রোযা (সাওম) আত্মপরিশুদ্বির এক উত্তম মাধ্যম-(১ম র্পব)

লিখেছেন লিখেছেন মুক্তিযোদ্ধার ভাগনে ২৭ জুন, ২০১৩, ০৮:৫৪:৪০ রাত

ভূমিকাঃ দয়াময় পরম দয়ালু সুমহান প্রতিপালক বলছেনঃ “হে বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ! তোমাদের পূর্ববর্তীগণের ন্যায় তোমাদের উপরও রোযা (সাওম)-কে অপরিহার্য কর্তব্যরূপে (ফরয হিসেবে) নির্ধারিত করা হলো; যেন তোমরা (এর মাধ্যমে) সংযমশীল (মুত্তাকী) হতে পারো।” (সূরা বাকারাঃ ১৮৩)

আর পবিত্র হাদীসের বর্ণনাঃ “হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের নিকট রোযার মাস সমুপস্থিত। উহা এক অত্যন্ত বরকতময় মাস। আল্লাহ তা’য়ালা এ মাসেই তোমাদের প্রতি রোযা ফরয করেছেন।”(নাসায়ী, মুসনাদে আহমদ ও বায়হাকী)

দেখতে দেখতে বছর ঘুরে আমাদের সামনেও সেই পবিত্র রোযার মাসটি এসে উপস্থিত হয়েছে। আর ক’দিন পরেই রোযা। প্রত্যক এগারো মাস অন্তর এ পবিত্র মাসটি দয়াময় প্রতিপালক মানব জাতির সামনে উপস্থিত করেন। আর এ মাসটি মানব জাতির সামনে এমনি এমনি উপস্থিত হয় না। এ মাসটি হচ্ছে সুমহান প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তাঁর মু’মিন বান্দা-বান্দীগণের জন্য একটি নির্দিষ্ট বার্ষিক প্রশিক্ষণ কাল। যে প্রশিক্ষণ কালটি আমাদের পূর্ববর্তী জাতির উপরও নির্দিষ্ট ছিলো, বর্তমানে আমাদের মধ্যেও চলছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা কার্যকরী থাকবে ইনশা-আল্লাহ।

আর তাই সুমান আল্লাহ বলছেনঃ “তুমি একনিষ্ঠ হয়ে নিজেকে দ্বীনে (ইসলামী বিধানের উপর) প্রতিষ্ঠিত কর। এবং আল্লাহর প্রকৃতির অনুসরন কর, যে প্রকৃতি অনুযায়ী তিনি মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে কোন পরিবর্তন নেই, এটা সরল দ্বীন; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। বিশুদ্ধ চিত্তে তাঁর অভিমূখী হয়ে তাঁকেই ভয় কর, এবং মুশরীকদের অন্তর্ভূক্ত হয়ো না।”(সূরা রূমঃ ৩০-৩১)

রোযা (সাওম)-এর সংজ্ঞাঃ ‘সাওম’ আরবী শব্দ। ইহার অর্থ বিরত থাকা বা ‘আত্মসংযম করা’। ইহা আরবী ‘সিয়াম’ শব্দের সমার্থক। ‘মাসানী’গ্রন্থে আছে ‘সাওম’ বা ‘সিয়াম’ উভয় শব্দই মাসদার। এর বাংলাদেশে প্রতি নাম ‘রোযা’। রোযা ফারসী শব্দ। এর অর্থ জ্বালিয়ে দেয়া বা নির্বাপিত করা। সাওম বা রোযা মানুষের জৈবিক চাহিদা ও রিপুর অসৎ কামনা বাসনা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নির্বাপিত করে। এ জন্যেই ইহাকে ‘রোযা’ বলা হয়।

* ইমাম বাগিব ইসপাহানী (রহঃ) বলেনঃ সাওম অর্থ কাজ থেকে বিরত থাকা। এ জন্যে সফর থেকে বিরত ঘোড়াকে সা-ইম বলা হয়।

* আল্লামা যুরকানী (রহঃ) বলেনঃ কথা-বার্তা ও অন্যান্য বিষয় থেকে বিরত থাকা সাওমের অর্থের অর্ন্তভূক্ত। বস্তুত ইসলামের মৌলিক ইবাদত সমূহের মধ্যে সাওম বা রোযা এক বিশেষ প্রকৃতির দৈহিক ও আত্মিক ইবাদত। বিভিন্ন ভাবে একে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। বক্তব্য প্রকাশের পদ্ধতিগত বিভিন্নতা বাদ দিলে এ সংজ্ঞাগুলো মূলতঃ অভিন্ন। যেমনঃ

* আল্লামা আবুল হাসান বলেনঃ নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে নির্ধারিত বিষয়বস্তু থেকে বিরত থাকার নাম সাওম বা রোযা।

* ইবনে মানযুর বলেনঃ ফজরের উদয়নলগ্ন থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়তের সাথে পানাহার থেকে বিরত থাকার নাম সাওম বা রোযা।

* আল-কামুসুল ফিকহ গ্রন্থে আছে, সাওম হল নির্দিষ্ট সময়ে সুনির্দিষ্ট কার্যাবলী থেকে বিরত থাকা।

* আল্লামা জুরযানী বলেনঃ সুবহি সাদিক থেকে মাগরীব পর্যন্ত খাদ্য গ্রহন ও যৌনাচার থেকে নিয়তের সাথে বিরত থাকার নাম সাওম বা রোযা।

মোট কথা: রমযান মাসে সাওমের বা রোযার নিয়তে সুবহি সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌনক্রিয়া থেকে বিরত থাকাই সাওম বা রোযা। অর্থাৎ মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধির উদ্দেশ্যে শরিয়ত নির্ধারিত যাবতীয় কাম, ক্রোধ, লোভ-লালসা হতে সুবহি সাদিক থেকে সূর্যান্ত পর্যন্ত নিয়তের সাথে বিরত থাকার নামই রোযা বা সাওম।

অন্যান্য আসমানী কিতাবে রমযানের সাক্ষ্যঃ

সুমহান প্রতিপালক দয়াময় আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দা-বান্দীকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করনার্থে পবিত্র মহাগ্রন্থ আল-কুর’আনেই যে শুধু রোযা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন তা নয়। ঐ রকম রোযা পালনের হুকুম পূর্ববর্তী আসমানী গ্রন্থ সমূহেও ছিলো। ‘এ ব্যাপারে হযরত ওমর ফারুক (রাঃ)-এর বর্ণনা, তিনি বলেন, একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রমযান মাসের মূল বৈশিষ্ট সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ রোযা সম্পর্কে পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব সমূহেও পূর্ণ তথ্য বিবৃত হয়েছে। যেমনঃ-

১। হযরত মূসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর অবর্তীণ তাওরাত কিতাবে রোযাকে “হাত্ব” শব্দ দ্বারা বোঝানো হয়েছে। আর ‘হাত্ব’ শব্দের অর্থ হচ্ছে পাপ ধ্বংস করা। অর্থাৎ রমযানের রোযা পালনের মাধ্যমে রোযাদারের পাপরাশীকে অবশ্যই ধ্বংস করে।

২। হযরত দাউদ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর অবতীর্ণ যবুর কিতাবে রোযাকে “ক্বোরবাত” বলা হয়েছে। ‘ক্বোরবাত’ শব্দের অর্থ নৈকট্য লাভ করা বা নিকটবর্তী হওয়া। অর্থাৎ রমযানের রোযা পালনের মাধ্যমে বান্দাগণ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে সক্ষম হয় এবং আল্লাহর পবিত্র মাগফিরাতের নিকটতম হয়।

৩। হযরত ঈ’সা আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর অবতীর্ণ পবিত্র ইঞ্জীল কিতাবে রোযাকে উল্লেখ করা হয়েছে “ত্বাব” হিসেবে। আর ‘ত্বাব’ শব্দের অর্থ হচ্ছে পবিত্র হওয়া বা নির্মল হওয়া বা কুলুষমূক্ত হওয়া। রমযানের রোযার মাধ্যমে বান্দাগণ পবিত্র হয়ে যায়। অন্তঃকরণের যাবতীয় কু-প্ররোচনা ও কু-মন্ত্রনা হতে রোযার মাধ্যমে নির্মল হয়ে জীবন পরিচালনার পথে কুলুষমূক্ত পথ অতিক্রম করা সম্ভব হয়।

৪। হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর অবতীর্ণ পবিত্র মহাগ্রন্থ আল-কুর’আনে একে “রমযান” বলা হয়েছে। আর ‘রমযান’ শব্দটির মূল ধাতু “রমজ” হতে উদ্ভূত হয়েছে। রমজ ধাতুর অর্থ হচ্ছে কোন বস্তুকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে সোজা ও ঠিক করা অথবা হেমন্ত ঋতুতে বৃষ্টিপাত হওয়া। অর্থাৎ রোযা বান্দার গুনাহ বা পাপরাশীকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভষ্ম করে দেয়। (চলবে.....)

বিষয়: সাহিত্য

২০৭২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File