আমরা নিজের কাজে খুব ধীরস্থির খুব ভেবে-চিন্তে কাজ করি,কিন্তু মসজিদে আসলেই সেই আমি কেমন যেন তাড়াহুড়ো শুরু করি, যেন আমার চেয়ে ব্যস্ত কোন মানুষই নেই
লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৫:১৯:০২ বিকাল
যে মানুষটা নিজের কাজে খুব ধীরস্থির, খুব ভেবে-চিন্তে কাজ করেন, মসজিদে এলে সেই মানুষটাও কেমন যেন তাড়াহুড়ো শুরু করেন। খুব অদ্ভুত আমাদের আচরণ! আমরা আমাদের ব্যবসায়ে বরকাত চাই, আমাদের হায়াত বৃদ্ধি হোক চাই, আমাদের বিপদ দূর হোক চাই, আমরা চাই যে আমাদের ধন-সম্পদ উত্তোরত্তোর বৃদ্ধি পাক।
কিন্তু, এই যে ব্যবসায়ে বরকত, হায়াত বৃদ্ধি, বিপদ দূরীকরণ কিংবা ধন-সম্পদের উপর্যুপরি বৃদ্ধি পাওয়া- এসবকিছুই যার হাতে, যার নিয়ন্ত্রণে এবং যার আয়ত্তাধীন, সেই মহান রবের সান্নিধ্য পাবার সবচেয়ে কার্যকরী মূহুর্ত হচ্ছে সালাত তথা নামাজ। অথচ সেই নামাজেই আমাদের সমস্ত রাজ্যের উদাসীনতা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, সালাত জিনিসটা যেন আমাদের উপর খুব জোর করে চাপিয়ে দেওয়া কোন বস্তু। কোনোরকমে দুটো সিজদা দিয়ে কাজ সারতে পারলেই যেন আমরা বেঁচে যাই।
এরকম সালাতগুলোর কোন ফল নেই। সালাত হচ্ছে সেই মূহুর্ত, যে মূহুর্তে বান্দা তার রবের সবচেয়ে নিকটে চলে যায়। সালাত হচ্ছে সেই মূহুর্ত, যখন বান্দার সাথে তার রবের কথোপকথন হয়। সালাত হচ্ছে সেই জিনিস যার মাধ্যমে বান্দা রবের কাছে তার সকল সমস্যার ঝুলি, চাওয়া-পাওয়া নিয়ে উপস্থিত হয়। এই সালাত হতে হয় মধুর।
বান্দা তার সমস্ত প্রেম, সমস্ত ধ্যান এই নামাজেই ঢেলে দেবে। আমরা যারা ধুপধাপ সিজদা দিয়ে সালাত আদায় করে রাজ্য উদ্ধার করে ফেলার মতো ভাব নিয়ে থাকি, আমাদের জন্য সবচেয়ে উজ্জ্বল উদাহরণ হলেন আমাদের প্রাণপ্রিয় রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
আম্মাজান আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার বর্ণনা থেকে জানা যায়, তিনি (সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এমনভাবে এবং এতোটা সময় নিয়ে সালাত আদায় করতেন যে, তাঁর পা ফুলে যেতো। এতো দীর্ঘক্ষণ তিনি সালাতে দাঁড়িয়ে থাকতেন। রুকুতে থাকতেন। সিজদায় পড়ে থাকতেন। সুবহানআল্লাহ!
সালাতে মনোযোগ ধরে রাখতে না পারাটাই হলো আমাদের এই উদাসীনতার মূল কারণ। সালাতে দাঁড়িয়ে যদি আমার কাছে আমার অফিসের অতিথির কথা কিংবা কোন গেট টুগেদারের কথা মনে পড়ে, সালাতে দাঁড়ালেই যদি আমি অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি, তাহলে সেই সালাত যতো দ্রুত শেষ করে দেওয়া যায়, ততোই যেন আমার মুক্তি। ঘাঁড় থেকে বোঝা অপসারণের মতো বিষয়। হায় আপসোস!
আমার মনে হয়, কিছু উপায় এবং অভ্যাস নিজেদের মধ্যে গড়ে নিতে পারলে আমরা আমাদের সালাতকে সুন্দর এবং মাধুর্যমন্ডিত করে তুলতে পারবো। যেমন ধরা যাক তাকবিরে তাহরীমা বাঁধার পরের অবস্থা। আপনি যখন ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত বাঁধবেন, তখন কিছু বিষয় মাথায় নিয়ে আসুন।
যেমন, ‘আল্লাহু আকবার’ মানে কি? ‘আল্লাহু আকবার’ অর্থ হলো ‘আল্লাহ হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ’। খেয়াল করুন, আপনি কিন্তু এখানে পজিটিভ কিংবা কম্পারেটিভ ফর্মে আল্লাহকে সম্বোধন করছেন না। আপনি তাঁকে ডাইরেক্ট ‘সুপারলেটিভ’ ফর্মে সম্বোধন করছেন। গুড অথবা বেটার নয়, বেস্ট...
‘আল্লাহু আকবার’ বলার সাথে সাথে আপনি এই মর্মে ঘোষণা দিচ্ছেন যে, আল্লাহ হলেন আপনার জ্ঞাত-অজ্ঞাত সকল সত্ত্বার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সত্ত্বা। তাই, ‘আল্লাহু আকবার’ বলার সাথে সাথে একটি ব্যাপার মাথায় নিয়ে আসুন যে, আপনি এমন এক সত্ত্বার সামনে দাঁড়িয়ে গেছেন, যার ক্ষমতার উপরে দুনিয়ার আর কারো ক্ষমতা নেই। যার দয়ার উপরে দুনিয়ার আর কারো দয়া নেই। আবার, যার শাস্তির উপরে দুনিয়ার আর কারো শাস্তি নেই। আরো ভাবুন, আপনি একজন পাপী। আপনি উঠতে পাপ করেন, বসতে পাপ করেন। আপনি একজন অবাধ্য বান্দা। আপনি ঠিক সেরকম অবস্থায় আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়েছেন, যেরকম অবস্থায় একজন অবাধ্য দাস তার মনিবের সামনে দাঁড়ায়। একজন দাস বা চাকর যেমন অন্যায় করার পরে খুব বিনীত ভঙ্গিতে, ভয়ার্ত চেহারায়, কাঁপা কাঁপা শরীর নিয়ে তার মনিবের সামনে ক্ষমাপ্রার্থনার আশা নিয়ে দাঁড়ায়, আপনিও সেরকম একজন। আল্লাহর ক্ষমা লাভের আশায় আপনি শুরুতেই তাঁর মহিমা ঘোষণা করে দাঁড়িয়ে গেছেন।
এরপর আপনি কুরআন থেকে আপনার প্রিয় অংশগুলো তিলাওয়াত করুন। এরই ফাঁকে একটি চমৎকার হাদীস শুনিয়ে দিই। আল্লাহর রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘বান্দা যখন সালাতে দাঁড়ায়, তখন তার গুনাহগুলো তার শরীর থেকে তার কাঁধ এবং মাথায় চলে আসে। এরপর, সে যখন মাথা নিঁচু করে রুকুতে যায়, তখন সেই গুনাহগুলো তার কাঁধ এবং মাথা থেকে নিচে পড়ে যায়’। [বায়হাকী]
সুবহানআল্লাহ! কি এক সুবর্ণ সুযোগ, তাইনা? আপনি একাগ্রচিত্তে সালাতে দাঁড়ালেন, অমনি আপনার সকল গুনাহ আপনার পুরো শরীর থেকে কাঁধ এবং মাথায় চলে আসলো। আপনি যখন রুকুতে যাবেন, তখন আপনার গুনাহগুলো ঝরে যাবে।
এই কথা সক্রেটিস বা অ্যারিস্টটলের নয়। এই কথা মার্ক টোয়েনের নয়। এই কথাটা পৃথিবীর কোন সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ কিংবা অর্থশাস্ত্রবিদের নয়। এই কথা যিনি বলেছেন তিনি হলেন সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব। রাহমাতুল্লিল আলা’মীন। তাহলে, এই কথায় কি কোন খাঁদ থাকতে পারে? নাহ, অবশ্যই নয়। তিনি যখন বলেছেন রুকুতে গেলে বান্দার গুনাহ ঝরে পড়ে, তখন সেটা অবশ্যই অবশ্যই সত্য।
তাহলে, আপনি যখন দাঁড়িয়ে সূরা পড়ছেন, তখন ভাবুন যে আপনার সমস্ত গুনাহগুলো আপনার কাঁধ এবং মাথায় এসে জমা হচ্ছে। এরপর, আপনি যখন রুকুতে যাবেন- ভাবুন যে আপনার কাঁধ এবং মাথায় উঠে আসা সমস্ত গুনাহগুলো ঝরে ঝরে পড়ে যাচ্ছে।
বিলিভ মি, হাদীসটার উপর আমল করে আপনি যদি এই নিয়্যাত আর ইখলাস নিয়ে সালাত পড়েন, আপনার মনই চাইবেনা রুকু থেকে মাথা উঠাতে। মন চাইবে, থাকি না আরো কিছুক্ষণ। গুনাহগুলো সব ধুঁয়েমুছে ঝরে যাক। তখন রুকুতে আপনি একটা অন্যরকম মজা পেয়ে যাবেন। সেগুলোকে দীর্ঘ করবেন। রুকুর তাসবীহ গুলোতে গভীর মনোযোগ আসবে।
রুকুতে আপনি আরো কিছু ব্যাপার মাথায় রাখতে পারেন। যেমন, আপনি এমন এক সত্ত্বার কাছে মাথা নুইয়ে দিয়েছেন, যিনি এই সুবিশাল সৃষ্টি জগতের অধিপতি। মালিক। যার কাছে আপনি নিতান্ত তুচ্ছ। আপনি দাস, তিনি মালিক। আপনি মাথা নুইয়ে তাঁকে বলছেন- ‘মালিক, আপনি মহান। মালিক, আপনি মহান’।
এরপর, আপনি ‘সামি’আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলে মাথা উঠান। আপনি জানেন এই ‘সামি’আল্লাহু লিমান হামীদাহ’ অর্থ কি? এর অর্থ হলো ‘আমার রব সেই ব্যক্তির প্রশংসা শুনেন যে তাঁর প্রশংসা করে’। সুবহানআল্লাহ। কি দূর্দান্ত একটি কথা। আপনি যখন আল্লাহর প্রশংসা করেন, আল্লাহ তখন সেই প্রশংসা শুনেন। একটু ভাবুন তো, আপনি যখন ফুটবলার মেসির প্রশংসা করেন, মেসি কি সেই প্রশংসা শুনে? শুনেনা। আপনি যখন কোন অভিনেত্রী, কোন গায়ক, কোন শিল্পী বা পৃথিবী বিখ্যাত কোন সেলেব্রেটির প্রশংসায় গদগদ হোন, তাদের কেউ কি আপনার সেই প্রশংসা শুনে? আপনার প্রশংসা আর গুণকীর্তনের ফুলঝুরির বাক্যগুলো তাদের কান পর্যন্ত পৌঁছায়? পৌঁছায় না। অথচ, এই আসমান-জমিন, বিশ্ব জাহানের যিনি মালিক, যার কাছে দুনিয়ার সেলেব্রেটিদের একবিন্দু পরিমাণও মূল্য নেই, সেই সুমহান সত্ত্বা আপনার প্রশংসা শুনেন। আপনি যখন বলেন ‘আলহামদুলিল্লাহ’ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর), তখন সেই শব্দ, সেই প্রশংসা বাক্য আসমান ভেদ করে সোজা আরশে আযীমে পৌঁছে যায়। তাতে কোন বিমান দরকার হয়না, দরকার হয়না কোন সুপার পাওয়ারের রকেট। দরকার হয় কেবল একাগ্রতা, বিনয় আর ইখলাস। ব্যস, আর কিচ্ছু না। এই যে, রাজাধিরাজ আল্লাহ আপনার প্রশংসা শুনছেন, এই ব্যাপারটা শুনতেই তো ভালো লাগে, তাইনা?
এরপর আপনি সিজদায় যান। আবারো মনে করুন আপনি একজন অবাধ্য, গুনাহগার দাস। মনিবের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে একজন দাস কি করে? হাউমাউ করে কেঁদেকুটে মনিবের পা জড়িয়ে ধরে বলে, ‘মাফ করে দেন হুজুর। আমি অন্যায় করেছি। আমি জানি আমি ঠিক করিনি। আমি আপনার কাছে বিনীতভাবে ক্ষমা চাচ্ছি। আপনি আমায় ক্ষমা করে দেন। আপনি মাফ না করলে কে আমাকে মাফ করবে বলুন? আপনি ছাড়া আমার আর কে আছে?’
হ্যাঁ, আল্লাহ ছাড়া আপনার আসলে কেউই নেই। এই দুনিয়ার যতো বন্ধু-বান্ধব, যতো আত্মীয়-স্বজন- কেউই আপনার না। কেবল আল্লাহ সুবনাহু ওয়া’তায়ালাই আপনার।
সিজদায় আপনি সেই সত্ত্বার কাছে লুটিয়ে পড়েছেন, যিনি আপনাকে লালন-পালন করেছেন আপনার মায়ের পেটে। যিনি আপনাকে দুনিয়ার আলো-বাতাস দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আপনি পাপী। আপনি গুনাহগার। আপনাকে ক্ষমা করতে পারে কেবল মাত্র আল্লাহ। সেই আল্লাহর কাছে আপনি লুটিয়ে পড়েছেন। আপনার এখন কাজ কি? আপনার কাজ হচ্ছে যেভাবেই হোক ক্ষমা আদায় করে নেওয়া। কাঁদুন। হুঁহুঁ করে কান্না করুন সিজদায়। চোখের জল ফেলুন। বলুন, ‘আল্লাহ, পাপ করতে করতে নিজেকে পাপের অতল সমুদ্রে ডুবিয়ে ফেলেছি। শ্বাঃস-প্রশ্বাস জুড়ে শুধু পাপ আর পাপ। আমার পাপের স্তুপের কাছে হিমালয় পর্বতও নস্যি। কিন্তু আপনি তো রহমানুর রহিম। দয়ালু। আপনি ক্ষমা না করলে কে এমন আছে যে আমাকে ক্ষমা করবে? রাস্তা দেখাবে? কেউ নেই। আমায় ক্ষমা করে দিন। আমাকে সরল-সহজ পথে পরিচালিত করুন’।
সিজদায় কাঁদুন। বিশ্বাস করুন, সিজদায় যদি আল্লাহর বড়ত্বের কাছে নিজের তুচ্ছতা অন্তরে এনে আল্লাহকে মন থেকে ডাকেন, মাফ চান- তিনি অবশ্যই অবশ্যই আপনাকে মাফ করে দেবেন। সিজদা’র মতো এমন আর কোন মূহুর্ত নেই, যে মূহুর্তে বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়ে যায়।
এভাবে সিজদায় থাকুন। আমি নিশ্চিত, আপনার মন সিজদাহ থেকে উঠতেই চাইবেনা। আপনার মনে হবে, ইশ! এভাবে যদি জনম জনম পার করে দেওয়া যেতো!
চলুন, আমরা আমাদের সালাতটাকে এভাবে আদায় করার চেষ্টা করি। এই সালাত যদি নষ্ট হয়, সবকিছুই নষ্ট। আবার, এই সালাত যদি কবুল হয়, সবকিছুই কবুল হয়ে যায়। সালাতে যতো বেশি সময় দিবেন, ততো বেশি আপনার অন্তর জুড়াবে, শান্ত হবে। আপনার হৃদয়ে সর্বদা প্রশান্তির একটা ভাব বিরাজ করবে।
স্মরণ করি সেই আয়াত যেখানে আল্লাহ বলছেন,- ‘সেসকল মুমিনরা সফলকাম হয়ে গেছে যারা তাদের সালাতে বিনয়ী’। [আল মুমিনূন-০২]
বিষয়: বিবিধ
১২৩৫ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
১. সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সব আইন বাতিল করা।
২. আল্লাহ্, রাসুল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুত্সা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস।
৩. কথিত শাহবাগি আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক-মুরতাদ এবং প্রিয় নবী (সা.)-এর শানে জঘন্য কুত্সা রটনাকারী ব্লগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করা।
৪. ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করা।
৫. ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা।
৬. সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতত্পরতা বন্ধ করা।
৭. মসজিদের নগর ঢাকাকে মূর্তির নগরে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করা।
৮. জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধাবিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করা।
৯. রেডিও-টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাড়ি-টুপি ও ইসলামি কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসিঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করা।
১০. পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিষ্টান মিশনারিগুলোর ধর্মান্তকরণসহ সব অপতত্পরতা বন্ধ করা।
১১. রাসুলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদ্রাসার ছাত্র ও তৌহিদি জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং গণহত্যা বন্ধ করা।
১২. সারাদেশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ ও মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধমকি, ভয়ভীতি দানসহ তাদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করা।
১৩. অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত সব আলেম-ওলামা, মাদ্রাসাছাত্র ও তৌহিদি জনতাকে মুক্তিদান, দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণসহ দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
*নবী এবং রাসূলের মধ্যে পার্থক্য হ’ল, আল্লাহ তা‘আলা যাকে নতুন শরী‘আত দিয়ে তাঁর সম্প্রদায়ের নিকট পাঠান তাঁকে রাসূল বলা হয়। আর যাকে নতুন শরী‘আত না দিয়ে পূর্বের রাসূলের শরী‘আতই প্রচারের দায়িত্ব দিয়ে পাঠান তাঁকে নবী বলা হয় (আলোচনা দ্রঃ সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬৬৮, ৬/১৬৭ পৃঃ)। প্রত্যেক নবী রাসূল নন। তবে প্রত্যেক রাসূলই নবী।
নবী ও রাসূলের সংখ্যা বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি আপনার নিকট ইতিপূর্বে বহু রাসূলের কথা বর্ণনা করেছি এবং অনেক রাসূলের কথা আপনাকে বলিনি (নিসা ১৬৪)। তবে একটি প্রশ্নের জবাবে রাসূল (ছাঃ) বলেন, নবীগণের সংখ্যা হল, ১,২৪,০০০। তার মধ্যে ৩১৩ জন, অন্য বর্ণনায় ৩১৫ জন রাসূল (আহমাদ, সনদ হাসান, আলোচনা দ্রঃ সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬৬৮; ফাৎহুলবারী ১০/১০৪; মিশকাত হা/৫৭৩৭)। চারজন রাসূলের উপর চারটি প্রধান কিতাব নাযিল হয়েছে। মূসা (আঃ)-এর উপরে ‘তাওরাত’, দাঊদ (আঃ)-এর উপরে ‘যাবূর’, ঈসা (আঃ)-এর উপরে ‘ইনজীল’ এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উপরে ‘কুরআন’। কোন কোন নবী ও রাসূলের উপর ছহীফা (পুস্তিকা) আকারে কিতাব নাযিল হয়েছে (আ‘লা ১৯)।
===========================
((((( *4:163 সূরা নিসা* )))))
إِنَّآ أَوْحَيْنَآ إِلَيْكَ كَمَآ أَوْحَيْنَآ إِلٰى نُوحٍ وَالنَّبِيِّۦنَ مِنۢ بَعْدِهِۦ ۚ وَأَوْحَيْنَآ إِلٰىٓ إِبْرٰهِيمَ وَإِسْمٰعِيلَ وَإِسْحٰقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطِ وَعِيسٰى وَأَيُّوبَ وَيُونُسَ وَهٰرُونَ وَسُلَيْمٰنَ ۚ وَءَاتَيْنَا دَاوُۥدَ زَبُورًا
নিশ্চয় আমি তোমার নিকট ওহী পাঠিয়েছি, যেমন ওহী পাঠিয়েছি নূহ ও তার পরবর্তী নবীগণের নিকট এবং আমি ওহী পাঠিয়েছি ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়া‘কূব, তার বংশধরগণ, ঈসা, আইয়ূব, ইউনুস, হারূন ও সুলায়মানের নিকট এবং দাঊদকে প্রদান করেছি যাবূর।
নিশ্চয় আমরা আপনার নিকট ওহী প্রেরণ করেছিলাম [১], যেমন নূহ ও তার পরবর্তী নবীগণের প্রতি ওহী প্রেরণ করেছিলাম [২], আর ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়া’কূব ও তার বংশধরগণ, ঈসা, আইউব, ইউনুস, হারূন ও সুলাইমানের নিকটও ওহী প্রেরণ করেছিলাম এবং দাউদকে প্রদান করেছিলাম যাবূর।
তেইশতম রুকূ‘
[১] নবীগণের প্রতি প্রেরিত আল্লাহ তা'আলার বিশেষ নির্দেশ ও বাণীকে ওহী বলা হয়। হারিস ইবন হিশাম রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনার নিকট অহী কিভাবে আসে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ অহী কোন কোন সময় ঘন্টার আওয়াজের মত আমার নিকট আসে। আর ওটাই আমার পক্ষে সবচেয়ে কষ্টদায়ক অহী, এরপর ফেরেশতা আমার থেকে পৃথক হতো এমতাবস্থায় যে, তিনি যা বলেন তা শেষ হতেই তার কাছ থেকে আমি তা আয়ত্ব করে ফেলি। আবার কোন কোন সময় ফেরেশতা মানুষের আকারে এসে আমাকে যে অহী বলেন, আমি তা সাথে সাথে আয়ত্ব করে নেই। [বুখারীঃ ২]
[২] এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, পূর্ববতী নবীগণের প্রতি যেমন আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী নাযিল হয়েছিল, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিও তেমনি আল্লাহ্ তা’আলা ওহী নাযিল করেছেন। অতএব, পূর্ববর্তী নবীগণকে যারা মান্য করে, তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কেও মান্য করতে বাধ্য। আর যারা তাকে অস্বীকার করে তারা যেন অন্যসব নবীকে এবং তাদের প্রতি প্রেরিত ওহীকেও অস্বীকার করলো।
===========================
(((((((((( *4:164 সূরা নিসা* ))))))))))
وَرُسُلًا قَدْ قَصَصْنٰهُمْ عَلَيْكَ مِن قَبْلُ وَرُسُلًا لَّمْ نَقْصُصْهُمْ عَلَيْكَ ۚ وَكَلَّمَ اللَّهُ مُوسٰى تَكْلِيمًا
আর অনেক রাসূল, যাদের বর্ণনা তোমাকে পূর্বে দিয়েছি এবং অনেক রাসূল, যাদের বর্ণনা তোমাকে দেইনি আর আল্লাহ মূসার সাথে সুস্পষ্টভাবে কথা বলেছেন।
আর অনেক রাসূল, যাদের বর্ণনা আমরা আপনাকে পূর্বে দিয়েছি এবং অনেক রাসূল, যাদের বর্ণনা আমরা আপনাকে দেইনি [১]। আর অবশ্যই আল্লাহ মূসার সাথে কথা বলেছেন।
[১] এ আয়াতে নূহ ‘আলাইহিস সালাম-এর পরে যেসব নবী-রাসূল আগমন করেছেন, তাদের সম্পর্কে প্রথমে সাধারণভাবে বলার পর তন্মধ্যে বিশিষ্ট ও মর্যাদাসম্পন্ন কয়েকজনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বোঝানো হয়েছে যে, এরা সবাই আল্লাহর রাসূল এবং তাদের নিকটও বিভিন্ন পন্থায় ওহী প্রেরিত হয়েছে। কখনো ফিরিশতাদের মাধ্যমে ওহী পৌছেছে, কখনো লিপিবদ্ধ কিতাব আকারে এসেছে, আবার কখনো আল্লাহ্ তা’আলা রাসূলের সাথে পর্দার আড়াল থেকে কথোপকথন করেছেন। যে কোন পন্থায়ই ওহী পৌঁছুক না কেন, তদানুযায়ী আমল করা মানুষের একান্ত কর্তব্য। অতএব, ইয়াহুদীদের এরূপ আবদার করা যে, তাওরাতের মত লিখিত কিতাব নাযিল হলে আমরা মান্য করবো, অন্যথায় নয় -সম্পূর্ণ আহম্মকী ও স্পষ্ট কুফরী। আবু যর গিফারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ *আল্লাহ তা’আলা এক লাখ চব্বিশ হাজার নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন, যাদের মধ্যে স্বতন্ত্র শরীআতের অধিকারী রাসূলের সংখ্যা ছিল তিনশ তের জন* [সিহীহ ইবন হিব্বানঃ ৩৬১]
===========================
**আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক**
শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি
হবেনা"[তিরমিযীঃ২৬৭৪]
(''আব্দুল্লাহ আল সুফিয়ান LH সজল,,)
৷৷৷৷ ওয়াল থেকে।।।।।।
মন্তব্য করতে লগইন করুন