জান্নাতে যেতে চান--? তো ঈমানের পরিক্ষা দিতেই হবে ঈমান এনেছি একথা বল্লেই ছেড়ে দেওয়া হবেনা
লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ২৩ অক্টোবর, ২০১৮, ০৩:২৪:৫৪ দুপুর
ঈমানের অগ্নি পরীক্ষা দিয়েই জান্নাতে যেতে হবে ঈমান এনেছি একথা বল্লেই ছেড়ে দেওয়া হবেনা মহান আল্লাহ বলেন
أَحَسِبَ النَّاسُ أَن يُتْرَكُوا أَن يَقُولُوا آمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُونَ
লোকেরা কি মনে করে রেখেছে, আমরা ঈমান এনেছি একথাটুকু বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে, আর পরীক্ষা করা হবে না--? ২ সুরা আনকাবুত
যে অবস্থায় কুরানে একথা বলা হয়ে ছিল তখন মক্কা শরিফে কেউ ইসলাম গ্রহণ করলেই তার ওপর বিপদ জুলুম-নিপীড়নের পাহাড় ভেঙ্গে পড়তো। কোন গোলাম বা গরীব মানুষ ইসলাম গ্রহণ করলে তাকে ভীষণভাবে মারপিট এবং কঠোর নির্যাতন-নিপীড়নের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত করা হতো। এবং এভাবে তাদের জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলতো।
পবিত্র মক্কায় একটি মারাত্মক ভীতি ও আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়েছিল। এ কারণে লোকেরা নবী (সাঃ) এর সত্যতার স্বীকৃতি দেয়া সত্ত্বেও ঈমান আনতে ভয় করতো। এবং কিছু লোক ঈমান আনার ভয়াবহ শাস্তিরও সম্মুখীন হলে সাহস ও হিম্মতহারা হয়ে কাফেরদের সামনে নতজানু হয়ে যেতো।
এ ধরনের অবস্থার একটা চিত্র পেশ করে হযরত খাব্বাব ইবনে আরাত (রাঃ)বর্ণিত একটি হাদীস। হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন বুখারী, আবু দাউদ ও নাসাঈ তাদের গ্রন্থে। তিনি বলেন, যে সময় মুশরিকদের কঠোর নির্যাতনে আমরা ভীষণ দুরবস্থার সম্মুখীন হয়ে পড়েছিলাম সে সময় একদিন আমি দেখলাম নবী (সাঃ) কা’বাঘরের দেয়ালের ছায়ায় বসে রয়েছেন। আমি সেখানে উপস্থিত হয়ে নিবেদন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাদের জন্য দোয়া করেন না? একথা শুনে তার চেহারা লাল রক্তিমবর্ণ হয়ে তিনি বললেন, তোমাদের পূর্বে যেসব মু’মিন দল অতিক্রান্ত হয়েছে তারা এর চাইতেও বেশি নিগৃহীত হয়েছে। তাদের কাউকে মাটিতে গর্ত করে তার মধ্যে বসিয়ে দেয়া হতো এবং তারপর তার মাথার ওপর করাত চালিয়ে দু’টুকরা করে দেয়া হতো। কারো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সন্ধিস্থলে লোহার চিরুনী দিয়ে আঁচড়ানো হতো, যাতে তারা ঈমান প্রত্যাহার করে। আল্লাহর কসম, এ কাজ সম্পন্ন হবেই, এমনকি এক ব্যক্তি সান’আ থেকে হাজরামাউত পর্যন্ত নিশঙ্ক চিত্তে সফর করবে এবং আল্লাহ ছাড়া আর কারো ভয় তার মনে থাকবে না।
প্রত্যেক ঈমানের দাবীদারকে অনিবার্যভাবে পরীক্ষার সম্মূখিন হতেই হবে। তাকে এভাবে নিজের দাবির সত্যতা পেশ করতে হবেই। আল্লাহর জান্নাত এত সস্তা নয় তোমরা কেবলি মুখে আমার প্রতি ঈমান আনার কথা উচ্চারণ করবে আর অমনিই আমি তোমাদেরকে সেসব কিছুই দান করে দেবো। এসবের জন্য তো পরীক্ষার শর্ত রয়েছে।
আমার জন্য কষ্ট বরদাশত করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের নিপীড়ন-নির্যাতন সহ্য করতে হবে, বিপদ-মুসিবত ও সংকটের মুকাবিলা করতে হবে। ভীতি ও আশঙ্কা দিয়ে পরীক্ষা করা হবে এবং লোভ-লালসা দিয়েও। এমন প্রত্যেকটি জিনিস যা ভালোবাসো ও পছন্দ করো, আমার সন্তুষ্টির জন্য তাকে উৎসর্গ করতে হবে।
আর এমন প্রত্যেকটি কষ্ট যা তোমাদের অনভিপ্রেত এবং তোমরা অপছন্দ করে থাকো, আমার জন্য তা অবশ্যই বরদাশত করতে হবে। তারপরেই তোমরা আমাকে মানার যে দাবী করেছিলে তার সত্য-মিথ্যা যাচাই হবে।
কুরআনুল করিমে এমন প্রত্যেকটি জায়গায় যেখানে বিপদ-মুসিবতে মুসলমানদের মধ্য ভয় ভীতির অবস্থা হয়েছে সেখানেই একথা বলা হয়েছে। হিজরাতের পরে মদিনায় মুসলমানদের জীবনের প্রথমাবস্থায় যখন অর্থনৈতিক সংকট, বাইরের বিপদ এবং ইহুদী ও মুনাফিকদের ভিতরের দুষ্কৃতি মু’মিনদেরকে ভীষণভাবে পেরেশান করে রেখেছিল তখন আল্লাহ বলেনঃ أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُمْ مَثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ مَسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّى يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَى نَصْرُ اللَّهِ أَلَا إِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيبٌ “তোমরা কি মনে করেছো তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে, অথচ এখনো তোমরা সে অবস্থার সম্মুখীন হওনি, যে অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী (ঈমানদার) গণ?
তারা সম্মুখীন হয়েছিল নির্মমতা ও দুঃখ-ক্লেশের এবং তাদেরকে অস্থির করে তোলা হয়েছিল। এমনকি রসূল ও তাঁর সাথে যারা ঈমান এনেছিল তারা চিৎকার করে বলে উঠেছিল, আল্লাহর সাহায্য কবে আসবে? (তখনই তাদেরকে সুখবর দেয়া হয়েছিল (এই মর্মে যে) জেনে রাখো, আল্লাহর সাহায্য নিকটেই। আল বাকারাহঃ ২১৪
অনুরূপভাবে ওহোদ যুদ্ধের পর যখন মুসলমানদের ওপর আবার বিপদ-মুসিবতের একটি দুর্যোগপূর্ণ যুগের অবতারণা হয় তখন বলা হয়ঃ أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللَّهُ الَّذِينَ جَاهَدُوا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِينَ “তোমরা কি মনে করে নিয়েছো, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে, অথচ এখনো আল্লাহ দেখেনইনি যে, তোমাদের মধ্য থেকে কে জিহাদে প্রাণ উৎসর্গকারী এবং কে সবরকারী? আল ইমরানঃ ১৪২
প্রায় একই বক্তব্য সূরা আলে ইমরানের ১৭৯, সূরা তাওবার ১৬ এবং সূরা মুহাম্মাদের ৩১ আয়াতে বলা হয়েছে। এসব বক্তব্যের মাধ্যমে মহান আল্লাহ মুসলমানদের মনে এ সত্যটি গেঁথে দিয়েছেন যে, পরীক্ষাই হচ্ছে এমন একটি মানদণ্ড যার মাধ্যমে নির্ভেজাল যাচাই করা যায়।
ভেজাল নিজে নিজেই আল্লাহর পথ থেকে সরে যায় এবং নির্ভেজালকে বাছাই করে নিয়ে নেয়া হয়। এভাবে সে আল্লাহর এমনসব পুরস্কার লাভের যোগ্য হয়, যেগুলো কেবলমাত্র সাচ্চা ঈমানদারদের জন্য নির্ধারিত।
বিষয়: বিবিধ
১২১৪ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সূরা বাকারাতেই আল্লাহ বলে দিয়েছেন উনি তার বান্দাদেরকে পরীক্ষা করবেন বিভিন্নভাবে কষ্টের মধ্যে ফেলে। আবার তিনিই এসব কষ্ট থেকে উদ্ধারকর্তা।
এর মাধ্যমে আল্লাহ পরখ করতে চান কষ্ট পেয়ে কে তাকে ডাকলো আর উদ্ধারের পর ভুলে গেল । আবার কে আল্লাহর দেওয়া সম্পদ ও সুখ পেয়ে অহংকার করলো এবং না শোকর হয়ে গেল। আর কারা সঠিক পথে চলতে চেষ্টা করলো ও আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলো।
এসব পরিক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমেই আল্লাহ চিনে নেবেন কে তার খাঁটি বান্দা।
ভাল লাগলো আল্লাহ আমাদের সহায় হোক
ক্ষমা করুণ আমাদের ,
যা আছে জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রে -
১) সকল ক্ষমতার উৎস একমাত্র আল্লাহ
২) সকল সার্বভৌমত্বের মালিক একমাত্র আল্লাহ।
৩) দলের প্রধান মুসলিম এবং একজন পুরুষ হতে পারবেন ।
বিপরীতে রাষ্ট্রীয়ভাবে যে ০৩ বিধান-
১) সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ।
২) সকল সার্বভৌমত্বের মালিক সরকার।
৩) দলের প্রধান ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে যে কেউ হতে পারবেন।
অর্থাৎ জামায়াতের সংবিধানে এই কথা থাকার কারনে এবং এই মৌলিক বিশ্বাসে জামায়াত পরিচালিত হওয়ার কারনেই নিবন্ধন বাতিল হলো।
এখন, প্রশ্ন আসতে পারে যে, এই রাষ্ট্র স্বীকৃত বিধানগুলো যদি জামায়াতে ইসলামী মানতো; তাহলেতো আর নিবন্ধন বাতিল হতোনা! তা সত্য। কিন্তু এই সংগঠন যেহেতু পরিপূর্ণ ইসলামি ভাবধারায় বিশ্বাসী একটি ইসলামি রাজনৈতিক সংগঠন, সেহেতু এসব বিধান ত্যাগ করলে তা আর ইসলামি সংগঠন হওয়ার মতো যোগ্যতা রাখেনা। আর একজন পরিপূর্ণ মুসলিম কখনো আল্লাহ ব্যতীত কাউকে ক্ষমতার উৎস ও সার্বভৌমত্বের মালিক ভাবা শিরকের শামিল হবে। ঈমানের জায়গা হবে প্রশ্নবিদ্ধ! সে সুবাদে নিবন্ধন বাতিল হলেও জামায়াত ইসলামী তার মৌলিক বিশ্বাসে অনড়।
অথচ এই নির্বাচন ও গণতন্ত্রমুখী ইসলামি দলটি যদি ইসলামপন্থী না হতো এবং তথাকথিত ক্ষমতালিপ্সু হতো, তবে কী তাঁরা তাঁদের মৌলিক গঠনতন্ত্র হতে বিচ্যুত হতো না?
মন্তব্য করতে লগইন করুন