জামায়াতে ইসলামীকে বেঈমান,মীরজাফর, মুনাফিক সহ বিভিন্ন ভাষায় গালি দিচ্ছেন বি এন পির অনেক নেতা কর্মীরা। কারণ সিলেটে জামায়াতের প্রার্থী দেয়াকে কেন্দ্র করে
লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ১৫ জুলাই, ২০১৮, ১২:২৯:৫৪ রাত
কয়েক দিন ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে বিএনপির কিছু উৎশৃংখল, কর্মী বা নেতারা জামায়াতে ইসলামীকে বেঈমান,মীরজাফর, মুনাফিকসহ অন্যান্য অশ্লীল ভাষায় গালি দিচ্ছে। কারণ সিলেটে জামায়াতের প্রার্থী দেয়াকে কেন্দ্র করে। এ বিষয়ে কিছু কথা ব্লগার ভাইদের কাছে বলতে চাই।
১। ১৯৯১ সালে জাতীয় নির্বাচনে ঈমানদার বিএনপিরা এমন কিছু আসন পেল যাতে তারা এককভাবে সরকার গঠন করা কোনক্রমেই সম্ভবপর ছিলনা। সে সময় এ জামায়াতে ইসলামী বিনাশর্তে বিনাস্বার্থে বিএনপিকে সমর্থন জানিয়ে সরকার গঠন করতে বলেছিলেন।
এর পুরুস্কার স্বরুপ তৎকালিন জামায়াতে ইসলামীর আমীরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযমকে সরকার গ্রেফতার করে ১৬মাস বন্দি রাখেন এবং ছাত্রশিবিরের প্রায় ৪৬নেতাকর্মীকে ছাত্রদলের নেতা কর্মীরা খুন করে শহীদ করেছেন।
২। ২০০১সাল থেকে আজ পর্যন্ত বিএনপির সাথে জোট করার ফলে জামায়াতে ইসলামী পাওয়ার চেয়ে হারিয়েছে অনেক বেশি। জোট করার কারণে বর্তমান সরকার জামায়াতের শীর্ষ
নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে। হাজার হাজার নেতা কর্মীর নামে প্রায় ৩০ লক্ষ মামলা দিয়েছে।আল্লামা সাঈদী সাহেবকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে।এতকিছুর পরও বিএনপির পক্ষ থেকে একটা প্রতিবাদও পাওয়া যায়নি।
৩। জোট মানে কি..? সকল বিষয়ে আলোচনা করে ঐক্যমতে পৌঁছানো। কিন্তু বর্তমানে ২০ দলে সেটার বড়ই অভাব।যা পল্টন অফিস থেকেই চাপিয়ে দেয়া হয় নির্দেশনা। জোটের অন্য শরিকদের কোন মূল্যায়নই করা হয়না। বড়ভাই সুলভ আচরন মোটেই থামছেনা। বিএনপির মনোভাবটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে রক্ত দিবা তোমরা, জেল খাটবা তোমরা,আর ভোগ করব আমরা।
এ পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী প্রায় ৫০০ নেতাকর্মী হারিয়েছে। এবার আসি সিটি নির্বাচন বিষয়ে।মোট ১২টা সিটি। সব খাবে বিএনপি। জোটের অন্যকোন শরিক এব্যাপারে কথা বললেই সে মুনাফিক গাদ্দার আরো কত কি হয়ে যাচ্ছে। অথচ ১৪দলের বিষয়টা আপনারা একটু খেয়াল করুন অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর উদারতায় প্রায় সব দল মন্ত্রীত্ব পেয়েছে। জাতীয় পার্টিকে রংপুরে মেয়র দেয়া হয়েছে।
মজার বিষয় হলো এসব ছোট দলগুলো ইউপি নির্বাচনে মেম্বর হওয়ার যোগ্যতাও রাখেনা। ২০দলের শরিক জামায়াতের অসংখ্য জনপ্রতিনিধি আছে এই বাংলাদেশে।উপজেলা চেয়ারম্যান ৩৯,ভাইস চেয়ারম্যান বিএনপির চেয়েও বেশি। এছাড়া পৌরসভার মেয়র,কাউন্সিলর,ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বর রয়েছে অসংখ।
সিলেটের বিষয় হলো ২০১৩ সালের মেয়র প্রার্থী ছিলেন জোবায়ের। সে সময় বিএনপির হাইকমান্ড বলেছিল আপনারা এবার ছাড়েন,আগামীতে আপনারা পাবেন। কিন্তু বিএনপি সে কথা একেবারেই ভুলে গেছেন বরং এখন জামায়াতকে তারা মুনাফিক বলে গালি দিচ্ছে।
নিজেদের ঘর যারা ঠিক রাখতে পারেনা তারা অন্যের খবরদারী করে লজ্জা করা উচিত। বর্তমান সিলেট মহানগর সেক্রেটারি বিদ্রোহী প্রার্থী, সে ব্যাপারে কোন ফতোয়া নেই। যত কোপ জামায়াতের উপর।
১৯৭১ সালে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। কিন্তু কখনো বলা হয় না যে জামায়াতের অবস্থান ছিল শুধুমাত্র একটি যৌক্তিক আন্দোলনের। কিন্তু কেউ যদি দাবি করে যে জামাতকে জিয়া জীবন দান করেছে তাহলে তা ভুল। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান জামাতকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছে কিন্তু সেখানে নিজের স্বার্থই মুখ্য ছিল।
অধ্যাপক গোলাম আজম একজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। জিয়াউর রহমানকে ৭৬/৭৭ সালে বহির্বিশ্বের কেউই জানতেন না। জিয়াউর রহমানকে সহযোগিতা নিশ্চিত ও সৌদি আরবসহ অন্যান্য মুসলিম দেশসমূহের সমর্থন দেয়ার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন অধ্যাপক গোলাম আজম।
জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন ছাড়া একদিনের জন্য ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারতেন না জিয়াউর রহমান।তাই যে বহুদলীয় গণতন্ত্রের দাবি করা হয় তা ছিল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেকে রক্ষার পদক্ষেপ মাত্র। প্রকৃত অর্থে বিরোধী দল বলতে কোনো দলের কার্যক্রম কি তখন ছিল?
বলা হয়েছে, জামাতকে মন্ত্রিত্ব দেয়া হয়েছে, গোলাম আজমের নাগরিকত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেই সমঝোতা ছিল জামাতের সাংগঠনিক শক্তির কারণে।
জামাতকে দুটি মন্ত্রণালয় দিয়ে মূল্যায়ন নয়,বরং অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের লগি বৈঠা আন্দোলনের কথা ভুলে গেছেন তারা। অথচ সেদিন জামাত শিবিরের নেতাকর্মীরা না দাঁড়ালে বিএনপি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত। ২০০৮ এর পরেও জামাত যতদিন সক্রিয় ছিল, ততদিন আন্দোলন হয়েছে। বিএনপির একটি অবরোধ কার্যকর করার সাহসও ছিল না।
বিএনপির জন্য এত কিছু করার পর জামাতের প্রতি যা করেছে সেটাকে কিভাবে দেখা উচিৎ একটু চিন্তা করুন। জামাতের সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া সরকার বিরোধী একটি বড় মিছিল করার অবস্থা নেই এই বিএনপির। জামাত শিবিরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত হলে খালেদা জিয়ার সমাবেশ সফল হতো।
যদি কেউ বলেন খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের পর জামায়াত নীরব ছিল, তাহলে বিএনপিকে উত্তর দিতে হবে জামায়াত নেতাদের একের পর এক ফাঁসি দেয়ার পরও কেন বিএনপি চুপ ছিল..? শরিক দল হিসেবে তাদেরকি কোন দায়িত্ব ছিলনা..?
কারা মীর জাফরি করেছে ..? এতগুলি সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে জামায়াতকে ছাড় দেয়ার মত মানসিকতা যদি না থাকে সেটাকেই মীর জাফরি বলে। বিএনপি তাদের বিদ্রোহী প্রার্থীকে বসাতে পারে না, কিন্তু মাথা ব্যাথা জামায়াত নিয়ে।
বিএনপির এখনো সময় আছে বৃহত্তর জাতীয় সার্থে সিলেট নির্বাচন থেকে নিজেদের বিদ্রুহী প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেওয়ার এবং জামায়াতের প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার।
বিষয়: বিবিধ
১৫৬৭ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন