হুজুর হেফাজতে ইসলাম রেলওয়ের বা সরকারি জায়গা প্রাপ্তির জন্য আবেদন করেই থাকেন তা মাদ্রাসার জন্য করেছেন। ব্যক্তিগত লাভের জন্য নয়
লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ২৪ এপ্রিল, ২০১৭, ০৪:১২:৫৩ বিকাল
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে রেলওয়ের মূল্যবান ৮১ শতক জলাশয় (পুকুর) দীর্ঘদিন ধরে দখলে নিয়ে ভোগ করছেন হেফাজতে ইসলামের আমীর ও হাটহাজারী দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেব।
এবার এ জায়গা বরাদ্দ পেতে রেলওয়ের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছেন তিনি। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নেক নজরে তার নামে ওই জলাশয় বরাদ্দ দিতে ফাইল চালাচালিও শুরু হয়েছে। অবশ্য এর আগেই সেই পুকুরের পাড়ে উঠে গেছে দোকানপাট ও লেগেছে সাইন বোর্ড।
গত বছরের ২৮ মার্চ ওই জলাশয় তাঁহার নামে বরাদ্দের জন্য আবেদন করেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেব। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের সম্পর্ক বেশ উষ্ণ। এ সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে এখন জলাশয়টি বরাদ্দ পাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। অবশ্য মাদ্রাসা সূত্র বলছে, আল্লামা শফী নয়, জলাশয়টি দখলে রয়েছে দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা।
একই মাদ্রাসার দখলে রয়েছে আরও ১ দশমিক ৩১ একর কৃষিজমি। তবে রেলের এ জমিটিও বরাদ্দ পান আল্লামা শফী সাহেব। ১৯৯২ সালে। ওই সূত্রের দাবি, মাদ্রাসার মহাপরিচালক হিসেবে আল্লামা শফী আবেদনকারীমাত্র।
রেলওয়ের কয়েক কোটি টাকার জমি এভাবে একজন ব্যক্তিকে বরাদ্দ দেয়াকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই। এটাকে হেফাজতের সঙ্গে সরকারের সাম্প্রতিক আপসকামিতার আরেকটি উদাহরণ বলছেন তারা।
তারা সরকারের নীতিনির্ধারকদের উদ্দেশে বলেছেন, শাপলা চত্বরের ২০১৩ সালের ৫ মের ঘটনা ভুলে যাওয়া সরকারের জন্য ক্ষতি ডেকে আনবে।
রেলের ভূমি বছরভিত্তিক বরাদ্দ দেয়া হলে বিষয়টিকে এস্টেট বিভাগ ‘লাইসেন্স ইস্যু’ বলে থাকে।
শর্ত পূরণসাপেক্ষে প্রতি বছর তা নবায়ন করতে হয়। ১৯৯২ সালে বরাদ্দ দেয়া ভূমিটি চাষাবাদযোগ্য জমি বলে তা ‘কৃষি লাইসেন্স’ নিয়ে ভোগ করছেন আল্লামা শফী সাহেব। জলাশয় বলে এবারের ভূমিটির জন্য তিনি আবেদন করেছেন ‘মৎস্য লাইসেন্স’।
রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ সূত্র জানায়, গত বছরের ২৮ মার্চ হাটহাজারী উপজেলার আলীপুর মৌজায় অবস্থিত ৮১ শতক পুকুর/জলাশয়ের {বিএস খতিয়ান নম্বর ৪, দাগ নম্বর ১৪৫৫ ও ১৪৫৬ (আংশিক)} জন্য মৎস্য লাইসেন্স ইস্যুর আবেদন করেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী। দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা, হাটহাজারীর প্যাডে তিনি এ আবেদন করেন।
হাটাহাজারী রেলস্টেশনের পূর্ব পাশে দশমিক ৮১ একর মৎস্য পুকুরের লাইসেন্সের আবেদন’-এ আল্লামা শফী লিখেছেন, ‘উক্ত জমি দীর্ঘদিন যাবৎ আমরা ভোগ দখলে আছি। রেলওয়ে নীতিমালার ৫, ৩ ও ৬ ধারা অনুযায়ী উক্ত মৎস্য পুকুরটি আমি লাইসেন্স পাওয়ার উপযোগী।
সরকারি রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে উক্ত পুকুর আমার নামে দেয়ার উপযোগী।’ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূ-সম্পত্তি বরাবর করা এ আবেদনে আল্লামা শফী তার নামে এই মৎস্য পুকুরের লাইসেন্স দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করার অনুরোধ জানান।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন রোববার যুগান্তরকে বলেন, হাটহাজারীতে ৮১ শতক পুকুর-জলাশয়ের জন্য গত বছরের ২৮ মার্চ আবেদন করেছিলেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেব।
এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই জায়গা তাকে দেয়া যায় কিনা বা তার নামে লাইসেন্স ইস্যু করা যায় কিনা সে বিষয়ে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে।আবেদনটি প্রক্রিয়াধীন আছে। এর বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি।
এর আগে ১৯৯২ সালের ১৯ অক্টোবর আল্লামা আহমদ শফীর নামে হাটহাজারী উপজেলার একই মৌজায় রেলওয়ের মালিকানাধীন ১ দশমিক ৩১ একর কৃষিজমির লাইসেন্স দেয়া হয়। মাত্র পাঁচ হাজার ৬১৮ টাকা দিয়ে বিপুল পরিমাণ এই জমি পান আল্লামা শফী সাহেব।
প্রতি একরে বছরে তিন হাজার টাকা রাজস্ব দিয়ে এ জমির লাইসেন্স নবায়ন করে চলেছেন তিনি। এ জমির ‘কৃষি লাইসেন্স’ বাংলা ১৪২৪ সন (এ বছর) পর্যন্ত নবায়ন করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, রেলওয়ে তাদের মালিকানাধীন পুকুর-জলাশয় ও চাষাবাদযোগ্য জমির লাইসেন্স দিয়ে থাকে। লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে যেমন কিছু শর্ত মানতে হয় তেমনি লাইসেন্স ইস্যুর পরও বিভিন্ন শর্ত পালন করতে হয়।জমির শ্রেণী পরিবর্তন করার কোনো সুযোগ যেমন নেই, তেমনি লাইসেন্স পাওয়ার আগে তা দখল করারও কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু হেফাজত আমীরের নামে দেয়া এসব কৃষি জমির শ্রেণী পরিবর্তনের অভিযোগ রয়েছে।
আবার লাইসেন্স পাওয়ার আগেই রেলওয়ের ৮১ শতকের বিশাল পুকুরপাড় দখল করে রেখেছেন তিনি।
এর আগে ২০১২ সালে আলোচ্য ওই পুকুর-জলাশয়ের বিপরীতে লাইসেন্স পাওয়ার আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু তখন রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়, এ জমি দেয়া যাবে না।
ওই বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ভূমি শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব আশরাফুজ্জামান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ রেলওয়ের জমিজমা ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী আল্লামা শাহ আহমদ শফীর আবেদনটি বিবেচনা করার কোনো সুযোগ নেই।
সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে বিষয়টি আপনাকে অবহিত করা হল। তবে সম্প্রতিক যে আবেদন করা হয়েছে, সে আবেদন নিয়ে বেশ তোড়জোড় চলছে।
সরেজমিন হাটহাজারী মাদ্রাসার অদূরে স্টেশনের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে গিয়ে দেখা যায়, রেলওয়ের মালিকানাধীন বিশাল এ পুকুরটিতে সাইনবোর্ড ঝুলানো আছে।
সাইনবোর্ডে লেখা আছে, ‘মাননীয় যোগাযোগমন্ত্রীর অনুমতিক্রমে এ পুকুর ও স্টেশন এলাকার উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিম পাশের ২.৬৪ একর (১৬০ কাঠা) কৃষি জমি ও পুকুর দখলদার মালিক দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা।’ স্থানীয় সূত্রমতে, এ স্থানের বর্তমান বাজারমূল্য ৩০ কোটি টাকার ওপরে।
হাটহাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম এ প্রসঙ্গে রোববার যুগান্তরকে বলেন, রেলের বিপুল পরিমাণ জমি চাষাবাদের নামে অনেক আগে লিজ বা বরাদ্দ নেয়া হলেও মূলত অধিকাংশ জমির শ্রেণী পরিবর্তন করেছে হাটহাজারী মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। অথচ আইন অনুযায়ী এটি করার সুযোগ নেই তাদের।
রেলের আরও একটি পুকুর বরাদ্দ পাওয়ার আগেই সাইনবোর্ড তুলে দিয়ে মাদ্রাসার নামে দখল করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বরাদ্দ পাওয়ার আগে এভাবে কোনো ব্যক্তি বা মাদ্রাসা সরকারি জায়গা দখল বা ভোগ কীভাবে করে, সে প্রশ্নও রাখেন তিনি।
বিষয়: বিবিধ
১৩১৪ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
﴿ ۞وَلَقَدۡ كَرَّمۡنَا بَنِيٓ ءَادَمَ وَحَمَلۡنَٰهُمۡ فِي ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِ وَرَزَقۡنَٰهُم مِّنَ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَفَضَّلۡنَٰهُمۡ عَلَىٰ كَثِيرٖ مِّمَّنۡ خَلَقۡنَا تَفۡضِيلٗا ٧٠ ﴾ [الإسراء: ٧٠]
‘আর আমি তো আদম সন্তানদের সম্মানিত করেছি এবং আমি তাদেরকে স্থলে ও সমুদ্রে বাহন দিয়েছি এবং তাদেরকে দিয়েছি উত্তম রিজিক। আর আমি যা সৃষ্টি করেছি তাদের থেকে অনেকের উপর আমি তাদেরকে অনেক মর্যাদা দিয়েছি।’ {সূরা বানী ইসরাঈল, আয়াত : ৭০}
সত্যি কথা বলতে কী, শ্রম ইতিহাসে ইসলামই প্রথম শ্রমিকের প্রতি যথার্থ দৃষ্টি দিয়েছে। তাকে দিয়েছে সম্মান ও মর্যাদা আর শ্রমের স্বীকৃতি। পক্ষান্তরে কোনো কোনো সনাতন ধর্মে শ্রমের অর্থ ছিল দাসত্ব ও বশ্যতা। আবার কোনো ধর্মে এর অর্থ ছিল লাঞ্ছনা ও অবমাননা।
ইসলাম সমাজের আর দশজন সদস্যের মতো নাগরিক হিসেবে তাদের প্রাকৃতিক অধিকারগুলোর স্বীকৃতি দিয়েছে। তেমনি শ্রমিক হিসেবে তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে অনেক মূলনীতি ও বিধিও প্রবর্তন করেছে। যাতে সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা হয়। তাদের ইহ ও পরকালীন জীবনে তাদের ও তাদের পরিবারের সম্মানিত জীবন লাভ হয়।
একইভাবে ইসলাম শ্রমগ্রহীতার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে শ্রমিকের সঙ্গে মানবিক ও সম্মানজনক আচরণ করতে। তার প্রতি মমতা দেখাতে। তার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে। তাকে বারণ করেছে তার সাধ্যাতীত কাজের নির্দেশ প্রদান থেকে। এমনবিধ নানা অধিকার সুযোগ নিশ্চিত করেছে ইসলাম শ্রমিকের জন্য। সংক্ষেপে সেগুলো নিচের উপশিরোনামসমূহে তুলে ধরা হলো :
প্রথম. শ্রমের মজুরি প্রাপ্তির অধিকার :
শ্রমগ্রহীতার কাঁধে যেসব বাধ্যবাধ্যতা আরোপ করা হয়েছে তার মধ্যে সবচে গুরুত্বপূর্ণ হলো শ্রমের মূল্য বা মজুরী। সেহেতু ইসলাম এর প্রতি অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে। আমরা দেখেছি ইসলাম কিভাবে কাজ বা শ্রমকে ইবাদত হিসেবে গণ্য করে। কীভাবে একে সকল ইবাদতের ওপর স্থান দেয়। যে ভাই তার অপর আবেদ (শ্রমিক) ভাইয়ের পক্ষ নেয় তাকে তার চেয়ে আবেদ আখ্যা দেয়। আর শ্রমের এই পবিত্র দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে ইসলাম শ্রমিকের মজুরি বা পারিশ্রমিককেও পবিত্র ঘোষণা করে। উদ্বুদ্ধ করে যাতে সকল শ্রমিককে তার শ্রমের মূল্য পরিশোধ করা হয়।
পবিত্র কুরআনে দেড়শ স্থানে ‘আজর’ তথা শ্রমের মূল্য বা বিনিময় শব্দটি উল্লিখিত হয়েছে। সবগুলোই কর্মজীবনে পারস্পরিক বিনিময়ের অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এদিকে অধিকাংশ অর্থে তা বিবৃত হয়েছে পার্থিব জীবনের নানা পর্বে-অনুষঙ্গে এবং তার স্বল্পদৈর্ঘ স্থায়ীত্ব বিষয়ে। কর্মজীবনের নানা বিনিময়ের অর্থে এর ব্যবহারের দৃষ্টান্ত কুরআন ও হাদীসে ব্যাপকহারে বিদ্যমান। যেমন আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ قُلۡ مَا سَأَلۡتُكُم مِّنۡ أَجۡرٖ فَهُوَ لَكُمۡۖ إِنۡ أَجۡرِيَ إِلَّا عَلَى ٱللَّهِۖ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ شَهِيدٞ ٤٧ ﴾ [سبا: ٤٧]
বল, ‘আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাইনি, বরং তা তোমাদেরই। আমার প্রতিদান তো কেবল আল্লাহর নিকট এবং তিনি সব কিছুর উপরই সাক্ষী। {সূরা সাবা’, আয়াত : ৪৭}
আরেক জায়গায় শু‘আইব ও মূসা আলাইহিমাস সালামের ঘটনার বর্ণনায় ইরশাদ করেন,
﴿ فَجَآءَتۡهُ إِحۡدَىٰهُمَا تَمۡشِي عَلَى ٱسۡتِحۡيَآءٖ قَالَتۡ إِنَّ أَبِي يَدۡعُوكَ لِيَجۡزِيَكَ أَجۡرَ مَا سَقَيۡتَ لَنَاۚ ﴾ [القصص: ٢٥]
‘অতঃপর নারীদ্বয়ের একজন লাজুকভাবে হেঁটে তার কাছে এসে বলল যে, আমার পিতা আপনাকে ডাকছেন, যেন তিনি আপনাকে পারিশ্রমিক দিতে পারেন, আমাদের পশুগুলোকে আপনি যে পানি পান করিয়েছেন তার বিনিময়ে’। {সূরা আল-কাসাস, আয়াত : ২৫}
এই দুই দৃষ্টান্তে ‘আজর’ বা প্রতিদান শব্দটি আমাদের মাঝে প্রচলিত কষ্ট বা শ্রমের বিনিময় কিংবা সেবার মূল্য অর্থে ব্যবহৃত
হয়েছে। পাশাপাশি আমরা লক্ষ্য করি পবিত্র কুরআনে আমলের সঙ্গে সঙ্গে আজর বা প্রতিদানের কথাও বলা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ وَلِكُلّٖ دَرَجَٰتٞ مِّمَّا عَمِلُواْۖ وَلِيُوَفِّيَهُمۡ أَعۡمَٰلَهُمۡ وَهُمۡ لَا يُظۡلَمُونَ ١٩ ﴾ [الاحقاف: ١٩]
‘আর সকলের জন্যই তাদের আমল অনুসারে মর্যাদা রয়েছে। আর আল্লাহ যেন তাদেরকে তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিফল দিতে পারেন। আর তাদের প্রতি কোন যুলম করা হবে না।’ {সূরা আল-আহকাফ, আয়াত : ১৯}
অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ إِلَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ فَلَهُمۡ أَجۡرٌ غَيۡرُ مَمۡنُونٖ ٦ ﴾ [التين: ٦]
‘তবে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্য রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন প্রতিদান’। {সূরা আত-তীন, আয়াত : ৬}
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসসমগ্রে নজর দিলেও আমরা আমলের সঙ্গে আজর তথা কর্মের সঙ্গে প্রতিদানের কথা পাশাপাশি দেখতে পাই। এসব শব্দের সবগুলোই দুনিয়া ও আখেরাতের প্রতিদানের ক্ষেত্রে ব্যাপক অর্থবোধক। যেমন ইবন হাযম রহিমাহুল্লাহ বলেন, যে আয়াতগুলোয় আমল ও আজর তথা প্রতিদানের কথা উল্লিখিত হয়েছে সবগুলোই শুধু ধর্মীয় কাজের সঙ্গে বিশিষ্ট নয়, বরং তা যে কোনো ধরনের কাজ-কর্মের ব্যাপক ও বিস্তৃত একটি নিয়ম। চাই তা দুনিয়াবী কাজ হোক অথবা আখেরাতের আমল হোক।
দ্বিতীয়ত. চুক্তিকালে শ্রমগ্রহীতা যার শর্ত করেছিলেন শ্রমিকের সেসব প্রাপ্তির অধিকার :
শ্রমগ্রহীতার জন্য জরুরী হলো শ্রমিককে সেই অধিকারগুলো প্রদান করা যার ভিত্তিতে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। তাতে হ্রাস বা বিয়োগের চেষ্টা না করা। কারণ, তা ভয়াবহ পরিণাম ডেকে আনার মতো জুলুম। সেহেতু শ্রমগ্রহীতার জন্য আরও জরুরী শ্রমিকের কাজের তীব্র প্রয়োজনের সুযোগের অসৎ ব্যবহার করত তাকে তার অধিকারে না ঠকানো এবং একই ধরনের কাজের ক্ষেত্রে প্রাপ্য মজুরির তুলনায় তাকে ধোঁকা দিয়ে কম নির্ধারণ না করা। কেননা ইসলাম সর্বপ্রকার ধোঁকা ও প্রতারণাকে হারাম ঘোষণা করেছে। বাস্তবায়ন করেছে ‘লা দ্বারারা ওয়ালা দ্বিরারা’ তথা ‘ক্ষতি করব না আবার ক্ষতির শিকারও হব না’ নীতি।
একইভাবে তার জন্য আরও জরুরী, শ্রমিকের পাওনা হেফাযত করা যখন সে অনুপস্থিত থাকে কিংবা এর কথা ভুলে যায়। এবং কাজ শেষ কিংবা নির্ধারিত মেয়াদ পূরণ হবার পর মজুরি দিতে টালবাহানা বা বিলম্ব না করা। তেমনি চুক্তির পরিমাণের চেয়ে বেশি কাজ করলে তার (অতিরিক্ত) বিনিময় প্রদানে ব্যয়কুণ্ঠ বা কৃপণ না হওয়া। কেননা আল্লাহ আমাদেরকে প্রত্যেক শ্রমের মর্যাদা দিতে বলেছেন। সব কাজের প্রতিদান দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَوۡفُواْ بِٱلۡعُقُودِۚ﴾ [المائدة: ١]
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা তোমাদের চুক্তিসমূহ পূর্ণ কর”। {সূরা আল-মায়িদাহ: ১}
হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
» «مَطْلُ الغَنِيِّ ظُلْمٌ، فَإِذَا أُتْبِعَ أَحَدُكُمْ عَلَى مَلِيٍّ فَلْيَتْبَعْ»
“ধনী ব্যক্তির (পক্ষ থেকে কারও পাওনা প্রদানে) টাল-বাহানা করা জুলুম; আর যখন তোমাদেরকে কোনো আদায় করতে সক্ষম ব্যক্তির প্রতি ন্যস্ত করা হয়, তখন সে যেন তার অনুসরণ করে”[1]।
অপর হাদীসে এসেছে,
»قال الله: ثلاثة أنا خصمهم يوم القيامة: رجل أعطي بي ثم غدر، ورجل باع حرا فأكل ثمنه، ورجل استأجر أجيرا فاستوفى منه ولم يعط أجره«
“মহান আল্লাহ বলেন, তিনজন আমি তাদের বিপক্ষে থাকব কিয়ামতের দিন, তন্মধ্যে একজন হচ্ছেন, যাকে আমার জন্য প্রদান করার পর সে তার সাথে গাদ্দারী করেছে, আর একজন হচ্ছেন, যে কোনো স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রি করে তার অর্থ খেয়েছে। আর একজন হচ্ছে সে ব্যক্তি যে কাউকে কর্মচারী নিয়োগ করার পর তার থেকে তার কাজ বুঝে নিয়েছে অথচ সে তাকে তার প্রাপ্য দেয় নি।”[2]
অপর হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَعْطُوا الْأَجِيرَ أَجْرَهُ، قَبْلَ أَنْ يَجِفَّ عَرَقُهُ»
“শ্রমিককে তার শ্রমের প্রাপ্য তার ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার আগেই প্রদান কর”[3]।
তৃতীয়ত. শ্রমিকের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কিংবা কাজে অক্ষম বানানোর মতো কাজে বাধ্য না করার অধিকার :
শ্রম গ্রহীতার জন্য জরুরী হলো শ্রমিকের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কিংবা কাজে অক্ষম বানানোর মতো কাজে তাকে বাধ্য না করা। মূসা আলাইহিস সালামকে নিজ সম্পদের তত্ত্বাবধানের কাজ বুঝিয়ে দেবার সময় যেমন আল্লাহর ‘নেক বান্দা’ বলেছিলেন,
﴿وَمَآ أُرِيدُ أَنۡ أَشُقَّ عَلَيۡكَۚ سَتَجِدُنِيٓ إِن شَآءَ ٱللَّهُ مِنَ ٱلصَّٰلِحِينَ ٢٧ ﴾ [القصص: ٢٧]
‘আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। তুমি ইনশাআল্লাহ আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত পাবে’। {সূরা আল-কিসাস, আয়াত : ২৭}
শ্রমগ্রহীতা যখন তার প্রতি এমন কাজের দায়িত্ব অর্পণ করেন যা তাকে বাধ্যতামূলকভাবে করতে হয় এবং যার ফলে পরবর্তীতে তার স্বাস্থ্য বা ভবিষ্যতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, তবে তার অধিকার রয়েছে চুক্তি বাতিল কিংবা বিষয়টি দায়িত্বশীলদের কাছে উত্থাপন করার। যাতে করে তারা তার ওপর থেকে শ্রম গ্রহীতার অনিষ্ট রোধ করেন।
চতুর্থত. উৎপাদন ক্ষমতা কমে গেলেও শ্রমিকের কাজ চালিয়ে যাবার বা নিজ কর্মে বহাল থাকার অধিকার :
শ্রমগ্রহীতার অনুমতি নেই যে তিনি কাজ চলাকালে হওয়া কোনো রোগ বা বার্ধক্য হেতু উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় শ্রমিককে তার কাজ থেকে অব্যাহতি দেবেন।
সাধারণ নিময় হলো, শ্রমগ্রহীতা যখন কোনো যুবকের সঙ্গে কাজের চু্ক্তিতে আবদ্ধ হন আর সে তার কাজে নিজের যৌবন কাটিয়ে দেয়। অতপর বার্ধক্য হেতু তার কর্মোদ্যমে অবসন্নতা বোধ করে তাহলে শ্রমগ্রহীতা তাকে কাজ থেকে বরখাস্ত করতে পারেন না। বরং তার করণীয় হলো, শ্রমিকের বুড়োকালের উৎপাদনেও তেমনি সন্তুষ্ট হওয়া যেমন সন্তুষ্ট হয়েছেন তিনি তার যৌবন ও সামর্থ্যকালে।
পঞ্চমত. শ্রমিকের আত্মসম্মান রক্ষার অধিকার :
শ্রমগ্রহীতার আরেকটি কর্তব্য হলো, শ্রমিকের সম্মান রক্ষা করা। অতএব তাকে কোনো অবমাননা বা লাঞ্ছনাকর কিংবা দাসসুলভ কাজে খাটানো যাবে না। ইসলাম এবং ইসলামের মহান ব্যক্তিদের জীবনে এমন অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে যা এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও ব্যক্তিতে সমানাধিকারের মূলনীতিকে সমর্থন করে।
যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শ্রমিক ও কাজের লোকের সঙ্গে আহার গ্রহণ করতেন। তার কাজের বোঝা লাঘবে সরাসরি সহযোগিতা করতেন। তেমনি শ্রমিককে প্রহার বা তার ওপর সীমালঙ্ঘনেরও অনুমতি নেই। যদি তাকে প্রহার করে তবে তাকে এ জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
ষষ্ঠত. শ্রমিকের ওপর আল্লাহ যা ফরয করেছেন তা আদায়ের অধিকার :
শ্রম গ্রহীতার আরেকটি অবশ্য পালনীয় কর্তব্য হলো, শ্রমিককে তার ওপর আল্লাহর ফরযকৃত যাবতীয় ইবাদত যেমন সালাত ও সিয়াম ইত্যাদি সম্পাদনের সুযোগ প্রদান করা। মনে রাখবেন একজন দীনদার বা ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি কিন্তু অন্য যে কারও চেয়ে নিজ দায়িত্ব পালনে বেশি আন্তরিক। কারণ, সে সবার জন্য মঙ্গল সাধন করতে সচেষ্ট থাকে। তার নিষ্ঠা, বিশ্বস্ততা ও আমানতদারি এবং চুক্তি রক্ষার প্রচেষ্টা সঙ্গত কারণেই বেশি হয়।
সাবধান হে মালিক ভাই, আপনার অবস্থান যেন আল্লাহর ইবাদত কিংবা ইসলামের প্রতীক রক্ষার কাজে বাধা প্রদানকারীরদের পক্ষে না হয়। যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ ٱلَّذِينَ يَسۡتَحِبُّونَ ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَا عَلَى ٱلۡأٓخِرَةِ وَيَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ وَيَبۡغُونَهَا عِوَجًاۚ أُوْلَٰٓئِكَ فِي ضَلَٰلِۢ بَعِيدٖ ٣ ﴾ [ابراهيم: ٣]
‘যারা দুনিয়ার জীবনকে আখিরাত থেকে অধিক পছন্দ করে, আর আল্লাহর পথে বাধা দেয় এবং তাতে বক্রতার সন্ধান করে; তারা ঘোরতর ভ্রষ্টতায় রয়েছে’। {সূরা ইবরাহীম, আয়াত : ৩}
সৎ কাজে বাধা না দিয়ে বরং তাতে ব্রতী হতে নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা আরও ইরশাদ করেন,
﴿ أَرَءَيۡتَ إِن كَانَ عَلَى ٱلۡهُدَىٰٓ ١١ أَوۡ أَمَرَ بِٱلتَّقۡوَىٰٓ ١٢ أَرَءَيۡتَ إِن كَذَّبَ وَتَوَلَّىٰٓ ١٣ أَلَمۡ يَعۡلَم بِأَنَّ ٱللَّهَ يَرَىٰ ١٤ ﴾ [العلق: ١١، ١٤]
‘তুমি কি দেখেছ, যদি সে হিদায়াতের উপর থাকে, অথবা তাকওয়ার নির্দেশ দেয়? যদি সে মিথ্যারোপ করে এবং মুখ ফিরিয়ে নেয়? সে কি জানে না যে, নিঃসন্দেহে আল্লাহ দেখেন?’ {সূরা আল-আলাক, আয়াত : ১১-১৪}
পরন্তু শ্রমগ্রহীতা শ্রমিকদের আচার-আচরণ পর্যবেক্ষণ করবেন। সুন্দর উপায়ে তাদেরকে নিজ ধর্মীয় শিষ্টাচারাবলি আঁকড়ে ধরতে উদ্বুদ্ধ করবেন। কেননা, শ্রমিকদের দীনদারির অনুভূতির লালন-অনুশীলনের মাধ্যমে কাজে তাদের মনোযোগ বাড়বে। এটি তাদেরকে আপন কাজে আরও বেশি নিষ্ঠাবান এবং কাজের স্বার্থ রক্ষায় অধিক যত্নবান বানাবে।
সপ্তমত. শ্রমিকের অভিযোগ করা এবং বিচার প্রার্থনার অধিকার :
শ্রম বা কর্ম সম্পর্কিত ইসলামী বিধানগুলো কেবল শ্রমিকদের অধিকার সংশ্লিষ্ট নিয়মাবলি প্রবর্তনেই সীমিত থাকে নি; বরং এসব বিধান পদ্ধতিগত ও প্রায়োগিক বিধিগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করে যা শ্রমিকের অভিযোগ ও বিচার চাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করে।
সেহেতু ইসলাম চুক্তির পক্ষগুলোকে একেবারে ছেড়ে দেয় নি। বরং তাদের জন্য নিজেদের অধিকারগুলো সহজে পাবার পথ প্রশস্ত করেছে। হোক তা স্বেচ্ছায় কিংবা আদালতের ফয়সালায়। পাশাপাশি তাদের অধিকারসমূহ সংরক্ষণে অত্যধিক আগ্রহ দেখিয়েছে এবং এসব অধিকার রক্ষায় সর্বপ্রকার উপায় ও পদ্ধতি অবলম্বন করেছে।
আর এই উপায়গুলোর মধ্যে রয়েছে মানুষের মাঝে অধিকার ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা। কেননা অধিকার ও ইনসাফ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই কেবল প্রশান্তি ছড়ায়। নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা পায়। সমাজে একে অপরের মধ্যে বন্ধন সুদৃঢ় হয়। মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে আস্থা মজবুত হয়। সম্পদ উন্নত হয়। স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি পায় এবং পরিস্থিতি শান্ত হয়। ফলে কেউ অস্থিরতার মধ্যে পতিত হয় না। সর্বোপরি শ্রম ও উৎপাদনে মালিক ও শ্রমিক প্রত্যেকেই নিজ নিজ লক্ষ্যে ধাবিত হয়। পথপরিক্রমায় এমন কিছুর সৃষ্টি হয় না যা শ্রমিকের কর্মস্পৃহাকে ভোতা কিংবা মালিকের উত্থানকে বাধাগ্রস্ত করে।
বিভিন্ন আয়াত ও হাদীসে ইনসাফ ও ন্যায়ানুগতার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। জুলুম ও বঞ্চিত করার মানসিকতা থেকে সতর্ক করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা কোনো মানুষের প্রতি জুলুম করেন না; বরং তিনি কোনো প্রকার জুলুম প্রত্যাশাও করেন না। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ وَمَا ٱللَّهُ يُرِيدُ ظُلۡمٗا لِّلۡعِبَادِ ٣١ ﴾ [غافر: ٣١]
‘আর আল্লাহ বান্দাদের উপর কোন যুলম করতে চান না।’ {সূরা আল-মু’মিন, আয়াত : ৩১}
আবূ যর গিফারী রাদিআল্লাহ আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
« يَا عِبَادِى إِنِّى حَرَّمْتُ الظُّلْمَ عَلَى نَفْسِى وَجَعَلْتُهُ بَيْنَكُمْ مُحَرَّمًا فَلاَ تَظَالَمُوا ».
‘হে আমার বান্দা, আমি নিজের ওপর জুলুম হারাম করেছি এবং একে তোমাদের মাঝেও হারাম করেছি। অতএব তোমরা পরস্পর জুলুম করো না।’[4]
আর পূর্ববর্তী জাতিগুলো কেবল তাদের জুলুম ও অত্যাচারী আচরণের কারণেই ধ্বংস হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ وَلَقَدۡ أَهۡلَكۡنَا ٱلۡقُرُونَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَمَّا ظَلَمُواْ ﴾ [يونس: ١٣]
‘আর অবশ্যই আমি তোমাদের পূর্বে বহু প্রজন্মকে ধ্বংস করেছি, যখন তারা যুলম করেছে।’ {সূরা ইউনুস, আয়াত : ১৩}
আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন,
﴿ فَتِلۡكَ بُيُوتُهُمۡ خَاوِيَةَۢ بِمَا ظَلَمُوٓاْۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَةٗ لِّقَوۡمٖ يَعۡلَمُونَ ٥٢ ﴾ [النمل: ٥٢]
‘সুতরাং ঐগুলো তাদের বাড়ীঘর, যা তাদের যুলমের কারণে বিরান হয়ে আছে’। {সূরা আন-নামল, আয়াত : ৫২}
আল্লাহ তা‘আলা আরও ইরশাদ করেন,
﴿ وَأَنذِرۡهُمۡ يَوۡمَ ٱلۡأٓزِفَةِ إِذِ ٱلۡقُلُوبُ لَدَى ٱلۡحَنَاجِرِ كَٰظِمِينَۚ مَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ حَمِيمٖ وَلَا شَفِيعٖ يُطَاعُ ١٨ ﴾ [غافر: ١٨]
‘আর তুমি তাদেরকে আসন্ন দিন সম্পর্কে সতর্ক করে দাও। যখন তাদের প্রাণ কণ্ঠাগত হবে দুঃখ, কষ্ট সংবরণ অবস্থায়। যালিমদের জন্য নেই কোন অকৃত্রিম বন্ধু, নেই এমন কোন সুপারিশকারী যাকে গ্রাহ্য করা হবে। {সূরা আল-মু’মিন, আয়াত : ১৮}
আল্লাহ অন্যত্র ইরশাদ করেন,
﴿وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِن نَّصِيرٖ ٧١ ﴾ [الحج: ٧١]
‘আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই’। {সূরা আল-হাজ, আয়াত : ৭১}
অন্য হাদীসে রয়েছে, জাবের ইবন আবদুল্লাহ রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
« اتَّقُوا الظُّلْمَ فَإِنَّ الظُّلْمَ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ».
‘তোমরা জুলুম থেকে বেঁচে থাকো, কারণ জুলুম কিয়ামতের দিন অনেক অন্ধকার হয়ে দেখা দেবে।’[5]
আবূ মূসা আশ‘আরী রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« إِنَّ اللَّهَ لَيُمْلِى لِلظَّالِمِ حَتَّى إِذَا أَخَذَهُ لَمْ يُفْلِتْهُ » .
‘আল্লাহ জালেমকে অবকাশ দেন। অবশেষে যখন তাকে পাকড়াও করেন তখন তার পলায়নের অবকাশ থাকে না।’[6]
অষ্টমত. গ্যারান্টি বা জামানত লাভের অধিকার :
জামানত বা তাযমীন শব্দটি ফিকহ শাস্ত্রের আধুনিক পরিভাষায় ‘নাগরিক কর্তব্য’ শব্দের প্রতিশব্দ। এটা স্বতঃসিদ্ধ যে মানুষের জামানত বলতে বুঝায় অন্য কর্তৃক সাধিত ক্ষতির মোকাবেলায় যা প্রদান করা হয়। আর পবিত্র কুরআনও –যা মূলত ইসলামী আইন-আদালতের প্রথম উৎস- সামাজিক দায়িত্বের ধারণাকে সমর্থন করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ وَمَا كَانَ لِمُؤۡمِنٍ أَن يَقۡتُلَ مُؤۡمِنًا إِلَّا خَطَٔٗاۚ وَمَن قَتَلَ مُؤۡمِنًا خَطَٔٗا فَتَحۡرِيرُ رَقَبَةٖ مُّؤۡمِنَةٖ وَدِيَةٞ مُّسَلَّمَةٌ إِلَىٰٓ أَهۡلِهِۦٓ إِلَّآ أَن يَصَّدَّقُواْۚ ﴾ [النساء: ٩٢]
‘আর কোন মুমিনের কাজ নয় অন্য মুমিনকে হত্যা করা, তবে ভুলবশত (হলে ভিন্ন কথা)। যে ব্যক্তি ভুলক্রমে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তাহলে একজন মুমিন দাসকে মুক্ত করতে হবে এবং দিয়াত (রক্ত পণ দিতে হবে) যা হস্তান্তর করা হবে তার পরিজনদের কাছে। তবে তারা যদি সদাকা (ক্ষমা) করে দেয় (তাহলে দিতে হবে না)। {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ৯২}
তেমনি নানা উপলক্ষ্যে পবিত্র সুন্নাহও একে সমর্থন করেছে, যা ইসলামী আইনের দ্বিতীয় উৎস। সরাসরি ক্ষতি পূরণে একে সমর্থন করেছে। যেমন আনাস রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَهْدَتْ بَعْضُ أَزْوَاجِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- إِلَى النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- طَعَامًا فِى قَصْعَةٍ فَضَرَبَتْ عَائِشَةُ الْقَصْعَةَ بِيَدِهَا فَأَلْقَتْ مَا فِيهَا فَقَالَ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- « طَعَامٌ بِطَعَامٍ وَإِنَاءٌ بِإِنَاءٍ ».
‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের কাছে তাঁর কোনো এক স্ত্রী একটি থালায় আহার হাদিয়া পাঠান। আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা তাতে আঘাত করেন। ফলে থালায় যা ছিল তা পড়ে যায়। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আহারের বদলে আহার এবং একটি পাত্রের বদলে আরেকটি পাত্র।[7]
একে তিনি স্বীকৃতি দিয়েছেন ওই ব্যক্তির ক্ষেত্রে যে অন্যের মালিকানাধীন সম্পদের প্রতি নিজের হাত বাড়ায়। অতপর অনুমতি ছাড়া জোরপূর্বক তা হরণ করে বা ধ্বংস করে ফেলে। এ ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« عَلَى الْيَدِ مَا أَخَذَتْ حَتَّى تُؤَدِّىَ ».
‘হাত দিয়ে যা গ্রহণ করেছে তার দায়িত্ব তাকে নিতে হবে, যাবৎ সে তা ফেরত দেয়।’[8]
জোরপূর্বক মালিকানা সূত্রে প্রাপ্ত দায়িত্বের ক্ষেত্রে এটিই মূলনীতি। ফিকহবিদদের পরিভাষায় এটাকে বলা হয় ‘গছব’ বা অবৈধ আত্মসাৎ। এটি ছাড়াও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর পরবর্তীতে সাহাবীদের বিচারের খোঁজ-তালাশ করলে নাগরিক দায়িত্ব বা মালিকানার এমন অনেক খণ্ড খণ্ড দৃষ্টান্ত দেখা যায়।
আর উল্লেখিত নীতিমালার ভিত্তিতে শ্রমিকের জন্য শ্রমগ্রহীতার কাছে জামানতের অধিকার দাবী করার সুযোগ রয়েছে ওই সব শর্তের ভিত্তিতে যা আমরা উল্লেখ করেছি। তার জন্য আরও সুযোগ রয়েছে তার যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণে বিচার বা আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَأَوۡفُواْ ٱلۡكَيۡلَ وَٱلۡمِيزَانَ وَلَا تَبۡخَسُواْ ٱلنَّاسَ أَشۡيَآءَهُمۡ وَلَا تُفۡسِدُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ بَعۡدَ إِصۡلَٰحِهَاۚ ﴾ [الاعراف: ٨٥]
‘সুতরাং তোমরা পরিমাণে ও ওজনে পরিপূর্ণ দাও এবং মানুষকে তাদের পণ্যে কম দেবে না; আর তোমরা যমীনে ফাসাদ করবে না তা সংশোধনের পর’। {সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত : ৮৫}
এসব হলো শ্রমিকের অধিকারগুলোর সবচে গুরুত্বপূর্ণগুলো। এভাবেই ইসলাম শ্রমিকের অধিকার, সম্মান রক্ষা করেছে। তার সম্মানিত জীবন নিশ্চিত করেছে। সর্বোপরি সামাজিক ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করেছে।
বলাবাহুল্য, অর্থনৈতিক মুক্তির মাধ্যমে সামাজিক শান্তি ও রাষ্ট্রীয় সমৃদ্ধি অর্জন কেবল তখনই সম্ভব হবে, যখন শ্রমিকের প্রতি ইসলামের এই অনুপম উদার দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবে রূপায়িত হবে। কারণ, ইসলামে শ্রম যদি হয় ব্যক্তির দায়িত্ব, তবে রাষ্ট্রের দায়িত্ব আগ্রহী প্রতিটি ব্যক্তির জন্য কর্মের সংস্থান করা। ব্যক্তির যদি দায়িত্ব হয় কাজে নিষ্ঠার পরিচয় দেয়া, তবে রাষ্ট্রের দায়িত্ব সম্পদ ও মালিকানার সুষম বণ্টন করা। কাজ যদি হয় উৎপাদনের প্রধান স্তম্ভ তবে রাষ্ট্রেরে দায়িত্ব মানব সম্পদের উন্নয়ন ঘটানো, যারা কাজের মান বাড়াবে এবং তার প্রতি যত্ন নেবে। শ্রমিক যদি হয় প্রকৃত সম্পদ, তবে রাষ্ট্রের দায়িত্ব খেটে খাওয়া লোকগুলোর ওপর চলমান জুলুম বন্ধ, তাদের মজুরি বৃদ্ধি এবং সমান সুযোগ ও স্বাস্থ্য রক্ষায় উদ্যোগ নেয়া। শ্রমিক যদি হয় খেটে খাওয়া শ্রেণী, তাহলে রাষ্ট্রের দায়িত্ব তার ও তার পরিবারের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
পরিশেষে আল্লাহ কাছে প্রার্থনা তিনি যেন আমাদের জাতীয় জীবন থেকে দুশ্চিন্তা দূর করেন। বিপদগ্রস্তের বিপদ অপসারিত করেন। এবং পরিশ্রমী ব্যক্তিদের শান্ত সম্মানিত জীবনের প্রত্যাশা পূরণ করেন। আমীন।
কানাডার ১২টি প্রদেশে একরকম ইমিগ্রেশন আইন মানা হয় না। পৃথিবীর ২য় বৃহত্তম এই দেশটির মোট জনসংখ্যা মাত্র সাড়ে তিন কোটি, যা শুধুমাত্র ঢাকা শহরের মোট জনসংখ্যার কাছাকাছি। নতুন লিবারেল সরকার তাই ইমিগ্রেশন আইন শিথিল করেছে যা আপনাকে কানাডা যাবার ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলতে পারে।
সঠিক নিয়মে আবেদন করলে এক বছরের মধ্যেই কানাডার নাগরিকত্ব গ্রহণ করা সম্ভব । ১৯ এপ্রিল ২০১৭ অনুষ্ঠিত সর্বশেষ ড্র তে ৩,৬৬৫ জন সি.আর.এস ৪১৫ পয়েন্ট পেয়েই Govt-ITA পেয়ে গেছেন যা আগে কল্পনাও করা যেত না। এ থেকেই বুঝা যায়, এই বছর আরো বেশী সংখ্যক লোকজন ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য ক্যাটাগরিতে কানাডায় যাবার সুযোগ পাবেন।
নতুন নিয়মে PNP, Express Entry, FSWP, FSTP, QSWP, AINP, SINP, MPNP, NSNP, BCPNP, OINP, Atlantic Immigration Pilot Program, Caregiver, Business, Family Sponsorship, Employment Sponsorship সহ নতুন নতুন বিভিন্ন প্রোগ্রামে সহজ নিয়মে পেশাজীবীদের ইমিগ্রেশন পাবার সুযোগ রয়েছে।
কানাডা সরকার পরিচালিত বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে আবেদনকারীরা মূলত আবেদন করতে পারবেন:
Express Entry
আমেরিকার সরকার H-1B ভিসা নিয়ে কড়াকড়ি আরোপ করার পর বিপুল সংখ্যক দক্ষ ও যোগ্য পেশাজীবির মাইগ্রেশনের শেষ ভরসাস্থল এখন Express Entry. প্রোগ্রামটি মূলত তিনটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত: 1. Federal Skilled Worker. 2. Federal Skilled Trader. 3. Canadian Experience Class. এখানে প্রফেশনের কোন ধরাবাঁধা তালিকা নেই, নেই কোন কোটা সিষ্টেম।
Provincial Nominee Program (PNP)
কানাডার মোট ১১টি প্রভিন্স ইমিগ্রেশন করার জন্য আবেদনকারীদের নমিনেশন দিতে পারে। একেক প্রভিন্স একেক সময়ে তাদের প্রোগ্রাম উন্মুক্ত করে দেয়। সাধারণত Provincial Program এর শর্তগুলো আলাদা হয়। যোগ্য আবেদনকারীর তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী আবেদন করা উচিত। তবে এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হয় প্রোগ্রামের সময়কাল সম্পর্কে। অনেক শর্তই এক্ষেত্রে শিথিলযোগ্য, আবার কিছু কিছু নতুন শর্তও আরোপ করতে দেখা যায়।
British Colombia Provincial Program, Saskatchewan Immigrant Nominee Program এবং Ontario Immigrant Nominee Program প্রোগ্রাম এখন চালু আছে।
এছাড়া রয়েছে Atlantic Immigration Pilot program এবং ১৯ মে-২০১৭ শুরু হতে যাচ্ছে কুইবেক ইনভেষ্টর প্রোগ্রাম।
British Colombia Provincial Program
IELTS এ ৫.৫ সহ দুই ছরের কাজের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিরা শুধুমাত্র গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি থাকলেই কানাডার অন্যতম সুন্দর এই প্রদেশে আবেদন করতে পারেন।
British Colombia Provincial Program চারটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত: Express Entry BC – Skilled Worker ও International Graduate এবং Skills Immigration : Skilled Worker ও Entry Level Semi-Skilled । সর্বশেষ ড্রতে ৩৭৭ জন নমিনেশন পেয়েছেন শুধুমাত্র এই প্রভিন্স থেকে।
Saskatchewan Immigrant Nominee Program
কানাডার অন্যতম সেরা এবং উন্নত প্রদেশ Saskatchewan এ বর্তমানে সুযোগ আছে কিছু বিশেষ পেশাজীবীদের জন্য খুব সহজ Requirement পূরণ করে Apply করার এবং দ্রুততম সময়ে সপরিবার ইমিগ্রেশন ভিসা পাবার।
আপনি যদি নিচের কোন একটি পেশার অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকেন, তাহলে দেরি না করে দ্রুত ফাইল প্রসেস করুন:
কম্পিউটার বা ইনফরমেশন সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার, অ্যানালিস্ট, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, এনজিও কর্মকর্তা, সোশ্যাল ওয়ার্কার/প্রজেক্ট ম্যানেজার, কৃষি কর্মকর্তা, Supply Chain/Purchase Manager, Mathematician/Statistician.
Ontario Immigrant Nominee Program
কানাডায় যারা পড়াশুনা করেছেন, যাদের কানাডায় চাকরি করার যোগ্যতা রয়েছে, যাদের কানাডা থেকে চাকরির অফার রয়েছে অথবা যারা ব্যবসা করতে ইচ্ছুক তারাই এই নির্দিষ্ট প্রভিন্সে আবেদন করে স্থায়ী হতে পারেন।
আবেদন করার ডেডলাইন
প্রোফাইল তৈরি করার পর মাত্র ১৪ দিন সময় থাকে যে কোন স্কিমে আবেদন শেষ করার।
মার্চ ২০১৭ থেকে তিনটি ক্যাটাগরিতে আটলান্টিক ইমিগ্রেশন পাইলট প্রোগ্রাম চালু হয়েছে। এর আওতায় দীর্ঘদিন কানাডায় কাজ করার সুযোগ পাওয়া যায়। যেহেতু প্রোগ্রামটিতে জব অফার থাকে তাই অনেকের পছন্দনীয় প্রোগ্রাম এটি। পরিবারসহ ২০০০ ফ্যামিলি ২০১৭ সালে এই সুযোগটি পাবে বলে আটলান্টিক সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
Quebec Immigration
Quebec কানাডার একটি প্রভিন্স হলেও এর ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া আলাদা ও স্বতন্ত্র। বছরের যেকোন সময় নির্দিষ্ট কোটা উল্লেখ করে তাদের প্রোগ্রাম ঘোষণা করা হয়। সাধারণত এই প্রভিন্সের শর্ত বা যোগ্যতা সমুহ অনেক সহজ ও শিথিলযোগ্য থাকে।
Quebec এর প্রোগ্রামগুলো মুলত তিনটি ক্যাটাগরিতে হয়ে থাকে: 1. The Quebec Skilled Worker Program. 2. Entrepreneur Program. 3. Quebec Experience Class. প্রতিটি Program এর নিজস্ব শর্তাবলী রয়েছে। প্রয়োজন ও যোগ্যতা অনুযায়ী ভালো কোন আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে আপনারা আবেদন করতে পারেন।
আগামী ১২ মাসের মধ্যে আরোও ৫,০০০ ইমিগ্র্যান্ট নেবে এই প্রদেশটি। যেকোন সময় প্রোগ্রামটি চালু হয়ে যেতে পারে।
Quebec Investor Program
আগামী ২৯ মে ২০১৭ Quebec Investor Program আবার চালু হতে যাচ্ছে। সবচেয়ে দ্রুত ও কম সময়ে পরিবারসহ স্থায়ী নাগরিক হবার সুযোগ রয়েছে এই প্রোগ্রামের আওতায়। মাত্র CAD $800,000 ডলার বিনিয়োগ করার মাধ্যমে এই প্রোগ্রামে আবেদন করা যায়। বিনিয়োগটি ১০০% নিরাপদ।
Federal Skilled Trades Program (FSTP)
Carpenters, Electricians, Plumbers, Welders এর মতো কিছু পেশাজীবী সরাসরি এই প্রোগ্রামের আওতায় আবেদন করে জবসহ ইমিগ্রেশন করতে পারেন। তবে তাদের বিদেশী অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে ট্রেড স্কিল সার্টিফিকেট থাকতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট কাজে অভিজ্ঞতাও থাকতে হবে।
কন্সট্রাকশন, চিফ কুক, বেকার, ফিস প্রোসেসিং, ইলেকট্রিকাল, ইন্ডাসট্রিয়াল, যন্ত্রপাতি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ, প্রাকৃতিক সম্পদ পরিচালনা, কৃষিকাজ ইত্যাদি কাজেরও প্রচুর চাহিদা রয়েছে কানাডায়। যোগ্য পরিবারের সদস্যরা এই প্রোগ্রামের আওতায় কানাডায় যেতে পারেবেন। ১৮ থেকে ৪৫ বছরের যে কেউ আবেদন করতে পারবেন। এই প্রোগ্রামের প্রক্রিয়া অতি সহজ ও দ্রুতসময়ে সম্পন্ন হয়।
Family Immigration
ফ্যামিলি Sponsorship এর আওতায় কানাডায় ইমিগ্রেশন হওয়া সবচেয়ে সহজ ও দ্রুত হয়। তবে যাদের নিকট আত্মীয় নেই তারা এই সুযোগ পাবেন না।
Caregivers Program
এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৬ মাসের মধ্যে পরিবারসহ কানাডায় স্থায়ী হন । শুধুমাত্র Certified নার্সরা আবেদন করতে পারবেন। অন্যসব প্রচলিত প্রোগ্রামের মতো ৬৭ পয়েন্ট বা CRS ১,২০০ পয়েন্টের প্রয়োজন নেই। নার্সিং-এ যাদের ডিপ্লোমা বা BSc (Nurse) রয়েছে এবং নুন্যতম IELTS-5 আছে, তারাই সরাসরি আবেদন করে চাকুরীসহ কানাডায় যাবার সুযোগ পাচ্ছেন Live-In Caregiver Program (LCP) মাধ্যমে।
শিশু শিক্ষা ও যত্ন, Geriatric Care, Pediatric Nursing বা বয়স্কদের সেবা or First Aid মুলত এদের প্রধান কাজ।
Investor Program in Canada
• 2,20,000 কানাডিয়ান ডলার বিনিয়োগ করার সামর্থ
• পরিবারসহ স্থায়ীভাবে বসবাস।
• শিক্ষাগত যোগ্যতা বা IELTS কোন শর্ত নাই।
• 1.6 মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলারের সম্পদ থাকলেই এই প্রোগ্রামের আওতায় সবচেয়ে সহজ উপায়ে কানাডায় স্থায়ী হওয়া যায়।
এছাড়া IT Professional, Engineer, Manager, HR, Admin, Finance, Accounting, Sales & Marketing, Admin(HR), Information System Analysis & Consultants, Media Developers, Medical Representative, University Professor and Lecturer, Retails Sales Supervisor, Graphic Designer & Illustrators, Doctors, Nurse, Pharmacist, Bankers ইত্যাদি পেশাজীবীদের আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। কানাডা সরকারের সিলেকশনের প্রথম পলিসি হচ্ছে: First Come First Serve.
মন্তব্য করতে লগইন করুন