তাকদীর বা ভাগ্যলিপির উপর ঈমান-শেষ পর্ব
লিখেছেন লিখেছেন মুক্তিযোদ্ধার ভাগনে ২৭ মে, ২০১৩, ১২:৫৪:০৭ দুপুর
এই ব্যাপারে দু’টি হাদীসের উদ্ধৃতি পেশ করলেই বিষয়টি বুঝতে সহজ হবে, ইন্শা-আল্লাহ।
“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: এক মহিলা একটি বিড়ালের কারনে দোযখে গিয়েছে। সে বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছিল। না তাকে কোন আহার দিয়েছে, না তাকে ছেড়ে দিয়েছে, যাতে সে জমিনের পোকামাকড় খেতে পারত।” (সহীহ আল বুখারী)।
উপরে বর্ণিত হাদিসের মাধ্যমে প্রতিয়মান হচ্ছে যে, উল্লেখিত মহিলাটি অতীতে যাই কিছু আমল করে থাকুক না কেন,আল্লাহ তার ভাগ্যলিপি বা তাক্দীরে জাহান্নামী লিখে রেখেছেন তাই তার মৃত্যুর পূর্বের আমলটি ছিলো জাহান্নামীদের মত তাই তার স্থান হয়েছে জাহান্নামে।
অপর আর একটি হাদীসের বর্ননাঃ
“হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ এক ব্যভিচারিনীকে কেবল এই কারনে ক্ষমা করে দেয়া হয় যে, সে যখন একটি কুকুরের নিকট দিয়ে যাচ্ছিল, তখন সে কুকুরটি একটি কুপের পাশে বসে হাপাচ্ছিল। পানির পিপাসা তাকে আশু মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিল। সেই পতিতা নারী আপন মোজা খুলে ওড়নার সাথে বাঁধল, তারপর (তা কুপে ছেড়ে দিয়ে) পানি তুলে আনল (এবং মোজা চিপিয়ে কুকুরটিকে পানি পান করাল)। এই কারণে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হলো।” (সহীহ আল বুখারী)।
উপর্যুক্ত হাদীসগুলো থেকে তাক্দীর বিষয়ে মোটামুটি একটা ধারণা পাওয়া গেল বটে, কিন্তু অনেকের মনে একট প্রশ্ন উদয় হতে পারে, তাকদীরে যা লিখা আছে তা যদি সকলের পার্থিব ও পারলৌকিক জীবনে পুঙ্খানু-পূঙ্খরূপে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে নেকামল করার প্রয়োজন কিসের? কারন ভাগ্যে যা লিখা আছে তা তো হবেই হবে। এমন প্রশ্ন অনেকের কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হতে পারে। কিন্তু আমরা মানবজাতি কেউ সেটা বলতে পারবোনা যে, কে জান্নাতে যাবে, আর কে জাহান্নামে যাবে? তবে আমরা সকলেই জান্নাতবাসী হতে চাই এ কথাটি যেমন সঠিক, তেমনি সবাই আমরা জাহান্নামের আগুন থেকেও বেঁচে থাকতে চাই একথাটিও সঠিক।
আর যেহেতু আমরা মানবজাতি কেউ সঠিকভাবে নিজেদের তাকদীর বা ভাগ্যলিপি সম্পর্কে অবগত নই। তাই আমাদেরকে যদি জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচিয়ে জান্নাতের বাসিন্দা করতে চাই, তাহলে অবশ্যই নিজেদেরকে নেকামলের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। তাই বলছি তাকদীর বা ভাগ্যলিপির পুরো বিষয়টি মানব জাতির জন্যে একটি মহাপরীক্ষা। একদিকে তাকদীরকে বিশ্বাস করা ফরয করা হয়েছে, অন্যদিকে তাকদীরের ওপর নির্ভর করে হাত-পা শুটিয়ে বসে থাকলে সফলতা আসবেনা সে কথাও বলে দেয়া হয়েছে। আর এই পরীক্ষামূলক বিষয়টির সঠিক সমাধান আমরা তখনি পাবো, যখন আপনি আমি পবিত্র আল-কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত আয়াত সমূহ নিরপেক্ষ মন মগজ নিয়ে সহজ সরলভাবে নিজের মাতৃভাষায় গভীরভাবে মনযোগ সহকারে বূঝে তা হৃদয়ঙ্গম করার চেষ্টা করবো।
তাই সকল পাঠক পাঠিকার প্রতি সবিনয় আহবান জানিয়ে বলছি, আসুন ! আমরা আমাদের মন-মগজ নিয়ে নিজেদের মাতৃভাষায় আমাদের সুমহান প্রতিপালকের পক্ষ থেকে নাযিল করা পরিপূর্ণ জীবনবিধান পবিত্র আল-কুরআন ও আল্লাহর প্রীয় রাসুল মানবতার পরম বন্ধু সর্বকাল ও সর্বযুগের সকল মানব জাতির জন্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ পথ প্রদর্শক হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইসি ওয়াসাল্লামের পবিত্র হাদীসের আয়াত সমূহকে অধ্যয়নের মাধ্যমে বিষয়গুলো বুঝার চেষ্টা করি এবং সেই অনুযায়ী নিজের ব্যক্তি>পরিবার>সমাজের তথা দেশ ও জাতির অকল্যাণ সমূহ বিদুরিত করে আল্লাহ প্রদত্ত মহাকল্যাণ লাভের জন্যে প্রচেষ্ঠা করি।
উপসংহারঃ পরিশেষে একথাই বলছি যে, প্রত্যেক মু’মিন ব্যক্তির উচিত, তাকদীরের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রেখে সার্বক্ষনিকভাবে সৎকর্মে নিয়োজিত থাকা। আর তাক্দীরের প্রতি বিশ্বাসের প্রধান শর্ত হলো তদবীর সহকারে তাকদীর বিশ্বাস করা। কারণ আল্লাহ বলছেনঃ “মানুষ তাই পায় যা সে (চষ্টা) করে’’ (সুরাঃ নাজম-৩৯)।
তাক্দীর এবং তদবীর সম্পর্কে সামান্য একটি উদাহরণ দিয়ে আমার এ লিখাটি শেষ করবো ইন্শা-আল্লাহ। একদিন একটি যুবক ছেলে কোন এক দরবেশের নিকট গিয়ে আবেদন জানিয়ে বললো যে, হুজুর, আপনি দোয়া করুন আল্লাহ যেন আমাকে একটি ছেলে সন্তান দান করেন। দরবেশ সাহেব দোয়া করলেন। ঐ যুবকটির জন্য একটি ছেলে সন্তান চেয়ে আল্লাহর নিকট দোয়া চাইলেন। উল্লেখ্য যে, দরবেশ ছিলেন আল্লাহর একজন প্রিয় বান্দাহ। তাই তার দোয়া আল্লাহ তা’য়ালা কবুল করতেন। অনেক মানুষই তার কাছে দোয়া চেয়ে উপকৃত হয়েছেন। কিছুদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করে ঐ যুবকটি দেখলো যে, দরবেশের দোয়ায় তার কোন সন্তান হচ্ছে না, তারপর পূনরায় সেই যুবক দরবেশের নিকট গিয়ে বললেনঃ আপনার দোয়ায় তো কোন ফল পাচ্ছিনা। আল্লাহ পাকতো আমাকে কোন সন্তান দিচ্ছেন না। তখন দরবেশ সাহেবও একটু চিন্তিত হলেন। কারণ আল্লাহর নিকট তিনি যখন যা চেয়েছেন তাই পেয়েছেন, কিন্তু এই যুবকের কি হলো? তারপর দরবেশ সাহেব কিছুক্ষন চিন্তা করে যুবককে জিজ্ঞাসা করলেন? ’তুমি কি কোন মেয়েকে বিবাহ করেছ? যুবকটি জবাব দিলোঃ না, হুজুর! আমি এখনও কোন মেয়েকে বিবাহ করি নাই। দরবেশ সাহেব অত্যন্ত রাগান্নিত হয়ে যুবককে ধমক দিয়ে বললেনঃ বিবাহ না করলে ছেলে সন্তান পাবে কোথা থেকে? বিবাহ করলেই আল্লাহ তোমাকে সন্তান দিবেন। বিশ্বাসের সাথে আমলেরও প্রয়োজন আছে। অর্থাৎ তাকদীরের সাথেই তদবীরের শর্তই জুড়ে দেয়া হয়েছে। আর তাই এই সৃষ্টি জগতের মহান স্রোষ্টা সুমহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেনঃ “মহাকালের শপথ, নিশ্চয়ই (সমস্ত) মানব জাতি ক্ষতির মধ্যেই রয়েছে। কিন্তু তারা ব্যতীত, যারা (ইসলামের বিধি-বিধান সমূহের প্রতি) ঈমান আনে ও (সাথে সাথেই) সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয়, ধর্য ধারণে পরস্পরকে উদ্ভুদ্ধ করে থাকে।” (সুরাঃ আল-আসর)।
দয়াময় পরম দয়ালু সুমহান প্রতিপালক আমাদের সমস্ত মানব জাতিকে তাক্দীরের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রেখে সকলকে সৎকর্ম করে দুনিয়া ও আখেরাতে মহাকল্যাণময় জীবন অতিবাহিত করার তাওফীক দান করুন। আমিন॥
বিষয়: সাহিত্য
২৫৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন