একজন মুমিনের জন্য সবছেয়ে মুল্যবান সম্পদ হচ্ছে সবর, নিশ্চয়ই আল্লাহ সবর অবলম্বনকারীদের সঙ্গেগই আছেন। বর্তমান সময়টি খুবই উপযোগী এর জন্য

লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ২৭ জুন, ২০১৮, ০৫:০৭:০১ বিকাল

ঈমানদারদের জন্য পরিক্ষার পর পরিক্ষা আসবে এটাই স্বভাবিক আর বর্তমান সময়টি এর জন্য কুবই গুরুত্বপূর্ন। মহান আল্লাহ বলেন

ياَيُّهَا الَّذِيْنَ امَنُوْا اسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلوةِ اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ

وَلاَ تَقُوْلُوْا لِمَنْ يُّقْتَلُ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ اَمْوَاتٌ ج بَلْ اَحْيَاءٌ وَّلكِنْ لاَ تَشْعُرُوْنَ

وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوْعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الاَمْوَالِ وَالاَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِيْنَ

আল বাকারা, আয়াত ১৫৩-১৫৫

ভাবানুবাদ ১৫৩ ওহে তোমরা যারা ঈমান এনেছো, সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবর অবলম্বনকারীদের সঙ্গে আছেন।

১৫৪. আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না। তারা তো আসলে জীবিত। কিন্তু তোমরা তা অনুধাবন করতে পার না।

১৫৫. এবং আমি অবশ্যই তোমাদেরকে ভীতিপ্রদ পরিস্থিতি, ক্ষুধা-অনাহার এবং অর্থ-সম্পদ, জান ও মাল-উপার্জনের লোকসান ঘটিয়ে পরীক্ষা করবো। এমতাবস্থায় যারা সবর অবলম্বন করবে, তাদেরকে সুসংবাদ দাও।

শানে নাজুল

নবুওয়াত প্রাপ্তির পর তেরোটি বছর মাক্কায় ইসলামের দাওয়াত পেশ করেন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সত্য-সন্ধানী কিছু সংখ্যক লোক তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাঁর নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ হন।

কিন্তু মুশরিক নেতাদের দাপটের কারণে মক্কার অধিকাংশ মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেনি। এই দিকে ইয়াসরিবের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের একটি বড়ো অংশ ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁদের প্রচেষ্টায় ইয়াসরিবে ইসলামী দাওয়াতের প্রসার ঘটে।

এমতাবস্থায় আল্লাহ রাব্বুল ‘আল আমীন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও তাঁর অনুসারীদেরকে ইয়াসরিবে হিজরাত করার নির্দেশ দেন।

৬২২ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইয়াসরিব পৌঁছেন। ইয়াসরিবে গড়ে তোলেন ছোট্ট একটি রাষ্ট্র। তখন থেকে ইয়াসরিব হয় আল মাদিনা বা মাদিনাতুর রাসুল।

মাদানী যুগের একেবারে গোড়ার দিকে সূরা আল্ বাকারার বৃহত্তর অংশ নাজিল হয়। সুদ নিষিদ্ধকরণ সংক্রান্ত আয়াতগুলো নাজিল হয়েছিলো মাদানী যুগের শেষ দিকে।এই আয়াত গুলোকেও এই সূরায় শামিল করা হয়।

আর যেই আয়াতগুলো দিয়ে এই সূরাটির সমাপ্তি টানা হয়েছে সেই আয়াত গুলো মাক্কী যুগের শেষভাগে মিরাজের সময় নাজিল হয়েছিলো। বিষয়বস্তুর সাথেমিল থাকার কারণে সেই আয়াতগুলো এই সূরায় সংযুক্ত করা হয়।

হিজরাতের পূর্বে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (সাঃ) দাওয়াতি তৎপরতা পরিচালিত হয়েছে মুশরিকদের মধ্যে। হিজরাতের পর আরেক শ্রেণীর লোক তাঁর সামনে আসে। এরা ছিলো ইয়াহুদি।

মাদীনা সহরের উপকণ্ঠে তাদের বিভিন্ন গোত্র বসবাস করতো।

এরা আত্তাওরাতের অনুসারী বলে দাবি করতো। আসলে তারা আত্তাওরাতকে বিকৃত করে ফেলেছিলো। আত্তাওরাতে তারা মানুষের কথা মিশিয়ে নিয়েছিলো। আত্তাওরাতের যেই সব আয়াত তখনো অবিকৃত ছিলো সেইগুলোকে তারা নিজেদের মনগড়া ব্যাখ্যা দ্বারা বিকৃত করে ফেলেছিলো। এরা ছিলো আসলে বিকৃত মুসলিম।

ইসলামী দাওয়াত মাদানী যুগে প্রবেশ করার পর আরেক শ্রেণীর মানুষের আবির্ভাব ঘটতে শুরু করে। এরা ছিলো মুনাফিক।

এদের কেউ কেউ ইসলামের সত্যতা স্বীকার করতো, কিন্তু এর প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে দ্বন্দ্ব-প্রতিদ্বন্দ্বে নিয়োজিত হতে তারা প্রস্তুত ছিলো না।

এদের কেউ কেউ ইসলাম ও জাহিলিয়াতের মাঝে দোদুল্যমান অবস্থায় ছিলো।এদের কেউ কেউ আসলে ইসলামকে অস্বীকারই করতো, কিন্তু ফিতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে মুসলিমদের দলে প্রবেশ করতো। এই ধরনের লোক বর্তমানে আমাদের দেশে অভাব নেই।

এদের কেউ কেউ একদিকে মুসলিমদের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতো, অন্যদিকে ভালো সম্পর্ক রাখতো ইসলামের দুশমনদের সাথে। শেষাবধি যারাই বিজয়ী হোক না কেন, এতে যেনো তাদের স্বার্থ হানি না ঘটে সেই বিষয়ে তারা ছিলো খুবই সজাগ।

সূরা আলবাকারা নাজিলের সময় বিভিন্ন ধরনের মুনাফিকের আত্মপ্রকাশ ঘটতে শুরু করেছিলো মাত্র, তাই এই সূরাতে তাদের সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য পেশ করা হয়েছে।সঙ্গে সঙ্গে মুমিনদের চিন্তা-চেতনা, কামনা-বাসনা এবং আমল-আখলাক পরিশীলিত করার জন্য বিভিন্ন সবক দেয়া হয়েছে।

১৫৩ নাম্বার আয়াত

ওহে তোমরা যারা ঈমান এনেছো, সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। অবশ্যই আল্লাহ সবর অবলম্বনকারীদের সঙ্গে আছেন।

আল্ মাদীনাতুল মুনাওয়ারাহ রাষ্ট্রে উত্তরণের মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুমিনদেরকে নেতৃত্বের আসনে বসিয়ে দেন। এর মাধ্যমে তাঁদেরকে যে বিরাট রকমের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে ইংগিতে সেই কথা তাঁদেরকে জানিয়ে দেন।

সমাজ-সভ্যতার (ইসলাহ) পরিবর্তন করতে অগ্রসর হলে তাঁদেরকে যে বড়ো রকমের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হবে সেই কথা তাঁদেরকে জানিয়ে দেন। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য তাঁদেরকে সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাওয়ার আহ্বান জানান।

সবর অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি গুণ। মুমিনদেরকে এই গুণে গুণান্বিত হওয়ার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বারবার তাকিদ দিয়েছেন। আল্ হাদিসেও এই বিষয়ে তাকিদ রয়েছে।

রোগ-ব্যাধির কষ্ট বরদাশত করার নাম ও সবর।দুঃখ-বেদনায় ভেঙে না পড়ার নামও সবর।অনভিপ্রেত কথা ও আচরণে উত্তেজিত না হওয়ার নাম ও সবর।পাপের পথে গিয়ে লাভবান হওয়ার চেয়ে পুণ্যের পথে থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়াকে মেনে নেয়ার নাম ও সবর। মিথ্যা প্রচারণার মুখে অবিচলিত থাকার নাম ও সবর।

ভীতিপ্রদ পরিস্থিতিতেও সঠিক পথে দৃঢ়পদ থাকার নাম ও সবর।লক্ষ্য হাসিলের জন্য দুঃখ-কষ্ট সহ্য করার নাম ও সবর।লক্ষ্য অর্জনে বিলম্বিত হচ্ছে দেখে হতাশ বা নিরাশ না হওয়ার নাম ও সবর।বিরোধিতার মাঝে সুকৌসলে ধর্যের সাথে মোকাবেলার নাম ও সবর।

সূরা আল মুদ্দাস্সিরের দ্বিতীয় ও তৃতীয় আয়াতে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)কে নবী হিসেবে তাঁর কর্তব্য কী তা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ময়দানে তিনি তখনো নামেননি। কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই সূরারই সপ্তম আয়াতে এই কথাও তাঁকে অগ্রিম জানিয়ে দিলেন যে এই কর্তব্য পালন করতে গেলে তাঁকে বিরোধিতার সম্মুখীন হতেই হবে। সেই অবস্থার সম্মুখীন হয়ে তাঁকে কর্তব্য কর্মে দৃঢ়পদ থাকতে হবে।

وَلِرَبِّكَ فَاصْبِرْ এবং তোমার রবের খাতিরে সবর অবলম্বন কর।সবর অবলম্বনের তাকিদ দিয়ে সূরা আল মুয্যাম্মিলের ১০ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন,

وَاصْبِرْ عَلى مَا يَقُولُوْنَ وَاهْجُرْهُمْ هَجْرًا جَمِيْلاً

ওরা যেইসব কথা বলে বেড়াচ্ছে তার মোকাবেলায় সবর অবলম্বন কর এবং ভদ্রভাবে তাদেরকে এড়িয়ে চল।

সূরা আল মা‘আরিজের ৫ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন,فَاصْبِرْ صَبْرًا جَمِيْلاً অতএব তুমি সবর অবলম্বন কর সুন্দর সবর।

সূরা ইউনুসের ১০৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন বলেন,

وَاتَّبِعْ مَا يُوْحى إِلَيْكَ وَاصْبِرْ حَتّى يَحْكُمَ اللهُ ج وَهُوَ خَيْرُ الْحَاكِمِيْنَ

এবং তোমার প্রতি যা ওহি করা হয় তা মেনে চল এবং আল্লাহ ফায়সালা না করে দেয়া পর্যন্ত সবর অবলম্বন কর। আর তিনিই তো সর্বোত্তম ফায়সালাকারী। একই রূপ তাকিদ দিয়ে সূরা তা-হা-এর ১৩০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন,

অতএব ওরা যা কিছু বলে বেড়াচ্ছে তার মোকাবেলায় তুমি সবর অবলম্বন কর, আর সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে তোমার রবের প্রশংসাসহ তাসবিহ কর, রাতের বেলায়ও তাসবিহ কর এবং দিনের প্রান্তেও। আশা করা যায় তুমি খুশি হবে।

সূরা আল আহকাফের ৩৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন,

فَاصْبِرْ كَمَا صَبَرَ أُوْلُوْا الْعَزْمِ مِنَ الرُّسُلِ وَلاَ تَسْتَعْجِلْ لَّهُمْ

এ হচ্ছে সবর অবলম্বনের তাকিদ সংবলিত বহুসংখ্যক আয়াতের মাত্র কয়েকটি। মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, সবরের চেয়ে উত্তম ও প্রশস্ত আর কিছু কাউকে দেয়া হয়নি। (আবু সায়িদ আল খুদরী (রা) সাহীহ মুসলিম, সহীহ আল বুখারী।)

সূরা আয্ য্যুমারের ১০ নম্বর আয়াতে সবর অবলম্বনকারীদের প্রতিদান সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, সবর অবলম্বনকারীদেরকে অগণিত পুরস্কার পূর্ণভাবে দেয়া হবে। এই আয়াতের শেষাংশে- اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَِ

কথাটি জুড়ে দিয়ে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন সবর নামক গুণটির মাহাত্ম্য তুলে ধরেছেন। অন্য দিকে এই বাক্যাংশের মাধ্যমে তিনি মুমিনদের মনে নিশ্চিন্ততার আমেজ সৃষ্টি করেছেন।

আরেকটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সালাত। এটি এমন এক প্রক্রিয়া যার অনুশীলন মুমিনদের মাঝে অনুপম নৈতিক শক্তি সৃষ্টি করে। সেই জন্য মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে নবুওয়াত প্রদানের সঙ্গে সঙ্গেই জিবরিল (আঃ) কে পাঠিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁকে সালাত আদায়ের পদ্ধতি শিখিয়ে দেন। মাক্কী ও মাদানী যুগে নাজিলকৃত বহু আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সালাতের তাকিদ দিয়েছেন। আলোচ্য আয়াতটিতেও আমরা একই রূপ তাকিদ দেখতে পাই।

১৫৪ নম্বর আয়াত

আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, তাদেরকে তোমরা ‘মৃত’ বলো না। তারা তো আসলেই জীবিত। কিন্তু তোমরা তা অনুধাবন করতে পার না।

আল্লাহর পথে নিহত হওয়াকে ইসলামী পরিভাষায় শাহাদাত বলা হয়। যিনি আল্লাহর পথে নিহত হন, তাঁকে বলা হয় শহীদ।

শাহাদাতবরণ মৃত্যু বটে, কিন্তু অসাধারণ মৃত্যু, মহিমান্বিত মৃত্যু। সেই জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন শহীদদেরকে ‘মৃত’ বলে আখ্যায়িত করতে নিষেধ করেছেন।

সূরা আলে ইমরানের ১৬৯ থেকে ১৭১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন শহীদদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে তোমরা মৃত মনে করো না। বরং তারা জীবিত। তাদের রবের কাছ থেকে তারা রিজিক পাচ্ছে।

আল্লাহ তাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ থেকে যা কিছু দিয়েছেন, তাতে তারা খুশি ও তৃপ্ত। আর তারা এই বিষয়েও নিশ্চিত, যেই সব মুমিন তাদের পেছনে এখনো দুনিয়ায় রয়ে গেছে, তাদের জন্য কোন ভয় ও দুঃখের কারণ নেই। তারা আল্লাহর নিয়ামত ও অনুগ্রহ লাভ করে আনন্দিত এবং তারা জানতে পেরেছে, অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের পুরস্কার নষ্ট করেন না।

শহীদের মর্যাদা সম্পর্কে নবীজি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, জান্নাতে প্রবেশ করার পর দুনিয়ার সমস্ত সামগ্রী তার জন্য নির্ধারিত হলেও কোন ব্যক্তি পৃথিবীতে ফিরে আসতে চাইবে না। কিন্তু শহীদরা এর ব্যতিক্রম। তাকে যেই মর্যাদা দেয়া হবে তা দেখে সে দশবার পৃথিবীতে এসে শহীদ হওয়ার আকাংক্ষা ব্যক্ত করবে।শাহাদাত লাভের পর পরই যাঁরা আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিনের সান্নিধ্যে এমনভাবে সমাদৃত হন, তাঁদেরকে ‘মৃত’ বলা আসলেই শোভনীয় নয়।

১৫৫ নম্বর আয়াত

এবং আমি অবশ্যই ভীতিপ্রদ পরিস্থিতি, ক্ষুধা-অনাহার এবং অর্থ-সম্পদ, জান ও মাল-উপার্জনের লোকসান ঘটিয়ে তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো। এমতাবস্থায় যারা সবর অবলম্বন করবে, তাদেরকে সুসংবাদ দাও।

এই আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন তাঁর একটি শাশ্বত বিধানের কথা মুমিনদেরকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। আর সেটি হচ্ছে, যাঁরা আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিনের প্রতি নিখাদ ঈমান আনার ঘোষণা দেবেন, তাঁদেরকে তিনি অবশ্যই পরীক্ষার সম্মুখীন করবেন।

সূরা আল ‘আনকাবুতের ২ ও ৩ নম্বার আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন বলেন,

اَحَسِبَ النَّاسُ اَنْ يُّتْرَكُوْآ اَنْ يَّقُوْلُوْآ امَنَّا وَهُمْ لاَ يُفْتَنُوْنَ وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِيْنَ

০مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللهُ الَّذِيْنَ صَدَقُوْا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِيْنَ

লোকেরা কি মনে করেছে যে ‘আমরা ঈমান এনেছি’ এই কথা বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? অথচ তাদের পূর্ববর্তীদেরকে আমি পরীক্ষা করেছি। আল্লাহকে তো জানতে হবে ঈমানের দাবিতে কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যাবাদী।

পরবর্তীকালে অবতীর্ণ সূরা মুহাম্মাদের ৩১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন বলেন, আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো যাতে আমি জেনে নিতে পারি তোমাদের মধ্যে কারা ‘মুজাহিদীন’ এবং কারা ‘সাবেরিন’। সূরা আলে ইমরানের ১৪২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন বলেন,

তোমরা কি ভেবেছো এমনিতেই জান্নাতে চলে যাবে, অথচ আল্লাহ এখনো দেখেননি তোমাদের মধ্য থেকে কারা জিহাদ করে এবং কারা সবর অবলম্বনকারী? সূরা আত্ তাওবা-র ১৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন বলেন,

اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تُتْرَكُوْا وَلَمَّا يَعْلَمَ اللهُ الَّذِيْنَ جهَدُوْا مِِنْكُمْ وَلَمْ يَتَّخِذُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ وَلاَ رَسُوْلِه وَلاَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَلِيْجَةٌ وَاللهُ خَبِِيْرٌم بِمَا تَعْمَلُوْنَ

তোমরা কি ভেবেছো যে তোমাদেরকে এমনিতেই ছেড়ে দেয়া হবে অথচ আল্লাহ এখনো দেখেননি যে তোমাদের মধ্য থেকে কারা জিহাদে নিবেদিত হয় এবং আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনদেরকে ছাড়া আর কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেন না। আর তোমরা যা কিছু কর সেই সম্পর্কে আল্লাহ খবর রাখেন।

সূরা আল বাকারার ২১৪ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, তোমরা কি ভেবেছো যে এমনিতেই তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথচ এখনো তোমাদের ঐরূপ অবস্থা আসেনি যেমনটি এসেছিলো তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর।

তাদের ওপর কঠিন অবস্থা আপতিত হয়েছে, মুসিবত এসেছে এবং তাদেরকে কাঁপিয়ে দেয়া হয়েছে যেই পর্যন্ত না রাসূল ও তাঁর সঙ্গীরা বলে উঠেছে, কখন আসবে আল্লাহর সাহায্য! তখন তাদেরকে বলা হয়েছে, ওহে, আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটেই।

সূরা আলে ইমরানের ১৪৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন বলেন, কত নবী গত হয়ে গেছে যারা লড়াই করেছে, তাদের সাথে মিলে লড়াই করেছে বহু আল্লাহওয়ালা লোক। আল্লাহর পথে যতো মুসিবাতই তাদের ওপর আপতিত হয়েছে তারা হতাশ হয়নি, দুর্বলতা দেখায়নি এবং বাতিলের নিকট মাথা নত করেনি। এমন সবর অবলম্বনকারীদেরকেই আল্লাহ ভালোবাসেন।

ঈমানের দাবি হচ্ছে, আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিবেদিত হওয়া এবং এই সংগ্রাম চালাতে গিয়ে যত প্রকারের বাধাই আসুক না কেন তার মোকাবেলায় দৃঢ়পদ থাকা।

এই সংগ্রাম চালাতে গিয়ে মুমিনদেরকে অনিবার্যভাবে ভীতিপ্রদ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে, কখনো কখনো অবস্থা এমন হতে পারে যে অনাহারে থাকতে হবে, কখনো কখনো বাগ-বাগিচা, ব্যবসায়-প্রতিষ্ঠান, ঘরদোরের ওপর হামলা হতে পারে, কখনো কখনো ইসলাম বিদ্বেষীদের হাতে আপনজন ও সহকর্মীদের কেউ কেউ প্রাণ হারাতে পারেন এবং কখনো কখনো আয়-উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এমন সব কঠিন পরিস্থিতিতেও যাঁরা সবর অবলম্বন করতে পারবেন, তাঁদেরকে সুসংবাদ দেয়ার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে নির্দেশ দিয়েছেন।

সাহাবা (রাঃ) গন ছিলেন নবীজির উত্তম অনুস্বারী তাই তারা ছিলেন দিকবিজয়ী

আসুন আমরাও দৈর্য্যর সে পদাংখ্য অনুস্বরন করে আল্লাহর দ্বীন বিজয়ের জন্য প্রসতুতি গ্রহন করি। আমাদের জন্য রয়েছে আল্ কুরানের এবং সহিহ্ আল্ হাদিসের নিয়ামত পূর্ণ জান্নাতের সুসংবাদ। আমরা শক্ত হবো শিশার মতো দিক পরাজয় সানবোনা।দিক বিজয়ী হবো সাহাবাগনের মতো

বিষয়: বিবিধ

১২০৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

385605
২৮ জুন ২০১৮ সন্ধ্যা ০৬:১৫
আমি আল বদর বলছি লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ খায়র

আল্লাহ আপনার সকল চেস্টা কবুল করুণ
২৯ জুন ২০১৮ দুপুর ০১:২৩
317829
কুয়েত থেকে লিখেছেন : আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ লেখাটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য মহান আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন
385623
৩০ জুন ২০১৮ রাত ০৮:৫৫
শেখের পোলা লিখেছেন : জাজাকাল্লাহু খাইরান। ধন্যবাদ। বিনয়ের সাথে জানাই যে নবী সঃ মদীনা পৌঁছেই ইসলামী রাস্ট্র কায়েম করেন নি, মদীনা সনদই তখন ছিল মেইন। প্রমান স্বরূপ বলি তখনও অনেক আনসার মুসলীম মামলায় নিজের হার বে যেনে রসুলের কাছে ফায়সালার জন্য না গিয়ে ঈশায়ী ওলামাদের কাছে যেত। তখন ইসলামী রাস্ট্র থাকলে এটা সম্ভব হত না। ইসলামী রাস্ট্র ব্যবস্থা চালু হয়েছিল মক্কা বিজয়ের পর। আপনার আপত্তি থাকলে আর একটু খোঁজ নিতে অনুরোধ করি।
হাঁ সবর দ্বীন প্রচারে অত্যন্ত প্রয়োজন,যা সুরা আসর এ প্রথম বলা হয়েছে। দ্বীনের জন্য সংগ্রাম করা আমাদের জন্য ফরজ। ধন্যবাদ।
০১ জুলাই ২০১৮ রাত ১০:৩২
317840
কুয়েত থেকে লিখেছেন : মহান আল্লাহ আপনাকেও সর্বােত্তম প্রতিদানে ভূষিত করুন।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে লেখাটি পড়ে গুরুত্বপূর্ন মন্তব্যটি করার জন্য। আমাদের আলেম সমাজসহ মুসলিম উম্মাহ ইসলামের সঠিক ইতিহাস জানেইনা যার জন্য এত বিভ্রাতি গোটাজাতি কোরান বিরুদী মুসলিম উম্মাহ কুরানের সাথে সর্ম্পক নেই দ্বীনের জন্য সংগ্রাম এবং সবর কি ভাবে করবে!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File