সে যখন জান্নাতের দরজায় পৌঁছবে তখন জান্নাতের অনাবিল সৌন্দর্য ও তার অভ্যন্তরীণ সুখ শান্তি ও আনন্দঘন পরিবেশ দেখতে পাবে
লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৪:০০:৫০ বিকাল
হযরত আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, সহাবীগণ নাবী(সাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা কি কিয়ামাতের দিন আমাদের প্রভূ রবকে দেখতে পাব? তিনি বললেন মেঘমুক্ত পূর্ণিমা রাতের চাঁদকে দেখার ব্যাপারে তোমরা কি সন্দেহ পোষণ কর?
তাঁরা বললেন, না, হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেন, মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখার ব্যাপারে কি তোমাদের কোন সন্দেহ আছে? সবাই বললেন, না। তখন তিনি বললেন নিঃসন্দেহে তোমরাও আল্লাহ্কে অনুরূপভাবে দেখতে পাবে।
কিয়ামাতের দিন সকল মানুষকে সমবেত করা হবে। অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা বলবেন, যে যার উপাসনা করতে সে যেন তার অনুসরণ করে। তাই তাদের কেউ সূর্যের অনুসরণ করবে, কেউ চন্দ্রের অনুসরণ করবে, কেউ তাগুতের অনুসরণ করবে। আর অবশিষ্ট থাকবে শুধুমাত্র উম্মাহ্,
তবে তাদের সাথে মুনাফিকরাও থাকবে। তাঁদের মাঝে এ সময় আল্লাহ তা‘আলা শুভাগমন করবেন এবং বলবেন আমি তোমাদের রব।’ তখন তারা বলবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের রবের শুভাগমন না হবে, ততক্ষণ আমরা এখানেই থাকব।
আর তাঁর যখন শুভাগমন হবে তখন আমরা অবশ্যই তাঁকে চিনতে পারব। তখন তাদের মাঝে মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ্ তা‘আলা শুভাগমন করবেন এবং বলবেন, আমি তোমাদের রব। তারা বলবে, হাঁ, আপনিই আমাদের রব।
আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের ডাকবেন। আর জাহান্নামের উপর একটি সেতুপথ (পুলসিরাত) স্থাপন করা হবে। রাসূলগণের মধ্যে আমিই সবার পূর্বে আমার উম্মাত নিয়ে এ পথ অতিক্রম করব।
সেদিন রাসূলগণ ব্যতীত আর কেউ কথা বলবে না। আর রসূলগণের কথা হবে (আল্লাহুম্মা সাল্লিম সাল্লিম) ইয়া আল্লাহ্, রক্ষা করুন, রক্ষা করুন। আর জাহান্নামে বাঁকা লোহার বহু শলাকা থাকবে; সেগুলো হবে সা‘দান কাঁটার মতো।
তোমরা কি সা‘দান কাঁটা দেখেছ? তারা বলবে হাঁ দেখেছি। তিনি বলবেন, সেগুলো দেখতে সা‘দান কাঁটার মতোই। তবে সেগুলো কত বড় হবে তা একমাত্র আল্লাহ্ ব্যতীত আর কেউ জানে না।
সে কাঁটা লোকের আমল অনুযায়ী তাদের তড়িৎ গতিতে ধরবে। তাদের কিছু লোক ধ্বংস হবে আমলের কারণে। আর কারোর পায়ে যখম হবে, কিছু লোক কাঁটায় আক্রান্ত হবে, অতঃপর নাজাত পেয়ে যাবে।
জাহান্নামীদের হতে যাদের প্রতি আল্লাহ্ তা‘আলা রাহমত করতে ইচ্ছে করবেন, তাদের ব্যাপারে ফিরিস্তাদেরকে নির্দেশ দেবেন যে, যারা আল্লাহর ইবাদাত করতো তাদের যেন জাহান্নাম হতে বের করে আনা হয়।
ফিরিশ্তাগণ তাদের বের করে আনবেন এবং সাজদাহর চিহ্ন দেখে তাঁরা তাদের চিনতে পারবেন। কেননা, আল্লাহ্ তা‘আলা জাহান্নামের জন্য সাজদাহর চিহ্নগুলো মিটিয়ে দেয়া হারাম করে দিয়েছেন।
ফলে তাদের জাহান্নাম হতে বের করে আনা হবে।
কাজেই সাজদাহর চিহ্ন ছাড়া আগুন বনী আদমের সব কিছুই গ্রাস করে ফেলবে। অবশেষে, তাদেরকে অঙ্গারে পরিণত অবস্থায় জাহান্নাম হতে বের করা হবে। তাদের উপর ‘আবে-হায়াত’ ঢেলে দেয়া হবে ফলে তারা স্রোতে বাহিত ফেনার উপর গজিয়ে উঠা উদ্ভিদের মত সঞ্জীবিত হয়ে উঠবে।
অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলা বান্দাদের বিচার কাজ সমাপ্ত করবেন কিন্তু একজন লোক জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে থেকে যাবে। তার মুখমন্ডল তখনও জাহান্নামের দিকে ফেরানো থাকবে।
জাহান্নামবাসীদের মধ্যে জান্নাতে প্রবেশকারী সেই শেষ ব্যক্তি। সে তখন নিবেদন করবে, হে আমার রব! জাহান্নাম হতে আমার চেহারা ফিরিয়ে দিন। এর দূষিত হাওয়া আমায় বিষিয়ে তুলছে, এর লেলিহান শিখা আমাকে যন্ত্রণা দিচ্ছে।
তখন আল্লাহ্ তা‘আলা বলবেন, তোমার নিবেদন গ্রহণ করা হলে তুমি এছাড়া আর কিছু চাইবে না ত? সে বলবে না আপনার ইজ্জতের শপথ! সে তার ইচ্ছামত আল্লাহ্ তা‘আলাকে প্রতিশ্রুতি দিবে। কাজেই আল্লাহ তা‘আলা তার চেহারাকে জাহান্নামের দিক হতে ফিরিয়ে দিবেন।
অতঃপর সে যখন জান্নাতের দিকে মুখ ফিরাবে, তখন সে জান্নাতের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে পাবে। যতক্ষণ আল্লাহর ইচ্ছে সে চুপ করে থাকবে। অতঃপর সে বলবে, হে আমার রব! আপনি আমাকে জান্নাতের দরজার নিকট পৌঁছে দিন।
তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলবেন, তুমি পূর্বে যা চেয়েছিলে, তা ছাড়া আর কিছু চাইবে না বলে তুমি কি প্রতিশ্রুতি দাওনি? তখন সে বলবে, হে আমার রব! তোমার সৃষ্টির সবচাইতে হতভাগ্য আমি হতে চাই না।
আল্লাহ্ তাৎক্ষণিক বলবেন, তোমার এটি পূরণ করা হলে তুমি এ ছাড়া কিছু চাইবে না তো?
সে বলবে না আপনার ইজ্জতের কসম! এছাড়া আমি আর কিছুই চাইব না। এ ব্যাপারে সে তার ইচ্ছানুযায়ী প্রতিশ্রুতি দেবে। সে যখন জান্নাতের দরজায় পৌঁছবে তখন জান্নাতের অনাবিল সৌন্দর্য ও তার অভ্যন্তরীণ সুখ শান্তি ও আনন্দঘন পরিবেশ দেখতে পাবে। যতক্ষণ আল্লাহ্ তা‘আলা ইচ্ছে করবেন, সে চুপ করে থাকবে।
অতঃপর সে বলবে, হে আমার রব! আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দাও! তখন পরাক্রমশালী মহান আল্লাহ্ বলবেন হে আদম সন্তান, কী আশ্চর্য! তুমি কত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী! তুমি কি আমার সঙ্গে অঙ্গীকার করনি এবং প্রতিশ্রুতি দাওনি যে, তোমাকে যা দেয়া হয়েছে, তাছাড়া আর কিছু চাইবে না?
তখন সে বলবে, হে আমার রব! আপনার সৃষ্টির মধ্যে আমাকে সবচাইতে হতভাগ্য করবেন না। এতে আল্লাহ্ কুদরতি হাসিদেবেন।অতঃপর তাকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দিবেন এবং বলবেন চাও।সে তখন চাইবে এমন কি তার চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ফুরিয়ে যাবে।
তখন পরাক্রমশালী মহান আল্লাহ্ বলবেন এটা চাও, ওটা চাও। এভাবে তার রব তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে থাকবেন। অবশেষে যখন তার আকাঙ্ক্ষা শেষ হয়ে যাবে তখন আল্লাহ্ তা‘আলা বলবেন এ সবই তোমার, এ সাথে আরো সমপরিমাণ তোমাকে দেয়া হল।
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) কে বললেন, আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেছিলেন যে, আল্লাহ্ তা‘আলা বলবেন এ সবই তোমার, তার সাথে আরও দশগুণ তোমাকে দেয়া হল।হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, আমি আল্লাহর রসূল(সাঃ) হতে শুধু এ কথাটি স্মরণ রেখেছি যে, এ সবই তোমার এবং এর সাথে সমপরিমাণ। আবূ সাঈদ (রাঃ) বললেন, আমি তাঁকে বলতে শুনেছি যে, এসব তোমার এবং এর সাথে আরও দশগুণ।
আল-লুলু ওয়াল মারজান, অধ্যায়ঃ ১/ ঈমান, হাদিস নম্বরঃ ১১৪, বুখারী পর্ব ১০ঃ /১২৯ হাঃ ৮০৬, মুসলিম ১/৮১, হাঃ ১৮২)
বিষয়: বিবিধ
১৭৭৪ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
ঘুমাতে যাবার আগে, এমন একটা হাদিস পড়ে ভালো লাগলো।
জাযাকাল্লাহ খাইরান।
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
ঘুমাতে যাবার আগে, এমন একটা হাদিস পড়ে ভালো লাগলো।
জাযাকাল্লাহ খাইরান।
মন্তব্য করতে লগইন করুন