ঈমানদার লোকদের মধ্য থেকে আল্লাহ্ তাদের মর্য্যদাকে বাড়িয়েদেন যারা জ্ঞানের অধিকার। জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্যই ফরজ
লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ১২ আগস্ট, ২০১৭, ০৪:৫৬:১২ বিকাল
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللَّهُ لَهُ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ قَال أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ{رواه الترمذي
আবু হুরায়রা (রা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা বলেছেন, যে ব্যক্তি ইলম (জ্ঞান) অর্জন করার উদ্দেশ্যে পথ চলবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দিবেন। (তিরমিযী সনদ সহিহ।)
আলোচ্য হাদিসে ‘ইলম তথা জ্ঞান অর্জনের ফজিলত ও মর্যাদার কথা আলোচনা করা হয়েছে। হাদিসের ব্যাখ্যা : ইলম অর্জনের মর্যাদা অত্যধিক। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং আল্লাহ যাদেরকে জ্ঞান দান করেছেন তাদেরকে উচ্চমর্যাদায় উন্নীত করবেন। তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণ অবহিত।’ (মুজাদালাহ ৫৮/১১)।
ইলম অর্জনের মর্যাদা সম্পর্কে অত্র হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা বলেছেন, যে ব্যক্তি ইলম অর্জনের উদ্দেশ্যে পথ চলবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেবেন। অন্য হাদিসে এসেছে,
عَنْ أَبِى أُمَامَةَ الْبَاهِلِىِّ قَالَ ذُكِرَ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم رَجُلاَنِ أَحَدُهُمَا عَابِدٌ وَالآخَرُ عَالِمٌ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَضْلُ الْعَالِمِ عَلَى الْعَابِدِ كَفَضْلِى عَلَى أَدْنَاكُمْ ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ اللَّهَ وَمَلاَئِكَتَهُ وَأَهْلَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ حَتَّى النَّمْلَةَ فِى جُحْرِهَا وَحَتَّى الْحُوتَ لَيُصَلُّونَ عَلَى مُعَلِّمِ النَّاسِ الْخَيْرَ.
আবু উমামা আল-বাহিলি (রা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা-এর সামনে দু’জন লোকের কথা উল্লেখ করা হলো। যাদের একজন আলিম অপরজন আবিদ। তখন তিনি বলেন, আলিমের মর্যাদা আবিদের ওপর। যেমন আমার মর্যাদা তোমাদের সাধারণের ওপর। তারপর রাসূলুল্লাহ (সা বললেন, নিশ্চয়ই তার প্রতি আল্লাহ রহমত করেন এবং তার ফেরেশতামন্ডলী, আসমান-জমিনের অধিবাসী, পিপীলিকা তার গর্তে থেকে এবং এমনকি মাছও কল্যাণের শিক্ষা দানকারীর জন্য দোয়া করেন ( তিরমিজি সনদ হাসান।)
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَطْلُبُ فِيهِ عِلْمًا سَلَكَ اللَّهُ بِهِ طَرِيقًا مِنْ طُرُقِ الْجَنَّةِ وَإِنَّ الْمَلاَئِكَةَ لَتَضَعُ أَجْنِحَتَهَا رِضًا لِطَالِبِ الْعِلْمِ وَإِنَّ الْعَالِمَ لَيَسْتَغْفِرُ لَهُ مَنْ فِى السَّمَوَاتِ وَمَنْ فِى الأَرْضِ وَالْحِيتَانُ فِى جَوْفِ الْمَاءِ .
যে ব্যক্তি ইলম অর্জন করার উদ্দেশ্যে কোনো পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তা‘আলা তা দ্বারা তাকে জান্নাতের কোন একটি পথে পৌঁছে দেন এবং ফেরেশতাগণ ইলম অন্বেষণকরীর ওপর খুশি হয়ে নিজেদের ডানা বিছিয়ে দেন। এ ছাড়া আলেমদের জন্য আসমান ও জমিনের সকল অধিবাসী আল্লাহর নিকট দোয়া ও প্রার্থনা করে। এমনকি পানির মধ্যে বসবাসকারী মাছও (তাদের জন্য দোয়া করে) ( আবুদাউদ সনদ সহিহ।)
রাসূলুল্লাহ (সা-এর ওপর সর্বপ্রথম প্রত্যাদেশকৃত শব্দ হল اِقْرَأْ আপনি পড়ুন! রাসূলুল্লাহ (সা তখন বলেছিলেন, أَنَا بِقَارِئٍ
‘আমি পড়তে জানি না’। তখন জিবরিল (আ তাকে জাপটে ধরেছিলেন। এই একই দৃশ্য তিনবার হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সা-এর নিকট সূরা ‘আলাকের প্রথম পাঁচটি আয়াত নাজিল হয়। আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (সা-কে অহির জ্ঞান শিক্ষা দেন। সুতরাং আমাদের সমাজ ও দেশ থেকে অন্যায়, অপকর্ম দূর করতে ইলমের গুরুত্ব অপরিসীম।
ইলম অর্জনের নির্দেশনাস্বরূপ রাসূলুল্লাহ (সা বলেন,
طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ প্রত্যেক মুসলিমের ওপরে জ্ঞান অন্বেষণ করা ফরজ। (ইবনু মাজাহ সনদ হাসান।) দ্বীনি ইলম অর্জনের প্রতি আল্লাহর উৎসাহ প্রদান আল্লাহ জ্ঞানার্জনের প্রতি উৎসাহিত মানুষকে উৎসাহিত করেছেন, কেননা মানুষ ইলম অর্জন করবে, সে অনুযায়ী আমল করবে এবং নিজেদের মাঝে ইলম প্রচার করবে এটাই আল্লাহর দাবি।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَمَا كَانَ الْمُؤْمِنُونَ لِيَنْفِرُوا كَافَّةً فَلَوْلَا نَفَرَ مِنْ كُلِّ فِرْقَةٍ مِنْهُمْ طَائِفَةٌ لِيَتَفَقَّهُوا فِي الدِّينِ وَلِيُنْذِرُوا قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُوا إِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُونَ.
‘সুতরাং এমন কেন হয় না যে, তাদের প্রত্যেকটি বড় দল হতে এক একটি ছোট দল বের হবে, যাতে তারা দ্বীনি জ্ঞান অর্জন করতে পারে। আর যাতে তারা নিজ কওমকে ভয় প্রদর্শন করতে পারে যখন তারা ওদের নিকট প্রত্যাবর্তন করে, যেন তারা সতর্ক হয়। (সূরা তওবা ৯/১২২)
মানুষ অজ্ঞ-মূর্খ হয়ে পৃথিবীতে আসে। আল্লাহ বলেন,
عَلَّمَ الْإِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ আমি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছি, যা সে জানত না। (সূরা আলাক ৯৬/৫) ইলম বা জ্ঞান দ্বারা ভাল-মন্দ নির্ণয় করা যায়। এর দ্বারা অন্যায়ের প্রতিরোধ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
সুতরাং আল্লাহ যার মঙ্গল চান এবং যার দ্বারা হকের বাস্তবায়ন সম্ভব তাকেই মহামূল্যবান জ্ঞান দান করে থাকেন। যেহেতু জ্ঞানের মালিক আল্লাহ, তাই এই জ্ঞান আল্লাহ যাকে চান তাকে দান করেন। তিনি বলেন,
يُؤْتِي الْحِكْمَةَ مَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ أُوتِيَ خَيْرًا كَثِيرًا وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ তিনি যাকে ইচ্ছা হিকমত দান করেন এবং যাকে হিকমত দান করা হয় তাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয় এবং কেবল বোধশক্তিসম্পন্ন লোকেরাই শিক্ষা গ্রহণ করে।’ (সূরা বাকারাহ ২/২৬৯)
এ সম্পর্কে রাসূল (সা বলেন,
خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِى الدِّين مَنْ يُرِدِ اللَّهُ بِهِ আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন’। (ইবনু মাজাহ হা/২২৩; সহিহুল জামে‘ হা/৬২৯৭, সনদ সহিহ)
আলিমগণই নবীদের প্রকৃতৎ উত্তরাধিকারী রক্ত সম্পর্ক কিংবা বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে কোন ব্যক্তির ওয়ারিশ হওয়া যায়। কিন্তু ইলম এমন একটি মূল্যবান সম্পদ, যে ব্যক্তি তা অর্জন করবে আল্লাহ তাকে নবীদের ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারী বানাবেন। সুতরাং আল্লাহ সম্পর্কে সঠিক ধারণাসম্পন্ন ব্যক্তিরা মূলত নবীদের উত্তরাধিকারী। আর উত্তরাধিকার জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে অর্জন করা যায়। রাসূলুল্লাহ (সা বলেছেন,
إِنَّ الْعُلَمَاءَ هُمْ وَرَثَةُ الأَنْبِيَاءِ إِنَّ الأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِينَارًا وَلاَ دِرْهَمًا إِنَّمَا وَرَّثُوا الْعِلْمَ فَمَنْ أَخَذَهُ أَخَذَ بِحَظٍّ وَافِرٍ. আলেমরাই নবীগণের উত্তরাধিকারী। নবীগণ দিনার বা দিরহামের উত্তরাধিকারী করেন না। বরং তারা ইলমের উত্তরাধিকারী করেন। ফলে যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করল সে বৃহদাংশ গ্রহণ করল। (সহিহুল বুখারী হা/৭১)
আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন। (ইবনু মাজাহ সনদ সহিহ।)
অতএব দ্বীনি ইলম অর্জন করলে নবীদের উত্তরাধিকারী হওয়া যায়। আল্লাহর নিকট উপকারী ইলমের প্রার্থনা করা আল্লাহর নিকট ইলমসহ যাবতীয় কল্যাণের জন্য প্রার্থনা করতে হবে। আল্লাহর নিকট চাওয়ার মাধ্যমে ইলম অর্জিত হলে তা দিয়ে দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ই অর্জন করা সম্ভব। আর যদি না চাওয়াতেই ইলম আসে, তা দিয়ে দুনিয়া সম্ভব আখিরাত কখনই অর্জন করা সম্ভব নয়।
আল্লাহ বলেন,
مَنْ يَقُولُ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا
وَمَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ অনেকে বলে, হে আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়াতে দান কর। অথচ তার জন্য পরকালের কোন অংশ নেই।’ (সূরা বাকারাহ ২/২০০) আর এজ্যই নবী-রাসূলগণ একমাত্র আল্লাহর নিকটেই চাইতেন। যেমন ইবরাহিম (আ প্রার্থনা করে বলেন,
رَبِّ هَبْ لِي حُكْمًا وَأَلْحِقْنِي بِالصَّالِحِينَ হে আমার প্রতিপালক! আমাকে প্রজ্ঞা দান কর এবং আমাকে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত কর। (শু‘আরা ২৬/৮৩)
অনুরূপ মুসা (আ আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করেছিলেন। আল্লাহ বলেন,
رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي- وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي- وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِنْ لِسَانِ- يَفْقَهُوا قَوْلِي হে আমার পালনকর্তা! আমার বক্ষকে প্রশস্ত করে দাও, আমার কাজকে সহজ করে দাও এবং আমার জিহবা থেকে জড়তা দূর করে দাও, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।’ (ত্বহা ২০/২৫-২৮)
আর এরই ধারাবাহিকতায় রাসূল (সা আল্লাহর নিকট উপকারী ইলমের প্রার্থনা করতেন। হাদিসের ভাষায় রাসূল (সা প্রতি ফজর সালাতের পর প্রার্থনা করতেন এই বলে যে,
اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَرِزْقًا طَيِّبًا وَعَمَلاً مُتَقَبَّلاً হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট উপকারী জ্ঞান, কবুলযোগ্য আমল ও পবিত্র রুজি প্রার্থনা করছি।’ (আহমাদ ইবনে মাজাহ, তাবারানি, মিশকাত হা/২৪৯৮) সুতরাং আমাদের সকলেরই উচিত একমাত্র আল্লাহর নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করা।
আলিম তথা জ্ঞানীদের করণীয় : জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই করণীয় হলো জানা বিষয়গুলো মানুষের নিকট প্রচার করা। যেমন আল্লাহ তাঁর নবীদের নিকট অহি প্রেরণের পর তা মানুষের নিকট প্রচারের নির্দেশ দেন। আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ
হে রাসূল! পৌঁছে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন তবে আপনি তাঁর পয়গাম পৌঁছালেন না।’ (সূরা মায়েদা ৫/৬৭)
এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা বলেন,
بَلِّغُوا عَنِّى وَلَوْ آيَةً আমার পক্ষ হতে মানুষের নিকটে পৌঁছে দাও, যদি একটি আয়াতও হয়’। (বুখারী হা/৩৪৬১; তিরমিজি হা/২৬৬৯) পক্ষান্তরে আলিমগণ দ্বীন প্রচারে অবহেলা করলে কিংবা বিরত থাকলে তাদের অবস্থা হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। হাদিসে এসেছে,
عَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمِ يُجَاءُ بِالرَّجُلِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُلْقَى فِى النَّارِ فَتَنْدَلِقُ بِهِ أَقْتَابُهُ فَيَدُورُ بِهَا فِى النَّارِ كَمَا يَدُورُ الْحِمَارُ بِرَحَاهُ فَيُطِيفُ بِهِ أَهْلُ النَّارِ فَيَقُولُونَ يَا فُلاَنُ مَا لَكَ مَا أَصَابَكَ أَلَمْ تَكُنْ تَأْمُرُنَا بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَانَا عَنِ الْمُنْكَرِ فَقَالَ كُنْتُ آمُرُكُمْ بِالْمَعْرُوفِ وَلاَ آتِيهِ وَأَنْهَاكُمْ عَنِ الْمُنْكَرِ وَآتِيهِ.
ওসামা ইবনু যায়েদ (রা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা বলেছেন, এক ব্যক্তিকে ক্বিয়ামতের দিন নিয়ে আসা হবে। তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এতে করে তার নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যাবে। আর সে তা নিয়ে ঘুরতে থাকবে যেমনভাবে গাধা আটা পিষা জাঁতার সাথে ঘুরতে থাকে। জাহান্নামিরা তার নিকট একত্রিত হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করবে, আপনি কি আমাদের ভালো কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজের নিষেধ করতেন না? সে বলবে, হ্যাঁ। আমি তোমাদের ভালো কাজের আদেশ করতাম, কিন্তু নিজে করতাম না। আর খারাপ কাজের নিষেধ করতাম কিন্তু নিজেই তা করতাম। (সহিহুল বুখারী হা/৩২৬৭; মিশকাত হা/৫১৩৯) অতএব আমলবিহীন ইলম কিয়ামতের দিন বড় শাস্তির কারণ হবে। আরবি প্রবাদে রয়েছে,
رجل بلا عمل كشجرة بلا ثمر আমলবিহীন ব্যক্তি ফলবিহীন বৃক্ষের ন্যায়’। জনৈক আরব কবি বলেন,
لو كان للعلم شرف من دون التقي* لكان أشرف خلق الله إبليس
‘যদি তাক্বওয়াবিহীন ইলমের কোন মর্যাদা থাকত, তবে ইবলিস আল্লাহর সৃষ্টিকুলের সেরা বলে গণ্য হতো। (নবীদের কাহিনী, ১/১৩ পৃ
প্রকৃত ‘ইলম তথা জ্ঞানের সফলতা : গোটা বিশ্ব আজ অশান্তিতে ভরপুর। এখান থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একমাত্র হাতিয়ার হলো প্রকৃত ইলম অর্জন তথা সুশিক্ষা। কেননা সুশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে দুনিয়াতে যেমন মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে ও সমাজে শান্তি আসবে, তেমনি আখেরাতের পাথেয় অর্জনের পথ সুগম হবে। মৃত্যুর পর মানুষের আমল বন্ধ হয়ে যায় অথচ দ্বীনি ইলম অর্জন করে শিক্ষা দিলে তা কবরে পৌঁছানোর অন্যতম একটি মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত হয়। রাসূলুল্লাহ (সা বলেন,
إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ যখন মানুষ মৃত্যুবরণ করে তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি আমল ব্যতীত। এই তিনটি আমল হলো, প্রবহমান ছাদাকা, এমন ইলম যা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় এবং এমন সুসন্তান যে তার জন্য দোয়া করে। (মুসলিম হা/১৬৩১)
বিষয়: বিবিধ
১২২০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃُﺧْﺮِﺟُﻮﺍ ﻣِﻦ ﺩِﻳٰﺮِﻫِﻢ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﺣَﻖٍّ ﺇِﻟَّﺂ ﺃَﻥ ﻳَﻘُﻮﻟُﻮﺍ ﺭَﺑُّﻨَﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُতাদেরকে তাদের নিজ বাড়ী-ঘর থেকে অন্যায়ভাবে শুধু এ কারণে বের করে দেয়া হয়েছে যে, তারা বলে, আমাদের রব আল্লাহ।(সূরা-হাজ্জ-৪০)অপর আয়াতে বলেনঃ
ﻭَﻣَﺎ ﻧَﻘَﻤُﻮﺍ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﺇِﻟَّﺂ ﺃَﻥ ﻳُﺆْﻣِﻨُﻮﺍ ﺑِﺎﻟﻠَّ ﺍﻟْﻌَﺰِﻳﺰِ ﺍﻟْﺤَﻤِﻴﺪِআর তারা তাদেরকে নির্যাতন করেছে/
প্রতিশোধ নিচ্ছে শুধুমাত্র এ কারণে যে,তারা মহাপরাক্রমশালী প্রশংসিত আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল।(সূরা-বুরূজ-৮)
করণীয় কী?
ﺃُﺫِﻥَ ﻟِﻠَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﻘٰﺘَﻠُﻮﻥَ ﺑِﺄَﻧَّﻬُﻢْ ﻇُﻠِﻤُﻮﺍ ۚ ﻭَﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋَﻠٰﻰ ﻧَﺼْﺮِﻫِﻢْ ﻟَﻘَﺪِﻳﺮٌ তাদেরকে যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হল যারা আক্রান্ত হয়েছে। কারণ, তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করতে সক্ষম।
(সূরা-হাজ্জ-৩৯ )প্রভু ঐ সকল মুসলিমদের সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া কি আমাদের কর্তব্য?
ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍ ﻭَﻫَﺎﺟَﺮُﻭﺍ ﻭَﺟٰﻬَﺪُﻭﺍ ﺑِﺄَﻣْﻮٰﻟِﻬِﻢْ ﻭَﺃَﻧﻔُﺴِﻬِﻢْ ﻓِﻰ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ
ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻭَﻭﺍ ﻭَّﻧَﺼَﺮُﻭٓﺍ ﺃُﻭﻟٰٓﺌِﻚَ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﺃَﻭْﻟِﻴَﺂﺀُ ﺑَﻌْﺾٍ ۚ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍ ﻭَﻟَﻢْ
ﻳُﻬَﺎﺟِﺮُﻭﺍ ﻣَﺎ ﻟَﻜُﻢ ﻣِّﻦ ﻭَﻟٰﻴَﺘِﻬِﻢ ﻣِّﻦ ﺷَﻰْﺀٍ ﺣَﺘّٰﻰ ﻳُﻬَﺎﺟِﺮُﻭﺍ ﻭَﺇِﻥِ ﺍﺳْﺘَﻨﺼَﺮُﻭﻛُﻢْ ﻓِﻰ
ﺍﻟﺪِّﻳﻦِ ﻓَﻌَﻠَﻴْﻜُﻢُ ﺍﻟﻨَّﺼْﺮُ নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং নিজদের মাল ও জান দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে আর যারা আশ্রয় দিয়েছে ও সহায়তা করেছে, তারা একে অপরের বন্ধু। আর যারা ঈমান এনেছে কিন্তু হিজরত করেনি তাদেরকে সাহায্যের কোন দায়িত্ব তোমাদের নেই, যতক্ষণ না তারা হিজরত করে। আর যদি তারা দীনের ব্যাপারে তোমাদের নিকট কোন সহযোগিতা চায়, তাহলে সাহায্য করা তোমাদের কর্তব্য। (সূরা-আনফাল-৭২)
অপর আয়াতে আল্লাহ তিরস্কার করে বলেনঃ
ﻭَﻣَﺎ ﻟَﻜُﻢْ ﻟَﺎ ﺗُﻘٰﺘِﻠُﻮﻥَ ﻓِﻰ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟْﻤُﺴْﺘَﻀْﻊَﻓِﻴﻦَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺮِّﺟَﺎﻝِ ﻭَﺍﻟﻨِّﺴَﺂﺀِ
ﻭَﺍﻟْﻮِﻟْﺪٰﻥِ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﻘُﻮﻟُﻮﻥَ ﺭَﺑَّﻨَﺂ ﺃَﺧْﺮِﺟْﻨَﺎ ﻣِﻦْ ﻫٰﺬِﻩِ ﺍﻟْﻘَﺮْﻳَﺔِ ﺍﻟﻈَّﺎﻟِﻢِ ﺃَﻫْﻠُﻬَﺎ ﻭَﺍﺟْﻌَﻞ
ﻟَّﻨَﺎ ﻣِﻦ ﻟَّﺪُﻧﻚَ ﻭَﻟِﻴًّﺎ ﻭَﺍﺟْﻌَﻞ ﻟَّﻨَﺎ ﻣِﻦ ﻟَّﺪُﻧﻚَ ﻧَﺼِﻴﺮًﺍ তোমাদের কী হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর
পথে এবং অসহায় নারী-পুরুষ আর শিশুদের (রক্ষার) জন্য লড়াই করবে না, যারা দু আ করছে-হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এ যালিম অধ্যূষিত জনপথ হতে মুক্তি দাও, তোমার পক্ষ হতে কাউকেও আমাদের বন্ধু বানিয়ে দাও এবং তোমার পক্ষ হতে কাউকেও আমাদের সাহায্যকারী করে দাও।(সূরা-নিসা-৭৫ )অস্ত্রবল কম হলে কী করবো?
ﺍﻧﻔِﺮُﻭﺍ ﺧِﻔَﺎﻓًﺎ ﻭَﺛِﻘَﺎﻟًﺎ ﻭَﺟٰﻬِﺪُﻭﺍ ﺑِﺄَﻣْﻮٰﻟِﻜُﻢْ ﻭَﺃَﻧﻔُﺴِﻜُﻢْ ﻓِﻰ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺫٰﻟِﻜُﻢْ ﺧَﻴْﺮٌ
ﻟَّﻜُﻢْ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢْ ﺗَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ
অভিযানে বের হও স্বল্প সরঞ্জামের সাথেই হোক, অথবা প্রচুর সরঞ্জামের সাথেই হোক এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন সম্পদ ও প্রাণ দ্বারা যুদ্ধ কর এটাই তোমাদের জন্য অতি উত্তম, যদি তোমরা জানতে। (সূরা-তাওবা-৪১)আমরা যদি তাদের সাহায্যে
বের না হই তাহলে কী হবে?
ﺇِﻟَّﺎ ﺗَﻨﻔِﺮُﻭﺍ ﻳُﻌَﺬِّﺑْﻜُﻢْ ﻋَﺬَﺍﺑًﺎ ﺃَﻟِﻴﻤًﺎ ﻭَﻳَﺴْﺘَﺒْﺪِﻝْ ﻗَﻮْﻣًﺎ ﻏَﻴْﺮَﻛُﻢْ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻀُﺮُّﻭﻩُ ﺷَﻴْـًٔﺎ
ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠٰﻰ ﻛُﻞِّ ﺷَﻰْﺀٍ ﻗَﺪِﻳﺮٌ
তোমরা যদি বের না হও, তাহলে তোমাদেরকে ভয়াবহ শাস্তি দেয়া হবে,আর তোমাদের স্থলে অন্য সম্প্রদায়কে আনা হবে (অথচ) তোমরা তাঁর কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ সকল বিষয় সর্বশক্তিমান। (সূরা-তাওবা-৩৯ )আমরা কীভাবে তাদের সাহায্য করবো?
ﻗٰﺘِﻠُﻮﻫُﻢْ ﻳُﻌَﺬِّﺑْﻬُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﺄَﻳْﺪِﻳﻜُﻢْ ﻭَﻳُﺨْﺰِﻫِﻢْ ﻭَﻳَﻨﺼُﺮْﻛُﻢْ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻭَﻳَﺸْﻒِ ﺻُﺪُﻭﺭَ ﻗَﻮْﻡٍ
ﻣُّﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ তোমরা তাদের সাথে (মুশরিকদের সাথে) যুদ্ধ কর। আল্লাহ তোমাদের হাতে তাদেরকে শাস্তি প্রদান করবেন এবং তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন, আর তোমাদেরকে তাদের উপর বিজয়ী করবেন এবং মু’মিনের অন্তরসমূহকে প্রশান্ত ও ঠান্ডা করবেন।(সূরা-তাওবা-১৪)অপর আয়াতে বলেনঃ
ﻭَﻗٰﺘِﻠُﻮﺍ ﺍﻟْﻤُﺸْﺮِﻛِﻴﻦَ ﻛَﺂﻓَّﺔً ﻛَﻤَﺎ ﻳُﻘٰﺘِﻠُﻮﻧَﻜُﻢْ ﻛَﺂﻓَّﺔً ۚ ﻭَﺍﻋْﻠَﻤُﻮٓﺍ ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻣَﻊَ ﺍﻟْﻤُﺘَّﻘِﻴﻦَ
তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধে সকলে একযোগে যুদ্ধ কর, যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সকলে একযোগে যুদ্ধ করে। আর জেনে রেখ যে,আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে রয়েছেন।(সূরা-তাওবা-৩৬ )
এদের মুকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি কেমন হবে?
ﻭَﺃَﻋِﺪُّﻭﺍ ﻟَﻬُﻢ ﻣَّﺎ ﺍﺳْﺘَﻄَﻌْﺘُﻢ ﻣِّﻦ ﻗُﻮَّﺓٍ ﻭَﻣِﻦ ﺭِّﺑَﺎﻁِ ﺍﻟْﺨَﻴْﻞِ ﺗُﺮْﻫِﺒُﻮﻥَ ﺑِﻪِۦ ﻋَﺪُﻭَّ ﺍﻟﻠَّﻪِ
ﻭَﻋَﺪُﻭَّﻛُﻢْ ﻭَﺀَﺍﺧَﺮِﻳﻦَ ﻣِﻦ ﺩُﻭﻧِﻬِﻢْ ﻟَﺎ ﺗَﻌْﻠَﻤُﻮﻧَﻬُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻳَﻌْﻠَﻤُﻬُﻢْ ۚ আর তাদের মুকাবিলার জন্য তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী শক্তি ও অশ্ব বাহিনী প্রস্তুত কর,তা দ্বারা তোমরা ভয় দেখাবে আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদেরকে এবং এরা ছাড়া অন্যদেরকেও, যাদেরকে তোমরা জানো না, আল্লাহ তাদেরকে জানেন। (সূরা-আনফাল-৬০)
ﺳَﺄُﻟْﻘِﻰ ﻓِﻰ ﻗُﻠُﻮﺏِ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭﺍ ﺍﻟﺮُّﻋْﺐَ ﻓَﺎﺿْﺮِﺑُﻮﺍ ﻓَﻮْﻕَ ﺍﻟْﺄَﻋْﻨَﺎﻕِ ﻭَﺍﺿْﺮِﺑُﻮﺍ
ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﻛُﻞَّ ﺑَﻨَﺎﻥٍ
যারা কাফের অচিরেই আমি তাদের অন্তরে ভীতি ঢেলে দেব। অতএব তোমরা আঘাত কর ঘাড়ের উপরে এবং আঘাত কর
তাদের প্রত্যেক আঙুলের অগ্রভাগে।(সূরা-আনফাল-১২ )
আমরা সাথে লড়াই করবো?
ﻭَﻗٰﺘِﻠُﻮﻫُﻢْ ﺣَﺘّٰﻰ ﻟَﺎ ﺗَﻜُﻮﻥَ ﻓِﺘْﻨَﺔٌ ﻭَﻳَﻜُﻮﻥَ ﺍﻟﺪِّﻳﻦُ ﻛُﻠُّﻪُۥ ﻟِﻠَّﻪِ ۚ ﻓَﺈِﻥِ ﺍﻧﺘَﻬَﻮْﺍ ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ
ﺑِﻤَﺎ ﻳَﻌْﻤَﻠُﻮﻥَ ﺑَﺼِﻴﺮٌ .
আর তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর যতক্ষণ না ফিতনার অবসান হয় এবং দীন পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্য হয়ে যায়। তবে যদি তারা বিরত হয় তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ তারা যা করে সে বিষয়ে সম্যক দ্রষ্টা।(আনফাল-৩৯)
মন্তব্য করতে লগইন করুন