মাসিক আল-হুদা পত্রিকার মাধ্যমে আপনি যা জানতে চেয়েছেন-১ম পর্ব

লিখেছেন লিখেছেন মুক্তিযোদ্ধার ভাগনে ২২ আগস্ট, ২০১৩, ১০:০৭:১৪ রাত

মুহতরাম সম্পাদক সাহেব!

মাসিক আল-হুদা, কুয়েত

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ!


আপনার বহুল প্রচারিত মাসিক আল-হুদার মাধ্যমে নিম্নে উল্লেখিত বিষয়গুলোর উত্তর জানতে চাই:

আমার জানার বিষয় হলো: আমি দৈনন্দিন জীবন যাপনের কিছু সঠিক নিয়ম জানার জন্য আপনার সাথে আমার এই যোগাযোগ। টিভিতে দেখেছি এবং বিভিন্ন আলোচনাতে শুনেছি ‘বাংলাদেশে নামাযের যে নিয়ম শিখেছি তার মধ্যে অনেক ভুল আছে’। আমি এখন যে পদ্ধতিতে নামায আদায় করি তা আপনাকে নিম্ন লিখিতভাবে জানালাম। এর মধ্যে যদি কোন ভুল থাকে, তা চিহ্নিত করে দিলে আমি অনেক উপকৃত হবো।

আমার নামায পড়ার পদ্ধতি হলো:

(ক) মূখে উচ্চারণ করে নিয়ত করিনা, হাত বাঁধি বুকের উপর, এই জন্য অনেকেই আমাকে দেওবন্দী বলে। রুকুতে যাওয়ার আগে কাঁধ পর্যন্ত হাত ওঠাই। রুকু থেকে উঠে হাত উঠাই না। সিজদাতে গিয়ে ‘ছুবহানা রাব্বিয়াল- আ’লা’ বলার পর বাংলাতে অনেক কিছু আল্লাহর কাছে চাই, দুনিয়া এবং আখিরাতের জন্য। কারণ নয়া দিগন্ত টিভিতে ‘সরল পথ’ অনুষ্ঠানে শুনেছি, আল্লাহর কাছে কিছু চাইতে হলে চাইতে হবে নামাযের মাধ্যমে।

(খ) বিতরের নামাযে ২ রাকাত পরার পর না বসে তৃতীয় রাকাতে রুকু করে ২ হাত তুলে মোনাজাত করি, তারপর সিজদাতে যাই। তাবলীগ জামাআতের কিছু সদস্যকে দেখেছি মূখে উচ্চারণ করে নিয়ত করতে, তারা হাত বাঁধে নাভীর নিচে। এদের কাছে শিক্ষা নিলে কতখানি সঠিক হবে? আমি মনে করি মুসলমান ভাইদেরকে সঠিক নিয়মে নামায আদায়ের জন্য আপনার মাসিক আল-হুদা পত্রিকাতে বিদ’য়াত সম্পর্কে বেশি বেশি করে আলোকপাত করলে অনেকেই উপকৃত হতে পারবো ইনশা-আল্লাহ।

এখন আমি উপরের বর্ণনার আলোকে কিছু প্রশ্ন লিখলাম আশা করি কুর’আন ও হাদীসের আলোকে উত্তর জানাবেনঃ

১. কোন মাযহাব নয়, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কোন পদ্ধতিতে বেশি সালাত আদায় করতেন? সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি কোনটি?

২. বিতর নামাযের গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি কোনটি ?

৩. পুরুষ এবং মহিলা একই মসজিদে একই ইমামের পেছনে এক সাথে (আলদা আলাদা কক্ষে) নামায আদায় করতে পারবে কি?

৪. দেওবন্দী কি?

৫. তাবলীগ জামায়াতের ভাই’রা বলে থাকেন; তাবলীগ জামায়াতের সদস্য না হলে, চিল্লা না দিলে, গাছলা না দিলে জান্নাতী হওয়া যাবে না। এ কথা কতখানি সঠিক? উল্লেখ থাকে যে, তাদের কাছে কোন বিষয়ে জানতে চাইলে তারা সরাসরি প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলে: চিল্লা দিন, সব শিখতে পারবেন, এ কথা বলে মূল প্রশ্নের উত্তর এরিয়ে যায়।

৬. জানাজা নামায পড়ানোর নিয়ম (ইমামতি করার সময়) এবং প্রতিটা পয়েন্টে কি পড়তে হবে? অর্থাৎ নিয়ম ও দোয়াসমূহ কি?

৭. নামাযের যে কোন অবস্থায় বাংলা ভাষায় আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া যাবে কি?


সারওয়ার হোসেন, হুন্দাই, শুয়াইবা, কুয়েত।

প্রথমেই আপনার ভূমিকার জবাব:

ওয়াআলাইকুমুস সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ!

আমরা মাসিক আল-হুদার মাধ্যমে ইসলাম বিষয়ক বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রবন্ধ/নিবন্ধ প্রচারের পাশা-পাশি কুর’আন ও সহীহ হাদীসের আলোকে জীবন ঘনিষ্ঠ ইসলাম বিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকি।

আপনি প্রশ্নের ভূমিকায় বিভিন্ন আলোচনা ও টিভি চ্যানেলের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন: ‘বাংলাদেশে বেশির ভাগ মুসলিম যে পদ্ধতিতে নামায পড়ে থাকেন, সেগুলো ভুল আছে।’ আপনার এই অভিযোগের উত্তর হলো:

(ক) হ্যাঁ কোন কোন ক্ষেত্রে ভারত উপমহাদেশের দেশগুলিতে দুর্বল বা যঈফ হাদীসের উপর আমল করা হয়। যা মোটেও ঠিক নয়।

আর আপনি যে পদ্ধতিতে নামায পড়ছেন, এখানে আমাদের কথা হলো: নামাযে নিয়ত না করলে নামায শুদ্ধ হবে না। নিয়ত করা ফরজ। তবে সেটা মুখে উচ্চারণ করা জরুরী নয়। এটি অন্তরের সংকল্প। মনে মনেও যদি নিয়ত না থাকে, নামাযই হবে না। আর হাত বাঁধার বিষয়ে কথা হলো: (১) বুকের উপর, (২) বুক ও নাভীর মাঝামাঝি, কিংবা (৩) নাভীর নিচে হাত বাঁধার ব্যাপারে হাদীস পাওয়া যায়। তবে নাভীর নিচের তুলনায় বুকের উপর বা মাঝামাঝি হাত বাঁধাই উত্তম। আর বুকের উপর হাত বাঁধার কারণে তো দেওবন্দী বলার কথা নয়। যারা মাযহাব নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করেন, তারা হয় ‘সালাফী’ বা ‘আহলে হাদীস’ অথবা ‘লা-মাযহাবী’ বলে দাবী করেন এবং কিছুটা গর্ব অহংকারের সাথে তাদের মতের বিরুধীদেরকে তুচ্ছো তাচ্ছিলো করে থাকেন, যা মোটেও সঠিক না।

আর রুকুতে যাওয়ার সময় ‘র’ফে এদাইন’ বা ‘কাঁধ পর্যন্ত দু’হাত উঠানো’ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এটি রুকু থেকে উঠে সেজদায় যাওয়ার পূর্বেও উঠানোর কথা হাদীসে পাওয়া যায়। এখানে কথা হলো ‘র’ফে এদাইন’ করা বা না করা নামায শুদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে কোন ভূমিকা রাখে না। রাসূল (সা.) থেকে দুই ধরনের বর্ণনা প্রমাণিত রয়েছে। তাই ‘র’ফে এদাইন’ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা মোটেও উচিত নয়। যার ইচ্চে হয় ‘র’ফে এদাইন’ করবে, আর যার ইচ্চে হয় না সে ‘র’ফে এদাইন’করবে না, এতে নামাযের কোন ক্ষতি হবে না।

আর বান্দাহ যখন সেজদায় অবনত থাকে, তখনই সে আল্লাহর কাছে থাকে। আর সেই সময় দোয়া করলে আল্লাহ অবশ্যই কবুল করেন। আর দোয়া আপনি নিজস্ব ভাষায় (বাংলাতে) করতে পারবেন, এটি ফরয নামাযে না করে শুধু সুন্নত বা নফল নামাযে করলে ভালো হয়।

আপনি আরো বলেছেন: বিতরের নামাযে ২ রাকাত পড়ার পর না বসে তৃতীয় রাকাতে রুকু করে ২ হাত তুলে মোনাজাত করি, তারপর সিজদাতে যাই।

(খ) হ্যাঁ আপনার এই পদ্ধতি সঠিক। নবী কারীম (সাঃ) যে কয়টি পদ্ধতিতে বিতর নামায পড়তেন, তার মধ্যে এটি একটি পদ্ধতি।

আর যে কোন ব্যক্তি হতেই দ্বীনের বিষয় জানা যাবে, তবে তাদের কথাগুলো অবশ্যই কুর’আন ও সহীহ সুন্নাহর আলোকেই হতে হবে।

আর আমরা মাসিক আল-হুদার মাধ্যমে কুর’আন ও সহীহ সুন্নাহর আলোকে ইসলামের সঠিকরূপ পাঠকদের মাঝে আলোকপাত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ! এতে করে আমাদের অনেক পাঠক ভাই-বোন, উপকৃত হচ্ছেন।

আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর ক্রমানুসারে নিম্নরূপ:

১. রাসূল (সা.) কিভাবে নামায পড়েছেন?এ বিষয়টি বিষদ ব্যাখ্যা সাপেক্ষ, তাই এ সল্প পরিসরে এখানে আলোচনা করা সম্ভব হচ্ছে না। আপনি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে ‘রাসূলুল্লাহ’র (সা.) নামায’ অথবা ‘যেভাবে রাসূল (সা.) নামায পড়েছেন’ এ বই দু’টি সংগ্রহ করে পড়তে পারেন। (চলবে...)

বিষয়: সাহিত্য

৩০৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File