কুরআন হাদীসে জালিম শাসকদের সমালোচনা করা হলেও এক শ্রেণীর লোক জালিম শাসকদের পক্ষে মজলুমদের বিরুদ্ধাচরণ করছে
লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ০৪ এপ্রিল, ২০১৯, ০৮:০২:০৪ রাত
মুমিন মুসলমানদের উঢিৎ তারা সবসময় মজলুমের পক্ষেই থাকবেন । এবং জালিমের বিরুদ্ধেই থাকবেন।
মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَمَنْ يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ.
যারা আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করে, বস্তুত তারাই জালিম।
.
জালিম শাসকের পরিচয় তুলে ধরে আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ.
আর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার মাধ্যমে যারা শাসন ফয়সালা করবে না, তারাই জালিম। (সূরা মায়িদাঃ৫/৪৫)
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إنَّ شَرَّ الرِّعَاءِ الحُطَمَةُ»
নিশ্চয় নিকৃষ্টতম শাসক সে, যে প্রজাদের ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করে। (সহীহ মুসলিম হাঃ ১৮৩০, মুসনাদে আহমাদ হাঃ ২০১১৪)
.
কুরআন হাদীসে জালিম শাসকদের সমালোচনা করা হলেও যুগ যুগ ধরে এক শ্রেণীর তাগুতপন্থী লোক জালিম শাসকদের পক্ষাবলম্বন এবং মজলুমদের বিরুদ্ধাচরণ করছে। জালিম শাসক এজিদ যখন আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করে ইমাম হোসাইন (রা) সহ বিভিন্ন সাহাবাগণ (রা) এর উপর নির্মম নির্যাতন করতো, অন্যায় ভাবে হত্যা করতো, তখনও তারা মজলুম সাহাবাগণ (রা) এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল এবং জালেম শাসক এজিদের পক্ষাবলম্বন করতো। এখনও যারা জালিমদের নিকট জুলুম নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, তারা জালিমদের পক্ষ নিয়ে মজলুমের বিরুদ্ধাচারণ করছে। তাদের মানহাজই হলো আল্লাহর বিধান লঙ্ঘনকারী জালিম শাসকদের পক্ষ দালালী করা এবং মজলুমদের বিরুদ্ধাচরণ করা।
.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«أفْضَلُ الجِهَادِ كَلِمَةُ عَدْلٍ عِنْدَ سُلْطَانٍ جَائرٍ».
‘‘জালিম শাসকের নিকট হক কথা বলা সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ।’’ (তিরমিযী হাঃ ২১৭৪, আবূ দাউদ ৪৩৪৪, নাসায়ী হাঃ ৪২০৯, ইবনু মাজাহ হাঃ ৪০১১, আহমাদ হাঃ ১০৭৫৯,
জালিম শাসকের জুলুম নির্যাতনকে সমর্থন করে তবে সে ধ্বংস ও গযবপ্রাপ্তদের মধ্যে গণ্য হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إنَّهُ يُسْتَعْمَلُ عَلَيْكُمْ أُمَرَاءُ فَتَعرِفُونَ وتُنْكِرُونَ، فَمَنْ كَرِهَ فَقَدْ بَرِئَ، وَمَنْ أنْكَرَ فَقَدْ سَلِمَ، وَلَكِنْ مَنْ رَضِيَ وَتَابَعَ»
অদূর ভবিষ্যতে তোমাদের উপর এমন শাসকবৃন্দ নিযুক্ত করা হবে, যাদের কিছু কাজ তোমরা ভালো দেখবে এবং কিছু কাজ গর্হিত। সুতরাং যে ব্যক্তি তাদের গর্হিত কাজকে ঘৃণা করবে, সে দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে এবং যে আপত্তি ও প্রতিবাদ জানাবে, সেও পরিত্রাণ পেয়ে যাবে। কিন্তু যে ব্যক্তি তাতে সম্মত হবে এবং তাদের অনুসরণ করবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে।’’ (সহীহ মুসলিম হাঃ ১৮৫৪, তিরমিযী হাঃ ২২৬৫, ৪৭৬০, আহমাদ হাঃ ২৫৯৮৯, ২৬০৩৭, ২৬১৮৮)
.
জালিম শাসকের দালালী করা তো দূরের কথা, তাদের বিরুদ্ধে সামর্থ্যানুযায়ী জিহাদ করা ঈমানের দাবী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«فَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِيَدِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِقَلبِهِ فَهُوَ مُؤمِنٌ، وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِلسَانِهِ فَهُوَ مُؤمِنٌ، وَلَيسَ وَرَاءَ ذلِكَ مِنَ الإيمَانِ حَبَّةُ خَرْدَل».
সুতরাং যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ হাত দ্বারা জিহাদ করবে সে মু’মিন, যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ অন্তর দ্বারা জিহাদ করবে সে মু’মিন এবং যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ জিভ দ্বারা জিহাদ করবে সে মু’মিন। আর এর পর সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান নেই।’’ (সহীহ মুসলিম হাঃ ৫০, মুসনাদে আহমাদ হাঃ ৪৩৬৬, রিয়াযুস স্বালেহীন হাঃ ১৯০)
এখন ভেবে দেখুন মজলুমের বিরুদ্ধাচরণ এবং জালিম শাসকের অনুসরণ যারা করবে জাহান্নাম তাদের গ্রাস করবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَلَا تَرْكَنُوا إِلَى الَّذِينَ ظَلَمُوا فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ مِنْ أَوْلِيَاءَ ثُمَّ لَا تُنْصَرُونَ.
আর যারা যুলম করেছে তোমরা তাদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না; অন্যথায় জাহান্নামের আগুন তোমাদেরকে গ্রাস করবে এবং আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোন অভিভাবক থাকবে না। অতঃপর তোমরা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না। (সূরা হুদঃ১১/১১৩)
.
আনুগত্য করা ফরজ বলে ফতোয়া দিয়ে জালিম শাসকের দালালী করা তো দূরের কথা, এখানে তাদের প্রতি সামান্যতম ঝোঁকা বা আকৃষ্ট হওয়া এবং তাদের প্রতি আস্থা বা সম্মতি জ্ঞাপন করাও হারাম করা হয়েছে। যার চূড়ান্ত পরিণতি জাহান্নাম। আমরা আল্লাহর নিকট পানাহ চাচ্ছি।
বিষয়: বিবিধ
২০৪০ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
স্ত্রীকে খালিদ বললেন, 'প্রিয়তমা স্ত্রী, আমি বেশিক্ষণ বাঁচবো বলে মনে হচ্ছেনা। একটা আফসোস এই বিদায় বেলায় ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে, তুমি কি উত্তর দিতে পারো'? খালিদের স্ত্রী বিনয়ের সাথে জিজ্ঞাসা করলেন, 'হে মহাবীর, কি প্রশ্ন আপনার মনে'? ৫৭ বছরের খালিদ বললেন, 'তুমি আমার সারাটা শরীর পরীক্ষা করে দেখো, এমন কোনো স্থান কি আমার শরীরে আছে যেখানে শত্রুর তরবারীর আঘাত নেই'? দীর্ঘক্ষণ পরীক্ষা করে স্ত্রী উত্তর দিলেন, 'না, আল্লাহর রাস্তায় আপনি এতো বেশি যুদ্ধ করেছেন যে শত্রুর আঘাত আপনার সারাটা শরীরেই আছে'। খালিদ বিন ওয়ালিদ তখন দুঃখ নিয়ে বললেন, 'আল্লাহর কসম, প্রতিটা জিহাদে আমার নিয়ত থাকতো যেনো আমি ময়দানে শত্রুর আঘাতে মারা যাই, তাতে যেনো শহীদের মর্যাদা পাই। কিন্তু আফসোস, দেখো আজ যুদ্ধের ময়দানে মৃত্যু না হয়ে আমার মৃত্যু হচ্ছে আমারই বিছানায়! আমায় কি আল্লাহ শহীদদের মাঝে রাখতে চাননা'? স্বামীর আফসোস দেখে স্ত্রী কিছুক্ষণ মৌন রইলেন। এরপর করলেন সেই বিখ্যাত উক্তি, 'আপনার নাম স্বয়ং রাসূল (সা.) রেখেছিলেন ‘সাইফুল্লাহ’- এমন কোনো তরবারী কি দুনিয়ায় আছে যেটা আল্লাহর তরবারীর মোকাবেলা করতে পারে? তাইতো ময়দানে আপনার মৃত্যু হয়নি কারন আল্লাহ তাঁর তরবারী মাটিতে লুটিয়ে যেতে দেননি'। ভীষণ খুশি হলেন খালিদ বিন ওয়ালিদ, বুঝতে পারলেন আল্লাহর ইচ্ছা এবং কিছুক্ষণ পরে শান্তিতে বেহেস্তের রাস্তায় চলে গেলেন।
আমরা অনেকেই সম্রাট জুলিয়াস সিজারের গুনগান করি, আলেকজান্ডারের ঘটনা মন দিয়ে শুনি, নেপোলিয়ানকে শ্রেষ্ঠ বলি। অথচ নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে গবেষণা করলে সবাই একবাক্যে স্বীকার করবে যে জেনারেল খালিদ বিন ওয়ালিদের নেতৃত্বগুণ, বীরত্ব আর রণকৌশলের সামনে অন্য যেকোনো সেনানায়কই তুচ্ছ। খালিদ বিন ওয়ালিদকেই আমার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ যোদ্ধা মনে হয়। আর এসব কোনো কল্পকাহিনী নয়, ইতিহাস ঘাটলেই তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমানিত হয়। এমন বীর সাহাবীদের জীবনী যেনো আমাদের প্রতিদিনের পথচলায় অনুপ্রেরণার উৎস হয়...✌
মন্তব্য করতে লগইন করুন