শপথের জন্যে আল্লাহর নামকে লক্ষ্যবস্তু বানিওনা; বস্তুতঃ আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।” (সূরা: বাকারা: ২২৪)। অর্থাৎ মানুষের মাঝে ইনসাফ তথা ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে শপথ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই সমস্ত দুনিয়ার প্রত্যেকটি দেশেই বিভিন্ন স্তরের দায়িত্বশীলগণ তাদের স্ব স্ব দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে শপথ গ্রহণ করে থাকেন।

৫। আমাদের দেশের শপথ গ্রহণকারী বিভিন্ন স্তরের দায়িত্বশীলঃ

আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন তথা মানব কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে আমাদের দেশের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রীয়ভাবে যে শপথ অনুষ্ঠানগুলো হয়ে থাকে, তা হলোঃ

** মানব কল্যাণ সাধনে রাষ্ট্র পরিচালনার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী এবং তাদের অবর্তমানে সংবিধান অনুযায়ী সাময়িকভাবে প্রশাসন কার্য পরিচালনার নিমিত্তে প্রধান উপদেষ্টার শপথ।

** উপর্যুক্ত কাজে সৎপরামর্শ প্রদান করার জন্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী এবং তাদের অবর্তমানে বিভিন্ন উপদেষ্টাগণের শপথ।

** একটি গণতান্ত্রীক দেশের জনকল্যাণার্থে জাতীয় সংসদকে সুশৃঙ্খল ও নিরোপেক্ষভাবে পরিচালনার জন্যে সংসদের স্পীকার ও ডেপুটি স্পীকারের শপথ।

** ভোটের পূর্বে জনগণের কাছে যে অঙ্গীকার ব্যক্ত করে ভোট প্রার্থীগণ ভোট ভিক্ষা চেয়ে থাকেন, মানব জাতির সেই ন্যায্য অধিকার প্রদানের নিশ্চয়তা দান ও তাদের সেবামূলক দায়িত্ব পালনের জন্যে সংসদ সদস্যগণের শপথ।

** মজলুম মানুষকে তার ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দেয়া তথা মানব সমাজে ন্যায় বিচার ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্যে প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্ন বিচারকগণের শপথ।

** গণতান্ত্রীক একটি দেশে জনগণের কল্যাণ সাধনের জন্যে তাদের যোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচনের নিমিত্তে দায়িত্ব পালনকারী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও তার সহযোগী অন্যান্ন নির্বাচন কমিশনারগণের শপথ।

** দেশের জনগণের সরকারী তহবীল সংরক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ ও নিরীক্ষণের জন্যে মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের শপথ।

** দেশ ও জাতির সেবা প্রদানের জন্যে সরকারের সর্বস্তরে যোগ্য ব্যক্তি নির্বাচনের নিমিত্তে ইনসাফপূর্ণ দায়িত্ব পালনের জন্যে সরকারী কর্ম কমিশনের সদস্যগণের শপথ।

** দেশ ও জাতির কল্যাণ সাধনের জন্যে সিটি করপরেশন বা পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারগণের শপথ এবং

** দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষা তথা দেশ ও জাতির আত্মমর্যাদা রক্ষার কাজে নিয়োজিত সৈনিকগণের শপথ, ইত্যাদি।

৬। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের তৃতীয় তফসিল [১৪৮ অনুচ্ছেদ] অনুযায়ী বিভিন্ন দায়িত্বশীলগণের শপথ ও ঘোষণা বা শপথ নামাঃ

দেশ ও জাতির কল্যাণার্থে আমাদের দেশে যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ দেশের সংবিধান অনুযায়ী বিভিন্ন দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে শপথ গ্রহণ করে থাকেন। তারা শপথের মধ্যে যে অঙ্গীকারগুলো ব্যক্ত করে থাকেন, আমরা সাধারণ মানুষ অনেকেই তা জানিনা। জানলেও অনেকের স্মরণ থাকে না আর এ জন্যেই আমরা অনেকেই আমাদের দায়িত্বশীলগণের মাধ্যমে মাঝে মধ্যে প্রতারিত হয়ে থাকি। তাই সকলের অবগতির জন্যে সাংবিধানিক শপথ নামাগুলো নিম্নে উপস্থাপন করা হলঃ

ক। রাষ্ট্রপতি'র শপথ [-প্রধান বিচারপতি কর্তৃক নিম্নলিখিত ফরমে শপথ (বা ঘোষণা)-পাঠ পরিচালিত হইবে]:

“আমি, (এ স্থানে নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম, পিতার নাম উল্লেখ পূর্বক বলতে হয়) সশ্রদ্ধচিত্তে শপথ (বা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা) করিতেছি যে,

আমি আইন-অনুযায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি-পদের কর্তব্য বিশ্বস্ততার সহিত পালন করিব;

আমি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করিব;

আমি সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তাবিধান করিব;

এবং আমি ভীতি বা অনুগ্রহ, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হইয়া সকলের প্রতি আইন-অনুযায়ী যথাবিহীত আচরণ করিব।”

খ। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে শপথ [-প্রধান বিচারপতি কর্তৃক নিম্নলিখিত ফরমে শপথ (বা ঘোষণা) পাঠ পরিচালিত হইবে:]

(১) পদের শপথ (বা ঘোষণা):

“আমি,(এ স্থানে নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম, পিতার নাম উল্লেখ পূর্বক বলতে হয়) সশ্রদ্ধচিত্তে শপথ (বা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা) করিতেছি যে,

আমি আইন-অনুযায়ী নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদের কর্তব্য বিশ্বস্ততার সহিত পালন করিব;

আমি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করিব;

আমি সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তাবিধান করিব;

এবং আমি ভীতি বা অনুগ্রহ, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হইয়া সকলের প্রতি আইন-অনুযায়ী যথাবিহীত আচরণ করিব।”

(২) গোপনতার শপথ (বা ঘোষণা):

“আমি, (এ স্থানে নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম, পিতার নাম উল্লেখ পূর্বক বলতে হয়) সশ্রদ্ধচিত্তে শপথ (বা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা) করিতেছি যে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টারূপে যে সকল বিষয় আমার বিবেচনার জন্য আনীত হইবে বা যে সকল বিষয় আমি অবগত হইব, তাহা প্রধান উপদেষ্টারূপে যথাযথভাবে আমার কর্তব্য পালনের প্রয়োজন ব্যতীত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোন ব্যক্তিকে জ্ঞাপন করিব না বা কোন ব্যক্তির নিকট প্রকাশ করিব না।” (চলবে..।)

বিষয়: সাহিত্য

১৩৩৪ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

340092
০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:৪৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : বিশ্বাসহীন এর কাছে শপথ কি গুরুত্ব রাখে!!
০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:২৩
281490
মুক্তিযোদ্ধার ভাগনে লিখেছেন : তারপরেও লিখতে হবে। কারণ কাল বিচার দিবসে তারা যেন বলতে না পারে যে, এ বিষয়ে আমরা দুনিয়াতে কিছুই জানতাম না। সাথে থাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
340146
০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫২
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : চমৎকার পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।
২১ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:৫৫
291047
মুক্তিযোদ্ধার ভাগনে লিখেছেন : জা-যাক আল্লাহ বি খাইর।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File