২৫শে ফেব্রুয়ারি জাতীয়‘শোক দিবস’ পালন করা হোক! সে দিন আমি কেন..? সারা বাংলাদেশের জনগন চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারেনি চিৎকার

লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০১:০৮:০৭ রাত

২৫শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে শোকাবহ একটি মাস। বিডিআর বিদ্রোহের নামে ২০০৯ সালের এই দিনে পিলখানায় ঘটে সেনাকর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের এক নৃশংস ঘটনা। ২৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয়ভাবে ‘শোক দিবস’ পালন করা হোক।

বিডিআর ট্রাজেডির বিগত ৯টি বর্ষপূর্তিতেই বিভিন্ন ইস্যুতে জনগনের বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার বিষয়টি কাকতালীয় নাকি ষড়যন্ত্র তা ইতিহাসই এক সময় নির্ধারণ করবে। দু:খ ও লজ্জাকর হলেও সত্য বিডিআর ট্রাজেডির ৯টি বর্ষপূর্তির দিনেও রাখা হয়েছে জমকালো আয়োজন!

৫৭জন চৌকস সৈনিক কর্মকর্তা সহ ৭৫জনের হত্যাকারি বুট, হেলমেট ছাড়া অপারেশনে এরা কারা? জাতিকি জানবে না বুট, হেলমেট ছাড়া অপারেশনে এরা কারা ছিল ? ঘাতকদের সাথে নানক, আজম, সাহারা আর তাপস ওরা ঘাতকদের সাথে কি আচরণ করলো। আমি কেন সারা বাংলাদেশ চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারিনি চিৎকার

২৫শে ফেব্রুয়ারী২০০৯ নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বিডিআরের তৎকালীন ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তাকে। সামরিক-বেসামরিক আরো ১৭ জনকে হত্যা করা হয়। নিহতদের মধ্যে তৎকালীন ডিজির স্ত্রীও রয়েছেন।

কর্মকর্তাদের স্ত্রী-সন্তান ও বাবা-মাকে আটকে রেখে তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। তাদের বাড়িঘর, গাড়ি ও সম্পদে আগুন লাগিয়ে পুড়ে ফেলা হয়। সেনাকর্মকর্তাদের শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি ঘাতকেরা। আলামত নষ্ট করতে প্রথমে তাদের লাশ পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করে তারা। ব্যর্থ হয়ে মাটিচাপা দেয়া হয়। কিছু লাশ ফেলে দেয়া হয় ম্যানহোলের মধ্যে। অস্ত্রাগারের সব অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করে নেয় বিদ্রোহের নামে। উচ্ছৃঙ্খল বিডিআর জওয়ানদের তাণ্ডব আজো মনে পড়লে কেঁপে ওঠে মানুষের আত্মা।

যা ঘটেছিল সেই দিন ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। বিডিআর সপ্তাহ উপলক্ষে বিভিন্ন সেক্টরের কর্মকর্তা ও জওয়ানেরা এসেছিলেন ঢাকার পিলখানায়। আগের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিলখানায় বিডিআর সপ্তাহ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত কুচকাওয়াজ পরিদর্শন এবং সালাম গ্রহণ করেন।

২৫ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত সদস্যদের মধ্যে ভালো কাজের জন্য পদক প্রদানের কথা ছিল। দরবার হলের সেই অনুষ্ঠানে প্রায় আড়াই হাজার বিডিআর সদস্য উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত শেষে বাংলা অনুবাদ যখন শেষ হয়, ঠিক তখনই সিপাহি মইন দরবার হলের রান্নাঘরের পাশ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে মেজর জেনারেল শাকিলের দিকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে।

অতিরিক্ত ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বারিসহ অন্য কর্মকর্তারা মইনকে আটক করেন। মইনকে আটকের সাথে সাথে ‘জাগো’ বলে বিডিআর জওয়ানেরা দরবার হল ত্যাগ করতে শুরু করে। ডিজি তখন তাদের উদ্দেশে বলেন, তাদের দাবিদাওয়া শুনবেন তিনি। কিন্তু মুহূর্তেই দরবার হল ফাঁকা হয়ে যায়।

একপর্যায়ে জওয়ানদের সবাই যখন দরবার হল ত্যাগ করে, তখন বাইরে থেকে এলোপাতাড়ি গুলি শুরু হয়। কর্মকর্তারা বিভিন্নভাবে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। তাদের খুঁজে খুঁজে বের করে জওয়ানেরা হত্যা করে। বিডিআর ঢাকা সেক্টরের তৎকালীন কমান্ডার কর্নেল মজিবুল হককে ৩৬ রাইফেল ব্যাটালিয়নের চারতলার এক কক্ষে হত্যা করে তার লাশ ফেলে দেয় নিচে।

এভাবে একে একে হত্যা করা হয় সেনাকর্মকর্তাদের। লুটপাট ও অগ্নিসংযোগসহ নানা অপকর্মে মেতে ওঠে বিডিআর জওয়ানেরা। এসবই করেছে অস্ত্রাগার থেকে লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহার করে। শুরুতেই তারা কোত ভেঙে অস্ত্র ও ম্যাগাজিন ভেঙে গুলি তাদের হেফাজতে নিয়ে নেয়। ভারী আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। আতঙ্কে আশপাশের বাসিন্দারা এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেন।

প্রায় ৩৬ ঘণ্টা বিদ্রোহের পর পিলখানা পরিণত হয় একটি মৃত্যুপুরীতে। পিলখানায় শুধু লাশ আর লাশ। রক্ত আর রক্ত। পোড়া গাড়ি, পোড়া বাড়ি, ভাঙা গ্লাস, ঘাসের ওপর তাজা গ্রেনেড, চারদিকে শুধু ধ্বংসচিহ্ন। সেনা কর্মকর্তাদের কোয়ার্টারগুলোর তছনছ অবস্থা। বিভিন্ন স্থাপনায় জ্বালাও-পোড়াওয়ের দৃশ্য। ড্রেনের ম্যানহোল থেকে আসে রক্তের উৎকট গন্ধ।

২৫ ফেব্রুয়ারি সারাদিন ও রাতে পিলখানায় যে হত্যাযজ্ঞ আর লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। নির্বিচারে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার পর লাশ নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে খোদ ঘাতকরা। তাই আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ করে চলতে থাকে লাশ গুমের কাজ।

পিলখানার ভেতর বিশেষ মেশিন দিয়ে লাশগুলো ধ্বংস করার ব্যর্থ চেষ্টা হয় বলে পরে জানা গেছে। কয়েক সেনা কর্মকর্তার লাশ ফেলে দেয়া হয় ম্যানহোলে। পরের দিন সেগুলো বুড়িগঙ্গার কামরাঙ্গীরচর পয়েন্টে ভেসে উঠলে আর কিছুই বুঝতে বাকি থাকে না কারও।

বাকি লাশ গুম করতে একের পর এক গণকবর খোঁড়া হয়। পিলখানা পরিণত হয় বধ্যভূমিতে। প্রথম দফায় কামরাঙ্গীরচরে একটি স্যুয়ারেজ লাইন থেকে কয়েক দফায় ৯ সেনা কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি বিডিআর হাসপাতালের পেছনে একটি গণকবর থেকে তোলা হয় একসঙ্গে ৩৯টি লাশ। একটি গ্যারেজ মাঠের পাশের গণকবর থেকে উদ্ধার করা হয় আরো নয়টি লাশ।

এ বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তা, একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, একজন সৈনিক ও দু’জন সেনা কর্মকর্তার স্ত্রীসহ ৬১ জন নিহত হন। সেনা কর্মকর্তাদের বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারান সাত বিডিআর জওয়ান। বিভিন্ন গেট থেকে ফাঁকা গুলি ছোড়ায় আশপাশের আরও ৭জন পথচারী নিহত হন। এ ঘটনায় সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৫ জনে।

গুলির শব্দে প্রকম্পিত হয়ে উঠলেও ভেতরে কী ঘটতে যাচ্ছে তা জানা সম্ভব হয়নি ওই দিন। ক্রমেই ভয়াবহ দৃশ্য ফুটে উঠতে শুরু করে। পিলখানার সাথে কেউ যোগাযোগ করতে সক্ষম হননি। কিছু সেনাকর্মকর্তা আটকা পড়া অবস্থায় তাদের স্বজনদের সাথে কথা বলেন। পরে তাদের যোগাযোগও বন্ধ হয়ে যায়। সবাই ধারণা করছিলেন ভেতরে আসলেই বড় ঘটনা ঘটছে। যার প্রমাণ মিলল এক দিন পর। ঘটনার শুরু থেকেই থেমে থেমে গুলি করছিল উচ্ছৃঙ্খল বিডিআর জওয়ানেরা। তাদের তাণ্ডবে প্রাণের ভয়ে পিলখানার আশপাশেও কেউ যেতে পারেননি।

বিকেলে দূর থেকে হ্যান্ড মাইকে বিদ্রোহীদের সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দেন এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক। মাইকে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিদ্রোহীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করবেন। তিনি সবাইকে অস্ত্র সমর্পণ করতে বলেন। সন্ধ্যার দিকে ডিএডি তৌহিদের নেতৃত্বে বিডিআরের ১৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবনে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন। দুই ঘণ্টারও বেশি ধরে প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক শেষে সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা ও তাদের দাবিদাওয়া পূরণের আশ্বাস নিয়ে তারা পিলখানায় ফিরে যান।

এরপরও তারা অস্ত্র সমর্পণ ও বন্দীদের মুক্তি দেননি। মধ্যরাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের সাথে বৈঠক করে বিদ্রোহীরা অস্ত্র সমর্পণ শুরু করে। কিন্তু পরদিনও থেমে থেমে গুলির শব্দ আসতে থাকে। ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেন, পরিস্থিতি শান্ত, সবাই অস্ত্র সমর্পণ করেছে।

এ দিকে ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে একের পর এক লাশ উদ্ধার হতে শুরু করে। ওগুলো ছিল সেনাকর্মকর্তাদের লাশ। ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা পর্যন্ত উদ্ধার হয় ১৫টি লাশ। এভাবে উদ্ধার হয় ৫৭ সেনাকর্মকর্তা ও সামরিক-বেসামরিকসহ মোট ৭৪ জনের লাশ। যাদের মধ্যে তৎকালীন ডিজি বিডিআর মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ ও তার স্ত্রীর লাশও ছিল।

বিষয়: বিবিধ

১১২২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

384855
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ দুপুর ০১:৪৫
আবু জারীর লিখেছেন : যারা সেনা হন্তারক তারা এ দাবী মানবেনা। তবে জনগণের সরকার কায়েম হলে এই দিবশ শোক দিবশ হিসেবে পালন করতে হবে।
384856
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ দুপুর ০২:৫৫
কুয়েত থেকে লিখেছেন : বাংলাদেশের মানুষ এই হত্যার বিচার করবেই । ইনশা আল্লাহ এই জালিম সরকারের পতন হবেই আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File