কিভাবে যাদু এবং বদনযর থেকে বেঁচে থাকবেন? এবং যাদু ও বদনযর থেকে বেচে থাকার চিকিৎসা...!
লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ২০ নভেম্বর, ২০১৬, ১০:১৮:২৭ রাত
১। আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুলঃ সকল প্রকার বালা-মুছিবত থেকে বেঁচে থাকা এবং যাবতীয় উদ্দেশ্য পূরণের জন্য সবচেয়ে বড় মাধ্যম হল আল্লাহর প্রতি ভরসা। আল্লাহ্ বলেন,
(وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلىَ اللهِ فَهُوَ حَسْبُهُ)
যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করবে, আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট হবে।(সূরা ত্বালাক- ৩)
২। আল্লাহর নির্দেশের বাস্তবায়ন ও নিষেধ থেকে দূরে থাকাঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর আদেশ নিষেধের হেফাযত করবে, সে অনুযায়ী চলবে আল্লাহ্ তাকে দ্বীন, দুনিয়া, পরিবার, সম্পদ সর্বদিক থেকে হেফাযত করবেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, তুমি আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চল আল্লাহ্ তোমাকে হেফাযত করবেন। (তিরমিযী)
৩। অধিকহারে আল্লাহর যিকির করাঃ যেমন- কুরআন তেলাওয়াত, সুবহানাল্লাহ্, আল হামদুলিল্লাহ্, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্, আল্লাহু আকবার ইত্যাদি বেশী বেশী বলা, অধিকহারে ইস্তেগফার করা, নবী (ছাঃ)এর উপর বেশী করে দরূদ পাঠ ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে বান্দা নিজেকে সুরক্ষিত করতে পারে।
নির্দিষ্টভাবে যে সকল দু’আ কালামের মাধ্যমে যাদু, বান, টোনা, বদ নযর, জ্বিন, শয়তান ইত্যাদি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, তম্মধ্যে উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নিম্নরূপঃ
(ক) নিদ্রা যাওয়ার আগে আয়াতাল কুরসী (সূরা বাক্বারার ২৫৫ নং আয়াত) পাঠ করা। যে ব্যক্তি রাতে তা পাঠ করে, তার জন্য সকাল পর্যন্ত আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন হেফাযতকারী ফেরেশতা নিয়োগ থাকে, ফলে শয়তান তার নিকটবর্তী হতে পারে না। (ছহীহ বুখারী)
(খ) সূরা বাক্বারা পাঠ করা। যে গৃহে এই সূরা পাঠ করা হয় সেখান থেকে শয়তান পলায়ন করে। (মুসলিম)
(গ) সূরা বাক্বারার শেষের দু’আয়াত পাঠ করা। যে ব্যক্তি রাতে সূরা বাক্বারার শেষের দুটি আয়াত পাঠ করবে, তার জন্য এ দুটিই যথেষ্ট হবে। অর্থাৎ- সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য যথেষ্ট হবে। (ছহীহ বুখারী)
(ঘ) সকাল-সন্ধার নির্ধারিত দু’আ সমূহ পাঠ করা। গৃহে প্রবেশ, গৃহ থেকে বের হওয়া, সোওয়ারীতে আরোহণ করা প্রভৃতি সময়ে নির্দিষ্ট দু’আ পাঠ করা।
(ঙ) শিশুদেরকে ঝাড়-ফুঁক করা। যেমন রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) হাসান ও হুসাইন (রাঃ)কে ঝাড়-ফুঁক করতেন। তিনি বলতেন,
أُعِيْذُكُماَ بِكَلِماَتِ اللهِ التاَّمَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطاَنٍ وَهاَمَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ
আল্লাহর পরিপূর্ণ বাণী সমূহের মাধ্যমে আমি তোমাদের জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করছি সকল প্রকার শয়তান থেকে, বিষধর প্রাণীর অনিষ্ট থেকে এবং সকল প্রকার বদ নযর থেকে। (বুখারী)
(চ) সূর্যাস্তের সময় শিশুদেরকে বাড়ীর বাইরে যেতে বাধা দেয়া। নবী (ছাঃ) বলেন, যখন সন্ধা হয় তখন তোমাদের শিশুদেরকে বাইরে যাওয়া থেকে বিরত রাখ। কেননা এই সময়ে শয়তানের দল বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। যখন রাতের একটি প্রহর অতিবাহিত হবে তখন (শিশুদেরকে) ছেড়ে দিতে বাধা নেই। (বুখারী ও মুসলিম)
(ছ) বাসস্থানকে ক্রুশ, মূর্তি, প্রাণীর ছবি, কুকুর থেকে পবিত্র করা। কেননা এসব বস্তু যে গৃহে থাকে সেখানে ফেরেস্তা প্রবেশ করে না। এমনিভাবে গান-বাদ্যের সরঞ্জাম থেকেও গৃহকে পবিত্র রাখা।
ইসলামে সব বিষয়ে সমধান রয়েছে আমরা সঠিক ভাবে ইসলামের উপর প্রতিষ্টা থাকতে পারলে কোন বস্তুই আমাদের ক্ষতি সাধন করতে পাবেনা।আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামের উপর টিকে থাকার তাওফিক দিন।
বিষয়: বিবিধ
১৬৯৬ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ঠিক একই বাক্যরীতি ‘কা’ সর্বনামের পরিবর্তে তিন তিনজন নবীর নাম ব্যবহার করে করা হয়েছে।
ক. আর নিশ্চয়ই ইলইয়াস রাসূলগণের একজন [وَإِنَّ إِلْيَاسَ لَمِنَ الْمُرْسَلِينَ]-৩৭:১২৩।
খ. আর নিশ্চয়ই লূত রাসূলগণের একজন [وَإِنَّ لُوطًا لَمِنَ الْمُرْسَلِينَ]-৩৭:১৩৩।
গ. আর নিশ্চয়ই ইউনুস রাসূলগণের একজন [وَإِنَّ يُونُسَ لَمِنَ الْمُرْسَلِينَ]- ৩৭:১৩৯।
তিনজন মহান নবী সম্পর্কিত এই আয়াতগুলোর মোকাবেলায় সূরা বাক্বারা এবং সূরা ইয়া-সীনের আয়াত দুটি ছিল যথার্থ ক্ষেত্র যেখানে শেষনবীর উচ্চতর মর্যাদা এভাবে ঘোষিত হতে পারতঃ-
ক. ইন্নাকা সাইয়্যিদুল মুরসালুন বা
খ. ইন্নাকা ইমামুল মুরসালুন
কিন্তু “ইমামুল আম্বিয়া”র দাবীদারদের খুশি হবার কোন সুযোগ এখানে রাখা হয় নি। সূরা সাফ্ফাতে হযরত ইলইয়াস, হযরত লূত, এবং হযরত ইউনুস সম্পর্কে যেভাবে বলা হয়েছে, আল্লাহ তাঁর শেষনবী সম্পর্কে তা থেকে আলাদা কোন বাক্যবিন্যাস করেননি।
ফেরাউনের সমক্ষে হযরত মূসার (তাঁর উপর শান্তি) জবানিতেও একই অভিব্যক্তি ফুটে ওঠেঃ এরপর আমার রব্ব আমাকে প্রজ্ঞা দান করেন এবং আমাকে রাসূলগণের একজন করেন [فَوَهَبَ لِي رَبِّي حُكْمًا وَجَعَلَنِي مِنَ الْمُرْسَلِينَ]-২৬:২১।
কুরআনে সুস্পষ্ট করে বলা হয়েছে -“আর মুহাম্মদ একজন রাসূল ছাড়া আর কিছু নয়; তাঁর পূর্বে অনেক রাসূল অতিক্রান্ত হয়েছে” [وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ]-৩:১৪৪। “মরিয়ম-তনয় মাসিহ একজন রাসূল ছাড়া আর কিছু নয়; তাঁর পূর্বে অনেক রাসূল অতিক্রান্ত হয়েছে” [مَا الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ]-৫:৭৫।
নামবাচক বিশেষ্য ‘মুহাম্মদ’ এবং ‘আল-মাসিহ ইবনে মারইয়াম’ বাদ দিলে সূরা নিসা এবং মায়িদার আয়াতদ্বয়ের বাকী অংশের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। একই বক্তব্য আল্লাহ তাঁর দু’জন প্রেরিত মহান নবী সম্পর্কে বলছেন।
সূরা নাজমে (৫৩:৫৬) বলা হয়েছেঃ হাজা নাজিরুম মিনাল নুযুরিল উলা- অতীতের সতর্ককারীদের ন্যায় এই নবীও একজন সতর্ককারী।
তুমি বলো- “আমি রাসূলগণের মধ্যে অভিনব কেউ নই, এবং আমি জানি না আমার প্রতি কি করা হবে বা তোমাদের প্রতি কি করা হবে। আমার কাছে যা প্রত্যাদিষ্ট হয়েছে তা ব্যতীত আমি কিছুই অনুসরণ করি না, আর আমি একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী ব্যতীত আর কিছুই নই।“-৪৬:৯
উপরে উদ্ধৃত আয়াতসমূহ থেকে শেষনবী অন্য সবার চেয়ে সেরা এমন কোন প্রমান কি বেরিয়ে আসে?
‘রাসূলুল্লাহ’ তাঁর সময় থেকে পুরো মানবজাতির জন্য নবী যেহেতু তারপর কোন নবীর আগমন ঘটবে না। এখান থেকে এই সর্বশ্রেষ্ঠত্ব প্রমানিত হয় না যে, তিনি সকল পূর্ববর্তী নবীগণের ইমাম বা নেতা।
এমন বিশেষায়িত বৈশিষ্ট্য অন্যান্য নবী-রাসূলগণের ক্ষেত্রেও রয়েছে। স্বয়ং মহামহিম আল্লাহ তাঁর শেষনবীকে কী কী অভিধায় অভিহিত করেছেন?
১. মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল (৪৮:২৯)।
২. তিনি ‘খুলুকিন আজীম’ বা উত্তম চরিত্রের অধিকারী (৬৮:৪); তিনি ‘রহমাতাল্লিল ‘আলামিন’ (২১:১০৭)।
৩. মুহাম্মদ কোন ব্যক্তির পিতা নন; বরং আল্লাহর রাসূল এবং শেষনবী (خَاتَمَ النَّبِيِّينَ-৩৩:৪০)।
৪. নবী সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী। আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়ক এবং উজ্জ্বল প্রদীপ (৩৩:৪৫-৪৬)।
৫. তিনি আমাদের মতই একজন মানুষ যার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, আল্লাহই একমাত্র ইলাহ (১৮:১১০; ৪১:৬)।
যত যত নামে হযরত মুহাম্মদকে (তাঁর উপর শান্তি) অভিহিত করা হয়েছে তার মধ্যে একক এবং অদ্বিতীয় উপাধি হল খাতামান নাবিয়্যিন বা শেষনবী। তাঁর নাম নিয়ে আয়াত শুরু হয়ে এই মহান পরিচয়ের কথা বলে তা শেষ হয়েছে।
আল্লাহ তাঁর এই নবীর মর্যাদা প্রসঙ্গে অন্যত্র বলেন- আমি তোমার যিকর বা স্মরণকে সমুন্নত করেছি (৯৪:৪)। এভাবে আরও যত মর্যাদায় তাঁকে অভিষিক্ত করা হয়েছে, সেগুলোই কি আমাদের জন্য উদ্ধৃত করা যথেষ্ট নয়? যা বলেন নাই, যেভাবে বলেন নাই সেটা করার এখতিয়ার আমাদের কোত্থেকে এল?
এটাও উল্লেখ করা প্রয়োজন যে আমরা ‘রাসূলুল্লাহ’র অর্থ শুধুমাত্র শেষনবীতেই সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি। কুরআনে একই পরিচয় অন্যান্য নবীগণের ক্ষেত্রেও করা হয়েছে, যেমন. হযরত মূসা, হযরত ঈসা, হযরত সালেহ (সালামুন ‘আলাল মুরসালিন)।
হযরত ইব্রাহীম (তাঁর উপর শান্তি) আল্লাহর নবী, উত্তম আদর্শ, মুসলিম জাতির পিতা ও মানবজাতির নেতা বা ইমাম। আর আল্লাহ রব্বুল আলামীন স্বয়ং তাঁকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছেন- [وَاتَّخَذَ اللَّهُ إِبْرَاهِيمَ خَلِيلًا]। কোন সৃষ্টিকে খলীল বা বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করার উদ্ধৃতি কুরআনে এই একটিই- এরচে’ বড় অর্জন একজন সৃষ্টির জন্য আর কী হতে পারে?
কিন্তু ‘ইমামুল আম্বিয়া’, সাইয়্যিদুল মুরসালুন’– এগুলো হযরত ইব্রাহীমসহ কারও জন্যই কুরআনে প্রয়োগ করা হয়নি। মূলতঃ কুরআনে সর্বশ্রেষ্ঠত্ব সংক্রান্ত কোন বিশেষায়ন কারও ক্ষেত্রে করতে দেখা যায় না।
তবে ‘সাইয়্যিদ’ পদটি কুরআনে বিদ্যমান এবং তা হযরত ইয়াহইয়ার (তাঁর উপর শান্তি) ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। আল্লাহ তাঁর এই বান্দা সম্পর্কে ঘোষণা দিচ্ছেন তিনি পরিণত বয়সে ‘নেতা’ হবেন।
কোন নবীকে অন্যদের উপর মর্যাদা দেয়া হয়েছে বলে কুরআনে তিনজন নবীর নাম আমরা পাই, ক. হযরত মূসা যার সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন; খ. হযরম ঈসার কথা বিশেষভাবে এসেছে যাকে রুহুল কুদুস দ্বারা শক্তি দান করেছেন; গ. আর হযরত দাউদকে যবুর দানের কথা বলেছেন।
শেষনবীকে প্রশ্ন করা হল, “হে আল্লাহর রাসূল, মানুষের মাঝে সবচে’ সম্মানিত ব্যক্তি কে”? তিনি বললেন- “যে তোমাদের মাঝে সবচেয়ে তাক্বওয়াবান”। নির্দিষ্ট করে জানতে চাইলে বললেন- “আল্লাহর নবী ইউসূফ যিনি নবীর পুত্র এবং আল্লাহর নবীর পৌত্র, আল্লাহর খলীলের প্রপৌত্র।”
সূরা আন’আমে (৬:৮১-৯০) আঠার জন নবী-রাসূলের নামোল্লেখ করে শেষনবীকে আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেন তাঁদের সবার এক্তেদা করতে- ফাবি হুদাহুমুক্তাদি। যিনি এক্তেদা করেন তাকে বলা হয় মুক্তাদি, আর যার বা যাদের এক্তেদা করা হয় তাদের বলা হয় ইমাম। এখানে শেষনবীর ইমাম হিসেবে উল্লেখিত নবীদেরকে বোঝানো হয়েছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন