সন্তানের জন্য পিতা-মাতার করণীয় ছেলে মেয়ে উভয় আল্লাহর দেয়া এক বিশেষ নেয়ামত

লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ২৫ জুলাই, ২০১৮, ০২:৪১:৫৮ রাত

সন্তানের জন্য পিতা-মাতার করণীয়।

1- কানে আযান দেয়া : সন্তান দুনিয়াতে আসার পর গোসল দিয়ে পরিষ্কার করে তার ডান কানে আযান দেয়া, তা ছেলে হোক বা মেয়ে হোক। এটি পিতা-মাতার উপর এজন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বযে, শিশুর কানে সর্বপ্রথম আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের আওয়াজ পৌঁছে দেয়া এবং ওত পেতে থাকা শয়তান যাতে তার কোন ক্ষতি না করতে পারে। হাদিসে এসেছে,

عَنْ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ أَبِي رَافِعٍ ، عَنْ أَبِيهِ ، قَالَ : رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم «أَذَّنَ فِي أُذُنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ حِينَ وَلَدَتْهُ فَاطِمَةُ بِالصَّلاَةِ».

আবূ রাফে রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাসান ইবনে আলীর কানে আযান দিতে দেখেছি [সুনান আবূ দাউদ:৫১০৫]

2-- সুন্দর নাম রাখা :

বাচ্চার জন্য সুন্দর নাম নির্বাচন করা পিতা-মাতার অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। নাম অর্থবহ হওয়া নামের সৌন্দর্য। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন অনেক অসুন্দর নাম পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন। [আবু দাউদ ৪৯৫২-৪৯৬১]

3-- আক্বিকা করা :

ইসলামী সংস্কৃতির অন্যতম বিষয় হলো সন্তানের আকীকা করা। ছেলের পক্ষ থেকে ২টি ছাগল এবং মেয়ের পক্ষ থেকে ১টি ছাগল আল্লাহর নামে যবেহ করা। হাদীসে এসেছে,

عَنْ سَمُرَةَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «كُلُّ غُلَامٍ رَهِينَةٌ بِعَقِيقَتِهِ تُذْبَحُ عَنْهُ يَوْمَ السَّابِعِ وَيُحْلَقُ رَأْسُهُ»

সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সকল নবজাতক তার আক্বিকার সাথে আবদ্ধ। জন্মের সপ্তম দিন তার পক্ষ থেকে জবেহ করা হবে। ঐ দিন তার নাম রাখা হবে। আর তার মাথার চুল কামানো হবে। [সুনান আবূ দাউদ: ২৮৩৮]

4-- সদকাহ করা :

ছেলে হোক বা মেয়ে হোক সপ্তম দিবসে চুল কাটা এবং চুল পরিমাণ রৌপ্য সদকাহ করা সুন্নাত। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান রা. এর পক্ষ থেকে ১টি বকরী আকীকা দিয়েছেন এবং বলেছেন, হে ফাতেমা ! তার মাথা মুণ্ডন কর এবং চুল পরিমাণ রৌপ্য সদকাহ কর। [সুনান আত-তিরমিযী: ১৫১৯] এছাড়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুদেরকে খেজুর দিয়ে তাহনীক এবং বরকতের জন্য দো‘আ করতেন। [সহীহ বুখারী: ৩৯০৯; মুসলিম: ২১৪৬]

5-- খাতনা করা :

ছেলেদের খাতনা করানো একটি অন্যতম সুন্নাত। হাদীসে এসেছে,

عَنْ جَابِرٍ قَالَ : «عَقَّ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم عَنِ الْحَسَنِ وَالْحُسَيْنِ وَخَتَنَهُمَا لِسَبْعَةِ أَيَّامٍ».

জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান এবং হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমার সপ্তম দিবসে আকীকা এবং খাতনা করিয়েছেন। [আল-মু‘জামুল আওসাত: ৬৭০৮]

6-- তাওহীদ শিক্ষা দেয়া :

শিশু যখন কথা বলা আরম্ভ করবে তখন থেকেই আল্লাহর তাওহীদ শিক্ষা দতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে লক্ষ্য করে বলেন,

«يَا غُلَامُ إِنِّي أُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ، احْفَظِ اللَّهَ يَحْفَظْكَ، احْفَظِ اللَّهَ تَجِدْهُ تُجَاهَكَ، إِذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللَّهَ، وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ، وَاعْلَمْ أَنَّ الأُمَّةَ لَوْ اجْتَمَعَتْ عَلَى أَنْ يَنْفَعُوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَنْفَعُوكَ إِلَّا بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ لَكَ، وَلَوْ اجْتَمَعُوا عَلَى أَنْ يَضُرُّوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَضُرُّوكَ إِلَّا بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ عَلَيْكَ، رُفِعَتِ الأَقْلَامُ وَجَفَّتْ الصُّحُفُ»

‘হে বৎস! আমি তোমাকে কয়েকটি বাক্য শিখাতে চাই। তুমি আল্লাহর অধিকারের হেফাযত করবে, আল্লাহও তোমার হেফাযত করবেন। তুমি আল্লাহর অধিকারের হেফাযত করবে, তুমি তাঁকে সর্বদা সামনে পাবে। যখন কোন কিছু চাইবে তখন আল্লাহর কাছেই চাইবে। আর যখন সহযোগিতা চাইবে তখন আল্লাহর কাছেই চাইবে। আর জেনে রাখ! যদি পুরো জাতি যদি তোমার কোন উপকার করার জন্য একতাবদ্ধ হয়, তবে তোমার কোন উপকার করতে সমর্থ হবে না, শুধু ততটুকুই করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। আর যদি পুরো জাতি যদি তোমার কোন ক্ষতি করার জন্য একতাবদ্ধ হয়, তবে তোমার কোন ক্ষতি করতে সমর্থ হবে না, শুধু ততটুকুই করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। কলমের লিখা শেষ হয়েছে এবং কাগজসমূহ শুকিয়ে গেছে। [তিরমিযী: ২৫১৬]

7-- কুরআন শিক্ষা দান :

ছোট বেলা থেকেই সন্তানকে কুরআন শিক্ষা দিতে হবে। কেননা কুরআন শিক্ষা করা ফরয। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদের তিনটি বিষয় শিক্ষা দাও। তন্মধ্যে রয়েছে তাদেরকে কুরআন তিলাওয়াত শিক্ষা ও কুরআনের জ্ঞান দাও। [জামিউল কাবীর]

কুরআন শিক্ষা দেয়ার চেয়ে উত্তম কাজ আর নেই। উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ»

‘‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয়।’’ [সহীহ বুখারী:৫০২৭]

8--সলাত শিক্ষা দেয়া ও সলাত আদায়ে অভ্যস্ত করা :

এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার যে পিতা-মাতা তার সন্তানকে সলাত শিক্ষা দিবেন এবং সলাত আদায়ে অভ্যস্ত করাবেন। হাদীসে এসেছে,

عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مُرُوا أَوْلَادَكُمْ بِالصَّلَاةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِينَ وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرٍ وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ فِي الْمَضَاجِعِ»

আমর ইবনে শূয়াইব রাদিয়াল্লাহু আনহু তার বাবা তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদের সলাতের নির্দেশ দাও সাত বছর বয়সে। আর দশ বছর বয়সে সলাতের জন্য মৃদু প্রহার কর এবং শোয়ার স্থানে ভিন্নতা আনো। [সুনান আবূ দাউদ: ৪৯৫]

9-- আদব বা শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া :

সন্তানদের আচরণ শিক্ষা দেয়া পিতামাতার উপর দায়িত্ব ও কর্তব্যের অন্তর্ভূক্ত। লুকমান আলাইহিস সালাম তার সন্তানকে বললেন, ‘আর তুমি মানুষের দিক থেকে তোমার মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। আর যমীনে দম্ভভরে চলাফেরা করো না; নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক, অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না। আর তোমার চলার ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর, তোমার আওয়াজ নীচু কর; নিশ্চয় সবচাইতে নিকৃষ্ট আওয়াজ হল গাধার আওয়াজ।’ [ সূরা লুকমান ১৮,১৯]

10-- আদর স্নেহ ও ভালবাসা দেয়া :

সন্তানদেরকে স্নেহ করা এবং তাদেরকে আন্তরিকভাবে ভালবাসতে হবে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ইবনে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে চুম্বন দিলেন এবং আদর করলেন। সে সময় আকরা ইবনে হাবিস রাদিয়াল্লাহু আনহুও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলতে লাগলেন, আমারতো দশটি সন্তান কিন্তু আমিতো কখনো আমার সন্তানদেরকে আদর স্নেহ করিনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে তাকালেন এবং বললেন, যে অন্যের প্রতি রহম করে না আল্লাহও তার প্রতি রহম করেন না। [সহীহ বুখারী: ৫৯৯৭]

11-- দ্বীনি ইলম শিক্ষা দেয়া :

সন্তানকে দীনি ইলম শিক্ষা দেয়া ফরজ করা হয়েছে। কারণ দ্বীনি ইলম না জানা থাকলে সে বিভ্রান্ত এবং ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হবে। হাদীসে এসেছে-

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ : «طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ»

আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক মুসলিমের উপর জ্ঞানার্জন করা ফরয। [সুনান ইবন মাজাহ: ২২৪]

12-- প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করা :

সন্তানদেরকে প্রাপ্ত বয়স্ক পর্যন্ত লালন-পালন করতে হবে এবং তাদের জন্য প্রয়োজনীয় খরচ করতে হবে।

عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ لِي مِنْ أَجْرٍ فِي بَنِي أَبِي سَلَمَةَ أَنْ أُنْفِقَ عَلَيْهِمْ وَلَسْتُ بِتَارِكَتِهِمْ هَكَذَا وَهَكَذَا إِنَّمَا هُمْ بَنِيَّ قَالَ: «نَعَمْ لَكِ أَجْرُ مَا أَنْفَقْتِ عَلَيْهِمْ»

উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম আবূ সালামার সন্তানদের জন্য আমি যদি খরচ করি এতে কি আমার জন্য প্রতিদান রয়েছে? নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ যতদিন তুমি খরচ করবে ততদিন তোমার জন্য প্রতিদান থাকবে। [সহীহ বুখারী: ৫৩৬৯]

13-- সক্ষম করে তোলা :

সন্তানদেরকে এমনভাবে সক্ষম করে গড়ে তোলা,তারা যেন উপার্জন করার মত যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। সা‘দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে এভাবে বলেছেন,

«إِنَّكَ أَنْ تَدَعَ وَرَثَتَكَ أَغْنِيَاءَ خَيْرٌ مِنْ أَنْ تَدَعَهُمْ عَالَةً يَتَكَفَّفُونَ النَّاسَ فِي أَيْدِيهِمْ»

তোমাদের সন্তান সন্ততিদেরকে সক্ষম ও সাবলম্বি রেখে যাওয়া, তাদেরকে অভাবী ও মানুষের কাছে হাত পাতা অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে উত্তম। [সহীহ বুখারী:১২৯৫]

14-- বিবাহ দেয়া :

সুন্নাহ পদ্ধতিতে বিবাহ দেয়া এবং বিবাহর যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা এবং উপযুক্ত সময়ে বিবাহর ব্যবস্থা করা। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, নিশ্চয়ই পিতার উপর সন্তানের হকের মধ্যে রয়েছে, সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হলে তাকে বিবাহ দেবে। [জামিউল কাবীর]

15-- দ্বীনের পথে পরিচালিত করা :

পিতা-মাতার অন্যতম দায়িত্ব হলো সন্তানদেরকে দ্বীনের পথে, কুরআন-সুন্নাহর পথে পরিচালনা করা, দ্বীনের বিধান পালনের ক্ষেত্রে অভ্যস্ত করে তোলা। কুরআনে এসেছে,

﴿قُلۡ هَٰذِهِۦ سَبِيلِيٓ أَدۡعُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِۚ عَلَىٰ بَصِيرَةٍ أَنَا۠ وَمَنِ ٱتَّبَعَنِيۖ وَسُبۡحَٰنَ ٱللَّهِ وَمَآ أَنَا۠ مِنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ ١٠٨﴾ [يوسف:108]

‘ বল, ‘এটা আমার পথ। আমি জেনে-বুঝে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেই এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে তারাও। আর আল্লাহ পবিত্র মহান এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত নই’। [সূরা ইউসুফ : ১০৮]

সন্তানকে দ্বীনের পথে পরিচালনার মাধ্যমে সওয়াব অর্জন করার এক বিরাট সুযোগ রয়েছে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন,

«فَوَاللَّهِ لَأَنْ يُهْدَى بِكَ رَجُلٌ وَاحِدٌ خَيْرٌ لَكَ مِنْ حُمْرِ النَّعَمِ»

তোমার মাধ্যমে একজনও যদি হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়, তবে তা হবে তোমার জন্য লালবর্ণের অতি মূল্যবান উট থেকেও উত্তম। [সহীহ বুখারী]

16-- সন্তানদের মাঝে ইনসাফ করা :

সন্তানগণ পিতামাতার কাছ থেকে ইনসাফ আশা করে এবং তাদের মাঝে ইনসাফ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক করে বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমাদের সন্তাদের মাঝে ইনসাফ করো’। [সহীহ বুখারী: ২৫৮৭]

17-- ইসলাম অনুমোদন করে না এমন কাজ থেকে বিরত রাখা :

ইসলাম অনুমোদন করে না এমন কাজ থেকে তাদেরকে বিরত না রাখলে এই সন্তানগনই কিয়ামাতে পিতামাতার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। কুরআনে এসেছে,

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ قُوٓاْ أَنفُسَكُمۡ وَأَهۡلِيكُمۡ نَارٗا ﴾ [التحريم:6]

হে ইমানদারগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও। [সূরা আত-তাহরীম-৬]

﴿وَقَالَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ رَبَّنَآ أَرِنَا ٱلَّذَيۡنِ أَضَلَّانَا مِنَ ٱلۡجِنِّ وَٱلۡإِنسِ نَجۡعَلۡهُمَا تَحۡتَ أَقۡدَامِنَا لِيَكُونَا مِنَ ٱلۡأَسۡفَلِينَ ٢٩﴾ [فصلت: 29]

আর কাফিররা বলবে, ‘হে আমাদের রব, জ্বিন ও মানুষের মধ্যে যারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে তাদেরকে আমাদের দেখিয়ে দিন। আমরা তাদের উভয়কে আমাদের পায়ের নীচে রাখব, যাতে তারা নিকৃষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হয়। [সূরা হা-মীম আসসিজদাহ-২৯ ]

18-- পাপকাজ, অশ্লিলতা, বেহায়াপনা, অপসংস্কৃতি থেকে বিরত রাখা :

সন্তান দুনিয়ার আসার সাথে সাথে শয়তান তার পেছনে লেগে যায় এবং বিভিন্নভাবে, ভিন্ন ভিন্ন রুপে,পোশাক-পরিচ্ছেদের মাধ্যমে, বিভিন্ন ফ্যাশনে, বিভিন্ন ডিজাইনে, বিভিন্ন শিক্ষার নামে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র করে। তাই পিতা-মাতাকে অবশ্যই এ বিষয়ে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন,

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّ مِنۡ أَزۡوَٰجِكُمۡ وَأَوۡلَٰدِكُمۡ عَدُوّٗا لَّكُمۡ فَٱحۡذَرُوهُمۡۚ وَإِن تَعۡفُواْ وَتَصۡفَحُواْ وَتَغۡفِرُواْ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٌ ١٤ ﴾ [التغابن:14]

হে মুমিনগণ, তোমাদের স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদের কেউ কেউ তোমাদের দুশমন। অতএব তোমরা তাদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। আর যদি তোমরা মার্জনা কর, এড়িয়ে যাও এবং মাফ করে দাও তবে নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, অসীম দয়ালু। [সূরা তাগাবুন-১৪]

হাদীসে এসেছে,

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ، قَالَ : «لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْمُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ وَالْمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ»

ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলে করীম রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষের বেশ ধারণকারী নারী ও নারীর বেশ ধারণকারী পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন। [সহীহ বুখারী:৫৮৮৫]

আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم « مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ ».

‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাথে সা-দৃশ্যতা রাখবে সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে। [সুনান আবূ দাউদ:৪০৩১]

19-- দো‘আ করা :

আমাদের সন্তানদের জন্য দো‘আ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দো‘আ শিক্ষা দিয়েছেন এভাবে,

﴿ وَٱلَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبۡ لَنَا مِنۡ أَزۡوَٰجِنَا وَذُرِّيَّٰتِنَا قُرَّةَ أَعۡيُنٖ وَٱجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِينَ إِمَامًا ٧٤ ﴾ [الفرقان: 74]

আল্লাহর নেক বান্দা তারাই যারা বলে, হে আমাদের রব, আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন। [সূরা আলফুরকান-৭৪]

যাকারিয়্যা আলাইহিস সালাম আল্লাহর নিকট দো‘আ করেছিলেন,

﴿ هُنَالِكَ دَعَا زَكَرِيَّا رَبَّهُۥۖ قَالَ رَبِّ هَبۡ لِي مِن لَّدُنكَ ذُرِّيَّةٗ طَيِّبَةًۖ إِنَّكَ سَمِيعُ ٱلدُّعَآءِ ٣٨ ﴾ [ آل عمران:38]

‘হে আমার রব, আমাকে আপনার পক্ষ থেকে উত্তম সন্তান দান করুন। নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী’। [সূরা আলে ইমরান ৩৮]

সম্মানিত পিতামাতাবৃন্দ, আমরা কি সন্তানের হকগুলো পালন করতে পেরেছি বা পারছি ? আসুন, আমরা আমাদের সন্তানদেরকে নেকসন্তান হিসাবে গড়ে তুলি। যে সম্পর্কে হাদিসে এসেছে,

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ « إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ»

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৩ টি আমল বন্ধ হয় না-

১. সদকায়ে জারিয়া

২. এমন জ্ঞান-যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়

৩. এমন নেক সন্তান- যে তার জন্য দো‘আ করে [সহিহ মুসলিম:১৬৩১]

আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সন্তানদেরকে কবুল করুন,

তাদের হকসমূহ যথাযথভাবে পালন করার তাওফীক দিন। আমীন!

বিষয়: বিবিধ

১৬৩৪ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

385700
২৯ জুলাই ২০১৮ রাত ০১:৫৪
কুয়েত থেকে লিখেছেন : মাওলানা সা’দ ও তার অনুসারীদের নিষিদ্ধসহ তাবলিগে ৬ সিদ্ধান্ত28 Jul, 2018
তাবলিগ জামায়াতের চলামন সংকট নিরসনে নতুন ধারার কোনো তাবলিগ না আসতে দেয়াসহ ছয়টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাবলিগ জামায়াতের এক জোড় (সম্মেলন) থেকে উলামায়ে কেরাম এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাবলিগের চলমান সংকট নিরসন ও মাওলানা মুহাম্মদ সা’দ কান্ধলভীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত ও উলামায়ে কেরামের অবস্থান পরিষ্কার করতে শনিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরে এই জোড় আয়োজন করা হয়।

এতে ছয়টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জোড় শেষে উলামায়ে কেরামের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে সবাই একমত পোষণ করেন। আল্লামা শাহ আহমদ শফীর বয়ান ও দোয়ার মাধ্যমে দুপুর ১টায় জোড় শেষ হয়।

জোড়ে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো হলো-

১. তিনটি মৌলিক কারণে- (ক) কোরআন ও হাদিসের মনগড়া ব্যাখ্যা, (খ) তাবলিগের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে তাবলিগ ব্যতীত দ্বীনের অন্যান্য মেহনতকে যথা দ্বীনি শিক্ষা ও তাসাউফ ইত্যাদিকে হেয়প্রতিপন্ন করা, এবং (গ) পূর্ববর্তী তিন হজরতজি (হজরত মাওলানা ইলিয়াস (রহ), হজরত মাওলানা ইউসুফ (রহ) ও হজরত মাওলানা এনামুল হাসান (রহ) এর উসুল ও কর্মপন্থা থেকে সরে যাওয়ার কারণে বর্তমানে মাওলানা মুহাম্মদ সা’দকে অনুসরণ করা সম্পূর্ণভাবে বর্জনীয় ও নিষিদ্ধ।

২. মাওলানা মুহাম্মদ সা’দ হজরত মাওলানা এনামুল হাসান (রহ) এর রেখে যাওয়া শুরা ব্যবস্থাকে উপক্ষা করে নিজেই নিজেকে আমির দাবি করেছেন, যা শরিয়ত বিরোধী। তাই তার কোনো সিদ্ধান্ত, ফায়সালা বা নির্দেশ কাকরাইল তথা বাংলাদেশে বাস্তবায়িত করা যাবে না।

৩. দারুল উলুম দেওবন্দ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, মাওলানা সা’দ সাহেব আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শ থেকে সরে গিয়ে নতুন কোনো ফেরকা গঠনের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কোনো জামাত বা ব্যক্তিকে নেযামুদ্দিনে পাঠানো বা যাওয়া মুনাসিব (উচিত) হবে না। অনুরূপভাবে নেযামুদ্দিন থেকে আগত কোনো জামাতকে বাংলাদেশের কোনো জেলায়, থানায় কিংবা ইউনিয়নে কাজ করার সুযোগ দেয়া যাবে না।

৪. হজরত মাওলানা ইলিয়াস (রহ), হজরত মাওলানা ইউসুফ (রহ) ও হজরত মাওলানা এনামুল হাসান (রহ) এর বাতলানো পদ্ধতিতে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ সারা দুনিয়াতে সমাদৃত ও গৃহীত হয়েছে। তাই বাংলাদেশের তাবলিগের কাজ পূর্ববর্তী এই তিন হজরতের পদ্ধতিতে এবং উলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। নতুন কোনো পদ্ধতি চালু করা যাবে না। কাকরাইল, টঙ্গী ময়দান এবং জেলা মারকাযসহ সকল মারকায এই নীতিতেই পরিচালিত হবে।

৫. কাকরাইল মসজিদের যে সমস্ত শুরা সদস্য আমরণ মাওলানা মুহাম্মদ সা’দের ভ্রান্ত আকিদা অনুসরণের হলফনামা করেছেন যা শরিয়ত পরিপন্থি, তারা শুরার সদস্য থাকার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছেন। অতএব, তাদেরকে তাবলিগের কাজে শুরা ও ফায়সাল না রাখার আহ্বান জানানো যাচ্ছে।

৬. টঙ্গী ইজতেমায় সরকারের সাথে পরামর্শক্রমে আগামী ২০১৯ সালের টঙ্গী ইজতেমার জন্য নির্ধারিত তারিখ- প্রথম পর্ব ১৮, ১৯, ২০ জানুয়ারি ও দ্বিতীয় পর্ব ২৫, ২৬, ২৭ জানুয়ারির বিষয়ে আজকের মজমা (সম্মেলন) ঐকমত্য পোষণ করছে।

উপরোক্ত সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নে এবং বর্তমানে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজে সুষ্ঠু, শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছে।

এর আগে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, আমরা আলেমদের কথামতো চলব, তাবলিগের কাজ করব। অন্য কারো কথা মানব না, আমল করব না। যিনি আলেম না, তিনি কোনো মাজহাব বানালে আপনারা তার কথা শুনবেন না। এই আলেম-ওলামা, যারা বাংলার সিংহ আপনারা তাদের কথা শুনবেন।

তিনি বলেন, সবাই গ্রামে গ্রামে জামাত নিয়ে বের হোন যাতে অন্য কোনো নতুন তাবলিগ শুরু হতে না পারে। মাদ্রাসা বন্ধ দিয়ে হলেও তাবলিগে বের হতে হবে উলামাদের। নতুন নতুন যারা বিভিন্ন কথা বলছে, তাদের কথা মানা যাবে না।

জোড়ে জামিয়া শরইয়্যাহ মালিবাগ মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আল্লামা আশরাফ আলী, জামিয়া বারিধারার মুহতামিম আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী, মারকাজুদ দাওয়ার আমিনুত তালিম মুফতি আবদুল মালেক, কিশোরগঞ্জ জামিয়া ইমদাদিয়ার মুহাতামিম আল্লামা আজহার আলী আনোয়ার শাহ, ফরিদাবাদ মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, শাইখ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ, জামিয়া রাহমানিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহফুজুল হক, লালবাগ জামিয়ার মুহাদ্দিস মুফতি ফয়জুল্লাহ, বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের প্রধান মুফতি মুফতি এনামুল হক, বারিধারা মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মুফতি ওবায়দুল্লাহ ফারুক, আরজাবাদ মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া, উত্তরা আল মানহাল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা কেফায়াতুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
385719
০২ আগস্ট ২০১৮ রাত ০৩:০৪
কুয়েত থেকে লিখেছেন : হজ্ব এর আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থ:

হজ্ব আরবি শব্দ। অর্থ নিয়ত করা, দর্শন করা,
সঙ্কল্প করা, এরাদা করা, গমন করা, ইচ্ছা করা,
প্রতিজ্ঞা করাসহ , কোনো মহৎ কাজে
ইচ্ছা করা। আর শরিয়তের পরিভাষায় নির্দিষ্ট
দিনে নিয়তসহ ইহরামরত অবস্থায় আরাফার
ময়দানে অবস্থান করা এবং বায়তুল্লাহ শরীফ
তাওয়াফ করা।
আবার কেউ বলেন, জিলহজ্বের ৯ তারিখ
ইহরাম বেঁধে আরাফাতের মাঠে অবস্থানসহ
কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে নির্ধারিত কয়েকটি
আমল যথাযথভাবে আদায় করে কাবা গৃহ
তাওয়াফ করাকে হজ্ব বলে।

হজ্বের প্রকার:
হজ তিন প্রকার যথা :
1. হজে ইফরাদ : অর্থাৎ হজের সফর শুরু
করার সময় মিকাত থেকে যদি শুধু হজের
নিয়তে ইহরাম বাঁধে এবং হজের সঙ্গে
ওমরাহ আদায় না করে তাহলে এ প্রকার
হজকে ‘হজে ইফরাদ’ বলা হয়। এ প্রকার হজ
পালনকারীকে শরিয়তের পরিভাষায় ‘ মুফরিদ ’
বলে।
2. হজে কিরান : যদি একই সঙ্গে হজ এবং
ওমরাহর নিয়ত করে উভয়টিই পালন করে এবং
হজ ও ওমরাহর জন্য একই ইহরাম বাঁধে,
তাহলে এ ধরনের হজকে শরিয়তের
পরিভাষায় ‘হজে কিরান’ বলা হয়। এ প্রকার হজ
পালনকারীকে ‘ কারিন’ বলে।

3. হজে তামাত্তু : অর্থাৎ হজের সঙ্গে
ওমরাহকে এভাবে মেলানো যে ‘মিকাত’
থেকে শুধু ওমরাহর ইহরাম বাঁধা। এই ইহরামে
মক্কায় পৌঁছে ওমরাহ পালনের পর ইহরাম
ভেঙে ৭ জিলহজ সেখান থেকেই
হজের ইহরাম বেঁধে হজ পালন করাকে
শরিয়তের পরিভাষায় ‘হজে তামাত্তু’ বলে। এ
প্রকারের হজ পালনকারীকে ‘মুতামাত্তি ’
বলে।

হজ্জ কাহার উপর ফরজ।

(১) মুসলিম হওয়া

(২) বালিগ হওয়া

(৩) স্বাধীন হওয়া

(৪) বিবেকবান হওয়া

(৫)নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক যে ব্যক্তির এ পরিমাণ ধনসম্পদ আছে যে, সে হজের সফর (পথ খরচ) বহন করতে সক্ষম এবং তার অনুপস্থিতিকালীন তার পরিবারবর্গের প্রয়োজন মেটানোর মতো খরচও রেখে যেতে সক্ষম, এমন ব্যক্তির ওপর হজ ফরজ। অথবা এমন ব্যক্তি যে হজের মৌসুমে অর্থাৎ শাওয়াল মাস শুরু হওয়া থেকে সৌদি আরবে অবস্থানরত ছিল এবং জিলহজ মাস পর্যন্ত সৌদি আরবে অবস্থান করতে থাকে এবং তার ওপর যদি কোনো বিধি-নিষেধ, ওজর ও অসুবিধা না থাকে তাহলে তার ওপরও হজ পালন করা ফরজ ইত্যাদি।

(৬) যাতায়াতে নিরাপত্তা

(৭) মহিলাদের সাথে মাহরুম থাকা

হজের প্রকারগুলো।

হজ তিন প্রকার যথা :

এক. হজে ইফরাদ : অর্থাৎ হজের সফর শুরু করার সময় মিকাত থেকে যদি শুধু হজের নিয়তে ইহরাম বাঁধে এবং হজের সঙ্গে ওমরাহ আদায় না করে তাহলে এ প্রকার হজকে ‘হজে ইফরাদ’ বলা হয়। এ প্রকার হজ পালনকারীকে শরিয়তের পরিভাষায় ‘মুফরিদ’ বলে।

দুই. হজে কিরান : যদি একই সঙ্গে হজ এবং ওমরাহর নিয়ত করে উভয়টিই পালন করে এবং হজ ও ওমরাহর জন্য একই ইহরাম বাঁধে, তাহলে এ ধরনের হজকে শরিয়তের পরিভাষায় ‘হজে কিরান’ বলা হয়। এ প্রকার হজ পালনকারীকে ‘কারিন’ বলে।

তিন. হজে তামাত্তু : অর্থাৎ হজের সঙ্গে ওমরাহকে এভাবে মেলানো যে ‘মিকাত’ থেকে শুধু ওমরাহর ইহরাম বাঁধা। এই ইহরামে মক্কায় পৌঁছে ওমরাহ পালনের পর ইহরাম ভেঙে ৭ জিলহজ সেখান থেকেই হজের ইহরাম বেঁধে হজ পালন করাকে শরিয়তের পরিভাষায় ‘হজে তামাত্তু’ বলে। এ প্রকারের হজ পালনকারীকে ‘মুতামাত্তি’ বলে।

এই তিন প্রকারের হাজ্জের ভিতর কিরান হাজ্জ সবচেয়ে ফযীলতপূর্ণ একটি হাজ্জ। দশম হিজরী সালে মুহাম্মদ (সাঃ) কিরান হাজ্জ সম্পাদন করেছিলেন।

হজ্বের ফরজ

হজ্বের ফরজ তিনটি-

১· ইহরাম বাঁধা অর্থাৎ হজ্বের নিয়ত করা। আল্লাহুম্মা ইন্নি উরিদুল হাজ্জা ওয়াল উমরাতা ওয়াজ জিয়ারাতা ফাইয়াস সিরহুলি ওয়াতাক্কাব্বালহু মিন্নি- অর্থ ‘ হে আল্লাহ! আমি হজ্ব উমরা এবং কাবাগৃহ তাওয়াফের জন্য নিয়ত করলাম। তুমি তা কবুল কর।

ইহরাম বাঁধার নিয়ম : হজ ও ওমরাহর আমলগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম আমল হলো ইহরাম বাঁধা। ইহরাম বাঁধার নিয়ম হলো- হজ অথবা ওমরাহর নিয়তে সেলাইকৃত কাপড় খুলে সেলাইবিহীন দুটি চাদর পরিধান করে ‘তালবিয়াহ্’ পাঠ করা, শরিয়তের পরিভাষায় একেই ‘ইহরাম’ বলা হয়। ইহরাম বাঁধার উত্তম পদ্ধতি হলো-যখন ইহরাম বাঁধার ইচ্ছা করবে তখন প্রথমে গোসল অথবা অজু করবে, নখ কাটবে, বগল ও নাভীর নিচের চুল পরিষ্কার করবে এবং মাথা ও দাড়ি চিরুনি করে সর্ববিষয়ে পরিচ্ছন্নতা অর্জন করবে। ইহরামের জন্য দুটি নতুন অথবা ধোলাই করা পরিষ্কার চাদর হওয়া সুন্নত। একটি চাদর দিয়ে লুঙ্গি বানাবে অন্যটি দিয়ে চাদর বানাবে। ইহরামের কাপড় পরিধান করার পর নামাজের মাকরুহ সময় না হলে মাথা ঢেকে দুই রাকাআত নফল নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব। নামাজ পড়ে মাথার কাপড় খুলে ফেলবে এবং যেই হজের ইচ্ছা করবে মনে মনে সেই হজের নিয়ত করে ইহরামের ‘তালবিয়াহ্’ পাঠ করবে।

তালবিয়াহ্র উচ্চারণ :

‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা-শারীকালাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা, লাকা ওয়াল মুল্‌ক লা-শারীকালাক’

২· জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখ ফজরের পর থেকে সূর্যাস্ত যাওয়া পর্যন্ত্ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা।

’৩· তাওয়াফে জিয়ারাত অর্থাৎ মক্কা শরীফ পৌঁছার পর সর্বপ্রথম কাজটি হলো চারবার কাবাগৃহটি প্রদক্ষিণ করা আবার হজ্বের কাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরার সময় সর্বশেষ কাজ হলো তিনবার কাবাগৃহ প্রদক্ষিণ করে রওনা হওয়া।

হজ্বের ওয়াজিব

হজ্বের ওয়াজিব কাজ সাতটি-

১· সাফা ও মারওয়া উভয় পাহাড় সাতবার প্রদড়্গিণ করা।

২· মুজদালিফায় রাত যাপন করা।

৩· মিনায় তিনটি জামরাতে তিনদিনে প্রত্যেক জামরাতে ৭টি করে ৭*৭=৪৯টি পাথর শয়তানের উদ্দেশে নিক্ষেপ করা,

৪· মিনার ময়দানে কোরবানি করা,

৫· মাথা মুণ্ড করা,

৬· ফরজ তাওয়াফ শেষে ৩ চক্কর দেয়া,

৭· বিদায়ী তাওয়াফ করা

মিকাত পাঁচটি :
১. যুল হুলায়ফা বা বীরে আলী : মদীনাবাসী এবং
মদীনা হয়ে মক্কায় প্রবেশকারীদের মিকাত, ২.
ইয়ালামলাম : দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহ থেকে
জেদ্দা হয়ে মক্কা প্রবেশকারীদের মিকাত। ৩.
আল-জুহফা : সিরিয়া, মিসর এবং সেদিক থেকে
আগতদের মিকাত। ৪. কারনুল মানাজিল বা আসসায়েল
আল-কাবির : নাজদ থেকে আগতদের জন্য মিকাত
এবং ৫. যাতুল ইর্ক : ইরাক থেকে আগতদের জন্য
মিকাত।
385720
০২ আগস্ট ২০১৮ রাত ০৩:৪০
কুয়েত থেকে লিখেছেন : হজ্জ্ব ও ওমরার গুরুত্ব ও ফযীলত
ইসলামের মূল স্তম্ভসমূহের পঞ্চমটি হল হজ্বে বায়তুল্লাহ। ঈমান, নামায, যাকাত ও রোযার পরই হজ্বের অবস্থান। হজ্ব মূলত কায়িক ও আর্থিক উভয়ের সমন্বিত একটি ইবাদত। তাই উভয় দিক থেকে সামর্থ্যবান মুসলিমের উপর হজ্ব পালন করা ফরয। অর্থাৎ হজ্ব আদায়ে সক্ষম এমন শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচাপাতি ও আসবাবপত্রের অতিরিক্ত হজ্বে যাওয়া-আসার ব্যয় এবং হজ্ব আদায়কালীন সাংসারিক ব্যয় নির্বাহে সক্ষম এমন সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর হজ্ব আদায় করা ফরয। যা সক্ষম ব্যক্তির জীবনে একবারই ফরজ। হজ্জ অস্বীকারকারী ইসলাম থেকে সম্পূর্ণরুপে খারিজ হয়ে যায়। আল্লাহ তা’লা বলেন, وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلْبَيْتِ مَنِ ٱسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا ۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِىٌّ عَنِ ٱلْعَٰلَمِينَ এবং সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ্জ করা ফরয। আর যে কুফরী করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী। ( সূরা আলে ইমরান,আয়াতঃ ৯৭) হজ্জ ও ওমরার আভিধানিক ও পারিভাষিক সংজ্ঞাঃ —————————————————– হজ্জ শব্দটি ح বর্ণে যবরযুক্ত করে حَجٌّ(হাজ্জুন) কিংবা যেরযুক্ত করে حِجٌّ (হিজ্জুন) উভয়ভাবেই পড়া যায়। ইমাম নব্বী রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন, হাজ্জুন যবরযুক্ত হলে মাসদার অর্থে হজ্জ করা অর্থে ব্যবহ্রত হবে। হজ্জকে আরবিতে মানাসিকও (مناسك)বলা হয়। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে একাধিক স্থানে মানাসিক বলে হজ্জকে বুঝানো হয়েছে। আভিধানিকঃ হজ্জ শব্দের অর্থ হলো ইচ্চা করা, সংকল্প করা ইত্যাদি। নিহায়া অভিধানে আছে যে, কোনো জিনিসের উদ্দেশ্যে সংকল্প করাকেই হজ্জ বলা হয়। তবে মুহাক্কিকগণের মতে, কোনো মহৎ জিনিসের উদ্দেশ্যে সংকল্প করাকে হজ্জ বলা হয়। যারা হজ্জ করেন তারা সাধারণত একটি বিশেষ পর্যায়ের সংকল্প, আকাঙ্ক্ষা ও মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে হজ্জ করে থাকেন বিধায় একে হজ্জ বলে। হজ্জ আরবি শব্দ। অর্থ নিয়ত করা, দর্শন করা, সঙ্কল্প করা, এরাদা করা, গমন করা, ইচ্ছা করা, প্রতিজ্ঞা করাসহ , কোনো মহৎ কাজে ইচ্ছা করা। আর শরিয়তের পরিভাষায় নির্দিষ্ট দিনে নিয়তসহ ইহরামরত অবস্থায় আরাফার ময়দানে অবস্থান করা এবং বায়তুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করা। পারিভাষিক সংজ্ঞাঃ আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন, هوالقصد إلى البيت الحرام باعمال مخصوصة অর্থাৎ বিশেষ কিছু আমল সম্পাদনসহ পবিত্র কা’বাগৃহের উদ্দেশ্যে গমন করাকে হজ্জ বলে। আবার কেউ কেউ বলেন, নির্দিষ্ট আমলসহ নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে গমন করাকে হজ্জ বলে। হজ্জের প্রধান লক্ষ্য হলো বায়তুল্লাহ শরিফের যিয়ারত- ইরশাদ হচ্ছে- إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِى بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَهُدًى لِّلْعَٰلَمِينَ নিশ্চয় প্রথম ঘর, যা মানুষে জন্য স্থাপন করা হয়েছে, তা মক্কায়। যা বরকতময় ও হিদায়াত বিশ্ববাসীর জন্য। (সূরা আলে ইমরান,আয়াতঃ৯৬) আবার কেউ বলেন, জিলহজ্বের ৯ তারিখ ইহরাম বেঁধে আরাফাতের মাঠে অবস্থানসহ কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে নির্ধারিত কয়েকটি আমল যথাযথভাবে আদায় করে কাবা গৃহ তাওয়াফ করাকে হজ্ব বলে। শরহে বিকায়া গ্রন্থাগার বলেন, “নির্দিষ্ট সময়ে সুনির্দিষ্ট স্থান যিয়ারত করার নাম হল হাজ্জ”। উমরার আভিধানিক অর্থ: ——————————- যিয়ারত করা। শরীয়তের পরিভাষায় উমরা অর্থ, নির্দিষ্ট কিছু কর্ম অর্থাৎ ইহরাম, তাওয়াফ, সাঈ ও মাথা মুণ্ডন বা চুল ছোট করার মাধ্যমে বায়তুল্লাহ শরীফের যিয়ারত করা।[ড. সাঈদ আল-কাহতানী, আল-উমরাতু ওয়াল হাজ্জ ওয়ায যিয়ারাহ, পৃ. ৯। হজ্ব ও ওমরার ফযিলত: ———————————– হজ্জ পালন উত্তম ইবাদাত: عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ سُئِلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَيُّ الأَعْمَالِ أَفْضَلُ قَالَ إِيمَانٌ بِاللهِ وَرَسُولِهِ قِيلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ جِهَادٌ فِي سَبِيلِ اللهِ قِيلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ حَجٌّ مَبْرُورٌ হযরত আবূ হুরাইরাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনা। জিজ্ঞেস করা হলো, অতঃপর কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহর পথে জিহাদ করা। জিজ্ঞেস করা হলো, অতঃপর কোনটি? তিনি বলেনঃ হাজ্জ-ই-মাবরূর (মাকবূল হাজ্জ)। (বুখারী,হাদিস নং-১৫১৯) অন্য রেওয়াতে রয়েছে: عَنْ عَائِشَةَ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ أَنَّهَا قَالَتْ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم نَرَى الْجِهَادَ أَفْضَلَ الْعَمَلِ أَفَلاَ نُجَاهِدُ قَالَ لاَ لَكِنَّ أَفْضَلَ الْجِهَادِ حَجٌّ مَبْرُورٌ উম্মুল মু‘মিনীন ‘আয়িশাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! জিহাদকে আমরা সর্বোত্তম ‘আমল মনে করি। কাজেই আমরা কি জিহাদ করবো না? তিনি বললেনঃ না, বরং তোমাদের জন্য সর্বোত্তম জিহাদ হল, হাজ্জে মাবরূর। (সহীহ বুখারী,হাদিস নং-১৫২০) عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : العمرة إلى العمرة كفارة لما بينهما ، والحج المبرور ليس له جزاء إلا الجنة ،، আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘এক উমরা হতে অন্য উমরা, এ দুয়ের মাঝে যা কিছু (পাপ) ঘটবে তার জন্য কাফফারা। আর মাবরুর হজের বিনিময় জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয়।”(বোখারি : হাদিস নং ১৬৫০) হাদিসে আরো এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, إن الإسلام يهدم ما كان قبله ، و أن الهجرة تهدم ما كان قبلها ، وأن الحج يهدم ما كان قبله ،، ‘কারো ইসলাম-গ্রহণ পূর্বকৃত সকল পাপকে মুছে দেয়। হিজরত তার পূর্বের সকল গুনাহ মুছে দেয়, ও হজ তার পূর্বের সকল পাপ মুছে দেয়। (মুসলিম : হাদিস নং১৭৩) ইবনে মাসউদ হতে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, تابعوا بين الحج والعمرة ، فإنهما ينفيان الفقر والذنوب كما ينفي الكير خبث الحديد والذهب والفضة وليس للحج المبرور ثواب إلا الجنة ‘তোমরা পর পর হজ ও উমরা আদায় করো। কেননা তা দারিদ্র্য ও পাপকে সরিয়ে দেয় যেমন সরিয়ে দেয় কামারের হাপর লোহা-স্বর্ণ-রুপার ময়লাকে। আর হজ্জে মাবরুরের ছোয়াব তো জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয়।–(সহিহুন্নাসায়ি : ২/৫৫৮) উপরে উল্লেখিত হাদিসসমূহের বক্তব্য অত্যন্ত স্পষ্ট। তাই হজ পালনেচ্ছু প্রতিটি ব্যক্তিরই উচিত পবিত্র হজের এই ফজিলতসমূহ ভরপুরভাবে পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করে যাওয়া। হজ কবুল হওয়ার সকল শর্ত পূর্ণ করে সমস্ত পাপ ও গুনাহ থেকে মুক্ত থেকে কঠিনভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা। হাজ্ব ও ওমরা পালনকারীগন আল্লাহর মেহমান: হাদিস শরীফে এসেছে,عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ ‏ “‏ الْغَازِي فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْحَاجُّ وَالْمُعْتَمِرُ وَفْدُ اللَّهِ دَعَاهُمْ فَأَجَابُوهُ وَسَأَلُوهُ فَأَعْطَاهُمْ হযরক ইবনে উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন: আল্লাহর পথের সৈনিক, হজ্জযাত্রী ও উমরা যাত্রীগণ আল্লাহর প্রতিনিধি। তারা আল্লাহর নিকট দোয়া করলে তিনি তা কবুল করেন এবং কিছু চাইলে তা তাদের দান করেন। (ইবনু মাজাহ,হাদিস নং-২৮৯৩) অন্য রেওয়াতে রয়েছে: عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ أَنَّهُ قَالَ ‏ “‏ الْحُجَّاجُ وَالْعُمَّارُ وَفْدُ اللَّهِ إِنْ دَعَوْهُ أَجَابَهُمْ وَإِنِ اسْتَغْفَرُوهُ غَفَرَ لَهُمْ হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন: হজ্জযাত্রীগণ ও উমরার যাত্রীগণ আল্লাহর প্রতিনিধিদল। তারা তাঁর নিকট দোয়া করলে তিনি তাদের দোয়া কবুল করেন এবং তাঁর নিকট মাফ চাইলে তিনি তাদের ক্ষমা করেন। (ইবনু মাজাহ, হাদিস নং-২৮৯২) মাবরুর হজের প্রতিদান: মাবরুর হজের প্রতিদান জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয়। যে হজ করল ও শরিয়ত অনুমতি দেয় না এমন কাজ থেকে বিরত রইল, যৌন-স্পর্শ রয়েছে এমন কাজ ও কথা থেকে বিরত থাকল, সে তার মাতৃ-গর্ভ হতে ভূমিষ্ট ‘হওয়ার দিনের মতো পবিত্র হয়ে ফিরে এল। حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ سَعْدٍ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ سُئِلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَىُّ الأَعْمَالِ أَفْضَلُ قَالَ ‏”‏ إِيمَانٌ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ‏”‏‏.‏ قِيلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ ‏”‏ جِهَادٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ‏”‏‏.‏ قِيلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ ‏”‏ حَجٌّ مَبْرُورٌ ‏”‏‏.‏ হযরত আবূ হুরাইরাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ঈমান আনা। জিজ্ঞাসা করা হল, তারপর কোন্‌টি? তিনি বললেনঃ আল্লাহর পথে জিহাদ করা। জিজ্ঞাসা করা হল, তারপর কোন্‌টি? তিনি বলেনঃ হাজ্জ-ই-মাবরূর (মাকবূল হাজ্জ (হজ্জ)।(বুখারী, পরিচ্ছদঃ ৯৬৪. হজ্জে মাবরুর (মাকবুল হজ্জ) এর ফযীলত, হাদীস নং-১৪২৯) حَدَّثَنَا آدَمُ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، حَدَّثَنَا سَيَّارٌ أَبُو الْحَكَمِ، قَالَ سَمِعْتُ أَبَا حَازِمٍ، قَالَ سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ “‏ مَنْ حَجَّ لِلَّهِ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ ‏ হযরত আবূ হুরাইরাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হাজ্জ (হজ্জ) করলো এবং অশালীন কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত রইল, সে নবজাতক শিশু, যাকে তাঁর মা এ মুহূর্তেই প্রসব করেছে, তার ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে ফিরবে।(বুখারী, হাদীস নং-১৪৩১)পরিচ্ছদঃ ৯৬৪.) হজ্বের প্রত্যেকটি কাজে আল্লাহর যিকর বিদ্যমান: —————————————————— হজ্জ এমন একটি ইবাদাত যার প্রত্যেকটি কাজে আল্লাহর যিকর করা হয়। তাওয়াফ, সাঈ, রমঈল জিমার (পাথর নিক্ষেপ), মিনা,মুযদালিফাহ, আরাফাহসহ প্রত্যেকটি নির্দেশনায় আল্লাহর যিকরে ধ্বনিত, প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,فَإِذَا قَضَيْتُم مَّنَٰسِكَكُمْ فَٱذْكُرُوا۟ ٱللَّهَ كَذِكْرِكُمْ ءَابَآءَكُمْ أَوْ أَشَدَّ ذِكْرًا ۗ فَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَقُولُ رَبَّنَآ ءَاتِنَا فِى ٱلدُّنْيَا وَمَا لَهُۥ فِى ٱلْءَاخِرَةِ مِنْ خَلَٰقٍ‘তারপর যখন তোমরা তোমাদের হজের কাজসমূহ শেষ করবে, তখন আল্লাহকে স্মরণ কর, যেভাবে তোমরা স্মরণ করতে তোমাদের বাপ-দাদাদেরকে, এমনকি তার চেয়ে অধিক স্মরণ। আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে যে বলে, হে আমাদের রব, আমাদেরকে দুনিয়াতেই দিয়ে দিন। বস্ত্তত আখিরাতে তার জন্য কোন অংশ নেই। (সূরা আল বাকারাহ,আয়াতঃ২০০) আল্লাহ আরো বলেন,لَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَن تَبْتَغُوا۟ فَضْلًا مِّن رَّبِّكُمْ ۚ فَإِذَآ أَفَضْتُم مِّنْ عَرَفَٰتٍ فَٱذْكُرُوا۟ ٱللَّهَ عِندَ ٱلْمَشْعَرِ ٱلْحَرَامِ ۖ وَٱذْكُرُوهُ كَمَا هَدَىٰكُمْ وَإِن كُنتُم مِّن قَبْلِهِۦ لَمِنَ ٱلضَّآلِّينَ তোমাদের উপর কোন পাপ নেই যে, তোমরা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে অনুগ্রহ অনুসন্ধান করবে। সুতরাং যখন তোমরা আরাফা থেকে বের হয়ে আসবে, তখন মাশআরে হারামের নিকট আল্লাহকে স্মরণ কর এবং তাকে স্মরণ কর যেভাবে তিনি তোমাদেরকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। যদিও তোমরা এর পূর্বে অবশ্যই পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে। (সূরা আল-বাকারাহ,আয়াতঃ-১৯৮
385772
১৪ আগস্ট ২০১৮ দুপুর ০৩:১২
কুয়েত থেকে লিখেছেন : আঁধার ঠেলে আলোর পথে,যাদুর কাঠি লয়ে,মোর আঙিনায় এলি কেরে, অচিন পাখি হয়ে। অপেক্ষারই প্রহর গেছে, বছর গেছে কত,হঠাৎ এলি সুবাস হয়ে, হাসনা হেনার মত। চাঁপার কলি কিংবা গোলাপ, কোন কাননে ছিলি, কোন বা পরী সওয়ার হয়ে,মোর বাগানে এলি। কোন বা তিথীর চন্দ্র, নাকি পুন্যিমাসীর চাঁদ,সবার মাঝে এল জোয়ার,উপ্ছে খুশীর বাঁধ। কাঁদলি একা হাঁসল সবে, এমন যাদু দিলি, আঁধার ঘরে হঠাৎ যেন জ্যোৎস্না হয়ে এলি। কে দিল তোর চিকন ঠোঁটে, হৃদয় কাড়া হাঁসি, ক্রন্দনে তোর ঝরায় যেন,মুকতা রাশি রাশি। বাঁকা ভুরু চওড়া কপাল, টোল দিয়েছে গালে, কণ্ঠস্বরে ঠিক যেন কোন, কোকীল ডাকে ডালে। জ্ঞান-গরিমায় হইও সেরা, এই কামনা করি, এ নিয়ামত দিলেন যিনি, তার নামটি স্মরি’।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File