ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। এই বিধানের মুল ভিত্তিই হলো আনুগত্য। ইসলামে আনুগত্য ফরজ এই ফরজ কি আমরা পালন করছি
লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ০৯ জুলাই, ২০১৮, ০৪:২১:৪৬ বিকাল
কোরআন সুননাহর আলোকে আনুগত্য করা ফরজ। আমরা এই বিষয়ে খুবই কম জানি। জানাটাও ফরজ। জানতে হবে মুল কোরআন সুননাহ থেকে
আনুগত্য ইসলামের জীবন ব্যবস্থার মূল ভিত্তিই হল আনুগত্য। সূরা আন নেসার (৫৯-৭০) আয়াতে ইসলামের সমগ্র ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জীবনের আনুগত্যের মূলনীতিসমূহ বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে এ বিষয়ে কিঞ্চিত আলোচনার চেষ্টা করা হল। আল্লাহ বলেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ أَطِيعُواْ اللهَ وَأَطِيعُواْ الرَّسُولَ وَأُوْلِي الأَمْرِ مِنكُمْ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلاً * أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُواْ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُواْ إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُواْ أَن يَكْفُرُواْ بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُضِلَّهُمْ ضَلاَلاً بَعِيدًا * وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْاْ إِلَى مَا أَنزَلَ اللهُ وَإِلَى الرَّسُولِ رَأَيْتَ الْمُنَافِقِينَ يَصُدُّونَ عَنكَ صُدُودًا * فَكَيْفَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيهِمْ ثُمَّ جَآؤُوكَ يَحْلِفُونَ بِاللهِ إِنْ أَرَدْنَا إِلاَّ إِحْسَانًا وَتَوْفِيقًا * أُولَـئِكَ الَّذِينَ يَعْلَمُ اللهُ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ وَعِظْهُمْ وَقُل لَّهُمْ فِي أَنفُسِهِمْ قَوْلاً بَلِيغًا * وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلاَّ لِيُطَاعَ بِإِذْنِ اللهِ وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذ ظَّلَمُواْ أَنفُسَهُمْ جَآؤُوكَ فَاسْتَغْفَرُواْ اللهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُواْ اللهَ تَوَّابًا
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম। আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা দাবী করে যে, যা আপনার প্রতি অবর্তীর্ণ হয়েছে আমরা সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছি এবং আপনার পূর্বে যা অবর্তীণ হয়েছে। তারা বিরোধীয় বিষয়কে শয়তানের দিকে নিয়ে যেতে চায়, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে, যাতে তারা ওকে মান্য না করে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়। আর যখন আপনি তাদেরকে বলবেন, আল্লাহর নির্দেশের দিকে এসো যা তিনি রাসূলের প্রতি নাযিল করেছেন, তখন আপনি মুনাফেকদিগকে দেখবেন, ওরা আপনার কাছ থেকে সম্পূর্ণ ভাবে সরে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় যদি তাদের কৃতকর্মের দরুন বিপদ আরোপিত হয়, তবে তাতে কি হল! অতঃপর তারা আপনার কাছে আল্লাহর নামে কসম খেয়ে খেয়ে ফিরে আসবে যে, মঙ্গল ও সম্প্রীতি ছাড়া আমাদের অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না। এরা হলো সে সমস্ত লোক, যাদের মনের গোপন বিষয় সম্পর্কেও আল্লাহ তা’আলা অবগত। অতএব, আপনি ওদেরকে উপেক্ষা করুন এবং ওদেরকে সদুপদেশ দিয়ে এমন কোন কথা বলুন যা তাদের জন্য কল্যাণকর। বস্তুতঃ আমি একমাত্র এই উদ্দেশ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি, যাতে আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী তাঁদের আদেশ-নিষেধ মান্য করা হয়। আর সেসব লোক যখন নিজেদের অনিষ্ট সাধন করেছিল, তখন যদি আপনার কাছে আসত অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং রাসূলও যদি তাদেরকে ক্ষমা করিয়ে দিতেন। অবশ্যই তারা আল্লাহকে ক্ষমাকারী, মেহেরবানরূপে পেত।
সূরা আন নেসার (৫৯-৭০) আয়াত ইসলামের সমগ্র ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জীবনের বুনিয়াদ। এটি একটি ইসলামী রাষ্ট্রের শাসনতন্ত্রের প্রথম নম্বর ধারা। এখানে নিম্নলিখিত মূলনীতিগুলো স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত করে দেয়া হয়েছে।
একঃ ইসলামের জীবন ব্যবস্থায় আসল আনুগত্য লাভের অধিকারী হচ্ছেন আল্লাহ। একজন মুসলমানের সর্বপ্রথম পরিচয় হচ্ছে সে আল্লাহর বান্দা। এরপর সে অন্য কিছু। মুসলমানের ব্যক্তিগত জীবন এবং মুসলমানদের সমাজ ব্যবস্থা উভয়ের কেন্দ্র ও লক্ষ্য হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্য করা ও বিশ্বস্ততার সাথে তাঁর নির্দেশ মেনে চলা। অন্যান্য আনুগত্য ও অনুসৃতি কেবল মাত্র তখনই গৃহীত হবে যখন তা আল্লাহর আনুগত্য অনুসৃতির বিপরীত হবে না। বরং তার অধীন ও অনুকূল হবে। অন্যথায় এই আসল ও মৌলিক আনুগত্য বিরোধী প্রতিটি আনুগত্য শৃঙ্খলাকে ভেঙ্গে দূরে নিক্ষেপ করা হবে। একথাটিকেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই ভাবেই বক্তব্যে পেশ করেছেন:
لَا طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِي مَعْصِيَةِ الْخَالِقِ: الدارقطني – مشكاة المصابيح
অর্থঃ স্রষ্টার নাফরমানি করে কোন সৃষ্টির আনুগত্য করা যাবে না। (দারাকুতনী- মিশকাতুল মাসাবীহ)
দুইঃ ইসলামী জীবন ব্যবস্থার দ্বিতীয় ভিত্তি হচ্ছে, রাসূলের আনুগত্য। এই দুই আনুগত্যর মধ্যে কোন পার্থক্য করা যাবে না। বরং আল্লাহর আনুগত্যের এটিই একমাত্র বাস্তব ও কার্যকর পদ্ধতি। রাসূলের আনুগত্য এ জন্য করতে হবে যে, আল্লাহর বিধান ও নির্দেশ আমাদের কাছে পৌঁছার তিনিই একমাত্র বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। আমরা কেবলমাত্র রাসূলের আনুগত্য করার পথেই আল্লাহর আনুগত্য করতে পারি। রাসূলের সনদ ও প্রমাণপত্র ছাড়া আল্লাহর কোন আনুগত্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আর রাসূলের আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের নামান্তর। নিম্নোক্ত হাদীসে এই বক্তব্যটিই সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছেঃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: مَنْ أَطَاعَنِي فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ عَصَى اللهَ وَمَنْ عَصَى أَمِيرِي فَقَدْ عَصَانِي مسند الامام أحمد
অর্থঃ যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করলো সে আসলে আল্লাহর আনুগত্য করলো এবং যে ব্যক্তি আমার নাফরমানি করলো সে আসলে আল্লাহর নাফরমানি করলো। যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য করলো সে আসলে আমার আনুগত্য করলো এবং যে ব্যক্তি আমীরের নাফরমানি করলো সে আসলে আমার নাফরমানি করলো। (মুসনাদে আহমদ)
তিনঃ উপরোল্লিখিত দুটি আনুগত্যের পর তাদের অধীনে তৃতীয় আর একটি আনুগত্য ইসলামী জীবন ব্যবস্থার আওতাধীনে মুসলমানদের ওপর ওয়াজিব। সেটি হচ্ছে মুসলমানদের মধ্যে থেকে ‘উলিল আমর’ তথা দায়িত্ব ও ক্ষমতার অধিকারীদের আনুগত্য। মুসলমানদের সামাজিক ও সামষ্টিক কার্যকালাপের ক্ষেত্রে দায়িত্ব সম্পন্ন ও নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তি মাত্রই ‘ উলিল আমর ‘-এর অন্তর্ভুক্ত।
তারা মুসলমানদের মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও চিন্তাগত ক্ষেত্রে নেতৃত্বদানকারী উলামায়ে কেরাম বা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ হতে পারেন, আবার দেশের শাসনকার্য পরিচালনাকারী প্রশাসকবৃন্দ হতে পারেন, অথবা আদালতে বিচারের রায় প্রদানকারী শেখ সরদার প্রধানও হতে পারেন। মোটকথা যে ব্যক্তি যে কোন পর্যায়েই মুসলমানদের নেতৃত্বদানকারী হবেন তিনি অবশ্যি আনুগত্য লাভের অধিকারী হবেন। তার সাথে বিরোধ সৃষ্টি করে মুসলমানদের সামাজিক জীবনে বাধা-বিপত্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা যাবে না। তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, তাকে মুসলিম দলভুক্ত হতে হবে এবং আল্লাহ ও রাসূলের অনুগত হতে হবে। এই আনুগত্যের জন্য এই শর্ত দুটি হচ্ছে অপরিহার্য ও বাধ্যতামূলক। কেবলমাত্র উল্লেখিত আয়াতটির মধ্যভাগে এ সুস্পষ্ট শর্তটি সংশ্লিষ্ট হয়নি বরং হাদীসেও নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিপূর্ণ ব্যাপকতার সাথে দ্ব্যর্থহীনভাবে এটি বর্ণনা করেছেন। যেমন নিম্নোক্ত হাদীসগুলো দেখা যেতে পারেঃ
السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ عَلَى الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ فِيمَا أَحَبَّ وَكَرِهَ، مَا لَمْ يُؤْمَرْ بِمَعْصِيَةٍ، فَإِذَا أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ فَلَا سَمْعَ وَلَا طَاعَة
অর্থঃ নিজের নেতৃবৃন্দের কথা শোনা ও মেনে চলা মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য, তা তার পছন্দ হোক বা না হোক, যে পর্যন্ত না তাকে নাফরমানি হুকুম দেয়া হয়। আর যখন তাকে নাফরমানির হুকুম দেয়া হয় তখন তার কিছু শোনা ও আনুগত্য করা উচিত নয়। (বুখারী ও মুসলিম)
১. আনুগত্য-ফরজ – আল কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতসমূহ থেকে তা স্পষ্টভাবে বুঝা যাবে ।
قُلْ أَطِيعُواْ اللهَ وَالرَّسُولَ فإِنْ تَوَلَّوْاْ فَإِنَّ اللهَ لاَ يُحِبُّ الْكَافِرِينَ
অর্থঃ তাদেরকে বলোঃ আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করো। তারপর যদি তারা তোমাদের এ দাওয়াত গ্রহণ না করে, তাহলে নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ এমন লোকদের ভালোবাসবেন না, যারা তাঁর ও তাঁর রাসূলদের আনুগত্য করতে অস্বীকার করে। (সূরা আলে ইমরান-৩২)
وَأَطِيعُواْ اللهَ وَأَطِيعُواْ الرَّسُولَ وَاحْذَرُواْ فَإِن تَوَلَّيْتُمْ فَاعْلَمُواْ أَنَّمَا عَلَى رَسُولِنَا الْبَلاَغُ الْمُبِينُ
অর্থঃ তোমরা আল্লাহর অনুগত হও, রাসূলের অনুগত হও এবং আত্মরক্ষা কর। কিন্তু যদি তোমরা বিমুখ হও, তবে জেনে রাখ, নিঃসন্দেহ আমাদের রসূলের উপরে হচ্ছে মাত্র স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেয়া। (সূরা মায়েদা-৯২)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ أَطِيعُواْ اللهَ وَرَسُولَهُ وَلاَ تَوَلَّوْا عَنْهُ وَأَنتُمْ تَسْمَعُونَ – وَلاَ تَكُونُواْ كَالَّذِينَ قَالُوا سَمِعْنَا وَهُمْ لاَ يَسْمَعُونَ – إِنَّ شَرَّ الدَّوَابَّ عِندَ اللهِ الصُّمُّ الْبُكْمُ الَّذِينَ لاَ يَعْقِلُونَ
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ মান্য কর এবং শোনার পর তা থেকে বিমুখ হয়ো না। আর তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না, যারা বলে যে, আমরা শুনেছি, অথচ তারা শোনেনা। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলার নিকট সমস্ত প্রাণীর তুলনায় তারাই মূক (বোবা) ও বধির, যারা উপলদ্ধি করে না। (সূরা আনফাল-২০-২২)
وَأَطِيعُواْ اللهَ وَرَسُولَهُ وَلاَ تَنَازَعُواْ فَتَفْشَلُواْ وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ وَاصْبِرُواْ إِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِينَ
অর্থঃ আর আল্লাহ তা’আলার নির্দেশ মান্য কর এবং তাঁর রাসূলের। তাছাড়া তোমরা পরস্পরে বিবাদে লিপ্ত হইও না। যদি তা কর, তবে তোমরা কাপুরুষ হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব চলে যাবে। আর তোমরা ধৈর্যধারণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা রয়েছেন ধৈর্যশীলদের সাথে। (সূরা আনফাল-৪৬)
فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ
অর্থঃ অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। (সূরা আশ শুয়ারা – ৯ বার)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَلَا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ
অর্থঃ হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো, রাসূলের আনুগত্য করো এবং নিজেদের আমল ধ্বংস করো না। (সূরা মুহাম্মদ-৩৩)
وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ فَإِن تَوَلَّيْتُمْ فَإِنَّمَا عَلَى رَسُولِنَا الْبَلَاغُ الْمُبِينُ
অর্থঃ আল্লাহর আনুগত্য করো এবং রাসূলের আনুগত্য করো। কিন্তু তোমরা যদি আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে সত্যকে স্পষ্টভাবে পৌঁছিয়ে দেয়া ছাড়া আমার রাসূলের আর কোন দায়িত্ব নেই। (সূরা তাগাবুন-১২)
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَإِذَا كَانُوا مَعَهُ عَلَى أَمْرٍ جَامِعٍ لَمْ يَذْهَبُوا حَتَّى يَسْتَأْذِنُوهُ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَأْذِنُونَكَ أُوْلَئِكَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ
অর্থঃ মু’মিন তো আসলে তারাই যারা অন্তর থেকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে মানে এবং যখন কোন সামষ্টিক কাজে রাসূলের সাথে থাকে তখন তার অনুমতি ছাড়া চলে যায় না। যারা তোমার কাছে অনুমতি চায় তারাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলে বিশ্বাসী। (সূরা নূর-৬২)
২. আনুগত্য হবে এক নেতার: أُولِي الْأَمْرِ একাধিক নেতার আনুগত্য কারোই আনুগত্য নয়
ইসলামের দৃষ্টিতে সমগ্র দেশ একটি মসজিদ তুল্য, এখানে নেতা ( ইমাম থাকবেন ১ জন )
مَنْ يُطِعِ اللهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ رَشَدَ، وَمَنْ يَعْصِ اللهَ وَرَسُولَهُ فَإِنَّهُ لَا يَضُرُّ إِلَّا نَفْسَه
অর্থঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ রাসুলের ( সঃ) আনুগত্য করল সে সৎপথ প্রপ্ত হল আর যে ব্যক্তি আল্লাহ রাসুলের ( সঃ) অবাধ্য হল সে প্রকৃতপক্ষে নিজেরই ধ্বংস ডেকে আনল।
৩ আনুগত্য বাধ্যতামূলক, মন চাক আর না চাক-
السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ عَلَى الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ فِيمَا أَحَبَّ وَكَرِهَ، مَا لَمْ يُؤْمَرْ بِمَعْصِيَةٍ، فَإِذَا أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ فَلَا سَمْعَ وَلَا طَاعَة
অর্থঃ নিজের নেতৃবৃন্দের কথা শোনা ও মেনে চলা মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য, তা তার পছন্দ হোক বা না হোক, যে পর্যন্ত না তাকে নাফরমানি হুকুম দেয়া হয়। আর যখন তাকে নাফরমানির হুকুম দেয়া হয় তখন তার কিছু শোনা ও আনুগত্য করা উচিত নয়। (বুখারী ও মুসলিম)
৪. ইসলাম অবশ্য কখনো অন্ধ আনুগত্যের দাবী করেনি: বরং সে কেবল সৎকর্মের ক্ষেত্রে আনুগত্য চেয়েছে। ‘সৎকর্মেও’ সীমার বাইরে তার নির্দেশ হচ্ছেঃ
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ
অর্থঃ “গুনাহ ও আল্লাহর নির্ধারিত সীমালঙ্ঘনমূলক কাজে পরস্পরের সহযোগী হয়ো না।”-সূরা মায়েদা, আয়াতঃ ২
৫. আনুগত্য নেতৃত্বের, ব্যক্তির নয়: ইসলামী আন্দোলন ব্যক্তিত্বের চর্তুদিকে আবর্তিত হয় না। ব্যক্তির পরিবর্তনে আনুগত্যের পরিবর্তন হয়না ।
وَمَا مُحَمَّدٌ إِلاَّ رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ الرُّسُلُ أَفَإِن مَّاتَ أَوْ قُتِلَ انقَلَبْتُمْ عَلَى أَعْقَابِكُمْ وَمَن يَنقَلِبْ عَلَىَ عَقِبَيْهِ فَلَن يَضُرَّ اللّهَ شَيْئًا وَسَيَجْزِي اللهُ الشَّاكِرِينَ
অর্থঃ মুহাম্মাদ একজন রাসূল বৈ তো আর কিছুই নয়। তার আগে আরো অনেক রাসূলও চলে গেছেন। যদি তিনি মারা যান বা নিহত হন, তাহলে কি পেছনের দিকে ফিরে যাবে? মনে রেখো, যে পেছনের দিকে ফিরে যাবে সে আল্লাহর কোন ক্ষতি করবে না, তবে যারা আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হয়ে থাকবে তাদেরকে তিনি পুরস্কৃত করবেন। সূরা আলে ইমরান: ১৪৪
৬. আনুগত্যের বেলায় নেতার কেমন তা দেখা যাবেনা-
اسْمَعُوا وَأَطِيعُوا، وَإِنْ أُمِّرَ عَلَيْكُمْ عَبْدٌحَبَشِيٌّ كَأَنَّ رَأْسَهُ زَبِيبَة
অর্থঃ (রাসূল সা. বিদায় হজ্বের ভাষনে বলেছিলেন) যদি কোন হাবসী ক্রীতদাসকেও তোমাদের নেতা বানিয়ে দেয়া হয় যার মাথা কিসমিসের মত, তা হলেও তোমরা তার আনুগত্য কর । (বুখারী)
وَلَوِ اسْتُعْمِلَ عَلَيْكُمْ عَبْدٌيَقُودُكُمْ بِكِتَابِ اللهِ، اسْمَعُوا لَهُ وَأَطِيعُوا
অর্থঃ যদি কোন ক্রীতদাসকেও তোমাদের নেতা বানিয়ে দেয়া হয় আর সে যদি আল্লাহর কিতাব আনুসারে তোমাদের পারচালনা করে তা হলেও তোমরা তার কথা শোন ও আনুগত্য কর । (বুখারী)
৭. আনুগত্য হবে পরিপূর্ণ, আংশিক নয়, আংশিক আনুগত্য কোন আনুগত্য নয়
৮. মূলতঃ আনুগত্যই ইসলাম, ইসলাম অর্থই আনুগত্যই
إِذْ قَالَ لَهُ رَبُّهُ أَسْلِمْ قَالَ أَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ
অর্থঃ (হযরত ইবরাহীম (আঃ) কে) যখন তার রব তাকে বললো, “মুসলিম হয়ে যাও। ” তখনই সে বলে উঠলো, “আমি বিশ্ব-জাহানের প্রভুর ‘মুসলিম’ হয়ে গেলাম। ” ( সূরা বাকারা ১৩১)
৯.পরিপূর্ণ আনুগত্যকারীই পরিপূর্ণ মুসলমান-
১০. পরিপূর্ণ আনুগত্য করার জন্য সংগঠনের নেতার কাছে আনুগত্যের শপথের প্রয়োজন-
১১. আনুগত্য হবে ঘোষিত, অঘোষিত আনুগত্য কোন আনুগত্য নয়
১২. আনুগত্য পরিহারকারী ইসলাম পরিত্যাগকারীর সমতুল্য ।
আনুগত্যের উদাহরণঃ
(১) হযরত আবুবকরের আনুগত্যঃ
মহানবীকে (সা.) আল্লাহ তায়ালার মদীনায় হিজরত করার নির্দেশ দানের পরই তিনি হযরত আবু বকরকে (রা.) বলেছিলেন, ‘হে আবুবকর মক্কার কাফেলারা বড়ই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। কবে কখন হয়ত মক্কা হতে মদীনায় হিজরত করতে হতে পারে’। হিজরতের রাতে মহানবী (সা.) নিজ বিছানায় হযরত আলী (রা.) কে শায়িত রেখে মদীনার পথে রওনা দিলেন। সাথী হিসেবে বন্ধু আবু বকর (রা.) কে সঙ্গে নেয়ার জন্য তাঁর বাড়ীর সামনে গিয়ে, আবু বকর! বলে একবার ডাক দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে আবু বকর (রা.) বেরিয়ে এলেন। এত তাড়াতাড়ি কিভাবে এলে? জিজ্ঞাসা করলেন হযরত (সা.)। আবু বকর (রা.)বললেন যেদিন আপনি মদীনায় হিজরত করার কথা বলেছিলেন সেদিন হতে একটি রাতের জন্যও আমি বালিশে মাথা রেখে ঘুমাই নাই, সারা রাত দরজার সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি। কারণ আমি আরাম করে ঘুমিয়ে থাকবো আর কাফেরেরা আপনাকে ধাওয়া করবে আপনি আমাকে ডেকে ডেকে পাবেন না। কাফেরেরা আপনাকে আঘাত করবে, যখম করবে। আমি আবু বকর এটা সইতে পারবো না।
(২) হযরত খালিদ ইবনে অলীদের আনুগত্যঃ
৬৩৩ খ্রিস্টাব্দে খলীফা হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা.) হযরত খালিদ বিন ওয়ালীদ (রা.)-এর নেতৃত্বে সাত হাজার মুজাহিদসহ সিরিয়া অভিযানে প্রেরণ করেন। ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দের ২৩ আগস্ট মুতাবিক ১৩ হিজরীর ২২ জমাদিউসসানী ৬১ বছর বয়সে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা.) ইন্তিকাল করেন। হযরত ‘উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) যখন খিলাফতের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হন তখন মুসলিম বাহিনী ও সিরীয় বাহিনীর মধ্যে তুমুল যুদ্ধ চলছিল। খিলাফতের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেই যুদ্ধ চলাকালীন অবস্থায় হযরত ‘উমর (রা.) হযরত আবূ ‘উবায়দা ইবনুল জাররাহ (রা.)-কে হযরত খালিদ বিন ওয়ালীদ(রা.)-এর স্থলে প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করেন। হযরত খালিদ (রা.) সঙ্গে সঙ্গে আবু ‘উবায়দা (রা.)-এর নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন।
(৩) হযরত আবু জান্দালের আনুগত্যঃ
হুদায়বিয়া সন্ধিপত্র যখন লিখিত হচ্ছিলো, ঠিক সেই মুহূর্তে ঘটনাচক্রে সুহাইলের পুত্র হযরত আবু জান্দাল (রা.) মক্কা থেকে পালিয়ে সেখানে এসে উপস্থিত হলেন। তিনি শৃংখলিত অবস্থায় মুসলমানদের সামনে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন এবং সবাইকে নিজের দুর্গতির কথা শোনালেন। তাঁকে ইসলাম গ্রহণের অপরাধে কি কি ধরণের শাস্তি দেয়া হয়েছে, তা-ও সবিস্তারে খুলে বললেন। অবশেষে তিনি হযরত (সা.)-এর কাছে আবেদন জানালেন : ‘হুযুর আমাকে কাফিরদের কবল থেকেকে মুক্ত করে আপনার সঙ্গে নিয়ে চলুন ।’ একথা শুনে সুহাইল বলে উঠলো : ‘দেখুন, সন্ধির শর্ত অনুযায়ী নিয়ে যেতে পারেন না।’ কারণ সন্ধির একটি শর্ত ছিল “কাফির বা মুসলমানদের মধ্য থেকে কেউ মদীনায় গেলে তাকে ফেরত পাঠাতে হবে। কিন্তু কোনো মুসলমান মক্কায় গেলে তাকে ফেরত দেয়া হবে না”। এটা ছিলো বাস্তবিকই এক নাজুক সময়। কারণ, আবু জান্দাল ইসলাম গ্রহণ করে নির্যাতন ভোগ করছিলেন এবং বারবার ফরিয়াদ জানাচ্ছিলেন : ‘হে মুসলিম ভাইগণ! তোমরা কি আমাকে আবার কাফিরদের হাতে তুলে দিতে চাও?’ সমস্ত মুসলমান এই পরিস্তিতিতে অত্যন্ত অস্থির হয়ে উঠলো। হযরত উমর (রা.) তো রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে এ পর্যন্ত বললেন যে, ‘আপনি যখন আল্লাহর সত্য নবী, তখন আর আমরা এ অপমান কেন সইব? হযরত (সা.) তাকে বললেন : ‘আমি আল্লাহর পয়গাম্বর, তাঁর হুকুমের নাফরমানী আমি করতে পারিন না। আল্লাহ-ই আমায় সাহায্য করবেন।’
আনুগত্যহীনতার কারণঃ
(১) আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনকে অগ্রাধিকার দেয়া
(২) আনুগত্যের গুরুত্ব সম্পর্কে অজ্ঞতাঃ
(৩) গর্ব ও অহংকার
(৪) হিংসা ও বিদ্বেষ
(৫) সিনিয়রিটি জুনিয়রিটি মনোভাব ( বয়স, লেখাপড়া, সংগঠনে অন্তর্ভুক্তি ইত্যাদি)
(৬) মেজাজের ভারসাম্যহীনতা
(৭) পদের প্রতি মোহ
(৮) দায়িত্বশীল পছন্দ না হওয়া
(৯) মানোন্নয়নে বিলম্ব হওয়া
(১০) দায়িত্বশীলের সাথে তিক্ত সম্পর্ক
(১১) দায়িত্বশীলের ব্যাপারে সন্দেহ প্রবণতা
(১২) মতামতের কুরবানী করতে না পারা
(১৩) হৃদয়ের বক্রতা
(১৪) মাত্রাতিরিক্ত প্রশ্ন করার প্রবণতা
(১৫) নিজেকে অন্যের চেয়ে যোগ্য মনে করা
(১৬) সুযোগ সন্ধানী/ জাগতিক লাভের মনোভাব
(১৭) দায়িত্ব থেকে অব্যহিত বা লঘু দায়িত্ব অর্পণ
আনুগত্যহীনতার পরিনাম
আনুগত্য পরিহারকারী দুনিয়া ও আখেরাতে শাস্তির হকদার।
فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَن تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٦٣
অর্থঃ রাসূলের হুকুমের বিরুদ্ধাচারণকারীদের ভয় করা উচিত যেন তারা কোন বিপর্যয়ের শিকার না হয় অথবা তাদের ওপর যন্ত্রণাদায়ক আযাব না এসে পড়ে । (সূরা নূর-৬৩)
উপরিউক্ত কুরআনের আয়াত ও হাদীস থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, ইসলামে নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ স্বয়ং আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করারই সমতুল্য। পক্ষান্তরে আল্লাহর ও রাসূলের অনুসারী থাকা সত্ত্বেও নেতাকে অমান্য করা স্বয়ং আল্লাহ ও রাসূলকে অমান্য করার সমতুল্য। বস্তুত নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্যবিহীন জীবন সত্যিকার ইসলামী জীবন নয়।
বিষয়: বিবিধ
১১৮১ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এ বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত কিছু কথা পেশ করতে চাইঃ
১)১৯৯১ সালে জাতীয় নির্বাচনে ঈমানদার বিএনপিরা এমন সংখ্যক আসন পেল যাতে এককভাবে সরকার গঠন করা কোনক্রমেই সম্ভবপর ছিলনা।সে সময় এ মুনাফিক জামায়াতরা বিনাশর্তে বিনাস্বার্থে বিএনপিকে সমর্থন জানিয়ে সরকার গঠন করতে বলে।এর পুরুস্কার
স্বরুপ তৎকালিন জামায়াত আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমকে সরকার গ্রেফতার করে ১৬মাস বন্দি রাখে।ছাত্রশিবিরের প্রায় ৪৬নেতাকর্মীকে ছাত্রদলের ঈমানদাররা খুন করে শহীদ করে।
২)২০০১সাল থেকে আজ পর্যন্ত বিএনপির সাথে জোট করার ফলে জামায়াত পাওয়ার চেয়ে হারিয়েছে বেশি।
জোট করার কারণে বর্তমান সরকার জামায়াতের শীর্ষ
নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে।হাজার হাজার নেতাকর্মীর নামে প্রায় ১লক্ষ মামলা হয়েছে।আল্লামা সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ড হয়েছে।এতকিছুর পরও বিএনপির পক্ষ থেকে একটা প্রতিবাদও পাওয়া যায়নি।
৩)জোট মানে কি?সকল বিষয়ে আলোচনা করে ঐক্যমতে পৌঁছানো। কিন্তু বর্তমানে ২০দলে সেটার বড়ই অভাব।পল্টন অফিস থেকে চাপিয়ে দেয়া হয় নির্দেশনা।জোটের অন্য শরিকদের কোন মূল্যায়নই করা হয়না।বড়ভাই সুলভ আচরন মোটে থামছেনা।
বিএনপির মনোভাবটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে রক্ত দিবা তোমরা,জেল খাটবা তোমরা,আর ভোগ করব আমরা।
এ পর্যন্ত জামায়াত প্রায় ৫০০নেতাকর্মী হারিয়েছে।এবার আসি সিটি নির্বাচন বিষয়ে।মোট ১২টা সিটি।সব খাবে বিএনপি।জোটের অন্যকোন শরিক এব্যাপারে কথা বললেই সে মুনাফিক গাদ্দার আরো কত কি হয়ে যাচ্ছে।অথচ ১৪দলের বিষয়টা আপনারা একটু খেয়াল করেন প্রধানমন্ত্রীর উদারতায় প্রায় সব দল মন্ত্রীত্ব পেয়েছে।জাতীয় পার্টিকে রংপুরে মেয়র দেয়া হয়েছে।
মজার বিষয় হলো এসব ছোট দলগুলো ইউপি নির্বাচনে মেম্বর হওয়ার যোগ্যতাও রাখেনা।২০দলের শরিক জামায়াতের অসংখ্য জনপ্রতিনিধি আছে।উপজেলা চেয়ারম্যান ৩৯,ভাইস চেয়ারম্যান বিএনপির চেয়েও বেশি।এছাড়া পৌরসভার মেয়র,কাউন্সিলর,ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বর রয়েছে অগনিত।সিলেটের বিষয় হলো ২০১৩সালের মেয়র প্রার্থী ছিলেন জোবায়ের। সে সময় বিএনপির হাইকমান্ড বলেছিল আপনারা এবার ছাড়েন,আগামীতে আপনারা পাবেন।কিন্তু ঈমানদার বিএনপি সে কথা ভুলে গেছেন বরং এখন জামায়াতকে তারা মুনাফিক বলে গালি দিচ্ছে।নিজেদের ঘর যারা ঠিক রাখতে পারেনা তারা অন্যের খবরদারী করে লজ্জা করা উচিত।বর্তমান সিলেট মহানগর সেক্রেটারি বিদ্রোহী প্রার্থী, সে ব্যাপারে ঈমানদারদের কোন ফতোয়া নেই।যত কোপ জামায়াতের উপর।আবার হুমকি দিচ্ছে জামায়াতকে জোট থেকে বের করে দিবে।আমার মতে এমন ছোটলোকদের সাথে জোট করার চেয়ে বেরিয়ে যাওয়াই উত্তম।সিলেটবাসি উপযুক্ত জবাব দেবে ৩০জুলাই।জামায়াত সমর্থন তুলে নিলে জাদুঘরে স্থান পাবে বিএনপি
শামসুর রহমান
কলিকাল বলে একটা কথা শুনেছিলাম। সিলেট বার্তায় ছাত্রদল নেত্রী হাবিবার লেখা পড়ে সেটা আবার মনে পড়লো। তাই এ বিষয়ে কিছু না বললে হুকুমতে এলাহীর পথে থাকা জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। এদেশের মাটিতে জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা যত রক্ত দিয়েছে তার নজির নেই। চল্লিশের দশকে মাওলানা মওদুদী (র এর নেতৃত্ব শুরু করা সংগঠনকে যদি সিলেটের প্রার্থীতার কারণে বেইমান বলা হয়, তাহলে তাদের উচিত নিজেদের জন্ম সন্ধান করা।
১৯৭১ সালে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। কিন্তু কখনো বলা হয় না যে জামায়াতের অবস্থান ছিল শুধুমাত্র একটি যৌক্তিক আন্দোলনের। কিন্তু কেউ যদি দাবি করে যে জামাতকে জিয়া জীবন দান করেছে তাহলে তা ভুল। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান জামাতকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছে কিন্তু সেখানে নিজের স্বার্থই মুখ্য ছিল। জামাতকে বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়ার শর্ত দিয়েছিল পাকিস্তান, জিয়া সেই শর্ত পূরণ করেছে মাত্র। জামাত পৃথকভাবে চললেও শাহ আজিজসহ একই মতাদর্শের অন্যান্যদের তিনি স্থান দিয়েছিলেন নিজের দলে। আজ যদি বিএনপি বলে যে জামাত রাজাকার, তাহলে আমরাও বলতে পারি জিয়া রাজাকারের জন্মদাতা। জামাত রাজাকার হলে জিয়া কিভাবে মুক্তিযোদ্ধা হয়?
অধ্যাপক গোলাম আজম একজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। জিয়াউর রহমানকে ৭৬/৭৭ সালে বহির্বিশ্বের কেউই জানতেন না। জিয়াউর রহমানকে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে সকল ধরণের সহযোগিতা নিশ্চিত ও সৌদি আরবসহ অন্যান্য মুসলিম দেশসমূহের সমর্থন দেয়ার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন অধ্যাপক আজম। আবার বাংলাদেশে জামাতের নেতাকর্মীরা ৭১ পরবর্তি সময়ে বিচ্ছিন্ন ছিল, কিন্তু তাদের শক্তি উপেক্ষা করার মত ছিল না। ফলে গোলাম আজম সাহেব দেশে আসার এক মাসের মধ্যেই জামাত সুসংগঠিত হয়। শিবিরের সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু হয়। আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় সকলেই জিয়া বিরোধী ছিলেন। জিয়ার এ সঙ্কটকালীন সময়ে বটবৃক্ষের মত সুশীতল ছায়া প্রদান করেছে জামায়াতে ইসলামী। জামাতের সমর্থন ছাড়া একদিনের জন্য ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারতেন না জিয়াউর রহমান। ৭১ এ পাকিবাহিনী যত সেনাসদস্য হত্যা করেছে, শহীদ জিয়া তারচেয়ে বেশি সেনাসদস্য হত্যা করেছেন যেখানে জামাতের কোন স্বার্থ ছিল না। হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা হত্যা করেছেন, কিন্তু জামাত শিবিরের নেতাকর্মীদের কারণে তৃণমূল পর্যায়ে জিয়া বিরোধী জনমত গড়ে উঠে নি। তাই যে বহুদলীয় গণতন্ত্রের দাবি করা হয় তা ছিল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেকে রক্ষার পদক্ষেপ মাত্র। প্রকৃত অর্থে বিরোধী দল বলতে কোনো দলের কার্যক্রম কি তখন ছিল?
বলা হয়েছে, জামাতকে মন্ত্রিত্ব দেয়া হয়েছে, গোলাম আজমের নাগরিকত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেই সমঝোতা ছিল জামাতের সাংগঠনিক শক্তির কারণে। সুসংগঠিত জামাতের ভোট ব্যাংকের নিশ্চয়তা না থাকলে বিএনপি কি দশটি আসন পেত বা পাবে? জামাতকে দুটি মন্ত্রণালয় দিয়ে মূল্যায়ন নয়, অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের লগি বৈঠা আন্দোলনের কথা ভুলে গেছেন তারা। অথচ সেদিন জামাত শিবিরের নেতাকর্মীরা না দাঁড়ালে বিএনপি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত। ২০০৮ এর পরেও জামাত যতদিন সক্রিয় ছিল, ততদিন আন্দোলন হয়েছে। বিএনপির একটি অবরোধ কার্যকর করার সাহসও ছিল না।
বলা হয়েছে, বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীদের সমর্থনের কথা। সেখানে কি জামাতের একক স্বার্থ ছিল? সেই বুদ্ধিজীবীদের কি তাদের প্রাপ্য দেয়া হয় নাই? মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীর সংসার কি জামাতের অর্থে চলে নি? জামাতের জন্য কিছু করলে তার জন্য কি উপযুক্ত প্রতিদান দেয়া হয় নাই?
বিএনপির জন্য এত কিছু করার পর জামাতের প্রতি যা করেছে সেটাকে্টি বরং মীর জাফরি বলা যায়। জামাতের সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া সরকার বিরোধী একটি বড় মিছিল করার অবস্থা নেই বিএনপির। জামাত শিবিরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত হলে খালেদা জিয়ার সমাবেশ সফল হতো। কিন্তু যদি বলেন খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের পর জামাত নীরব ছিল, তাহলে বিএনপিকে উত্তর দিতে হবে, জামাত নেতাদের একের পর এক ফাঁসি দেয়ার পরও কেন বিএনপি চুপ ছিল? কেন এখনো জামাতকে তাচ্ছিল্য করা হয়? বিএনপির জন্য জামাত শিবিরের অবদান পৃষ্টার পর পৃষ্ঠা লিখলেও শেষ হবে না, কিন্তু সুযোগ পেলেই বেইমান, মীর জাফর বলা বিএনপি সমর্থকদের উচিত আয়নায় মুখ দেখা। কারা মীর জাফরি করেছে এবং করছে? এতগুলি সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে জামাতকে ছাড় দেয়ার মত মানসিকতা যদি না থাকে সেটাকেই মীর জাফরি বলে। বিএনপি তাদের বিদ্রোহী প্রার্থীকে বসাতে পারে না, কিন্তু মাথা ব্যাথা জামাত নিয়ে।
বিএনপির এখনো সময় আছে। আমরা আহবান জানাবো সিলেট নির্বাচন থেকে প্রার্থী প্রত্যাহার করে জামায়াতের প্রার্থীকে সমর্থন দি
---------------------
উত্তর:- যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দুরূদ ও সালাম আল্লাহর রসূল (সঃ) এর উপর বর্ষিত হোক।
পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ তায়ালার নামে শুরু করছি।
নিজ পরিবারের ও বংশের নাম পরিবর্তন করে অন্য পরিবারের ও বংশের নাম লাগানো সম্পূর্ণ হারাম এবং বড় গুনাহ। আর এটা হচ্ছে জাহেলিয়াত ও বিজাতীয় অনুসরণ। আপনি আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সঃ) এর স্ত্রীদের নামের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখতে পাবেন- তাদের নামের সাথে মুহাম্মাদ (সঃ) এর নাম যুক্ত ছিল না, তারা তাদের নামের সাথে স্বামীর নাম যুক্ত করেন নি। বরং তাদের নামের সাথে তাদের পিতার নাম যুক্ত ছিল। উদাহরনঃ হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) এর বিয়ের পরেও তাঁর নামের সাথে "সিদ্দিকা" তাঁর পিতার নাম যুক্ত ছিল। তাঁর নামের সাথে মুহাম্মাদ (সঃ) এর নাম যুক্ত করে "আয়েশা মুহাম্মাদ" রাখা হয় নি।
সুতরাং কারো নাম হবে তার নামে ও তার বাবার নামে।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
"তোমরা তাদের সন্বোধন কর তাদের বাপেদের নামে, এটিই আল্লাহর কাছে বেশি ন্যায়সংগত।"
[সূরা আহযাব আয়াত নাম্বার:- ৫]
আবূ মা'মার (রঃ).......আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (সঃ) -কে বলতে শুনেছেন, "কোন ব্যক্তি যদি নিজ পিতা সম্পর্কে জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও অন্য কাউকে তার পিতা বলে দাবী করে তবে সে আল্লাহর (নিয়ামতের) কুফরী করল এবং যে ব্যক্তি নিজেকে এমন বংশের সাথে নসবী সম্পৃক্ততার দাবী করল, যে বংশের সাথে তার কোন নসবী সম্পর্ক নেই, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে তৈরি করে নেয়।"
[সহিহ বুখারী অধ্যায় ৫৬ হাদিস ৭১১],
নবী (সঃ) আরো বলেন, "যে ব্যক্তি তার পিতা বাদ দিয়ে অন্যের সাথে সম্পর্কের দাবি করে পরিচয় দেয় অথবা নিজের মনিবকে ত্যাগ করে অপরকে মনিব বলে পরিচয় দেয়, তার উপর আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাকুল এবং সকল মানুষের অভিশাপ। তার নফল বা ফরয কোন ইবাদতই কবুল করা হবে না।"
[সুনানু ইবনে মাজাহ হাদিস ২৭১২]।
যেহেতু স্বামী রক্ত সম্পর্কে অন্য বংশের তাই তার নাম নিজের বংশীয় নাম পরিবর্তন করে লাগানো যাবে না। আর এটা এক ধরনের জাহেলিয়াত ও বিজাতির অনুসরণ।
অতএব, বিয়ের আগে এবং পরে নারীরা সব সময়েই নিজের পিতার নামে পরিচিত হবে। বিয়ের পরে নামের সাথে স্বামীর নাম লাগানো- এটা সম্পূর্ণরূপে ইহুদী এবং খ্রিস্টানদের সংস্কৃতি। মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন, "ইহুদী এবং খ্রিস্টানরা জাতি হিসেবে নির্বোধ, কারণ তারা ইব্রাহীম (আঃ) এর দ্বীনে হানীফ (এক আল্লাহর ইবাদত করা এবং সমস্ত শিরক থেকে বেঁচে থাকার ধর্ম) থেকে ফিরে কুফুরীতে লিপ্ত হয়েছে।" সেজন্যে ইহুদী এবং খ্রিস্টানদের সংস্কৃতি অনুকরণ করা মুসলমানদের জন্যে হারাম।
একবার চিন্তা করে দেখুনঃ এই কাজটা কত বোকামী, এক মেয়ে বিয়ের পরে স্বামীর নাম যুক্ত করলো, হয়তো কোন একসময় তালাক হয়ে অন্য পুরুষের ঘরে গেলো। তখন আবার নাম পাল্টানো...ইসলাম আমাদেরকে নিজের বাবার নামে পরিচিত হতে আদেশ করেছে। স্বামী স্ত্রী সম্পর্কের দ্বারা একজন নারীর প্রকৃত পরিচয় হতে পারে না।
ইবনু উমার (রাঃ) বর্ণনা করেন। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, "যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের অনুকরণ করবে সে ঐ কাওমের বলেই গণ্য হবে।"
[বুলুগূল মারাম ১৪৭১]।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের এই সকল গুনাহ হতে রক্ষা করে সঠিক পথে থাকার তাওফিক দিন। আমিন
গল্পটা একটু বড় হলেও শিক্ষানীয়, -----এক হৃদয়স্পর্শী হজের গল্প
.
সাঈদ জেদ্দাহ এয়ারপোর্টের ওয়েটিংরুমে
বসে
ছিলেন। তার পাশে আরো একজন ছিলেন,
তিনিও হজ
সম্পন্ন করেছেন।
মানুষটি বললেন, আমি একজন ঠিকাদার
হিসেবে কাজ করি
এবং আল্লাহ আমাকে ১০তম হজ পালন করার
সৌভাগ্য
দিয়েছেন। সাঈদ বললেন, হজ মাবরুর! আল্লাহ
আপনাকে কবুল করুন এবং গুনাহ সমূহ ক্ষমা করুন।
.
মানুষটি মুচকি হাসলেন এবং বললেন আমিন।
এরপর
বললেন , আপনি কি এর আগে হজ করেছেন?
সাঈদ বলতে ইতস্ততঃ করলেন। কিছুক্ষণ পর
বললেন, ওয়াল্লাহি! এটা অনেক দীর্ঘ গল্প।
আমি
চাইনা আমার কথায় আপনার মাথা ব্যাথা
হোক! লোকটি
বললেন, দয়া করে আমাকে বলুন, আমাদের এখন
কিছুই করার নেই, আমরা শুধুই অপেক্ষা করছি।
.
সাঈদ হাসলেন, বললেন “হ্যা, অপেক্ষা দিয়েই
আমার
গল্পের শুরু!
হজে যাবার জন্য আমি অনেক বছর যাবত
অপেক্ষা
করছিলাম। ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে ৩০ বছর
একটা
প্রাইভেট হাসপাতালে কাজ করার পর আমি
হজের জন্য
যথেষ্ট টাকা জমাতে পেরেছিলাম। যেদিন
আমি টাকা
তুলতে গিয়েছিলাম সেইদিনই হঠাৎ এক মায়ের
দেখা
পেলাম যার প্যারালাইজড সন্তানের
চিকিৎসা আমি
করেছিলাম।আমি তার মুখে চিন্তার ছাপ
দেখতে
পাচ্ছিলাম।
তিনি বললেন, ‘আল্লাহ আপনাকে রক্ষা করুন
ভাই সাঈদ।
এটা আমাদের হাসপাতালে শেষদিন।’
.
আমি তার কথা শুনে অবাক হয়েছিলাম।
ভেবেছিলাম তিনি
আমার চিকিৎসায় খুশি নন।তাই তিনি তার
সন্তানকে অন্য
হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
মহিলাটি বললেন, ‘না ভাই সাঈদ, আল্লাহ
সাক্ষী যে
আপনি আমার ছেলের সাথে পিতার মত আচরণ
করেছেন এবং চিকিৎসা দিয়ে তাকে সাহায্য
করেছেন যখন আমরা আশা হারিয়ে
ফেলেছিলাম।’
এরপর তিনি বিষন্নভাবে চলে গেলেন।
.
পাশে থাকা মানুষটি কথার মাঝখানে বাধা
দিয়ে বললেন,
‘ব্যাপারটা অদ্ভুত! যদি তিনি আপনার
চিকিৎসায় সন্তুষ্ট হয়ে
থাকেন আর তার ছেলের উন্নতিও হচ্ছিল, তবে
কেন তিনি চলে গিয়েছিলেন? সাঈদ বললেন,
সেটা
আমিও ভেবেছিলাম।তাই কি ঘটেছে তা
জানার জন্য
কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়েছিলাম। তারা
আমাকে
বলেছিল যে ছেলেটার বাবার চাকরি চলে
গিয়েছিল,
তাই তার ছেলের চিকিৎসার খরচ চালাতে
পারছিলেন না।’
.
পাশে বসা মানুষটি বললেন, আল্লাহ ছাড়া
কারো কোন
শক্তি,সামর্থ্য নেই। তাদের কত দুর্ভোগ! আপনি
কিভাবে ব্যাপারটার গতি করেছিলেন? সাঈদ
বললেন,
আমি ম্যানেজারের কাছে গেলাম এবং
হাসপাতালের
খরচে ছেলেটার চিকিৎসা করাতে যুক্তিতর্ক
করলাম।
কিন্তু সে তৎক্ষণাৎ সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান
করল এবং
বলল, ‘এটা একটা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান, দাতব্য
সংস্থা না।’
আমি পরিবারটির জন্য দুঃখ-ভারাক্রান্ত মনে
অফিস ত্যাগ
করলাম।
.
তখন হঠাত আমার পকেটে হাত রাখলাম,
সেখানে
আমার হজের জন্য প্রস্তুতকৃত টাকাগুলো ছিল।
আমি
আমার জায়গায় কিছুক্ষণের জন্য দাঁড়ালাম
তারপর মাথা
উপরের দিকে তুলে আমার রবকে বললাম, ‘ও
আল্লাহ! আপনি জানেন আমি কেমন অনুভব
করছি!
আপনার ঘরে যাওয়া ও হজ করা এবং আপনার
রাসূলের
মসজিদে যাওয়ার চেয়ে আমার কাছে অধিক
প্রিয়
কিছুই নেই। আপনি জানেন আমি সারাটি
জীবন এই
মূহূর্তের জন্য কাজ করেছি।কিন্তু আমি এই
দরিদ্র মহিলা
ও তার সন্তানকে নিজের উপর প্রাধান্য
দিচ্ছি।তাই
আপনার অনুগ্রহ থেকে আমাকে বঞ্চিত করবেন
না।’ আমি হিসাবের ডেস্কে গেলাম এবং
ছেলেটার
চিকিৎসার জন্য আমার কাছে থাকা সমস্ত
টাকা দিয়ে দিলাম।
যা পরবর্তী ছয়মাসের জন্য যথেষ্ট ছিল। আমি
হিসাবরক্ষককে অনুনয় করে বললাম যেন
মহিলাটিকে
বলা হয়, বিশেষ অবস্থার কারণে চিকিৎসার
খরচ হাসপাতাল
থেকে দেয়া হচ্ছে।
.
হিসাবরক্ষক এর দ্বারা প্রভাবিত হলেন, তার
চোখে পানি
এসে গেল। বললেন ‘বারাক আল্লাহ ফিক।’
পাশে বসা
মানুষটি বললেন, আপনি যদি আপনার সমস্ত
টাকা দান
করে থাকেন,তাহলে আপনি কিভাবে হজে
এলেন?
সাঈদ বললেন, সেদিন বিষন্ন মনে ঘরে ফিরে
এলাম, হজ্জে যাওয়ার সুযোগ হারানোর
কারনে।
কিন্ত আমার মন আনন্দে ভরে উঠেছিল এই
কারনে
যে আমি এক মহিলা ও তার সন্তানের দুঃখ দূর
করেছিলাম।
আমি সেই রাতে ঘুমাতে গেলাম অশ্রুসিক্ত
অবস্থায়।
স্বপ্নে দেখলাম আমি কাবা ঘর তাওয়াফ
করছি এবং
মানুষেরা আমাকে সালাম দিচ্ছিল। তারা
আমাকে
বলেছিল, ‘হজ মাবরুর, হে সাঈদ! কারন তুমি
পৃথিবীতে
হজ্জ করার আগেই নভোমণ্ডলে হজ করেছ।’
.
আমি তাৎক্ষণিকভাবে জেগে উঠলাম এবং
অবর্ণনীয়
আনন্দ অনুভব করলাম।সবকিছুর জন্য আল্লাহর
প্রশংসা
করলাম এবং তার সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট ছিলাম।
যখন ঘুম থেকে জেগে উঠলাম আমার ফোন
বেজে উঠল।হাসপাতালের ম্যানেজার
ফোনেটি
করেছিলেন।
তিনি আমাকে বললেন, ‘ হাসপাতালের মালিক
এ বছর
হজ্জে যেতে চাচ্ছেন এবং তিনি ব্যক্তিগত
থেরাপিস্ট ছাড়া সেখানে যাবেন না। কিন্তু
তার
থেরাপিস্টের স্ত্রী গর্ভবতী এবং তিনি
গর্ভাবস্থার
অন্তিম পর্যায়ে পৌছেছেন। তাই সে তার
স্ত্রীকে ছেড়ে যেতে পারে না।’
.
আপনি কি আমার একটা উপকার করবেন?
আপনি কি তাকে তার হজ্জে সংগ দিতে
পারেন?
আমি শুকরিয়ার সিজদা করলাম। আপনি যেমন
দেখছেন,
আল্লাহ তার ঘরে যাওয়ার জন্য আমাকে কবুল
করলেন
কোন অর্থব্যয় ছাড়া।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর।হাসপাতালের
স্বত্বাধিকারী
আমাকে কিছু দিতে জিদ করলেন। আমি তখন
তাকে
সেই মহিলা আর তার ছেলের গল্প তাকে
শুনালাম।
তিনি নিজ খরচে ছেলেটির চিকিৎসার
ব্যবস্থা করতে
চাইলেন।আর নিঃস রোগীদের জন্য
হাসপাতালে
একটা দানবাক্সের কথা ভাবলেন। তার উপর
তিনি
ছেলেটির বাবাকে তারই একটা কোম্পানিতে
চাকরি
দিয়েছিলেন।
এমনকি তিনি সে টাকাগুলোও ফেরত
দিয়েছিলেন যা
আমি ছেলেটার চিকিৎসার জন্য দিয়েছিলাম।
আপনি কি
আমার রবের অনুগ্রহের চেয়ে বড় অনুগ্রহ আর
দেখেছেন? সুবহানআল্লাহ!
.
পাশে বসা মানুষটি তাকে জড়িয়ে ধরলেন
এবং
বললেন আমি কখনো আজকের মত লজ্জা অনুভব
করিনি। আমি একবছর অন্তর হজ পালন করতাম
আর ভাবতাম
আমি মহৎ কোন কাজ করছি। আর ফলাফলস্বরূপ
আল্লাহর কাছে আমার অবস্থান উন্নত হবে।
কিন্তু
এখন বুঝতে পারছি আপনার হজ আমার হাজার
হজ্জের
সমতুল্য।
.
আমি আল্লাহর ঘরে গিয়েছিলাম, কিন্তু
আল্লাহ তার
ঘরে আপনাকে আমন্ত্রণ করেছেন। আল্লাহ
আপনার হজ কবুল করুন!
(collected).
মন্তব্য করতে লগইন করুন