মানুষ সামাজিক জীব একজন সামাজিক জীবের পক্ষে কখনোই বন্ধুহীন থাকা সম্ভব নয় তাই সৎ মানুষকেই বন্ধহিসেবে গ্রহন করুন

লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ২৬ নভেম্বর, ২০১৬, ০৬:০৮:০৪ সন্ধ্যা

মানুষ সামাজিক জীব তাই মানুষ বন্ধু ছাড়া থাকতে পারে না। বন্ধু ও বন্ধুত্ব সমাজ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। মানুষ সামাজিক জীব সুতরাং একজন সামাজিক জীবের পক্ষে কখনোই বন্ধুহীন থাকা সম্ভব নয়।

এ ব্যাপারে আমাদের প্রত্যেকের সচেতন হওয়া দরকার। মানব জীবনের অন্য বিষয়বস্তুর মতো এ বিষয়টির ব্যাপারেও ইসলাম দিকনিদের্শনা দিয়েছে এবং ভালো, সৎ ও দ্বীনদ্বার বন্ধু নির্বাচন করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে।

কে হবে আপনার বন্ধু? একজন মু'মিন-মুসলমান হিসেবে বন্ধু নির্বাচন করা এবং বন্ধু হওয়ার জন্য কী কী গুণের প্রয়োজন, এসব ব্যাপারে ইসলাম আমাদের বেশ ভালো পরামর্শ দিয়েছে।

বন্ধু গ্রহণ করার কথা উল্লেখ করে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা'য়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘মুমিনরা যেন অন্য মু'মিনকে ছেড়ে কোনো কাফেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করে। যারা এমনটি করবে, আল্লাহ তাদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখবেন না।

(আলে ইমরান-২৮)

আলোচ্য আয়াতটির মধ্যে যেমন বন্ধু নির্বাচনের নীতিমালা বর্ণিত হয়েছে, তেমনি ফুটে উঠেছে কাফেরকে বন্ধু হিসেবে নির্বাচন করার ভয়াবহ পরিণামের চিত্র।

ভালো কিংবা মন্দ বন্ধু গ্রহণ করার পরিণাম বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘পৃথিবীতে যার সঙ্গে যার বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা রয়েছে, পরকালে তাদের সঙ্গেই তার হাশর-বিচার ফয়সালা হবে।

বিখ্যাত দার্শনিক ইমাম গাজ্জালি (রহঃ) বলেছেন, সবাইকে বন্ধু নির্বাচন করা যাবে না বরং তিনটি স্বভাব যার মাঝে বিদ্যমান, এমন লোককে বন্ধু নির্বাচন করতে হবে।

তিনটি গুণ হলোঃ

১। বন্ধুকে হতে হবে জ্ঞানী, বিচক্ষণ।

২। বন্ধুর চরিত্র হতে হবে সুন্দর ও মাধুর্যময়।

৩। বন্ধুকে হতে হবে নেককারও পূণ্যবান বা পূন্যবতী।

বন্ধুত্বও হতে পারে একটি ইবাদতঃ

মু'মিনের সব কাজই -ইবাদত। কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করাও একজন মু'মিনের নাজাতের উসিলা হতে পারে। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কাউকে ভালোবাসল, একমাত্র তার জন্যই কাউকে ঘৃণা করল, তারই সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কাউকে দান করল এবং তা থেকে বিরত থাকল; তবে নিঃসন্দেহে সে নিজ ঈমানকে পূর্ণতা দান করল।

(আবু দাউদ)

বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে জগদ বিখ্যাত কবি আল্লামা শেখ সাদি (রহঃ) বিখ্যাত উক্তি দিয়েছেন, ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। একজন ভালো বন্ধু যেমন মানুষের জীবনের গতি পাল্টে দিতে পারে, তেমনি একজন অসৎ বন্ধুর কারণে জীবন হয়ে যেতে পারে অন্ধকারাচ্ছন্ন ধূধূ মরুভূমি।

তাই বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইসলাম প্রদর্শিত নির্দেশ অনুসরণ করতে হবে। এতে একদিকে যেমন নানাবিধ সমস্যা ও ভোগান্তি থেকে বেঁচে থাকা যাবে, অন্যদিকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) এর পথ অনুসরণ করার সাওয়াব পাওয়া যাবে।

সত্যিকারের বন্ধু ও বন্ধুত্বঃ

হযরত আলী (রাঃ) এক কবিতায় বলেন, ‘সেই তোমার সত্যিকার বন্ধু যে তোমার সঙ্গে থাকে, তোমার কল্যাণের জন্য নিজের ক্ষতি করে। দৈব-দুর্বিপাকে পড়ে তোমার অবস্থা শোচনীয় হলে সে নিজের সুখ বির্সজন দিয়ে তোমাকে সুখ দান করে।’ তিনি আরও বলেন, বন্ধু অবশ্যই বানাও। কারণ বন্ধু দুনিয়াতেও উপকারে আসে এবং আখেরাতেও।

হযরত ইমাম জাফর সাদেক (রঃ) বলেন পাঁচ ব্যক্তির সঙ্গ (বন্ধুত্ব) অবলম্বন করো না। মিথ্যাবাদী, নির্বোধ, কৃপণ, কাপুরুষ ও ফাসেক ব্যক্তি। বন্ধুত্ব তৈরি মানুষের স্বভাবজাত প্রবণতা। তাই বন্ধুত্বের ব্যাপারে ইসলামে যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।

বন্ধু তো বানাতে হবে তাই বলে তো যাকে তাকে বন্ধু বানানো যায় না। কারণ, জীবনে বন্ধুর প্রভাব পড়ে। একজন ভালো বন্ধু একজন খারাপ মানুষকে ভালো বানাতে সহায়ক হতে পারে পক্ষান্তরে খারাপ বন্ধু একজন ভালো মানুষকে নিয়ে যেতে পারে অধঃপতনের অতল গহ্বরে।

কুরআন-হাদীসের দিক-নির্দেশনাঃ

কোরআন ও হাদীসে বন্ধু নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা রয়েছে- সূরা আত-তাওবায় আল্লাহ বলেন, আর মহান হজ্জের দিনে আল্লাহ ও তার রাসূলের পক্ষ থেকে লোকদের প্রতি ঘোষণা দেয়া হচ্ছে যে, আল্লাহ মুশরিকদের থেকে দায়িত্বমুক্ত এবং তার রাসূলও।

সুতরাং প্রতিটি মু'মিনের ওপর আবশ্যক হলো কাফের-মুশরেকদের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করা। কেননা তিনি আরও বলেন, হে মু'মিনরা! তোমরা ইয়াহুদি ও নাসারাদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা পরষ্পরে বন্ধু।

এ প্রসঙ্গে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, সৎসঙ্গ ও অসৎসঙ্গের উপমা হলোঃ মিশকের বাহক ও হাঁপড় ব্যবহারকারী কামার। একজন মিশকের বাহক হয়তো তোমাকে সুগন্ধি প্রদান করবে অথবা তার থেকে কিছু মিশক ক্রয় করবে। তুমি যদি মিশক না ও ক্রয় করো অবশ্যই সুগন্ধি লাভ করবে। একজন কামারের হাঁপড়ে হয়তো তোমার পোশাক ছিঁড়ে যাবে কিন্তু তুমি দুর্গন্ধ পাবে।

আমিরুল মু'মেনিন হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি চিন্তা ভাবনা করে যথাযথ বিচার-বিশ্লেষণ করে বন্ধু নির্বাচন করবে, তাদের বন্ধুত্ব বজায় থাকবে এবং তাদের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর হবে।

হঠাৎ করে কারো সঙ্গে পরিচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে অর্থাৎ কোনোরকম বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়া বন্ধুত্ব গড়ে উঠলে অনেক সময় দুঃখজনক পরিণতি ঘটতে পারে। বন্ধু এমন একটি সম্পর্ক যা নির্বাচন করে হয় না।

বিষয়: বিবিধ

১৯১১ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

380153
২৬ নভেম্বর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:১১
মনসুর আহামেদ লিখেছেন :


চমৎকার লেখা।
২৭ নভেম্বর ২০১৬ দুপুর ০৩:৪১
314688
কুয়েত থেকে লিখেছেন : আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদGood Luck Good Luck
380155
২৬ নভেম্বর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:২২
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : ভালো লাগলো | অনেক ধন্যবাদ |
২৭ নভেম্বর ২০১৬ দুপুর ০৩:৪৪
314689
কুয়েত থেকে লিখেছেন : ভালো লাগার জন্য আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ
380173
২৬ নভেম্বর ২০১৬ রাত ১০:১৪
সন্ধাতারা লিখেছেন : Salam. Very beautifully explained. Jajakallah
২৭ নভেম্বর ২০১৬ দুপুর ০৩:৪৭
314690
কুয়েত থেকে লিখেছেন : আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ ভালো থাকুন
380223
২৭ নভেম্বর ২০১৬ রাত ১০:৪৫
আফরা লিখেছেন : ভাল লাগল ধন্যবাদ ।
২৮ নভেম্বর ২০১৬ রাত ১২:৩৬
314705
কুয়েত থেকে লিখেছেন : আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ ভালো লাগার জন্যGood Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File