দোয়াই হলো ইবাদত ! কোন মুসলমানের দোয়া বৃথা যায় না তোমরা যত প্রার্থনাই করবে আল্লাহ তার চেয়ে অনেক বেশি কবুল করবেন
লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০১:৩৫:৫৫ দুপুর
বিসমিল্লাহ-হির-রাহ’মানির রাহীম।
কোনো মুসলিম ব্যক্তির দুআ কখনোই বৃথা যায় না দুয়া তিনভাবে কবুল হতে পারে দুয়া কবুল না হওয়ার কয়েকটি কারণ কোনো মুসলিম ব্যক্তির দুআ কখনোই বৃথা যায় না
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কোন ব্যক্তির দুয়া কবুল করা হয়; যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তাড়াহুড়ো করে। (তাড়াহুডা করার অর্থ হচ্ছে, দুয়া করতে করতে ক্লান্ত হয়ে সে) বলে, আমার প্রভুর নিকট দুয়া তো করলাম, কিন্তু তিনি আমার দুয়া কবুল করলেন না।”
সহীহ মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, বান্দার দুয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয়, যতক্ষণ সে গুনাহর জন্য বা আত্মীয়তা ছিন্ন করার জন্য দুয়া না করে, আর যতক্ষণ না সে তাড়াহুড়ো করে। জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রসুল! তাড়াহুড়ো মানে কি?
তিনি বললেন, কোন দুয়াকারী ব্যক্তি বলে, দুয়া করলাম, আবার দুয়া করলাম, অথচ দেখলাম না যে, তিনি আমার দুয়া কবুল করছেন। কাজেই সে তখন ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে বসে পড়ে ও দুয়া করা ত্যাগ করে দেয়। সহীহ বুখারীঃ ৬৩৪০, সহীহ মুসলিমঃ ২৭২৯।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পৃথিবীর বুকে যেকোনো মুসলিম ব্যক্তি আল্লাহর কাছে দুয়া করে (তা ব্যর্থ যায় না) হয় আল্লাহ (সে যা চায়) তাকে তাই দান করেন, অথবা অনুরূপ কোন মন্দ তার উপর থেকে অপসারণ করেন যতক্ষণ পর্যন্ত সে (দুয়াকারী) গুনাহ বা আত্মীয়তা ছিন্ন করার দুয়া না করবে। একটি লোক বলল, তাহলে তো আমরা অধিক মাত্রায় দুয়া করব। তিনি বললেন, আল্লাহ সর্বাধিক অনুগ্রহশীল। তিরমিযীঃ ৩৫৭৩, আহমাদ ২২২৭৯, হাদীসটি হাসান সহীহ।
দুয়া তিনভাবে কবুল হতে পারে
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন কোনো মুমিন ব্যক্তি দুয়া করে, যে দুয়াতে কোনো পাপ থাকে না ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয় থাকে না, তাহলে আল্লাহ তিন পদ্ধতির কোনো এক পদ্ধতিতে তার দুয়া অবশ্যই কবুল করে নেন।
(১) যে দুয়া সে করেছে, হুবহু সেভাবে তাই কবুল করেন, অথবা (২) তার দুয়ার প্রতিদান আখেরাতের জন্য সংরক্ষণ করেন, কিংবা (২) এই দুয়ার মাধ্যমে তার উপর আগত কোনো বিপদ তিনি দূর করে দেন। এ কথা শুনে সাহাবীগণ বললেন, আমরা তাহলে অধিক পরিমাণে দুয়া করতে থাকবো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা যত প্রার্থনাই করবে, আল্লাহ তার চেয়ে অনেক বেশি কবুল করতে পারেন। আদাবুল মুফরাদঃ ৭১০ ও মুসনাদে আহমদ।
দুয়া কবুল না হওয়ার কয়েকটি কারণ
কিছু পাপ আছে যা বান্দার মাঝে উপস্থিত থাকলে তার দুয়া কবুল হওয়ার জন্য বাঁধা হয়ে যায়। তাই খেয়াল রাখতে হবে, এই পাপগুলো এড়িয়ে চলতে হবে, যদি কেউ চায় তার দুয়া কবুল করা হোক।
দুআ কবুলের অন্তরায় সমূহ
(১) হারাম খাদ্য, হারাম পানীয় ও হারাম বস্ত্র
কেউ হারাম কোনো খাবার খেলে বা কারো খাবার হারাম টাকায় কেনা হলে, পোশাক হারাম বা হারাম টাকায় কেনা হলে আল্লাহ ঐ অবস্থায় তার দুয়া কবুল করেন না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, হে মানব সকল! আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র বস্তু ছাড়া কোনো কিছু গ্রহণ করেন না। তিনি এ ব্যাপারে মুমিনদের সে নির্দেশই দিয়েছেন যে নির্দেশ তিনি দিয়েছিলেন রাসুলদেরকে। আল্লাহ বলেছেন, হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার কর ও সৎকর্ম কর, তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত।
আর আল্লাহ (মুমিনদেরকে উদ্দেশ্য) করে বলেছেন, হে মুমিনগণ! তোমাদের আমি যেসব পবিত্র বস্তু দিয়েছি, তা হতে আহার কর। একথা বলার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এমন এক ব্যক্তির কথা বললেন, যে ব্যক্তি দীর্ঘ সফর করে মাথার চুলগুলোকে এলোমেলো করেছে এবং পদযুগল ধুলায় ধূসরিত করেছে। অতঃপর আকাশের দিকে হাত তুলে দুয়া করে, হে আমার প্রভু! হে আমার প্রভু! কিন্তু তার খাদ্য হারাম, তার পোশাক হারাম, তার শরীর গঠিত হয়েছে হারাম দিয়ে, কিভাবে তার দুয়া কবুল করা হবে? সহীহ মুসলিম।
(২) সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ বর্জন করা
মানুষকে ভালো কাজের দিকে আহবান না করলে বা খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে না বললে অর্থাৎ দাওয়াত ও তাবলীগে অবহেলা করলে তার দুয়া আল্লাহ কবুল করেন না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা অবশ্যই সৎকাজের আদেশ করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে। আর যদি তোমরা তা না করো, আল্লাহ তোমাদের প্রতি শাস্তি নাযিল করবেন অতঃপর তোমরা দুয়া করবে, কিন্তু তিনি তা কবুল করবেন না। তিরমিজী, শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
(৩) দুয়া কবুলে তাড়াহুড়ো করা
অনেকে কিছুদিন দুয়া করার পরে আল্লাহর বিশেষ কোনো হেকমত অনুযায়ী দুয়া কবুল হতে দেরী হলে তাড়াহুড়া করে বা হতাশ হয়ে পড়ে। অভিযোগ করা শুরু করে দেয়, কই এতো দুয়া করলাম, আল্লাহ দুয় কবুল করেন না। আল্লাহ মনে হয় আমাদের কথা শুনেন না। (নাউযুবিল্লাহ! নাফরমানী ও কুফুরী কথা)। এমন কথা বলার শাস্তিস্বরূপ সত্যিই আল্লাহ তার দুয়া আর কবুল করেন না। এইজন্য ধৈর্য ধরে দুয়া করে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে জাকারিয়া (আঃ) অনেক বছর দুয়া করার পরে তাঁর দুয়া কবুল হয়েছিলো, তিনি পুত্র সন্তান পেয়েছিলেন একেবারে বৃদ্ধ বয়সে। তিনি ছিলেন আল্লাহর নবী, আর আমরা নিশ্চয়ই তাঁর থেকে উত্তম না। এইজন্য অবস্থা যাইহোক, ধৈর্য ধরতে হবে ও মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আল্লাহর কাছে আশা রেখে দুয়া করে যেতে হবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “বান্দার দুয়া সর্বদা কবুল করা হয়, যদি সে দুয়াতে পাপ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কের ছিন্ন করার কথা না বলে এবং তাড়াহুড়ো না করে। জিজ্ঞেস করা হল হে আল্লাহর রাসুল! তাড়াহুড়ো বলতে কি বুঝায়? তিনি বললেন, দুয়াতে তাড়াহুড়া হল, প্রার্থনাকারী বলে আমিতো দুয়া করলাম কিন্তু কবুল হতে দেখলাম না। ফলে সে নিরাশ হয় ও ক্লান্ত হয়ে দুআ করা ছেড়ে দেয়। সহীহ মুসলিম।
দুয়াতে এ ধরনের তাড়াহুড়া করা আল্লাহ অপছন্দ করেন। যেমন তিনি বলেছেন, আর মানুষ অকল্যাণের দুআ করে, যেভাবে সে কল্যাণের দুআ করে, তবে মানুষ তো অতিমাত্রায় ত্বরা প্রিয়। আল ইসরাঃ ১১।
তবে দুয়ার ভিতরে এ কথা বলা নিষেধ নয় যে, হে আল্লাহ এটা আমাকে খুব তাড়াতাড়ি দিয়ে দাও। দুয়াতে তাড়াহুড়া করার অর্থ হল, দুয়া করে কেন এখনো দুয়া কবুল হলো না, এমন ভাবনা নিয়ে ক্লান্ত হয়ে দুয়া করা ছেড়ে দেয়া।
(৪) অন্তরের উদাসীনতা
মুখে দুয়া করে আর যদি দুয়ার প্রতি অন্তর উদাসীন থাকে, তাহলে দুয়া কবুল হয় না। অর্থাৎ যে দুয়া করে সে শুধু মুখে মুখে দুয়া করে, কিন্তু দুয়া কবুল হবে এমন দৃঢ় আশা, বিশ্বাস বা আল্লাহর প্রতি আস্থা নাই (নাউযুবিল্লাহ)! যেমন হাদীসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “দুয়া কবুল হবে এই দৃঢ় বিশ্বাস রেখে তোমরা দুয়া করবে। এবং জেনে রাখ আল্লাহ কোনো উদাসীন অন্তরের প্রার্থনা কবুল করেন না।” তিরমিজী, হাকেম, হাদীস সহীহ, সিলসিলাহ সহীহাহঃ ৫৯৪।
অতএব দুয়ায় যা কিছু বলা হবে, তার প্রতি অন্তরের একনিষ্ঠ ভাব থাকতে হবে। মুখে যা বলা হল, মন তার কিছুই বুঝল না। আবার অন্তর বুঝল ঠিকই, কিন্তু তার কথার প্রতি একাগ্রতা ছিল না, মনে ছিল অন্য চিন্তা-ভাবনা। তাহলে এ দুয়াকে বলা হবে উদাসীন অন্তরের প্রার্থনা। যা আল্লাহ কবুল করেন না।
৫. ব্যক্তিত্বের এক বিশেষ ধরনের দুর্বলতা
কিছু চারিত্রিক ত্রুটির কারণেও দুয়া কবুল করা হয়না। যেমন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তিন ব্যক্তি এমন যে তাদের দুয়া কবুল করা হয় না। এক. যে ব্যক্তির অধীনে দুশ্চরিত্রা নারী আছে কিন্তু সে তাকে তালাক দেয় না। দুই. যে ব্যক্তি অন্য লোকের কাছে তার পাওনা আছে কিন্তু সে তার স্বাক্ষী রাখেনি। তিন. যে ব্যক্তি নির্বোধ ব্যক্তিকে সম্পদ দিয়ে দেয় অথচ আল্লাহ বলেন, তোমরা নির্বোধদেরকে তোমাদের সম্পদ দিও না। হাকেম ও তাহাবী, হাদীস সহীহ, সহীহুল জামিঃ ৩০৭৫।
বিষয়: বিবিধ
২২৫০ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ক্ষেত্রে সুফীবাদের মূলনীতি
---------------------------------------------------------
সকল মাজহাবের লোকগণ ইসলামের মূলনীতি
হিসেবে কুরআন ও সুন্নাহকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়ে
থাকেন। কিন্তু সুফীবাদের মূলনীতি সম্পর্কে যতদূর
জানা যায়, তাদের মূলনীতির ব্যাপারে যথেষ্ট
গড়মিল রয়েছে। কতিপয় সুফীবাদে কুরআন ও
হাদীছকে বাদ দিয়ে নিম্নে মূলনীতিগুলোর উপর
তারা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে থাকেন। আবার
কতিপয় সুফী তরীকার লোকেরা কুরআন ও হাদীছের
সাথে আরও অনেকগুলো কাল্পনিক মূলনীতি থেকে
তথাকথিত আত্মশুদ্ধির জন্য বিভিন্ন দিকনির্দেশনা
গ্রহণ করে থাকে। আসুন আমরা তাদের এ
মূলনীতিটি একটু বিস্তারিত আলোচনা করি।
১) কাশ্ফঃ
বিভিন্ন দিক নির্দেশনা ও আধ্যাত্মিক উন্নতির
জন্য সুফীগণের সবচেয়ে অধিক নির্ভরযোগ্য
মূলনীতি হচ্ছে কাশফ। সুফীদের বিশ্বাস হচ্ছে
আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমে একজন সুফী সাধকের
হৃদয়ের পর্দা উঠে যায় এবং তাদের সামনে সৃষ্টি
জগতের সকল রহস্য উন্মুক্ত হয়ে যায়। তাদের
পরিভাষায় একেই বলা হয় কাশফ।
ﻭﻗﺪ ﻋﺮﻑ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺘﺼﻮﻑ ﺍﻟﻜﺸﻒ ﺑﺄﻧﻪ : ﺍﻹﻃﻼﻉ ﻋﻠﻰ ﻣﺎ ﻭﺭﺍﺀ
ﺍﻟﺤﺠﺎﺏ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﻌﺎﻧﻲ ﺍﻟﻐﻴﺒﻴﺔ ﻭﺍﻷﻣﻮﺭ ﺍﻟﺤﻘﻴﻘﻴﺔ ﻭﺟﻮﺩﺍً ﻭﺷﻬﻮﺩﺍً
সুফীগণ কাশফের সংজ্ঞায় বলেছেন, যে পর্দার
আড়ালে যে সমস্ত গায়েবী তথ্য ও প্রকৃত বিষয়সমূহ
লুকায়িত আছে তা পাওয়া ও দেখার নামই হচ্ছে
কাশফ। কাশফ হাসিল হয়ে গেলে আল্লাহ এবং সুফী
সাধকের মাঝে কোন অন্তরায় থাকে না। তখন
তারা জান্নাত, জাহান্নাম, সাত আসমান, Rwgb,
আল্লাহর আরশ, লাওহে মাহফুজ পর্যন্ত ঘুরে আসতে
পারেন। তারা গায়েবের সকল খবর, মানুষের
অন্তরের অবস্থা এবং সাত আসমানে I জমিনে যা
আছে তার সবই জানতে পারেন। এমন কি তাদের
অবগতি ব্যতীত গাছের একটি পাতাও ঝড়েনা, এক
বিন্দু বৃষ্টিও বর্ষিত হয় না, আসমান-যমীনের কোন
কিছুই তাকে অক্ষম করতে পারে না। এমন কি
লাওহে মাহফুযে যা আছে তাও তারা অবগত হতে
পারেন। এমনি আরও অসংখ্য ক্ষমতা অর্জনের দাবী
করে থাকেন, যা একমাত্র মহান আল্লাহর গুণ।
কাশফের একটি উদাহরণঃ
তাবলীগি নেসাব ফাযায়েলে আমাল নামক বইয়ের
মধ্যে কাশফ-এর একাধিক ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।
পাঠকদের জন্য আমরা এখানে মাত্র একটি ঘটনা
উল্লেখ করছি।
শায়খ আবু ইয়াজিদ কুরতুবী (রঃ) বলেনঃ আমি
শুনিয়াছি, যে ব্যক্তি সত্তর হাজার বার লা-ইলাহা
ইল্লাল্লাহ পড়ে সে দোযখের আগুন হইতে নাজাত
পাইয়া যায়। আমি এই খবর শুনিয়া এক নেছাব
অর্থাৎ সত্তর হাজার বার আমার স্ত্রীর জন্য
পড়িলাম এবং কয়েক নেছাব আমার নিজের জন্য
পড়িয়া আখেরাতের সম্বল করিয়া রাখিলাম।
আমাদের নিকট এক যুবক থাকিত। তাহার সম্বন্ধে
প্রসিদ্ধ ছিল যে, তাহার কাশ্ফ হয় এবং জান্নাত-
জাহান্নামও সে দেখিতে পায়। ইহার সত্যতার
ব্যাপারে আমার কিছুটা সন্দেহ ছিল। একবার সেই
যুবক আমাদের সহিত খাওয়া-দাওয়ায় শরীক ছিল।
এমতাবস্থায় হঠাৎ সে চিৎকার দিয়া উঠিল এবং
তাহার শ্বাস বন্ধ হইয়া যাওয়ার উপক্রম হইল এবং
সে বলিলঃ আমার মা দোযখে জ্বলিতেছে, আমি
তাহার অবস্থা দেখিতে পাইয়াছি। কুরতুবী (রহঃ)
বলেনঃ আমি তাহার অস্থির অবস্থা লক্ষ্য
করিতেছিলেন। আমার খেয়াল হইল যে, একটি
নেছাব তাহার মার জন্য বখশিয়া দেই। যাহা
দ্বারা তাহার সত্যতার ব্যাপারেও আমার পরীক্ষা
হইয়া যাইবে। অর্থাৎ তাহার কাশ্ফ হওয়ার
ব্যাপারটাও পরীক্ষা হইয়া যাইবে। সুতরাং আমার
জন্য পড়া সত্তর হাজারের নেছাবসমূহ হইতে একটি
নেছাব তাহার মার জন্য বখশিয়া দিলাম। আমি
আমার অন্তরে ইহা গোপন রাখিয়াছিলাম। কিন্তু ঐ
যুবক তৎক্ষনাৎ বলতে লাগিল চাচা! আমার মা
দোযখের আগুন হইতে রক্ষা পাইয়া গিয়াছে।
কুরতুবী (রহঃ) বলেনঃ এই ঘটনা হইতে আমার দুইটি
ফায়দা হইল। এক. সত্তর হাজার বার কালেমা
তাইয়্যেবা পড়ার বরকত সম্পর্কে যাহা আমি
শুনিয়াছি উহার অভিজ্ঞতা। দুই. যুবকটির সত্যতার
(তার কাশ্ফ হওয়ার) একীন হইয়া গেল।
দেখুনঃ ফাযায়েলে আমাল, ১ম খন্ড, ১৩৫ পৃষ্ঠা,
প্রথম প্রকাশ, অক্টোবর-২০০১ ইং। দারুল কিতাব, ৫০
বাংলা বাজার ঢাকা-১১০০ থেকে প্রকাশিত)
এমনি আরও অনেক শির্কী ও বিদআতী কথা
ফাযায়েলে আমল বইটিতে রয়েছে, যা সচেতন পাঠক
একটু খেয়াল করে বইটি পড়লে সহজেই ধরতে
পারবেন।
প্রিয় পাঠক ভাই ও বন্ধুগণ! জান্নাত ও
জাহান্নামের ব্যাপারে আল্লাহর কিতাব ও
রাসূলের সুন্নাতে যতটুকু বলা হয়েছে, তা ব্যতীত
অন্য কোন খবর জানার কোন উপায় নেই। কারণ
এগুলো গায়েবী বিষয়। আল্লাহ্ তাআলা আমাদের
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের
মাধ্যমে আমাদেরকে যতটুকু বলেছেন, আমরা শুধু
ততটুকুই জানি। সুতরাং কোন ব্যক্তি যদি এর
অতিরিক্ত কিছু দাবী করে, তাহলে সে
মিথ্যাবাদী। তা বিশ্বাস করা সুস্পষ্ট শির্ক।
আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
ﻗُﻞْ ﻟَﺎ ﺃَﻣْﻠِﻚُ ﻟِﻨَﻔْﺴِﻲ ﻧَﻔْﻌًﺎ ﻭَﻟَﺎ ﺿَﺮًّﺍ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﺎ ﺷَﺎﺀَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﻟَﻮْ ﻛُﻨْﺖُ ﺃَﻋْﻠَﻢُ
ﺍﻟْﻐَﻴْﺐَ ﻟَﺎﺳْﺘَﻜْﺜَﺮْﺕُ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺨَﻴْﺮِ ﻭَﻣَﺎ ﻣَﺴَّﻨِﻲَ ﺍﻟﺴُّﻮﺀُ ﺇِﻥْ ﺃَﻧَﺎ ﺇِﻟَّﺎ ﻧَﺬِﻳﺮٌ
ﻭَﺑَﺸِﻴﺮٌ ﻟِﻘَﻮْﻡٍ ﻳُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ
আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ
সাধনের এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু
যা আল্লাহ্ চান। আর আমি যদি গায়বের কথা
জেনে নিতে পারতাম, তাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করে
নিতে পারতাম। ফলে আমার কোন অমঙ্গল কখনও
হতে পারত না। আমি তো শুধু একজন ভীতি প্রদর্শক
ও সু-সংবাদ দাতা ঈমানদারদের জন্য। (সূরা
আরাফঃ ১৮৮) আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
ﻗُﻞْ ﻟَﺎ ﺃَﻗُﻮﻝُ ﻟَﻜُﻢْ ﻋِﻨْﺪِﻱ ﺧَﺰَﺍﺋِﻦُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻟَﺎ ﺃَﻋْﻠَﻢُ ﺍﻟْﻐَﻴْﺐَ ﻭَﻟَﺎ ﺃَﻗُﻮﻝُ ﻟَﻜُﻢْ
ﺇِﻧِّﻲ ﻣَﻠَﻚٌ ﺇِﻥْ ﺃَﺗَّﺒِﻊُ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﺎ ﻳُﻮﺣَﻰ ﺇِﻟَﻲَّ ﻗُﻞْ ﻫَﻞْ ﻳَﺴْﺘَﻮِﻱ ﺍﻟْﺄَﻋْﻤَﻰ
ﻭَﺍﻟْﺒَﺼِﻴﺮُ ﺃَﻓَﻠَﺎ ﺗَﺘَﻔَﻜَّﺮُﻭﻥَ
আপনি বলুনঃ আমি তোমাদেরকে বলি না যে,
আমার কাছে আল্লাহ্র ভাণ্ডার রয়েছে। তাছাড়া
আমি অদৃশ্য বিষয় অবগতও নই। আমি এমনও বলি না
যে, আমি ফেরেশতা। আমি তো শুধু ঐ অহীর অনুসরণ
করি, যা আমার কাছে আসে। আপনি বলে দিনঃ
অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান হতে পারে? তোমরা কি
চিন্তা কর না? (সূরা আনআমঃ ৫০) আল্লাহ্ তাআলা
বলেনঃ
ﻋَﺎﻟِﻢُ ﺍﻟْﻐَﻴْﺐِ ﻓَﻠَﺎ ﻳُﻈْﻬِﺮُ ﻋَﻠَﻰ ﻏَﻴْﺒِﻪِ ﺃَﺣَﺪًﺍ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﻦِ ﺍﺭْﺗَﻀَﻰ ﻣِﻦْ ﺭَﺳُﻮﻝٍ
তিনি অদৃশ্যের জ্ঞানী। তিনি অদৃশ্য বিষয় কারও
কাছে প্রকাশ করেন না। তবে তাঁর মনোনীত কোন
রাসূল ব্যতীত। (সূরা জিনঃ ২৬-২৭) আয়েশা (রাঃ)
বলেনঃ
ﺛَﻠَﺎﺙٌ ﻣَﻦْ ﺗَﻜَﻠَّﻢَ ﺑِﻮَﺍﺣِﺪَﺓٍ ﻣِﻨْﻬُﻦَّ ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﻋْﻈَﻢَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟْﻔِﺮْﻳَﺔَ ﻗُﻠْﺖُ
ﻣَﺎ ﻫُﻦَّ ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻣَﻦْ ﺯَﻋَﻢَ ﺃَﻥَّ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺭَﺃَﻯ ﺭَﺑَّﻪُ
ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﻋْﻈَﻢَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟْﻔِﺮْﻳَﺔ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻭَﻣَﻦْ ﺯَﻋَﻢَ ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻛَﺘَﻢَ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻣِﻦْ ﻛِﺘَﺎﺏِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﻋْﻈَﻢَ ﻋَﻠَﻰ
ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟْﻔِﺮْﻳَﺔَ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝُ ﺑَﻠِّﻎْ ﻣَﺎ ﺃُﻧْﺰِﻝَ ﺇِﻟَﻴْﻚَ ﻣِﻦْ
ﺭَﺑِّﻚَ ﻭَﺇِﻥْ ﻟَﻢْ ﺗَﻔْﻌَﻞْ ﻓَﻤَﺎ ﺑَﻠَّﻐْﺖَ ﺭِﺳَﺎﻟَﺘَﻪُ ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻭَﻣَﻦْ ﺯَﻋَﻢَ ﺃَﻧَّﻪُ ﻳُﺨْﺒِﺮُ
ﺑِﻤَﺎ ﻳَﻜُﻮﻥُ ﻓِﻲ ﻏَﺪٍ ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﻋْﻈَﻢَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟْﻔِﺮْﻳَﺔَ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﻗُﻞْ ﻟَﺎ
ﻳَﻌْﻠَﻢُ ﻣَﻦْ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤَﻮَﺍﺕِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺍﻟْﻐَﻴْﺐَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ
যে ব্যক্তি বলবে যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার রবকে চক্ষে দেখেছেন
সে আল্লাহর উপর বিরাট মিথ্যাচার করল। যে
ব্যক্তি বলবে যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম আল্লাহর কিতাবের কিছু অংশ তিনি
গোপন করেছেন, সে আল্লাহর উপর বিরাট মিথ্যা
রচনা করল। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ হে রসূল!
পৌঁছে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে
আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি
এরূপ না করেন, তবে আপনি তার পয়গাম কিছুই
পৌঁছালেন না। (সূরা মায়িদাঃ ৬৭) আর যে ব্যক্তি
বিশ্বাস করবে যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াস সাল্লাম (গায়েবের) আগাম খবর দিতে
পারতেন সেও আল্লাহর উপর চরম মিথ্যা রচনা করল।
(তিরমিযী, হাদীছটি সহীহ)
বুখারী শরীফে রবী বিনতে মুআওভিয (রাঃ) হতে
বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন
কতিপয় ছোট মেয়ে দফ তথা একদিকে খোলা ঢোল
বাজাচ্ছিল এবং বদরের যুদ্ধে নিহত তাদের
পিতাদের বীরত্বগাঁথা বর্ণনা করছিল। মেয়েদের
মধ্য হতে একটি মেয়ে বলে ফেললঃ
ﻭَﻓِﻴﻨَﺎ ﻧَﺒِﻰٌّ ﻳَﻌْﻠَﻢُ ﻣَﺎ ﻓِﻰ ﻏَﺪٍ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰُّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻻَ
ﺗَﻘُﻮﻟِﻰ ﻫَﻜَﺬَﺍ ﻭَﻗُﻮﻟِﻰ ﻣَﺎ ﻛُﻨْﺖِ ﺗَﻘُﻮﻟِﻴﻦَ
আমাদের মধ্যে এমন একজন নবী আছেন, যিনি
আগামীকালের খবর বলতে পারেন। তখন নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ বালিকার
কথার প্রতিবাদ করে বললেনঃ এই কথা অর্থাৎ
আমাদের মধ্যে এমন একজন নবী আছেন, যিনি
আগামীকালের খবর বলতে পারেন- এটি বাদ দাও।
আর বাকী কথাগুলো বলতে থাকো। (সহীহ বুখারী
হাদীছ নং- ৪০০১)
এমনি আরও কুরআন অনেক আয়াত ও সহীহ হাদীছের
মাধ্যমে জানা যায় যে, আল্লাহ ছাড়া গায়েবের
খবর আর কেউ জানে না।
মন্তব্য করতে লগইন করুন