এ আদালতে যত অভিযোগ আনা হয়েছে হাজার কোটি মাইলের মধ্যে আমার অবস্থান ছিল না। উত্থাপএকটি বর্ণনাও সত্য নয়
লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ১৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১০:৫১:৩০ রাত
রায় ঘোষণার আগে ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের উদ্দেশ্যে আল্লামা সাঈদী হাফিজাহুল্লাহ যা বলেছিলেন -
মাননীয় আদালত !
আমি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এ বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলার আপামর জনগণের অতি পরিচিত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। আল্লাহ সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দীনের রচিত দেলোয়ার শিকদার বর্তমান সাঈদী বা দেলোয়ার শিকদার ওরফে দেলু ওরফে দেইল্যা রাজাকার আমি নই।
গণতন্ত্রের লেবাসধারী বর্তমান আওয়ামী সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত যুদ্ধাপরাধের দায় চাপানোর মিশন নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনকে আমার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। মিথ্যাচার প্রতিষ্ঠায় স্বনাম খ্যাত হেলাল উদ্দীন আমার বিরুদ্ধে ২০টি জঘন্য মিথ্যা অভিযোগ এনে সরকারি ও দলীয় আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে গিয়ে আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য, আমার নাম বিকৃত করেছে।
আমার পারিবারিক পরিচয়, শিক্ষাগত যোগ্যতা, ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে লুটেরা, খুনি, ধর্ষক, নারী সরবরাহকারী, অগ্নিসংযোগকারী পাকবাহিনীর দোসর, দুর্ধর্ষ রাজাকার, এক কথায় এইতদন্ত কর্মকর্তা মনের মাধুরী মিশিয়ে ৪ হাজার পৃষ্ঠার নাটক রচনা করেছেন আমার বিরুদ্ধে।
কোনো মুসলমানের কলিজায় সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর বিন্দু পরিমাণ বিশ্বাস থাকলে, মৃত্যুর ভয় থাকলে, পরকালে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার ভয় থাকলে, জাহান্নামের কঠিন শাস্তির ভয় থাকলে অন্য কোনো মুসলমানের বিরুদ্ধে শুধু আদর্শিক ও রাজনৈতিক শত্রুতার কারণে এতো জঘন্য মিথ্যাচার করা আদৌ সম্ভব হতো না।
মাননীয় আদালত !
আজকের এই বিচার প্রক্রিয়া নিঃসন্দেহে দুটি পর্বে শেষ হবে। একটি এই জাগতিক আদালতে আর অপরটি আখেরাতের আদালতে। আজ আমি এই আদালতের অসহায় এক নির্দোষ আসামি, আর আপনারা বিচারক। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পূরণে, ক্ষমতার জোরে আমার প্রতি যদি জুলুম করা হয়, তাহলে আজকের দুর্দান্ত প্রতাপশালী ব্যক্তিবর্গ, যারা একজন নির্দোষ ব্যক্তিকে আদর্শিক কারণে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে আমার প্রতি জুলুমের প্রয়াস পাচ্ছেন, তারা দ্বিতীয় পর্বের বিচারের দিন, কিয়ামতের দিন তারা নিঃসন্দেহে আসামি হবে। সেদিন আমি হবো বাদী আর সর্বশক্তিমান, রাজাধিরাজ, সম্রাটের সম্রাট, আকাশ ও জমিনের সার্বভৌমত্বের একচ্ছত্রঅধিপতি, সকল বিচারের মহাবিচারপতি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন, তিনিই হবেন সেদিনের আমার দায়ের করা মামলার বিচার প্রক্রিয়ার বিচারক।
সুরা আত ত্বীনের ৮নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা কি সকল বিচারকের তুলনায় শ্রেষ্ঠ বিচারক নন?’
সূরা দোখানের ১৬নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “একদিন আমি এদেরকে অবশ্যই কঠোরভাবে পাকড়াও করব এবং নিশ্চয়ই প্রতিশোধ নেবই।”
মাননীয় আদালত !
যাঁর হাতের মুঠোয় আমাদের সকলের জীবন, সেই মহাশক্তিধর আল্লাহ তায়ালার নামে আপনাদের এই আদালতে বসে শপথ করছি, তাঁর পবিত্র কোরআন স্পর্শ করে কসম করে বলছি - ‘আমার নামে আপনাদের এ আদালতে যতগুলো অভিযোগ আনা হয়েছে তার হাজার কোটি মাইলের মধ্যে আমার অবস্থান ছিল না। উত্থাপিত অভিযোগের একটি বর্ণনাও সত্য নয়।
আল্লাহর কসম !
সব ঘটনা বা দুর্ঘটনার সঙ্গে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার নাম যোগ করা হয়েছে। এ সকল অভিযোগের সাথে আমার দূরতম সম্পর্ক নেই।
মাননীয় আদালত !
আমি আশা করি সকল প্রকার রাগ-অনুরাগ ও সকল প্রকারের চাপ ও আদেশ-নির্দেশের ঊর্ধ্বে উঠে সত্য ও মিথ্যা সার্বিকভাবে বিবেচনায় নিয়ে সকল প্রকার প্রভাব মুক্ত হয়ে শুধুমাত্র মহান আল্লাহকে ভয় করে আমার প্রতি জুলুম না করে ন্যায়বিচার করবেন। মহান আল্লাহ আপনাদের সে তওফিক দান করুন।
আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পূরণে যিনি যতটা ষড়যন্ত্র করে, জঘন্য থেকে জঘন্যতর মিথ্যা মামলা দিয়ে, মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে, মিথ্যা সাক্ষীর প্রশিক্ষণ দিয়ে আমাকে মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছেন, দেশ-বিদেশে অসংখ্য অগণিত মানুষের কাছে কোরআনের বাণী পৌঁছানোর ক্ষেত্রে আমাকে বঞ্চিত করেছেন, আমার প্রিয়জনদের কাঁদাচ্ছেন, কলঙ্কের তিলক পরিয়ে আমাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন, আমি দোয়া করি আল্লাহ তাদের হেদায়াত করুন।
আর হেদায়াত যদি তাদের নসিবে না থাকে তাহলে আমার এবং আমার প্রিয়জন, আমার কলিজার টুকরা সন্তান, বিশ্বব্যাপী আমার ভক্ত- অনুরক্তদের যত চোখের পানি ফেলানো হয়েছে তাদের সকলের প্রতিফোটা চোখের পানি অভিশাপের বহ্নিশিখা হয়ে আমার থেকে শতগুণ যন্ত্রণা ভোগের আগে, কষ্ট ভোগের আগে আল্লাহ তায়ালা যেন তাদের মৃত্যু না দেন।
মিথ্যাবাদী ও জালিমদের উপর আল্লাহর অভিশাপ অযুত ধারায় বর্ষিত হোক। আর জাহান্নাম যেন হয় এদের চিরস্থায়ী ঠিকানা।
Masood Sayedee
বিষয়: বিবিধ
১২৮০ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
হে আল্লাহ আমাদের কে ইসলাম বুঝে মুসলমান হওয়ার তৌফিক দিন! আমিন
শুক্রবার ৯ জিলহজ্ব ১০ হিজরি সনে হজ্জের সময় আরাফা ময়দানে দুপুরের
পর হযরত মুহাম্মদ (স) লক্ষাধিক সাহাবীর সমাবেশে এ ঐতিহাসিক ভাষন দেন। হামদ ও সানার পর তিনি বলেন:-
• হে মানুষ!
তোমরা আমার কথা শোনো.এর পর এই
স্থানে তোমাদের সাথে আর একত্রিত
হতে পারবো কিনা জানিনা!
••হে মানুষ
আল্লাহ বলেন.হে মানবজাতি
তোমাদেরকে আমি এক পুরুষ ও এক
নারী থেকে সৃষ্টি করেছি,এবং
তোমাদেরকে সমাজ ও গোত্রে ভাগ করে
দিয়েছি. যেন তোমরা পরস্পরের পরিচয়
জানতে পার,অতএব শুনে রাখো মানুষে
মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই ।আরবের
ওপর কোনো অনারবের_অনারবের উপর
কোনো আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই ।
তেমনি সাদার উপর কালোর বা কালোর
উপর সাদার কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই ।
তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই আল্লাহর
কাছে সবচেয়ে বেশী সম্মান ও মর্যাদার
অধিকারী,যে আল্লাহকে ভালবাসে।
•••হে মানুষ !
শুনে রাখো অন্ধকার যুগের সকল বিষয়
ও প্রথা আজ থেকে বিলুপ্ত
হলো.জাহিলি যুগের রক্তের দাবিও রহিত
করা হলো।
••••হে মানুষ !
শুনে রাখো,অপরাধের দায়িত্ব কেবল
অপরাধীর ওপরই বর্তায় । পিতা তার
পুত্রের জন্যে আর পুত্র তার পিতার
অপরাধের জন্য দায়ী নয়।
•••••হে মানুষ!
তোমাদের রক্ত তোমাদের
সম্মান,তোমাদের সম্পদ পরস্পরের
জন্য চিরস্থায়ী ভাবে হারাম অর্থাৎ
পবিত্র ও নিরাপদ করা হলো যেমন
আজকের এই মাস এই শহর সকলের
জন্য পবিত্র ও নিরাপদ।
••••••হে মানুষ!
তোমরা ঈর্ষা ও হিংসা-বিদ্বেষ থেকে
দুরে থাকবে ঈর্ষা ও হিংসা মানুষের
সকল সৎগুনকে ধ্বংস করে।
•••••••হে মানুষ!
নারীদের সম্পর্কে আমি তোমাদের
সতর্ক করে দিচ্ছি,তাদের সাথে নিষ্ঠুর
আচরণ করোনা, তাদের উপর যেমন
তোমাদের অধিকার রয়েছে তেমনি
তোমাদের উপর তাদেরও অধিকার
রয়েছে সুতরাং তাদের কল্যাণের দিকে
সবসময় খেয়াল রেখো।
••••••••হে মানুষ!
অধীনস্থদের সম্পর্কে সতর্ক
হও.তোমরা নিজেরা যা খাবে তাদেরও তা
খাওয়াবে.নিজেরা যা পরবে তাদেরও তা
পরাবে,শ্রমিকের শরীরের ঘাম শুকানোর
আগেই তার মজুরি পরিশোধ করবে ।
•••••••••হে মানুষ!
বিশ্বাসী সেই ব্যক্তি যার হাত ও মুখ
থেকে অন্যের সম্মান,ধন ও প্রাণ
নিরাপদ, সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে
অন্যের জন্যেও তাই পছন্দ করে ।
••••••••••হে মানুষ!
বিশ্বাসীরা পরস্পরের ভাই,সাবধান !
তোমরা একজন আরেকজনকে হত্যা
করার মতো কুফরি কাজে লিপ্ত হয়ো
না।
•••••••••••হে মানুষ!
শুনে রাখো আজ হতে বংশগত
শ্রেষ্ঠত্ব বা কৌলিনপ্রথা বিলুপ্ত
করা হলো কুলীন বা শ্রেষ্ঠ সেই যে
বিশ্বাসী ও মানুষের উপকার করে।
••••••••••••হে মানুষ!
ঋণ অবশ্যই ফেরত দিতে
হবে.বিশ্বস্ততার সাথে প্রত্যেকের
আমানত রক্ষা করতে হবে,কারো
সম্পত্তি সে যদি স্বেচ্ছায় না দেয়,তবে
তা অপর কারো জন্য হালাল নয় ।
তোমরা কেউ দুর্বলের উপর অবিচার
করো না।
•••••••••••••হে মানুষ!
জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের
চেয়েও মূল্যবান.জ্ঞান অর্জন
প্রত্যেক নর-নারীর জন্য ফরয-কারন
জ্ঞান মানুষকে সঠিক পথ দেখায় ।
জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজনে
তোমরা চীনে যাও।
••••••••••••••হে মানুষ!
তোমরা তোমাদের প্রভুর ইবাদত
করবে,নামায কায়েম করবে.যাকাত
আদায় করবে,রোজা রাখবে হজ্ব করবে
আর সংঘবদ্ধ ভাবে নেতাকে অনুসরণ
করবে তাহলে তোমরা জান্নাতে দাখিল
হতে পারবে।
•••••••••••••••হে মানুষ!
শুনে রাখো একজন কুশ্রী-কদাকার
ব্যক্তিও যদি তোমাদের নেতা মনোনীত
হয়.যতদিনপর্যন্ত সে আল্লাহর
কিতাব অনুসারে তোমাদের পরিচালিত
করবে,ততদিন পর্যন্ত তার আনুগত্য
করা তোমাদের অবশ্য কর্তব্য।
••••••••••••••••হে
মানুষ !
শুনে রাখো আমার পর আর কোনো নবী
নেই । হে মানুষ আমি তোমাদের কাছে
দুটি আলোকবর্তিকা রেখে
যাচ্ছি.যতদিন তোমরা এ দুটো অনুসরণ
করবে ততদিন তোমরা সত্য পথে
থাকবে এর একটি হলো-আল্লাহর
কিতাব.দ্বিতীয়টি হলো-আমার জীবন-
দৃষ্টান্ত।
•••••••••••••••••হে
মানুষ!
তোমরা কখনোই ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি
করো না- কারন অতীতে বহু জাতি ধর্ম
নিয়ে বাড়াবাড়ির কারনে ধ্বংস হয়ে
গেছে।
••••••••••••••••••হে
মানুষ!
প্রত্যেককেই শেষ বিচারের দিনে সকল
কাজের হিসেব দিতে হবে । অতএব,
সাবধান হও।
•••••••••••••••••••হে
মানুষ!
তোমরা যারা এখানে হাজির
আছো,আমার এই বাণীকে সবার কাছে
পৌঁছে দিও
{এরপর তিনি জনতার উদ্দেশ্যে
জিজ্ঞেস করলেন,হে মানুষ আমি কি
তোমাদের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছে
দিয়েছি,সকলে সাক্ষ্য দিলো :
হ্যাঁ এরপর নবীজী (স বললেন হে
আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাকো! আমি
আমার সকল দায়িত্ব পালন করেছি }
আল্লাহ সবাইকে আমল করার তৌফিক দিন।আমিন।
রেহনুমা বিনত আনিসের ওয়াল থেকে...
ভাবছিলাম রাসূল (সা)এর সুন্নাহ অনুযায়ী ছেলেমেয়েকে অল্প বয়সে বিয়ে দেব। সংসার করার জন্য নয়, প্রেম করার জন্য। ওরা আমাদের সাথে থাকবে, লেখাপড়া করবে, পড়ায় একে অপরকে সহযোগিতা করবে, পার্কে যাবে, বাদাম খাবে, হাত ধরে হাঁটবে – সচরাচর প্রেম করার সময় মানুষ যা করে – কিন্তু বৈধ উপায়ে। তারপর যখন লেখাপড়া শেষ হবে তখন ওরা চাইলে পুরোদস্তুর সংসার করার জন্য নীড় ছেড়ে উড়াল দিতে পারে।
কিন্তু কথাটা যত জনের সাথেই আলাপ করেছি, অধিকাংশেরই প্রতিক্রিয়া দেখে অবাক হয়েছি যেন এ’ এক অভিনব ভাবনা! অনেকেই হাসে, কেউ কেউ লেখাপড়ার প্রয়োজনীতার প্রতি লক্ষ্য রাখার উপদেশ দেয়, কেউ কেউ বাস্তবতার প্রতি নির্দেশ করে বলে, ‘বিয়ে করলে খাওয়াবে কি?’ সব মিলিয়ে কেন যেন মনে হয় সন্তানের চরিত্রের চেয়ে সন্তানের লেখাপড়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তার আখিরাতের চেয়ে তার দুনিয়া অনেক বেশি জরুরী।
আমি বারো বছর শিক্ষকতা করেছি, স্কুল এবং ইউনিভার্সিটি মিলিয়ে; চার বছর ছাত্রছাত্রী পড়িয়েছি ক্যানাডায়, বাসায় এবং প্রতিষ্ঠানে। আজীবন পড়াশোনা করেছি কো-এজুকেশনে, ইন্টারের দুই বছর ব্যাতীত। আমি হলফ করে বলতে পারি - দেশে হোক বা বিদেশে, কো-এজুকেশন হোক কিংবা সমলিঙ্গ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, হোক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিংবা এর বাইরে - বজ্রকঠিন দৃঢ়তা ব্যাতীত সেই সময়টা নিজেকে ধরে রাখা প্রায় অসম্ভব যখন যৌবনের সমস্ত হরমোন আপনাকে আহ্বান করছে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি। অসংখ্য ছেলেমেয়ে দেখেছি যাদের লেখাপড়া হয়েছে, কিন্তু জীবনটা হয়ে গিয়েছে এলোমেলো। আপনি আপনার প্রভূর নির্ধারিত সীমারেখা লঙ্ঘন করবেন অথচ এর মাশুল আপনাকে দিতে হবেনা এমনটা কি করে হয়? তাঁর করুণার ছায়া কেবল তখনই আপনাকে পরিবেষ্টিত করে রাখবে যখন তাঁর বিধিনিষেধকে আপনি কাঁচকলা দেখাবেন না, কিন্তু অল্প বয়সে এত কিছু মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেয়ার মত বুদ্ধি বিবেচনা কয়টা ছেলেমেয়ের থাকে? আপনি আপনার সন্তানকে প্রলোভনের মাঝে সাঁতার কাটতে দেবেন আর মনে মনে নিশ্চিত বোধ করবেন সে ওপারে নিরাপদে ভেসে উঠবে, সেটা কল্পনাবিলাস নয় কি? এর অর্থ এই নয় যে আপনি তার ওপর আস্থা রাখবেন না, কিন্তু আপনার বিশ্বাসটা যেন তার ওপর বোঝা হয়ে না যায় সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে। আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা দেন না (সুরা বাক্কারা ২৮৬), তাই তিনি প্রত্যেকের জন্য সঙ্গী নির্ধারণ করে রেখেছেন (সুরা ইয়াসিন ৩৬) যেন প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের কাছে থেকে বন্ধুত্ব এবং প্রশান্তি লাভ করা যায় (সুরা রূম ২১)। কিন্তু আপনি যদি তৃষ্ণার্তকে পানির উপস্থিতিতে পানি পান করতে বারণ করেন, তাহলে গুড লাক, পরিণতি কি হবে আমার বলে দেয়ার প্রয়োজন নেই।
খাওয়াবে কি? বুকে হাত দিয়ে বলুন তো, আপনার পরিবারকে কি আপনি খাওয়ান? যদি তাই মনে করে থাকেন তবে আপনার ঈমানে গুরুতর সমস্যা রয়েছে। কারণ আপনি আল্লাহকে চ্যালেঞ্জ করছেন যিনি বলেছেন তাঁর সকল সৃষ্টির রিজিকদাতা তিনি (সুরা যারিয়াত ৫৮)। চাইনিজদের মত হিসেব করা বোকামী, যারা হিসেব কষে নির্ধারণ করে তাদের বর্তমান আয়ে তারা ঠিক দেড়টা সন্তান লালন করতে পারে! অথচ আমাদের জীবনের ফ্যাক্টরগুলো কোনটিই স্থির কিংবা নিশ্চিত নয়; এগুলো পরিবর্তিত হয়, হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাহলে আমরা কিসের ওপর ভিত্তি করে ধরে নিচ্ছি আমার সন্তান চরিত্র খুইয়ে হলেও কোনক্রমে লেখাপড়া শেষ করে, চাকরী পেয়ে তারপর বিয়ে করলে তার আর কোন চিন্তা নেই?! আমার এক বান্ধবী বলতেন তিনি এবং তাঁর মা তাঁর মামাদের আনা অসংখ্য বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন বিদেশে বিয়ে করবেন না বলে। তারপর দেশী পাত্রের সাথেই তাঁর বিয়ে হোল। কিন্তু বিয়ের কয়েক বছর পর জীবনের প্রয়োজনে সেই দেশী পাত্র বিদেশী হতে বাধ্য হোল। ভাগ্যের ওপর আমাদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। তা নিয়ন্ত্রণ করতে চাওয়াটাও বোকামী। কিন্তু এখানে আমার কাছে মূলত দৃষ্টিভঙ্গিটাই সমস্যা বলে মনে হয়। ছেলে যদি বিয়ের পরেও বাবামায়ের দায়িত্বে থাকে, মেয়ে থাকে তার নিজের বাবামায়ের দায়িত্বে, কিংবা অবস্থাপন্ন হলে উভয় পরিবার মিলেমিশে দু’জনের দেখাশোনা করে তাহলে উভয়ের সন্তানদের চরিত্র সংরক্ষিত হয়। কিন্তু আমরা ‘নিজের’ এবং ‘পরের’ হিসেব থেকে উত্তীর্ণ হতে পারিনা। ভাবতে পারিনা ছেলের বৌ মানেই ঘরে একজন বাড়তি কাজের লোক নয়, কিংবা মেয়ের জামাই মানেই মেয়েটাকে হাতপাসমেত তার ঘাড়ের ওপর তুলে দেয়ার প্রয়োজন নেই। শিক্ষিত ছেলের বৌ আমার নাতিনাতনীদের জন্য একজন উত্তম মা হবে, শিক্ষিত মেয়েজামাই আমার মেয়েকে উত্তম দিকনির্দেশনা দিতে পারবে। এটা আমাদের ক্ষুদ্রতার ফসল যে এই বিভেদগুলো থেকে উত্তরণ করতে না পারার কারণে আমরা আমাদের সন্তানদের বিয়ে পিছিয়ে দেই দশকের পর দশক, ওদের প্রয়োজনের প্রতি কোনপ্রকার ভ্রূক্ষেপ না করেই।
চাকরী বাকরী খুঁজতে গেলেই একটা শব্দের মুখোমুখি হতে হয়, আপনি ‘মাল্টিটাস্কার’ কি’না। একই সময়ে নানানপ্রকার কাজ ম্যানেজ করতে পারার দক্ষতাকে বলা হয় ‘মাল্টিটাস্কিং’। মাল্টিটাস্কিং ব্যাক্তির যোগ্যতার মাপকাঠি। আমরা আমাদের সন্তানদের ছোটবেলা থেকে এক গ্লাস পানিও ঢেলে খেতে দেইনা, যেন এটাই স্নেহের মাপকাঠি! অথচ এর ফলে আমরা গড়ে তুলছি একটি কুঁড়ে, অকর্মন্য এবং অযোগ্য প্রজন্ম যারা নিজেদের কাজগুলো নিজেরা বুঝে করতে পারেনা, প্রতিকুল পরিস্থিতি সামাল দিতে অক্ষম, বিপদ এলে মুষড়ে পড়ে। অথচ আপনার সন্তানরা যত বেশি যোগ্যতা ধারণ করবে তা তাদের চলার পথকে তত বেশি সাবলীল করবে। সফল বাবামায়েদের যোগ্যতার প্রমাণ আত্মনির্ভরশীল সন্তান গড়ে তোলায় যারা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম, যেকোন পরিস্থিতি সামাল দিতে দক্ষ, যেকোন কাজে দক্ষতা অর্জন করতে সচেষ্ট, দায়িত্বশীল এবং সামাজিক। এই ধরণের ছেলেমেয়েদের জন্য মাল্টিটাস্কিং কোন ব্যাপারই নয়। আপনি অযোগ্য সন্তান গড়ে তুললে তাকে সময়মত বিয়ে দিতে ভয় পাবেন এটাই স্বাভাবিক, তার বিয়ে করার প্রয়োজন সৃষ্টি হলেও বিয়ে করার মত ম্যাচুরিটি সৃষ্টি হয়নি এটা বোধগম্য। কিন্তু যোগ্য সন্তানদের বাবামায়েরা যদি লেখাপড়ার দোহাই দিয়ে সন্তানকে আল্লাহর বিধিবিধান অনুযায়ী চলতে সহযোগিতা না করেন, সেটা দুঃখজনক। আমার সন্তানের লেখাপড়ার দৌড় নির্ভর করবে তার চেষ্টা এবং নিষ্ঠার ওপর, তার স্বপ্ন এবং সেই স্বপ্নকে ছুঁতে চাওয়ার আকাঙ্খা তাকে অবশ্যই সেই বন্দরে পৌঁছে দেবে। কিন্তু সে সময় যদি তার পাশে থাকে এমন একজন সঙ্গী যে তাকে সাহস জোগাবে, তার পথের কাঁটাগুলো তার হয়ে সরিয়ে দেবে, তার অভিজ্ঞতাগুলো তার সাথে শেয়ার করবে তবে এমন সঙ্গীর সাহচর্য তাকে আরো অনেক বড় বড় প্রতিকুলতায় ধৈর্য্য এবং স্থৈর্য্য জোগাবে। এই অভিজ্ঞতাই তাকে গড়ে দেবে মাল্টিটাস্কিংয়ের শক্ত ভিত। যে কোনদিন পানিতে নামেনি সে সাগরে সাঁতার কাটবে কোন সাহসে? আপনি কি সবসময় আপনার সন্তানের ডাঙ্গায় অবস্থান নিশ্চিত করতে পারবেন? আল্লাহ বাবামাকে তিনটি দায়িত্ব দিয়েছেন – সন্তানের উত্তম নাম রাখা, সন্তানকে আল্লাহর বিধিনিষেধ শিক্ষা দেয়া, সন্তানকে উপযুক্ত বয়সে বিয়ে দেয়া। সন্তানদের ভালো না খাওয়ালে, ভালো পোশাক না পরালে, তাদের অতিরিক্ত স্নেহ দিয়ে স্বার্থপর এবং অকর্মন্য করে না তুললে, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানগুলোতে না পড়ালে কিংবা তাদের বাড়ি গাড়ি করে না দিলে আল্লাহ আমাদের দায়ী করবেন না। কিন্তু সন্তানদের তাঁর প্রনীত নিয়মাবলী শিক্ষা না দিলে তিনি আমাদের দায়ী করবেন, কারণ এই নিয়মাবলী কেবল তার নিজের নিরাপত্তার জন্য দেয়া হয়নি বরং তার প্রভূর সমুদয় সৃষ্টিকুলের নিরাপত্তার স্বার্থে দেয়া হয়েছে। সময়মত বিয়ে না দেয়ার কারণে আমার সন্তান যখন বিপথগামী হয় সে একা পথভ্রষ্ট হয়না, আরো একটি ছেলে না মেয়েকে সে বিপথগামীতায় সঙ্গী করে, উভয়ের পরিবারকে কষ্ট এবং সামাজিক লজ্জার সাগরে নিমজ্জিত করে, তার উদাহরণ তার ভাইবোনসহ সমাজের আরো অনেককে প্রভাবিত করে এবং এই সম্পূর্ন ব্যাপারটির দায়দায়িত্ব বর্তায় আমার ঘাড়ে। এই দায়দায়িত্ব আপনি নিতে পারবেন কি’না জানিনা, আমি পারবনা। তাই এসব চিন্তা করলে অল্প বয়সে ছেলেমেয়ে বিয়ে দেয়া নিয়ে আমার আর হাসি আসেনা।
কিন্তু আমরা বাস করি এমন এক সমাজে যেখানে পার্থিব মোহগুলো আমাদের মনের ওপর পরবর্তী জীবনের আকাঙ্খার চেয়ে অনেক বেশি প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছে এবং আমরা আমাদের প্রতিবেশী বন্ধুদের প্রাইভেসী দিতে দিতে তাদের সাথে ‘হাই হেলো’র অতিরিক্ত আর কোন সম্পর্ক রাখিনি। ফলে তাদের এই মনোভাব পরিবর্তন করার সুযোগ, অধিকার কিংবা যোগ্যতা কিছুই আমাদের অবশিষ্ট নেই। সুতরাং, আমাদের সন্তানদের সঠিক পথে রাখার পূর্ণ সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমরা তাদের জন্য উপযুক্ত পাত্র কিংবা পাত্রী পাওয়ার আশা করতে পারিনা।
যে সমাজে বিয়ে কঠিন হয়ে যায় সে সমাজে পাপ সহজ হয়ে যায়। ইসলামে সঙ্গী নির্বাচন বাবামা এবং সন্তানের যৌথ প্রযোজনার বিষয়। লক্ষ্য করুন, আমি ইসলামের কথা বলছি, বাংলাদেশী সংস্কৃতির কথা নয়। ক্যানাডায় ছেলেমেয়েদের দেখে মায়া লাগত। এরা সবাই যে পাপে নিমজ্জিত হতে আগ্রহী ছিল তেমন কিন্তু নয়। এদের অনেকেই চিন্তাচেতনায় শুদ্ধচারী। কিন্তু তাদের বাবামায়েরা সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের কোন পরিচ্ছন্ন গাইডলাইন দিয়ে দেয়না কিংবা সহযোগিতা করেনা। তখন তাদের একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়ায় পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সঙ্গী নির্বাচন করা যা অনেকসময় তাদের অনিচ্ছাসত্ত্বেও সীমারেখা পার করে যায়। তাদের বাবামা তাদের নির্বাচিত পাত্র কিংবা পাত্রী দেখে কেবল সঙ্গীর ব্যাপারে মন্তব্য দিয়েই খালাস, বিয়ের ব্যাপারে সহযোগিতা করতে আগ্রহ দেখান না। ফলে সন্তানরা তাদের কথাকে গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন কিংবা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। কিন্তু স্বল্পজ্ঞান এবং অল্প অভিজ্ঞতার আলোকে নির্বাচিত প্রেম প্রায়ই বাস্তবতার ভিত্তিমূলের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকেনা। ফলে অনেকসময় তারা মানসিক, শারীরিক বা সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় – অনেকসময় সারা জীবনেও এই ক্ষতি আর পুষিয়ে ওঠা যায়না। মালয়শিয়ায় এসে দেখলাম বাবামা প্রথম দু’টি দায়িত্ব নিলেও তৃতীয় দায়িত্বটি তুলে দিয়েছেন সন্তানদের ঘাড়ে। সুতরাং, তারা নিজেরাই সঙ্গী নির্বাচন করে। বাবামায়ের সহযোগিতা পেলে এই নির্বাচন হয়ত বাস্তবতার মজবুত ভিত্তির ওপর প্রোথিত হত। কিন্তু স্বল্প বুদ্ধি এবং অধিকতর অল্প অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে অল্প বয়সে বিয়ে করলেও এখানে বিবাহবিচ্ছেদের মাত্রা ভয়াবহ। উভয় দেশেই সিঙ্গল প্যারেন্টদের পরিমাণ এবং স্ট্রাগল হৃদয়ে ভীতির সঞ্চার করে। ভালোমন্দ না বুঝে, পরিণতি চিন্তা না করে কাউকে অন্ধভাবে অনুসরণ করা আমাদের জাতিগত বৈশিষ্ট্য। ক্ষেপবেন না, ‘হুজুগে বাঙ্গালী’ বাগধারাটা এমনি এমনি আসেনি। আমরা কোথায় যাচ্ছি, কেন যাচ্ছি, কি পাব, কি হারাব একটু দম নিয়ে ভাবার সময় কিন্তু পার হয়ে যাচ্ছে। এখন হয়ত আমাকে বোকা ভেবে হাসছেন, পরে আবার নিজে বোকা প্রমাণিত না হোন যেন সেদিকে একটু খেয়াল করুন।
ইকামাতে দ্বীন অর্থ দ্বীন কায়েমের
প্রচেষ্টা। আর দ্বীন কায়েম বলতে বুঝায়
কোন একটা জনপদে দ্বীন ইসলাম বিজয়ী
আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া। অর্থাৎ,
রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা।
এভাবে দ্বীন কায়েমের চূড়ান্ত প্রচেষ্টা
চালানোটাই ইসলামী আন্দোলনের জাগতিক
লক্ষ্য। আর এরই মাধ্যমে অর্জিত হয় পারলৌকিক
লক্ষ্য অর্থাৎ নাজাত ও আল্লাহর সন্তুষ্টি।
* আমর বিল মা’রূফ ও নেহী আনিল মুনকারঃ-
সৎকাজের আদেশ প্রদান ও অসৎকাজে বাধা
দানের কাজটা বিভিন্ন পর্যায়ে আঞ্জাম দেয়া যায়:
এক: সাধারণভাবে গোটা উম্মতে মুহাম্মদীরই
এটি দায়িত্ব।
দুই. সরকারী প্রশাসনের মাধ্যমে এই কাজের
আঞ্জাম পাওয়াটাই শরীয়তের আসল স্পিরিট।
ইসলামী সরকারের গোটা প্রশাসন যন্ত্রই এই
কাজে ব্যবহৃত হবে।
জরায়ুতে (রেহেম) যা আছে তা গায়েবের অন্তর্ভুক্ত। তাই এটি শুধুমাত্র আল্লাহই জানেন। কিন্তু বর্তমান আধুনিক টেকনোজিতে আল্ট্রাসনোগ্রাফ টেস্টের মাধ্যমে মানুষ জরায়ুর ভ্রুনের লিংগ জানতে পারে। তাহলে এটি গায়েব হল কিভাবে? কুরানের এই আয়াতের নির্ভরযোগ্যতা কোথায়? গায়েব সম্পর্কে শুধুমাত্র আল্লাহ জানেন এই দাবীটি কতটুকু ঠিক?
উত্তর:
(আবু তালিব মোহাম্মদ মোনাওয়ার)
মহিলাদের জরায়ুতে অবস্থানরত ভ্রুণের লিংগ সম্পর্কে জানতে পারা একটি বৈজ্ঞানিক সফলতা এবং মহান স্রষ্টার সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা ও গবেষণার নির্দেশের বাস্তবায়নের বহিপ্রকাশ মাত্র। পাশাপাশি এটি স্রষ্টাকে জানার একটি ধাপও বটে। বিজ্ঞানের সঠিক তথ্যের সাথে কুরানের কোন ধরণের সংঘর্ষ নেই। পবিত্র কুরানে আল্লাহ তাআলা বলেন,
{إِنَّ اللَّهَ عِندَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الأَرْحَامِ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَّاذَا تَكْسِبُ غَداً وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ}.
অর্থ: কিয়ামতের জ্ঞান শুধুমাত্র আল্লাহর নিকট রয়েছে, তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনি জানেন যা জরায়ুতে আছে। কেউ জানে না আগামী কাল সে কী অর্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন স্থানে তার মৃত্যু ঘটবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে অবহিত। (সুরা লোকমান: ৩৪)।
এই আয়াতে ব্যবহৃত (ما) একটি অব্যয়। এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে যা/যাহা। এটি একটি অনিদিষ্ট/নাকিরাহ অব্যয় যা ব্যপকতার/উমূম অর্থ দেয় (ما نكرة تفيد العموم)। অর্থাৎ মা এর অর্থ অনেক ব্যপক ও বহুমাত্রিক। তম্মোধ্যে ছেলে মেয়ে মা উমুমের একটি দিক মাত্র। এছাড়াও এই উমুমের মধ্যে আরো অনেক দিক রয়েছে যেগুলো বিজ্ঞান অদ্যবধি আবিষ্কার করতে পারেনি এবং কিয়ামত পর্যন্ত আবিষ্কার করার কোন সম্ভাবনাও নেই।
১। বিজ্ঞান জানতে পারে নিদিষ্ট একটি সময়ের ভ্রুণের পূর্ণ আকৃতি লাভের পর। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা শুরু থেকেই জানেন সেটা কী?
২। কে বলেছে মা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে শুধুমাত্র লিঙ্গ; ছেলে বা মেয়ে? বরং এর অর্থ বহুমাত্রিক যা একমাত্র আল্লাহই জানেন।
৩। বিজ্ঞান কি জানে জরায়ুতে থাকা বাচ্চাটির দৈর্ঘ কত হবে?
৪। সে মেধাবী না বোকা হবে?
৫। সৌভাগ্যবান হবে না হতভাগা?
৬। সে কত দিন বাঁচবে?
৭। সে ধৈর্যশীল হবে না রাগী হবে?
৮। আল্ট্রাসনোগ্রাফের মাধ্যমে একটি নিদিষ্ট সময়ের পর শুধুমাত্র ভ্রুণের লিংগ জানা গেলেও বিজ্ঞানের এই জানাও অনেক সীমিত। কারণ সকল মহিলা কি ডাক্তারের কাছে যায়? যারা টেস্ট করে না তাদের রেহেমে কি আছে তাও আল্লাহ জানেন।
৯। সব মহিলা কি একই ডাক্তারের কাছে যায় যে একজন ডাক্তার সব রেহেমের ভ্রুনের লিংগ জানবেন। কিন্তু একমাত্র আল্লাহ সকল রেহেমে কী আছে তা জানেন।
১০। এসকল কিছু শুরু থেকেই একমাত্র আল্লাহই জানেন। তাই মা শুধুমাত্র লিঙ্গের সাথে সীমাবদ্ধ নয়। এভাবেই প্রমানিত হয় যে বিজ্ঞান যত বেশী অগ্রসর হবে স্রষ্টার জ্ঞানের পরিধি তত বেশী অনুধাবন হবে। এভাবেই মানুষের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা বুঝা যায় এবং আল্লাহ তাআলা যে সর্বজ্ঞ এবং সব বিষয়ে অবহিত তা প্রমানিত হয়।
সুতরাং কুরানের বানী বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সাথে সাংঘর্ষিক নয় বরং কুরানের ব্যপারে মানুষের স্বল্প জ্ঞান ও বুঝের সাথে বিজ্ঞানের বাহ্যিক দ্বন্দ পরিলক্ষিত হয়। আর কুরানের জ্ঞান যথাযথ অর্জিত হলে অনুমেয় এই বাহ্যিক দ্বন্দের নিরসন হয়ে যায়। (এটি শুধুমাত্র তাফসীরে শা'রাভী অবলম্বনে লিখা। অন্যান্য আরো তাফসীরে আরো চমৎকার ব্যাখ্যার অবকাশ রয়েছে)।
মন্তব্য করতে লগইন করুন