হে আল্লাহর রাসূল! মনে হচ্ছে এটা যেন বিদায়ী উপদেশ। অতএব আপনি আমাদেরকে আরও বেশী উপদেশ দিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন
লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৮:৩৫:০৬ রাত
হে আল্লাহ রাসূল! মনে হচ্ছে এটাই যেন বিদায়ী উপদেশ। অতএব আপনি আমাদেরকে আরও বেশী উপদেশ দিন। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহ ভীতির উপদেশ দিচ্ছি । দারসুল হাদিস...
ﻋَﻦِ ﺍﻟْﻌِﺮْﺑَﺎﺽِ ﺑْﻦِ ﺳَﺎﺭِﻳَﺔَ ﻗَﺎﻝَ ﺻَﻠَّﻰ ﺑِﻨَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺫَﺍﺕَ ﻳَﻮْﻡٍ ﺛُﻢَّ ﺃَﻗْﺒَﻞَ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﻓَﻮَﻋَﻈَﻨَﺎ ﻣَﻮْﻋِﻈَﺔً ﺑَﻠِﻴﻐَﺔً ﺫَﺭَﻓَﺖْ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺍﻟْﻌُﻴُﻮﻥُ ﻭَﻭَﺟِﻠَﺖْ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺍﻟْﻘُﻠُﻮﺏُ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻗَﺎﺋِﻞٌ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﻛَﺄَﻥَّ ﻫَﺬِﻩِ ﻣَﻮْﻋِﻈَﺔُ ﻣُﻮَﺩِّﻉٍ ﻓَﻤَﺎﺫَﺍ ﺗَﻌْﻬَﺪُ ﺇِﻟَﻴْﻨَﺎ ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺃُﻭﺻِﻴﻜُﻢْ ﺑِﺘَﻘْﻮَﻯ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﺍﻟﺴَّﻤْﻊِ ﻭَﺍﻟﻄَّﺎﻋَﺔِ ﻭَﺇِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﻋَﺒْﺪًﺍ ﺣَﺒَﺸِﻴًّﺎ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻣَﻦْ ﻳَﻌِﺶْ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﺑَﻌْﺪِﻯ ﻓَﺴَﻴَﺮَﻯ ﺍﺧْﺘِﻼَﻓًﺎ ﻛَﺜِﻴﺮًﺍ ﻓَﻌَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺑِﺴُﻨَّﺘِﻰ ﻭَﺳُﻨَّﺔِ ﺍﻟْﺨُﻠَﻔَﺎﺀِ ﺍﻟﺮَّﺍﺷِﺪِﻳﻦَ ﺍﻟْﻤَﻬْﺪِﻳِّﻴﻦَ ﺗَﻤَﺴَّﻜُﻮﺍ ﺑِﻬَﺎ ﻭَﻋَﻀُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﺑِﺎﻟﻨَّﻮَﺍﺟِﺬِ ﻭَﺇِﻳَّﺎﻛُﻢْ ﻭَﻣُﺤْﺪَﺛَﺎﺕِ ﺍﻷُﻣُﻮﺭِ ﻓَﺈِﻥَّ ﻛُﻞَّ ﻣُﺤْﺪَﺛَﺔٍ ﺑِﺪْﻋَﺔٌ ﻭَﻛُﻞَّ ﺑِﺪْﻋَﺔٍ ﺿَﻼَﻟَﺔٌ -
ইরবায বিন সারিয়াহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদিন আমাদের নিয়ে ছালাত আদায় করলেন। অতঃপর আমাদের দিকে ফিরে বসলেন। অতঃপর আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী ভাষায় উপদেশ দিলেন যে, চক্ষু সমূহ অশ্রুসজল হয়ে গেল এবং হৃদয় সমূহ ভীত-বিহবল হয়ে পড়ল। এমন সময় একজন বলে উঠলো, হে আল্লাহর রাসূল! মনে হচ্ছে এটা যেন বিদায়ী উপদেশ। অতএব আপনি আমাদেরকে আরও বেশী উপদেশ দিন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতির উপদেশ দিচ্ছি। আমি তোমাদের আমীরের আদেশ শুনতে ও মান্য করতে উপদেশ দিচ্ছি যদিও তিনি একজন হাবশী গোলাম হন।
কেননা আমার পরে তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে, তারা সত্বর বহু মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাতকে এবং সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে অাঁকড়ে ধরবে। তাকে কঠিনভাবে ধরবে এবং মাড়ির দাঁত সমূহ দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে। সাবধান! দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টিসমূহ হ’তে দূরে থাকবে। কেননা (দ্বীনের মধ্যে) যেকোন নতুন সৃষ্টি হ’ল বিদ‘আত। আর প্রত্যেক বিদ‘আত হল পথভ্রষ্টতা।
সকল ক্ষেত্রে আল্লাহভীতি বজায় রাখা, আমীরের আদেশ মান্য করা, রাসূল (সাঃ) ও খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত কঠিনভাবে আকড়ে ধরা এবং বিদ‘আত হ’তে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হাদীছের ব্যাখ্যা :
( ﺻَﻠَّﻰ ﺑِﻨَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺫَﺍﺕَ ﻳَﻮْﻡٍ ) ‘রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একদিন আমাদের নিয়ে ছালাত আদায় করলেন। অর্থাৎ তিনি ছালাতে আমাদের ইমামতি করলেন। তিরমিযী ও ইবনু মাজাহর বর্ণনায় এ অংশটুকু নেই। সেখানে ﻭﻋﻈﻨﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ‘রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের একদিন ওয়ায করলেন’ বলে হাদীছ শুরু করা হয়েছে।
ছাহেবে মিরক্বাত এখানে ﺫَﺍﺕَ ﻳَﻮْﻡٍ -এর ব্যাখ্যায় বলেন যে, ঘটনাটি দিনের বেলায় ঘটেছিল।
( ﺛُﻢَّ ﺃَﻗْﺒَﻞَ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﺑِﻮَﺟْﻬِﻪِ ) অর্থ ﺍﻧﺤﺮﻑ ﺍﻟﻴﻨﺎ ﺍﻧﺤﺮﺍﻓﺎ ‘আমাদের দিকে সরাসরি মুখ ফিরিয়ে বসলেন।
( ﻓَﻮَﻋَﻈَﻨَﺎ ﻣَﻮْﻋِﻈَﺔً ﺑَﻠِﻴﻐَﺔً ) অর্থ ﻧﺼﺤﻨﺎ ﻧﺼﻴﺤﺔ ﺗﺎﻣﺔ ﻓﻰ ﺍﻹﻧﺬﺍﺭ ﻭﺍﻟﺘﺨﻮﻳﻒ ‘তিনি আমাদেরকে আখেরাতের ভীতিপূর্ণ সারগর্ভ উপদেশ প্রদান করেন। যেমন আল্লাহ বলেন, ﻓَﺄَﻋْﺮِﺽْ ﻋَﻨْﻬُﻢْ ﻭَﻋِﻈْﻬُﻢْ ﻭَﻗُﻞْ ﻟَﻬُﻢْ ﻓِﻲ ﺃَﻧْﻔُﺴِﻬِﻢْ ﻗَﻮْﻻً ﺑَﻠِﻴﻐًﺎ ‘আপনি ওদেরকে এড়িয়ে চলুন এবং ওদের সদুপদেশ দিন এবং এমন কথা বলুন, যা ওদের জন্য কল্যাণকর হয় (নিসা ৪/৬৩)।
( ﺫَﺭَﻓَﺖْ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺍﻟْﻌُﻴُﻮﻥُ ﻭَﻭَﺟِﻠَﺖْ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺍﻟْﻘُﻠُﻮﺏُ ) তার ফলে চক্ষুসমূহ অশ্রুসজল হয়ে গেল এবং হৃদয়সমূহ ভীত বিহবল হয়ে পড়লো। যেমন আল্লাহ বলেন, ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺳَﻤِﻌُﻮْﺍ ﻣَﺎ ﺃُﻧﺰِﻝَ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮْﻝِ ﺗَﺮَﻯ ﺃَﻋْﻴُﻨَﻬُﻢْ ﺗَﻔِﻴْﺾُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺪَّﻣْﻊِ ﻣِﻤَّﺎ ﻋَﺮَﻓُﻮْﺍ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺤَﻖِّ ﻳَﻘُﻮﻟُﻮْﻥَ ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﺁﻣَﻨَّﺎ ﻓَﺎﻛْﺘُﺒْﻨَﺎ ﻣَﻊَ ﺍﻟﺸَّﺎﻫِﺪِﻳْﻦَ - আর তারা যখন শোনে রাসূলের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তখন আপনি তাদের চক্ষুসমূহকে অশ্রুসজল দেখতে পাবেন এ কারণে যে, তারা সত্যকে চিনে নিয়েছে। তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে সাক্ষ্যদাতাদের (অর্থাৎ মুসলমানদের) মধ্যে লিপিবদ্ধ করুন।
এখানে প্রথমে চক্ষু অশ্রুসজল হওয়া এবং পরে হৃদয় ভীত-বিহবল হওয়া বলার অর্থ এটা নয় যে, দুটি আগেপিছে হয়। বরং দুটিই এক সাথে হয়ে থাকে এবং হৃদয়ের গভীরে প্রভাব বিস্তারের বহিঃপ্রকাশ ঘটে চোখের পানির মাধ্যমে। চোখের পানিই তার মনের কথা বলে দেয়।
( ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺟُﻞٌ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﻛَﺄَﻥَّ ﻫَﺬِﻩِ ﻣَﻮْﻋِﻈَﺔُ ﻣُﻮَﺩِّﻉٍ ) অতঃপর একজন বলল, হে আল্লাহর রাসূল! মনে হচ্ছে এটা যেন বিদায়ী উপদেশ। হাকেম এবং আহমাদ-এর বর্ণনায় এসেছে ﻗُﻠْﻨَﺎ আমরা বললাম। বস্তুতঃ শ্রোতাদের উপরে গভীর প্রভাব বিস্তারকারী উপদেশ লক্ষ্য করেই ছাহাবীগণ এটাকে বিদায়ী উপদেশ বলে ধারণা করেছিলেন।
অন্য হাদীছে রয়েছে ﺇِﻥَّ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺒَﻴَﺎﻥِ ﻟَﺴِﺤْﺮًﺍ নিশ্চয়ই কিছু কিছু বক্তব্যে জাদু রয়েছে। সম্ভবতঃ ঐদিন অমন অবস্থাই ঘটেছিল। ( ﻛَﺄَﻥَّ َﻫَﺬِﻩِ ﻣَﻮْﻋِﻈَﺔُ ﻣُﻮَﺩِّﻉٍ ) ‘যেন এটি বিদায়ী উপদেশ। অর্থ, ﻛﺄﻥ ﻫﺬﻩ ﻧﺼﻴﺤﺔ ﺍﻟﺬﻯ ﻳﺮﻳﺪ ﺍﻟﻮﺩﺍﻉ মনে হচ্ছে এটি ঐ ব্যক্তির উপদেশ, যিনি বিদায় গ্রহণ করবেন ﺗﻮﺩﻳﻊ থেকে ﻣﻮﺩَّﻉ ‘বিদায় গ্রহণকারী ( ﻓَﺄَﻭْﺻِﻨَﺎ ) অতএব আপনি আমাদের আরও উপদেশ দিন।
মৃত্যুকালীন বিদায়ী উপদেশকে ﻭﺻﻴﺔ বলা হয়। নছীহত হল সাধারণ উপদেশ এবং ‘অছিয়ত’ হলো জোরালো উপদেশ বা নির্দেশ। বিদায়ী উপদেশকে যেহেতু বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে, সেকারণে তাকে ‘অছিয়ত’ বলা হয়। সেজন্য ছাহাবায়ে কেরামগণ এখানে অছিয়ত শব্দ ব্যবহার করেছেন অর্থাৎ ﺇﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﺍﻷﻣﺮ ﻛﺬﻟﻚ ﻓﻤﺮﻧﺎ ﺑﻤﺎ ﻓﻴﻪ ﻛﻤﺎﻝ ﺻﻼﺣﻨﺎ ﻓﻰ ﻋﺎﺟﻠﻨﺎ ﻭﺁﺟﻠﻨﺎ যদি সেটাই হয়, তাহলে আপনি আমাদের নির্দেশ দিন ঐসব বিষয়ে যাতে আমাদের ইহকালে ও পরকালে সার্বিক কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
( ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺃُﻭﺻِﻴﻜُﻢْ ﺑِﺘَﻘْﻮَﻯ ﺍﻟﻠﻪِ ) অতঃপর তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতির উপদেশ দিচ্ছি। যেমন আল্লাহ বলেন, ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﻭَﺻَّﻴْﻨَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃُﻭﺗُﻮﺍ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﻣِﻦْ ﻗَﺒْﻠِﻜُﻢْ ﻭَﺇِﻳَّﺎﻛُﻢْ ﺃَﻥِ ﺍﺗَّﻘُﻮﺍ ﺍﻟﻠﻪَ ‘আর নিশ্চয়ই আমরা নির্দেশ দিয়েছিলাম তোমাদের পূর্বেকার কিতাবধারী (ইহুদী-নাছারা)-দেরকে এবং (নির্দেশ দিচ্ছি) তোমাদেরকে এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর (নিসা ৪/১৩১)।
ছাহেবে মিরক্বাত বলেন, ﺍﺗﻘﻮﺍ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻱ ﺑﺄﻗﺴﺎﻣﻬﺎ ﺍﻟﺜﻼﺛﺔ ﻭﻫﻲ ﺗﻘﻮﻯ ﺍﻟﺸﺮﻙ ﻭﺍﻟﻤﻌﺼﻴﺔ ﻭﺗﻘﻮﻯ ﻣﺎ ﺳﻮﻯ ﺍﻟﻠﻪ ‘আল্লাহকে ভয় কর অর্থ তার তিনটি প্রকার সহ ভয় কর। আর তা হল (১) শিরক হতে বেঁচে থাকা (২) গোনাহ হতে বিরত থাকা এবং (৩) আল্লাহ ব্যতীত অন্য সবকিছু হতে দূরে থাকা। তিনি বলেন, এটি হল ﻣِﻦْ ﺟَﻮَﺍﻣِﻊِ ﺍﻟْﻜَﻠِﻢِ অর্থাৎ সারগর্ভ বাক্য সমূহের অন্যতম, (যেটা হ’ল পবিত্র কুরআন এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য)।
কেননা তাক্বওয়া হল আদেশ সমূহ মান্য করা ও নিষেধ সমূহ হতে বিরত থাকার নাম। এটি হল আখেরাতের পাথেয়, যা মানুষকে আল্লাহর রহমতে চিরস্থায়ী আযাব থেকে মুক্তি দেবে এবং তাকে স্থায়ী শান্তির নিবাস জান্নাতে পৌঁছে দেবে। যেমন প্রখ্যাত আরবীয় কবি আ‘শা বলেন-
ﺇِﺫَﺍ ﺃَﻧْﺖَ ﻟَﻢْ ﺗَﺮْﺣَﻞْ ﺑِﺰَﺍﺩٍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺘُّﻘَﻰ + ﻭﻻَﻗَﻴْﺖَ ﺑَﻌْﺪَ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕِ ﻣَﻦْ ﻗَﺪْ ﺗَﺰَﻭَّﺩَﺍ
ﻧَﺪِﻣْﺖَ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﻥْ ﻻَ ﺗَﻜُﻮْﻥَ ﻛَﻤِﺜْﻠِﻪِ + ﻭﺃَﻧَّﻚَ ﻟَﻢْ ﺗُﺮْﺻِﺪْ ﻟَﻤَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﺃَﺭْﺻَﺪَﺍ
যখন তুমি তাক্বওয়ার পাথেয় সহ আখেরাতে যাত্রা করবে না, অথচ মৃত্যুর পরে এমন ব্যক্তির সাথে তোমার সাক্ষাত হবে, যিনি ঐ পাথেয় নিয়ে হাযির হয়েছেন, তখন তুমি লজ্জিত হবে এ কারণে যে, তুমি তার মত হতে পারনি এবং তুমি তার মত অর্জন করোনি, যা সে অর্জন করেছে (দীওয়ানুল আ‘শা)।
আর তাক্বওয়া হল ব্যক্তি ও আল্লাহ্র মধ্যকার ব্যক্তিগত বিষয়। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে বহু স্থানে তাক্বওয়া অর্জনের গুরুত্ব ও উপকারিতা বর্ণনা করেছেন।
যেমন তিনি বলেন, ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﺘَّﻖِ ﺍﻟﻠﻪَ ﻳَﺠْﻌَﻞْ ﻟَﻪُ ﻣَﺨْﺮَﺟًﺎ - ﻭَﻳَﺮْﺯُﻗْﻪُ ﻣِﻦْ ﺣَﻴْﺚُ ﻻَ ﻳَﺤْﺘَﺴِﺐُ - ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﺘَّﻖِ ﺍﻟﻠﻪَ ﻳَﺠْﻌَﻞْ ﻟَﻪُ ﻣِﻦْ ﺃَﻣْﺮِﻩِ ﻳُﺴْﺮًﺍ - ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﺘَّﻖِ ﺍﻟﻠﻪَ ﻳُﻜَﻔِّﺮْ ﻋَﻨْﻪُ ﺳَﻴِّﺌَﺎﺗِﻪِ ﻭَﻳُﻌْﻈِﻢْ ﻟَﻪُ ﺃَﺟْﺮًﺍ -
যে ব্যক্তি আল্লাহ্কে ভয় করে, আল্লাহ তার (কাংখিত) পথ খুলে দেন। এবং তাকে রূযী দান করেন এমন উৎস হতে যে বিষয়ে তার কোনরূপ পূর্ব ধারণা ছিল না। যে ব্যক্তি আল্লাহ্কে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ-কর্ম সহজ করে দেন। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার পাপরাশি মোচন করেন এবং তাকে মহা পুরস্কার দান করেন (তালাক ৬৫/২, ৩, ৪, ৫)।
মহান অাল্লাহ আরো বলেন, ﻭَﺗَﺰَﻭَّﺩُﻭﺍ ﻓَﺈِﻥَّ ﺧَﻴْﺮَ ﺍﻟﺰَّﺍﺩِ ﺍﻟﺘَّﻘْﻮَﻯ ﻭَﺍﺗَّﻘُﻮﻥِ ﻳَﺎ ﺃُﻭﻟِﻲ ﺍﻟْﺄَﻟْﺒَﺎﺏِ ‘তোমরা পাথেয় নাও। নিশ্চয়ই সর্বোত্তম পাথেয় হল আল্লাহভীতি। আর তোমরা আমাকে ভয় কর, হে জ্ঞানী সমাজ (বাক্বারাহ ২/১৯৭)।
জনৈক ব্যক্তি রাসূল (সাঃ)-এর নিকটে উপদেশ কামনা করলে তিনি বলেছিলেন, ﺃُﻭﺻِﻴﻚَ ﺑِﺘَﻘْﻮَﻯ ﺍﻟﻠﻪِ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺭَﺃْﺱُ ﻛُﻞِّ ﺷَﻰْﺀٍ আমি তোমাকে আল্লাহভীতির উপদেশ দিচ্ছি। কেননা নিশ্চয়ই তা সকল কিছুর মূল। ( ﻭَﺍﻟﺴَّﻤْﻊِ ﻭَﺍﻟﻄَّﺎﻋَﺔِ ) অর্থ, ﺃﻭﺻﻴﻜﻢ ﺑﺴﻤﻊ ﻛﻼﻡ ﺍﻟﺨﻠﻴﻔﺔ ﻭﺍﻷﺋﻤﺔ ﻭﺍﻃﺎﻋﺘﻬﻢ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﻌﺮﻭﻑ আমি তোমাদের নির্দেশ দিচিছ তোমাদের খলীফা ও নেতৃবৃন্দের আদেশ শ্রবণের জন্য এবং ন্যায় কাজে তাদের আনুগত্য করার জন্য।
কেননা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ﻻَ ﻃَﺎﻋَﺔ ﻟِﻤَﺨْﻠُﻮﻕٍ ﻓِﻲ ﻣَﻌْﺼِﻴَﺔِ ﺍﻟْﺨَﺎﻟِﻖ ﻭَﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺍﻟﻄَّﺎﻋَﺔُ ﻓِﻰ ﺍﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑِ স্রষ্টার অবাধ্যতায় সৃষ্টির প্রতি কোনরূপ আনুগত্য নেই। নিশ্চয়ই আনুগত্য হ’ল কেবল ন্যায় কাজে। ছাহেবে মিরক্বাত বলেন, ﻟﻜﻦ ﻻ ﻳﺠﻮﺯ ﻣﺤﺎﺭﺑﺘﻪ ‘কিন্তু খলীফা বা নেতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা সিদ্ধ নয়।
( ﻭَﺇِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﻋَﺒْﺪًﺍ ﺣَﺒَﺸِﻴًّﺎ ) যদিও আমীর হাবশী গোলাম হন’ অর্থ ﻓﺄﻃﻴﻌﻮﻩ ﻭﻻ ﺗﻨﻈﺮﻭﺍ ﺇﻟﻰ ﻧﺴﺒﻪ ﺑﻞ ﺍﺗﺒﻌﻮﻩ ﻋﻠﻰ ﺣﺴﺒﻪ তার আনুগত্য কর এবং তার বংশের প্রতি দৃষ্টিপাত করো না। বরং তার পদমর্যাদার কারণে তার অনুসরণ কর। ইমাম নববীর ‘আরবাঈন’ কিতাবে এসেছে, ﻭﺇﻥ ﺗﺄﻣﺮ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﻋﺒﺪ ﺻﺎﺭ ﺃﻣﻴﺮﺍ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﻋﺒﺪ ﺃﺩﻧﻰ ﺍﻟﺨﻠﻖ ﻓﻼ ﺗﺴﺘﻨﻜﻔﻮﺍ ﻋﻦ ﻃﺎﻋﺘﻪ অর্থ তোমাদের উপরে নিম্ন শ্রেণীর কোন লোক যদি আমীর নিযুক্ত হন, তবুও তার আনুগত্য হ’তে বিরত থেকো না।
এর কারণ হ’ল ﻣﺨﺎﻓﺔ ﺇﺛﺎﺭﺓ ﺍﻟﻔﺘﻦ ﻭﺍﻟﺤﺮﻭﺏ ﻭﺍﺻﺒﺮﻭﺍ ﺣﺘﻰ ﻳﺄﺗﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﺄﻣﺮﻩ যাতে যুদ্ধ-বিগ্রহ ও ফিৎনা-ফাসাদ ছড়িয়ে পড়ার ভয় থেকে মুক্ত থাকা যায় এবং তোমরা ধৈর্য ধারণ কর, যতক্ষণ না আল্লাহর হুকুম নেমে আসে। অবশ্য এ হুকুমটি দেওয়া হয়েছে শাসকদের প্রতি আনুগত্যের ব্যাপারে তাকীদ প্রদানের জন্য অথবা উদাহরণ পেশ করার জন্য। ক্রীতদাসকে শাসক নিয়োগে বাধ্যবাধকতার জন্য নয়।
কেননা অন্য হাদীছে এসেছে, ﺍَﻟْﺄَﺋِﻤَّﺔُ ﻣِﻦْ ﻗُﺮَﻳْﺶٍ ‘শাসক হবেন কুরায়েশগণের মধ্য হতে। যেমন হাকেম বর্ণিত হাদীছে বলা হয়েছে ﻭَﺇِﻥْ ﺃﻣَّﺮَﺕْ ﻋَﻠَﻴْﻜﻢْ ﻗُﺮَﻳْﺶٌ ﻋَﺒْﺪﺍً ﺣَﺒَﺸِﻴًّﺎ ﻣُﺠَﺪَّﻋﺎً ﻓَﺎﺳْﻤَﻌُﻮﺍ ﻟَﻪُ ﻭﺃَﻃِﻴْﻌُﻮْﺍ ‘যদি কুরায়েশ খলীফা তোমাদের উপরে কোন হাবশী নাককাটা ক্রীতদাসকেও শাসক নিয়োগ করেন, তবুও তোমরা তার কথা শোন এবং আনুগত্য কর।যেমন আজকাল প্রায় সকল দেশেই ঘটছে। যেমন জনৈক ছাহাবী প্রশ্ন করলেন, ﻳَﺎ ﻧَﺒِﻰَّ ﺍﻟﻠﻪِ ﺃَﺭَﺃَﻳْﺖَ ﺇِﻥْ ﻗَﺎﻣَﺖْ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﺃُﻣَﺮَﺍﺀُ ﻳَﺴْﺄَﻟُﻮﻧَﺎ ﺣَﻘَّﻬُﻢْ ﻭَﻳَﻤْﻨَﻌُﻮﻧَﺎ ﺣَﻘَّﻨَﺎ ﻓَﻤَﺎ ﺗَﺄْﻣُﺮُﻧَﺎ ﻓَﺄَﻋْﺮَﺽَ ﻋَﻨْﻪُ ﺛُﻢَّ ﺳَﺄَﻟَﻪُ ﻓَﺄَﻋْﺮَﺽَ ﻋَﻨْﻪُ ﺛُﻢَّ ﺳَﺄَﻟَﻪُ ﻓِﻰ ﺍﻟﺜَّﺎﻧِﻴَﺔِ ﺃَﻭْ ﻓِﻰ ﺍﻟﺜَّﺎﻟِﺜَﺔِ ﻓَﺠَﺬَﺑَﻪُ ﺍﻷَﺷْﻌَﺚُ ﺑْﻦُ ﻗَﻴْﺲٍ ﻭَﻗَﺎﻝَ : ﺍﺳْﻤَﻌُﻮﺍ ﻭَﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ ﻓَﺈِﻧَّﻤَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻣَﺎ ﺣُﻤِّﻠُﻮﺍ ﻭَﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻣَﺎ ﺣُﻤِّﻠْﺘُﻢْ ‘হে আল্লাহর নবী! যদি কোন আমীর আমাদের উপর চেপে বসেন ও আমাদের নিকট তাদের হক দাবী করেন, কিন্তু আমাদের হক প্রদান থেকে বিরত থাকেন, সে অবস্থায় আপনি আমাদের কি নির্দেশ দিচ্ছেন? জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তার কথা শোন ও মান্য কর। কেননা তাদের বোঝা তাদের বহন করতে হবে এবং তোমাদের বোঝা তোমাদের বহন করতে হবে।
ছাহেবে মিরক্বাত বলেন, সেযুগে হাবশী ক্রীতদাসের আধিক্য থাকায় উদাহরণ স্বরূপ এদের নাম নেওয়া হয়েছে। নইলে যানজীরা এদের চাইতে আরও নিকৃষ্ট শ্রেণীর লোক ছিল। কেউ বলেন, হাবশী বলতে সকল কৃষ্ণকায় ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে। তখন ব্যাপক অর্থে তা হাবশী, যানজী, হিন্দুস্তানী, তুর্কী সবাইকে শামিল করবে।
উম্মুল হুছায়েন (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, ﺇِﻥْ ﺃُﻣِّﺮَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻋَﺒْﺪٌ ﻣُﺠَﺪَّﻉٌ ﺃَﺳْﻮَﺩُ ﻳَﻘُﻮﺩُﻛُﻢْ ﺑِﻜِﺘَﺎﺏِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻓَﺎﺳْﻤَﻌُﻮﺍ ﻟَﻪُ ﻭَﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ যদি তোমাদের উপর নাককাটা কৃষ্ণকায় গোলামও আমীর নিযুক্ত হন, যিনি তোমাদেরকে আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী পরিচালিত করেন, তোমরা তার কথা শোন ও মান্য কর।
( ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻣَﻦْ ﻳَﻌِﺶْ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﺑَﻌْﺪِﻯ ) আমার পরে তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে। অর্থাৎ ﺃﻟﺰﻣﻮﺍ ﻣﺎ ﻗﻠﺖ ﻟﻜﻢ ﻓﺎﻧﻪ ﻣﻦ ﻳﻌﺶ ﻣﻨﻜﻢ ﺑﻌﺪ ﻭﻓﺎﺗﻰ ﻻ ﻣﺨﻠﺺ ﻟﻪ ﺍﻻ ﻧﺼﻴﺤﺘﻰ আমি যা বলছি তা অপরিহার্যরূপে গ্রহণ কর। কেননা আমার মৃত্যুর পরে তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে, আমার এই উপদেশ মেনে চলা ব্যতীত তাদের বাঁচার কোন পথ থাকবে না।
( ﻓَﺴَﻴَﺮَﻯ ﺍﺧْﺘِﻼَﻓًﺎ ﻛَﺜِﻴﺮًﺍ ) তখন সত্বর তারা বহু মতভেদ দেখতে পাবে। এখানে ﻓَﺴَﻴَﺮَﻯ একবচন আসলেও এর মর্ম বহু বচনের। যেমন আল্লাহ বলেন, ﻭَﻗُﻞِ ﺍﻋْﻤَﻠُﻮﺍْ ﻓَﺴَﻴَﺮَﻯ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻤَﻠَﻜُﻢْ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟُﻪُ ﻭَﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨُﻮﻥ َ আপনি বলে দিন যে, তোমরা আমল কর। কেননা সত্বর তোমাদের আমল দেখবেন আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং মুমিনগণ... (তওবাহ ৯/১০৫)।
এই মতভেদের ধরন বিভিন্ন প্রকারের হবে। যেমন প্রত্যেকেই নিজ নিজ আক্বীদা ও আমলকে সঠিক মনে করবে এবং অন্যকে বেঠিক বলবে। যেমন বিদ‘আতীরা হাদীছপন্থীদের বলে থাকে। অথবা নিকৃষ্টতর লোকেরা শাসকের চেয়ার দখল করবে।
( ﻓَﻌَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺑِﺴُﻨَّﺘِﻰ ) তখন তোমরা আমার সুন্নাতকে অাঁকড়ে ধরবে’ অর্থ ﺍﻟﺰﻣﻮﺍ ﺑﻄﺮﻳﻘﺘﻲ ﺍﻟﺜﺎﺑﺘﺔ ﻋﻨﻲ ﻭﺍﺟﺒًﺎ ﺃﻭ ﻣﻨﺪﻭﺑًﺎ ‘তখন তোমরা আমার প্রতিষ্ঠিত নীতি ও পদ্ধতি কঠোরভাবে অবলম্বন করবে, চাই তা ওয়াজিব বিষয়ে হোক বা মানদূব বিষয়ে হোক। ‘মানদূব’ হল এমন বিষয়, যা করলে নেকী আছে, কিন্তু না করলে গোনাহ নেই।
( ﻭَﺳُﻨَّﺔِ ﺍﻟْﺨُﻠَﻔَﺎﺀِ ﺍﻟﺮَّﺍﺷِﺪِﻳﻦَ ﺍﻟْﻤَﻬْﺪِﻳِّﻴﻦَ ) এবং আমার সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে অাঁকড়ে ধরবে। কেননা তাঁরা আমার সুন্নাত ব্যতীত আমল করেন না। বরং খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে রাসূল (সাঃ)-এর সুন্নাতের অনুকূলে একই অর্থবোধক সুন্নাত বুঝানো হয়েছে।
যেমন আল্লাহ বলেন, ﻗُﻞْ ﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ ﺍﻟﻠﻪَ ﻭَﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ আপনি বলুন যে, তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য কর’ (আলে ইমরান ৩/৩২)। অর্থাৎ দুই আনুগত্য মূলতঃ একই। একটি অপরটির বিপরীত নয়।
এখানে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত আমল করার তাকীদ দিয়েছেন- তার কারণ হতে পারে দুটি। (এক) এমন অনেক সুন্নাত ছিল, যা রাসূল (সাঃ)-এর জীবদ্দশায় প্রসিদ্ধি লাভ করেনি। সেটা খুলাফায়ে রাশেদীনের আমলে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।
যেমন তারাবীহর ছালাত তিনদিন জামা‘আতের সাথে আদায় করার পর ফরয হওয়ার ভয়ে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আর পড়েননি। ফলে তা জনগণের মধ্যে প্রসিদ্ধি লাভ করেনি। পরে ওমর (রাঃ)-এর খেলাফতকালে তিনি এটা পুনরায় জামাআত সহকারে চালু করেন। এবং তা সমস্ত ইসলামী জগতে প্রসিদ্ধি লাভ করে।
(দুই)- রাসূল (সাঃ)-এর কোন সুন্নাতের উপরে গবেষণা করে তার অনুকূলে কোন হুকুম বের করা। যেমন রাসূল (সাঃ)-এর তত্ত্বাবধানে লিখিত ও তারতীবকৃত কুরআনের যে মূল কপিটি খেজুর পাতার চাটাইয়ে ও পাতলা সাদা পাথরে লিখিত অবস্থায় উম্মুল মুমিনীন হযরত হাফছা (রাঃ)-এর নিকটে ছিল,
সেটাকে হযরত আবুবকর (রাঃ)-এর সময়ে পুনরায় কপি করা।অতঃপর হযরত ওছমান (রাঃ)-এর সময়ে অন্যান্য ছয়টি উপভাষায় কুরআন প্রচার নিষিদ্ধ করে এবং সব কপি জ্বালিয়ে দিয়ে কেবলমাত্র হাফছাহ (রাঃ)-এর নিকটে রক্ষিত মূল কুরায়শী ক্বিরাআতের কপিটি অনেকগুলি কপি করে সর্বত্র প্রচার করাহয়।
মোটকথা খুলাফায়ে রাশেদীন সর্বদা রাসূল (সাঃ)-এর সুন্নাতের অনুকূলে আদেশ-নিষেধ জারি করবেন শত্রুর মোকাবিলার জন্য এবং দ্বীনের শক্তি বৃদ্ধির জন্য। রাসূল (সাঃ)-এর নীতি ও পদ্ধতির বিপরীত কিছু করার অবকাশ তাঁদের নেই।
( ﺍﻟﺮَّﺍﺷِﺪِﻳﻦَ ﺍﻟْﻤَﻬْﺪِﻳِّﻴْﻦ َ) সঠিক ও সুপথপ্রাপ্ত পরপর দু’টি বিশেষণ আনার উদ্দেশ্য হল উক্ত খলীফাগণ যে হকপন্থী এবং তাঁরা যে সত্যের উপরে দৃঢ় হবেন, সে বিষয়ে তাকীদ সহকারে বলে দেওয়া। এক্ষণে খুলাফায়ে রাশেদীন কারা, সে বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর প্রসিদ্ধ হাদীছ রয়েছে, যা তাঁর অন্যতম মুজেযা হিসাবে অভিহিত।
তিনি বলেন, ﺍﻟْﺨِﻼَﻓَﺔُ ﺑَﻌْﺪِﻱ ﺛَﻼَﺛُﻮﻥَ ﺳَﻨَﺔً ﺛُﻢَّ ﺗَﺼِﻴﺮُ ﻣُﻠْﻜًﺎ ‘আমার পরে খেলাফত ত্রিশ বছর থাকবে। তারপর আসবে রাজাদের যুগ। উক্ত ত্রিশ বছর সময় আবুবকর, ওমর, ওছমান ও আলী (রাঃ)-এর খেলাফতের মাধ্যমে শেষ হয়েছে।
বিষয়: বিবিধ
১৫৩৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহর রাসুলের(সাঃ) ওফাতের পরে খিলাফত ত্রিশ বছর থাকবে বলে আল্লাহর রাসুল(সাঃ) বলে গিয়েছেন। তাহলে পরবর্তী জমানায় খিলাফত কায়েমের চেষ্টার প্রয়োজনীয়তা আছে কি?
গুরুত্বপূর্ণ লিখাটি পড়ে চোখ অস্রুসজল হয়ে উঠলো। বিদ্যমান পরিস্থিতির সাথে লিখাটির কত মিল!
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন