রোযা (সাওম) আত্মপরিশুদ্ধির এক উত্তম মাধ্যম-(৪র্থ পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন মুক্তিযোদ্ধার ভাগনে ০৮ জুলাই, ২০১৩, ০৪:০৩:২২ বিকাল
মানব জীবনে রোযার গুরত্ব ও প্রয়োজনীয়তাঃ
সমাজে বিত্তশালী মুসলমান ব্যক্তিকে যেমনিভাবে তার সঞ্চিত বা গচ্ছিত মালামালের যাকাত দিয়ে মালামালকে পবিত্র করতে হয়, তদ্রুপ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’য়ালা আমাদেরকে যে একটি দেহ কাঠামো দিয়েছেন এবং তাহাতে একটি রূহ’নামক ইঞ্জিন সঞ্চালিত করছেন, সেটিরও যাকাত রয়েছে। আর সেই যাকাতের নাম হচ্ছে রোযা’। দুনিয়াতে একটি যানবাহন চলতে চলতে এমন একটি পর্যায়ে উপনিত হয়, তখন সে যানবাহনের কল-কব্জাগুলোতে বিভিন্ন প্রকার মরিচা বা জং ধরে যানবাহনটি চলার উপযোগীতা হারিয়ে ফেলে। ফলে তাকে সচল করতে ওভারহোলিং করে নতুন ভাবে তাতে তৈল-মবিল-গ্রীজ ঢেলে ইঞ্জিনের শক্তি বৃদ্ধি করার প্রয়োজন হয়। তদ্রুপ মানুষের অন্তঃকরণে আল্লাহ পাক রূহ’ নামক যে ইঞ্জিনটি প্রক্ষিপ্ত করেছেন এটিও চলতে চলতে এক সময় দূর্বল হয়ে পরে। তখন দেখা যায় যে, মানুষ তার জন্য বেঁধে দেয়া বিধানের নিয়োম থেকে দূরে সরে গিয়ে সৎ পথ থেকে বিভ্রান্ত হয়ে সে মানুষটি কু-পথে চলতে শুরু করে। তখন মানব হৃৎপিন্ডে অনেক ময়লা আবর্জনা জমতে থাকে। সেই হৃৎপিন্ডের ময়লা আবর্জনা বা জমে থাকা মরিচাগুলোকে ধুয়ে মুছে পরিস্কার করে নতুন ভাবে সেখানে কিছু মাল মসলা ঢেলে পুনরায় মানব শরীরটাকে সৎ পথে পরিচালিত করতে মানব দেহের হৃৎপিন্ড নামক মানব ইঞ্জিনটিকে রোযার মাধ্যমে ওভারহোলিং করার জন্যেই মানব জীবনে রোযা প্রতি ১১ মাস পর পর মৃত্যু পর্যন্ত তাদের সামনে আসতেই থাকে।
একটি দেশের অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে সে দেশের সৈন্য বাহিনীকে যেমনভাবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মেয়াদী প্রশিক্ষণ গ্রহন করতে হয়। যাতে প্রয়োজনের সময় সঠিকভাবে সাফল্যতার বাস্তব প্রয়োগ করে অভ্যন্তরিন বা বহিঃশত্রুর আক্রমন থেকে দেশের মাঠি ও মানুষকে রক্ষা করতে পারে। সৈনিকদের শারীরিক ক্যাটাগরী অনুপাতে তাদেরকে প্রশিক্ষন প্রদান করা হয়। সামরিক যে কোন প্রশিক্ষনের পূর্বশর্ত হচ্ছে প্রশিক্ষানার্থীকে অবশ্যই শারীরিক এবং মানসিকভাবে শতভাগ উপযুক্ত হতে হবে। কেউ শারীরিকভাবে অসমর্থ হলে সেই সৈনিক কোন প্রশিক্ষনেই অংশ নিতে পারেন না। যখন সে সৈনিক শারীরিকভাবে উপযুক্ত হবে, তখন সে প্রশিক্ষনে অংশ নিয়ে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে। তা না হলে তার প্রমোশন বা পদোন্নতি হবে না।
তদ্রুপ মানব জাতির চিরশত্রু অভিশপ্ত শয়তান ও তার দলবলের আক্রমন প্রতিহত করতে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত এই প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের সুমহান প্রতিপালকও রোযার প্রশিক্ষনে অংশগ্রহনকারীদেরকে বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে বিভক্ত করে মানুষকে কষ্ট দুঃখ থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যেও ব্যবস্থা করেছেন। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলছেনঃ
“এটা নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্যে। কিন্তু তোমাদের মধ্যে যে কেউ পীড়িত বা প্রবাসী হয়, তার জন্যে অপর কোন দিবস হতে গণনা করবে; আর যারা ওতে অক্ষম তারা তৎপরিবর্তে একজন দরিদ্রকে খাদ্য দান করবে; অতএব যে ব্যক্তি সেচ্চায় সৎকর্ম করে তার জন্য কল্যাণ। এবং তোমরা যদি বুঝে থাকো তবে রোযা রাখাই তোমাদের জন্য কল্যাণ কর।” (সূরা বাকারাঃ ১৮৪)
সুমহান আল্লাহ ও দয়াময় প্রতিপালক পরম যত্নে ও গর্বভরে ফেরেশতাকূলের সামনে মহা চ্যালেঞ্জ নিয়ে মানবজাতিকে সৃষ্টি করে তাঁর অন্যান্য সকল সৃষ্টির উপর মর্যাদা দান করেছেন। আর নাম দিয়েছেন “আশরাফুল মাখলুকাত”। আর সেই সৃষ্টির সেরা মানবজাতি আজ এ দুনিয়াতে পরস্পর পরস্পরের দ্বারা প্রতারিত হয়ে মারাত্মক এক নির্যাতন ও নিষ্পেষনের শিকার হয়ে প্রত্যেকেই জাহান্নামে বসবাস করছি। আর এর কারনই বা কি? এর কারন অনেকগুলো; তবে তার মধ্যে মূল কারন হচ্ছে তিনটি। আর তা হচ্ছেঃ
* খাদ্যের চাহিদা।
** নারী সম্ভগ বা যৌন ক্ষুদার চাহিদা।
*** আরাম আয়েশে থাকার উচ্চাভিলাস।
খাদ্যের চাহিদাঃ
মানুষকে বেঁচে থাকার জন্যে খাদ্য খেতে হয়। আর তাই এই খাদ্য চাহিদা মিটানোর জন্য খাদ্য সংগ্রহে মানুষকে হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হয়। যেমন চাষাবাদ, ব্যবসা-বানিজ্য, চাকুরীসহ অর্থ উপার্জনের বিভিন্ন পেশা অবলম্বন করে দেশ-বিদেশে ঘুড়ে বেড়াতে হয়। মানুষের অর্থ উপার্জনের আকাঙ্খাগুলোর মধ্যে আহারের সংস্থানটিই সবচেয়ে মূখ্য। কিন্তু এই অর্থ উপার্জনের চাহিদা পূরন করতে মানুষকে আল্লাহর বেঁধে দেয়া সীমার মধ্যে থাকতে হবে। মানুষ যাতে আল্লাহর বেঁধে দেয়া সীমাতিক্রম না করে এ জন্যেই মহান আল্লাহ তা’য়ালা প্রত্যেকটি কাজকর্মের একটি করে সীমা নির্ধারন করে দিয়েছেন। মানুষের খাদ্য চাহিদা মিটানোর জন্য যে সীমা নির্ধারিত করে দেয়া আছে সেই ব্যাপারে সুমহান প্রতিপালক বলছেনঃ
“হে মানবমন্ডলী! পৃথিবীর মধ্যে যা বৈধ ও পবিত্র তা হতে ভক্ষন করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরন করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” (সূরা বাকারাঃ১৬৮)
সুমহান প্রতিপালক দয়াময় আল্লাহ মানবজাতির জন্যে আহারের ব্যাপারে যে সীমা বেঁধে দিয়েছেন সেগুলোকে তোয়াক্কা না করে মানবজাতি অন্য-বস্ত্রের চাহিদা মিটাতে গিয়ে হিতাহিত জ্ঞানশুন্য হয়ে বৈধ অবৈধ বাচ-বিচার না করেই অর্থের পাহাড় গড়ে তোলার নেশায় মরিয়া হয়ে উঠছে। আর এর পরিনাম ফল অসহায় হতদরিদ্র মানুষগুলিও যেমন ভোগ করে, অপর দিকে তিনি নিজেও তেমনি ভোগ করেন।
তাই ক্ষুদার জ্বালা সহ্য করে মানুষ যাতে জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে আল্লাহর বেঁধে দেয়া সীমাতিক্রম না করেন এবং সেই বেঁধে দেয়া সীমাতেই যাতে থাকতে অভ্যস্ত হয় তারই প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা হিসেবে আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য এক মাস রোযা পালনের কর্মসূচী প্রদান করে সুমহান প্রতিপালক বলছেনঃ
“হে বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ! তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ন্যায় তোমাদের উপরও রোযাকে অপরিহার্য্য কর্তব্যরূপে নির্ধারিত করা হলো। যেন তোমরা (প্রত্যেক লোভনীয় বস্তুগুলো হতে) সংযমশীল হতে পারো।” (সূরা বাকারাঃ ১৮৩) (চলবে...)
বিষয়: সাহিত্য
১৬৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন