রোযা (সাওম) আত্মপরিশুদ্ধির এক উত্তম মাধ্যম-(শেষ পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন মুক্তিযোদ্ধার ভাগনে ০৯ জুলাই, ২০১৩, ০৬:৫৪:৪৬ সন্ধ্যা

উপসংহারঃ

দয়াময় প্রতিপালক সুমহান আল্লাহ রমযান মাসকে কুর’আন নাযিলের মাস হিসেবে রমযানকে গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে কুর’আন নাযিল হওয়াই এ মাসকে মহিমান্বিত করেছে। কাজেই মানুষের জীবন চলার পথে কল্যাণকর দিক নির্দেশনা হিসেবে কুর’আন নাযিল হয়েছে। সেই পবিত্র কুর’আনের বাণী বা দিক নির্দেশনা উপলব্ধি করতে নিজ জীবনে রমযানের শিক্ষাকে প্রতিফলিত করতে এ মাসটিতে রয়েছে পূণ্যময় সুযোগ। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলছেনঃ

“রমযান মাস, যার মধ্যে বিশ্বমানবের জন্য পথ প্রদর্শক এবং সু-পথের উজ্জ্বল নিদর্শন ও (হক ও বাতিলের) প্রভেদকারী কুর’আন অবর্তীণ করা হয়েছে, অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে সে যেন রোযা রাখে এবং যে ব্যক্তি অসুস্থ বা মুসাফির তার জন্য অপর কোন দিন হতে গণনা করবে; তোমাদের পক্ষে যা সহজ আল্লাহ তাই চান ও তোমাদের পক্ষে যা কষ্টকর তা তিনি চান না। এবং যেন তোমরা নির্ধারিত সংখ্যা পূরণ করে নিতে পারো এবং তোমাদেরকে যে সুপথ দেখিয়েছেন, তজ্জন্যে তোমরা আল্লাহর বড়ত্ব বর্ণনা করো এবং যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।” (সূরা বাকারাঃ ১৮৫)

তবে রোযার এ মাসে আত্মপোলব্ধি ও আত্মগঠনের মহাশিক্ষা ও অনুশীলন পবিত্র আল-কুর’আন থেকেই নিতে হবে। আর এর বাস্তবতা প্রয়োগ করতে হবে প্রিয় রাসূল হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবা কেরাম (রাঃ)-এর অনুকরণ ও অনুসরনের মাধ্যমে। কারন মানব জীবনের যাবতীয় লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং সংকট সম্ভবনার যাবতীয় দিক নির্দেশনা পবিত্র কুর’আনেই রয়েছে। আর পবিত্র আল-কুর’আনকে পূর্ণাঙ্গ অনুসরন না করে কিংবা এর মর্মার্থ বুঝতে চেষ্টা না করে নিজেকে মুসলমান ভাবা যথার্থ নয়। মানুষ যদি জীবনের যে কোন ক্ষেত্রে, সে ব্যক্তিগত, পারিবারীক, সামাজিক, রাষ্ট্রিয়, আন্তর্জাতিক, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক যে কোন বিষয়েই হউক, আল-কুর’আন তথা আল্লাহর বেঁধে দেয়া দিক নির্দেশনা না মেনে অন্য পথ ও মতের উপর চলে তবে সে ব্যক্তি যে বিপদগামী হলো তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

কুরআনী জীবন কুরআনী মূল্যবোধ গঠনে রমযানের প্রশিক্ষণ এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাধ্যমে আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ ও পুরস্কারের যে ঘোষণার কথা জানা যায়, কুর’আনের সত্যিকার অনুসারী হওয়ার মাধ্যমেই রয়েছে কুর’আন নাযিলের মাসে রমযান উদযাপনের সার্থকতা।

মানবমন্ডলীর সঠিক ও কল্যাণময় জীবন যাপনের জন্যে পবিত্র আল-কুর’আন প্রেরিত হয়েছে। আমরা এই পবিত্র রমযানের প্রশিক্ষণ গ্রহন করে যদি আমাদের বাস্তব জীবনের প্রতিটি স্তর বা প্রতিটি ক্ষেত্রকে আল-কুর’আনের আলোতে আলোকিত করতে পারি, তবেই হবে আমাদের এ পবিত্র মাসে সিয়াম সাধনা, সালাতুল লাইল, কিয়াম করা, কুর’আন তেলাওয়াত, ক্কদর উদযাপন, দান খয়রাতসহ ইত্যাদি যাবতীয় ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত ও নফল ইবাদত বন্দেগী করার সার্থকতা।

তাই আমি সমস্ত দুনিয়ার সকল মু’মিন নর-নারীসহ সমস্ত জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণী পেশার মানবমন্ডলীকে আমার সুমহান প্রতিপালক ও দয়াময় আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত এ মহান ও পবিত্র মাসের আত্মসংযমের প্রশিক্ষণ গ্রহন করার জন্য সবিনয় আহ্বান জানিয়ে কবি’র ভাষায় বলছিঃ-

সাম্য মৈত্রীর বারতা নিয়ে এসেছে আল-কুরআনের মাস,

সেই সাম্যের বাঁধনে গড়বো মোদের সোনার বাংলাদেশ।

হিংসা-বিদ্বেষগুলো দখল করেছে মোদের অনেক হৃদয় প্রাণ,

তাই জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র মোরা সকলেই আজ হয়রান।

হিংসাগুলো মোদের পুড়িয়ে মারছে, ধ্বংস করছে দেশ,

আসুন হিংসা ভুলে মৈত্রীর বাধনে গড়ি মোদের স্বদেশ।

এক আদমের সন্তান মোরা নেই কোন ভেদাভেদ,

ইবলিসের দল-বল মোদেরকে বিভক্ত করে পূরন করছে জেদ।

এ বিশ্ব জগতের মহাকল্যাণ সাধনে মানব জাতির আগমন,

মহাশান্তির বার্তা বাহকের দায়িত্বপ্রাপ্ত এখন সকল মুসলমান।

শান্তির পথে চলরে মানব সকলেই হও মুহসিন আর সালেহীন

রাসূল মুহাম্মদ (সা.)-এর সাথী হও সকলেই ফুরিয়ে যাচ্ছে দিন


আসুন আমরা আমাদের পরম সৃষ্টিকর্তা ও সুমহান পালনকর্তা অল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার নিকট আত্মসমর্পন করে পবিত্র এ রমযান মাসের সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার পবিত্র আল-কুর’আনের দিক নির্দেশনা মোতাবেক ব্যক্তি জীবন, পারিবারীক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন ও আন্তর্জাতিক জীবনে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক তথা প্রত্যেকটি বিভাগের প্রত্যেকটি স্তরকেই মানবতার মুক্তিদূত এবং সর্বযুগ ও সর্বকালের জন্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ পথ প্রদর্শক আল্লাহর প্রিয় রাসূল হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর নাযিল করা মহাগ্রন্থ আল-কুর’আনকেই বাস্তবায়ীত করে দুনিয়া ও আখেরাতে মহা কল্যাণ উপভোগের চেষ্টা করি।

দয়াময় পরম দয়ালু সুমহান প্রতিপালক তাঁর এ পবিত্র রোযার মাসে সমস্ত বিশ্বজগতের সকল মানবজাতিকে রমযানের সঠিক প্রশিক্ষণ গ্রহনের মাধ্যমে সকলকেই আত্মসংযোমশীল ও সৎকর্মশীল বান্দা-বান্দী হিসেবে কবুল ও মঞ্জুর করুন। সেই সাথে রোযার সঠিক শিক্ষা ও জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে প্রত্যেককেই পরস্পর পরস্পরের কল্যাণকামী ভাই-বোন হিসেবে গ্রহন করে সকলের মাধ্যমে আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বজগতের প্রতিটি বালুকণাতে পবিত্র আল-কুর’আনের আলোকবর্তীকার বিচ্চুরণ ঘটিয়ে সকলকেই এ দুনিয়া এবং আখেরাত উভয় জগতে মহা কল্যাণ উপভোগ করার তাওফীক দান করুন। আমিন॥

বিষয়: সাহিত্য

২৩২৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File