বিনা অযুতে পবিত্র কোরআনুল করিম স্পর্শ করা জায়েজ নেই তাই স্ক্রীনে থাকা কুরআন শরীফ অযু ছাড়া স্পর্শ করা বৈধ৷ তবে অযু সহ স্পর্শ করাই উত্তম
লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ১৪ মার্চ, ২০১৮, ০৭:৩৬:৪৫ সন্ধ্যা
১-প্রশ্নঃ-
মোবাইল, ল্যাপটপ বা কম্পিউটার এর স্ক্রিনে কোরআন দেখে পড়ার ফজিলত, কাগজের কোরআন দেখে পড়ার ফজিলতের সমান হবে কি?
এবং মোবাইলে কোরআন করিম স্পর্শ করার হুকুম কি? এবং কোরআন সফটওয়ার ইন্সটলকৃত মোবাইল নিয়ে টয়লেটে ঢুকা যাবে কি?
উত্তরঃ-
কুরআন যেহেতু গায়রে মাখলুক। তাই আমাদের সামনে পরিদৃষ্ট কুরআন হল মূল কুরআনের প্রতিচ্ছবি মাত্র। এ প্রতিচ্ছবি যেখানেই পরিদৃষ্ট হোক না, তা দেখে পড়া মানে কুরআন দেখে পড়ার হুকুমে হবে। চাই কুরআনের লিখিত রূপটি পাথরে খোদাই করা
থাকুক, বা মোবাইল কম্পিউটারের স্ক্রীনে থাকুক, বা কোন কাগজ বা পাতায় লিখিত আকারে থাকুক। সব
কিছুর বিধানই এক। অর্থাৎ দেখে পড়লে কুরআন দেখে
পড়ার সওয়াব হবে। এসব নিয়ে টয়লেটে প্রবেশ করা যাবে না। তবে মোবাইলে থাকা কুরআন এ্যাপস যদি
বন্ধ করা থাকে, তথা মোবাইল স্ক্রীনে পরিদৃষ্ট না থাকে, তাহলে উক্ত মোবাইল নিয়ে টয়লেটে প্রবেশে কোন সমস্যা নেই।
অনেক আলেমগন স্পর্শ করাকেও নাজায়েয বলেন, তাদের কথার ভিত্তি হলো স্ক্রীনে কোন আবরন নেই বিধায় সরাসরি আয়াতে স্পর্শ হয় যা নাজায়েয৷
তবে এ ক্ষেত্রে তাত্বিক কথা হলো মোবাইল স্ক্রীনে আবরন আছে৷ তাছাড়া অধিকাংশ মোবাইলে গ্লাস পেপারও থাকে যা স্পষ্ট আবরন৷ তাই স্ক্রীনে থাকা কুরআন শরীফ অযু ছাড়া স্পর্শ করা বৈধ৷ তবে অযু সহ স্পর্শ করাই উত্তম৷
ﻭﻗﺎﻝ ﺷﻴﺦ ﺍﻹﺳـﻼﻡ ﺍﺑﻦ ﺗﻴﻤﻴﺔ ﻓﻲ ﺷﺮﺡ ﺍﻟﻌﻤﺪﺓ
( ﺹ 384 ) : “ ﺍﻟﻮﺟﻪ ﻓﻲ ﻫﺬﺍ، ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺃﻋﻠﻢ ﺃﻥ ﺍﻟﺬﻱ ﻓﻲ
ﺍﻟﻠﻮﺡ ﺍﻟﻤﺤـﻔﻮﻅ ﻫﻮ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﺍﻟﺬﻱ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺼﺤﻒ ﻛﻤﺎ
ﺃﻥ ﺍﻟﺬﻱ ﻓﻲ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻤﺼﺤﻒ ﻫﻮ ﺍﻟﺬﻱ ﻓﻲ ﻫﺬﺍ
ﺍﻟﻤﺼﺤﻒ ﺑﻌﻴﻨﻪ ﺳﻮﺍﺀ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻤﺤﻞ ﻭﺭﻗﺎً ﺃﻭ ﺃﺩﻳﻤﺎً ﺃﻭ
ﺣﺠﺮﺍً ﺃﻭ ﻟﺤﺎﻓﺎً، ﻓﺈﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻣِﻦْ ﺣﻜﻢ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﺍﻟﺬﻱ ﻓﻲ
ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺃﻥ ﻻ ﻳﻤﺴﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻤﻄﻬﺮﻭﻥ ﻭﺟﺐ ﺃﻥ ﻳﻜﻮﻥ
ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﺍﻟﺬﻱ ﻓﻲ ﺍﻷﺭﺽ ﻛﺬﻟﻚ؛ ﻷﻥ ﺣﺮﻣﺘﻪ ﻛﺤﺮﻣﺘﻪ ،
ﺃﻭ ﻳﻜﻮﻥ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﺍﺳﻢ ﺟﻨﺲ ﻳﻌﻢ ﻛﻞ ﻣﺎ ﻓﻴﻪ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ
ﺳﻮﺍﺀ ﻛﺎﻥ ﻓﻲ ﺍﻟﺴـﻤﺎﺀ ﺃﻭ ﺍﻷﺭﺽ، ﻭﻗﺪ ﺃﻭﺣـــﻰ ﺇﻟﻰ
ﺫﻟﻚ ﻗﻮﻟﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ : { ﺭَﺳُﻮﻝٌ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻳَﺘْﻠُﻮ ﺻُﺤُﻔﺎً
ﻣُﻄَﻬَّﺮَﺓً } [ ﺍﻟﺒﻴﻨﺔ :2 ] ، ﻭﻛﺬﻟﻚ ﻗﻮﻟﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ : { ﻓِﻲ ﺻُﺤُﻒٍ
ﻣُﻜَﺮَّﻣَﺔٍ ﻣَﺮْﻓُﻮﻋَﺔٍ ﻣُﻄَﻬَّﺮَﺓٍ } [ ﻋﺒﺲ :13-14 ] . ﻓﻮﺻﻔﻬﺎ
ﺃﻧﻬﺎ ﻣﻄﻬﺮﺓ ﻓﻼ ﻳﺼﻠﺢ ﻟﻠﻤﺤﺪﺙ ﻣﺴﻬﺎ
আমাদের কাছে যে কুরআন রয়েছে এটি সেই কুরআনই যা লৌহে মাহফুজে রয়েছে। যেমন কুরআন তাই, যা কুরআনের মাঝে রয়েছে, চাই তার স্থান পাতা হোক, বা চামড়া হোক, বা পাথর হোক বা মোড়ক হোক।
সুতরাং আসমানে অবস্থিত লিখিত কিতাবের হুকুম যেহেতু তা পবিত্র ছাড়া কেউ স্পর্শ করে না, জমিনে
থাকা কুরআনের ক্ষেত্রে একই বিধানকে আবশ্যক করে। কেননা এ কুরআনের সম্মান সে কুরআনের মতই। অথবা আয়াতে কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য হল ইসমে জিনস। যা কুরআনকে বুঝাচ্ছে, চাই তা আসমানে থাকুক বা জমিনে থাকুক।
শরহুল উমদাহ-৩৮৪
যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না।
সূরা ওয়াকিয়া-৭৯৷
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবু বকর বিন হাযম বলেনঃ রাসূল সাঃ আমর বিন হাযম এর কাছে এই মর্মে চিঠি লিখেছিলেন যে, পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন কেউ স্পর্শ করবে না”।
মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-৬৮০, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২৮৩০, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং-৪৬৫৷
হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না।
মাযমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৫১২
আল্লামা হাফেজ নূরুদ্দীন বিন আবু বকর হায়সামী বলেনঃ ইমাম তাবারানী কাবীর ও সাগীর উভয় গ্রন্থে তা বর্ণনা করেছেন। আর এর সকল বর্ণনাকারী সিক্বা তথা
গ্রহণযোগ্য।
ইমাম নববী রহঃ বলেনঃ পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা নিষেধ বক্তব্যটি হযরত আলী রাঃ এবং সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস রাঃ এবং হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ দের। এ মতের উল্টো কোন মত সাহাবাগণ থেকে বর্ণিত নয়।
শরহুল মুহাজ্জাব-২/৮০
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেনঃ পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন স্পর্শ নিষেধ বক্তব্যটির পক্ষে মত দিয়েছেন হযরত সালমান ফারসী রাঃ, হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ এবং অন্যান্যরা। কোন সাহাবী থেকে এর বিপরীত বক্তব্য বর্ণিত নেই।
মাজমূউল ফাতাওয়া-২১/২৬৬
হযরত ওমর রাঃ যখন কাফের থাকা অবস্থায় বোনকে কুরআন দেখাতে বলেছিলেন, তখন তার বোন বলেছিলেন যে, তুমি নাপাক! আর এ গ্রন্থ পবিত্র ছাড়া কেউ ধরতে পারে না।
ﺇِﻧَّﻪُ ﻟَﻘُﺮْﺁﻥٌ ﻛَﺮِﻳﻢٌ
নিশ্চয় এটা সম্মানিত কোরআন।
ﻓِﻲ ﻛِﺘَﺎﺏٍ ﻣَﻜْﻨُﻮﻥٍ
যা আছে এক গোপন কিতাবে,
ﻟَﺎ ﻳَﻤَﺴُّﻪُ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟْﻤُﻄَﻬَّﺮُﻭﻥَ
যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত
অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না।
ﺗَﻨْﺰِﻳﻞٌ ﻣِﻦْ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ
এটা বিশ্ব-পালনকর্তার পক্ষ থেকে
অবতীর্ণ
ﺃَﻓَﺒِﻬَٰﺬَﺍ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚِ ﺃَﻧْﺘُﻢْ ﻣُﺪْﻫِﻨُﻮﻥَ
তবুও কি তোমরা এই বাণীর প্রতি
শৈথিল্য পদর্শন করবে? (সুরা ওয়াক্বিয়া ৭৯)
এখানে এই আয়াতে কালিমার দ্বারা কেউ বলেন লওহে মাহফুজের লিপিবদ্ধ সেই কোরআন, আবার কেউ বলেন দুনিয়াতে অবতীর্ণ এই কোরআন।।
যাইহোক্্্্
কোরআনে বিশ্বাসী মুসলিমরা ওযু ছাড়া অপবিত্র অবস্হায় কোরআন ধরে পড়তে পারবে, তবে ওযু করে পুর্ন পবিত্রতা অর্জন করে কোরআন ধরে পড়াই অতি উত্তম।
R কোরআনে অবিশ্বাসী অমুসলিমরা ওযু ছাড়া অপবিত্র অবস্হায় কোরআন পড়তে পারবে।।
কোরআনে যারা বিশ্বাস করেছে তারাই কোরআনের হালাল হারাম পবিত্র অপবিত্রতার হুকুম মানা তাদের জন্যই ফরজ।।
আমরা মুশরিক নই, আমরা মুসলিম পবিত্রতা অর্জন করেছি।
আমরা মহা পবিত্র আল্লাহতে বিশ্বাসী, আমাদের পবিত্র ধর্ম ইসলাম।
আমাদের জীবন বিধান মহাগ্রন্হ পবিত্র কোরআন।
আমাদের সবকিছুতেই পবিত্রতা থাকতে হবে,
পবিত্রতা ইমানের অঙ্গ।
আমরা কারন ছাড়া অপবিত্র থাকিনা।
তাই মহাপবিত্র মহান রবের পবিত্র সম্মানিত কোরআন আমরা পুর্ণ পবিত্রতা অর্জন করেই ধরে পড়া উত্তম।।
কোরআনে যারা বিশ্বাস করেনাই, তাদের জন্য কোরআনের হুকুম মানার কোনো বাধ্য বাধকতা, ফরজ ওয়াজিব সুন্নত নফল কোনোটাই নাই।
কোরআন হচ্চে সমগ্র মানব জাতির জন্য পথ প্রদর্শক। তা স্বপ্নের মাধ্যমে পথ দেখাবেনা, তাই ইসলামকে জানার জন্য অমুসলিমদেরকে কোরআনকে বুঝে পড়তে দিতে হবে।।
কোরআনকে বুঝে পড়ে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছে অনেক জ্ঞানী-বিজ্ঞানী এ পর্যন্ত প্রায় কয়েক কোটি বনী আদম।।
কোনো কোনো বিষয়ের উপর ফতোয়া দিতে, জাতি ধর্ম দিক বিদিক সময় প্রাক্কাল দেখে শুনে চিন্তা গবেষনা করতে হয়।
বিষয়: বিবিধ
১২০২ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন