সুন্দরবনের ক্ষতি হলেও সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা যাবে না। যারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারাও জানেন যে সুন্দরবনের পরিবেশ মারাত্তক খতিগ্রস্ত হবে।

লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ২২ আগস্ট, ২০১৬, ০৬:২২:২৯ সন্ধ্যা

বর্তমানে যে জাহাজটি সেটির দৈর্ঘ্য ১৯০ মিটার,ধারন ক্ষমতা প্রায় ৪৭ হাজার মেট্রিক টন। প্রতি মাসেই থাইল্যান্ড থেকে ধারন ক্ষমতার সমপরিমাণ সিমেন্ট ক্লিঙ্কার নিয়ে তা বাংলাদেশে আসে।কর্ণফুলী নদী দিয়ে চট্রগ্রাম বন্দরে ১৯০ মিটার বা তার চেয়ে বড় জাহাজ ঢুকতে পারে না বলে এই জাহাজটিকে সমুদ্রের ভিতরে নোঙ্গরে থেকে পুরো কার্গো ডিসচার্জ করতে হয়।

লাইটার জাহাজ(ছোট জাহাজ)এসে কার্গো ডিসচার্জ করে নিয়ে যায়। ৪৭ হাজার টনের জাহাজটিকে খালি করতে প্রায় ৪০টি লাইটার জাহাজের দরকার হয় যে লাইটার জাহাজগুলো কর্ণফুলী, বুড়িগঙ্গা, ইত্যাদি নদীতে চলাচল করে। রামপালে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে এই লাইটার গুলোই বড় জাহাজ থেকে কয়লা নামিয়ে সুন্দরবনের ভিতর দিয়েই রামপালে যাবে।

কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতি বছর কয়লা লাগবে ৪৭ লক্ষ মেট্রিক টন।অর্থাৎ যে জাহাজটির ১৯০ মিটার এরকম ১০০টি জাহাজ প্রতিবছর কয়লা নিয়ে পশুর নদীর আকরাম পয়েন্ট/ হিরণ পয়েন্ট এ গিয়ে নোঙ্গর করবে। সেখান থেকে প্রতি বছর প্রায় ৪০০০(৪০X১০০) লাইটার জাহাজ কয়লা নামিয়ে রামপালে নিয়ে ডিসচার্জ দিবে। বুঝা যাচ্ছে যে, ৪৭ লক্ষ টন কয়লা প্রতি বছর ২ বার করে ডিসচার্জ হবে।একবার আকরাম পয়েন্টে,আরেকবার রামপালে।

যারা কয়লা লোডিং/ডিসচার্জ দেখেননি তারা কল্পনাও করতে পারবেন না যে এর দ্বারা কিভাবে পানি আর বায়ু দুষিত হয়! হাজার হাজার লাইটার জাহাজ থেকে নির্গত বর্জ্য,ধোঁওয়া,তেল থেকে যেমন হবে পানি আর বায়ু দূষণ তেমনি হবে শব্দ আর আলো দূষণ।

আর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হয়ে গেলে তো কথাই নেই।সুন্দরবনের বাতাসে কার্বন-ডাই অক্সাইড, সালফার-ডাই-অক্সাইড এর মাত্রা বাড়বে কি বাড়বে না, ফ্লোরা/ফনা ধ্বংস হবে কি হবে না,নদীর মাছ আর সুন্দরবনের পশুপাখির ক্ষতি হবে কি হবে না এগুলোর ব্যাখ্যা দেয়ার দরকার পরে না।

এর পরেও অনেকেই বলছেন যে,রামপালে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে নাকি সুন্দরবনের একটি পাতারও ক্ষতি হবে না। যদিও অর্থমন্ত্রী বলেছেন যে, সুন্দরবনের ক্ষতি হলেও সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা হবে না। অর্থাৎ যারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা নিজেরাও জানেন যে সুন্দরবনের পরিবেশ মারাত্তকভাবে খতিগ্রস্ত হবে। তাহলে সব কিছু জেনে বুঝেও কেন এই আত্তঘাতি সিদ্ধান্ত...!

অনেকেই ভাবছেন যে, জেনে শুনে সুন্দরবনের পরিবেশ হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে যে চুক্তি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে সেখান থেকে মনে হয় বাংলাদেশ অনেক বেশি লাভবান হবে। তাই সুন্দরবনের পরিবেশকে ছাড় দেয়া হচ্ছে। যদি আপনিও এমনটি ভেবে থাকেন তাহলে চুক্তিটা সম্পর্কে একবার হলেও আপনার জানা দরকার।

যদি আপনার বিবেক বিক্রি হয়ে গিয়ে থাকে,যদি আপনি দল আর মতের কাছে অন্ধত্ব বরণ করে থাকেন তাহলে অনুরোধ করব অন্তত কিছু সময়ের জন্য হলেও বিবেক নিজের কাছে ফিরিয়ে এনে সুস্থ মাথায় চিন্তা করতে ।

যে- আপনার বাড়ির বিদ্যুতের সমস্যা নিরসনের জন্য বড়লোক প্রতিবেশীর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। চুক্তি অনুযায়ি আপনার বাড়ির উঠোনে ঠিক বাগানটার পাশেই কয়লা দিয়ে চালিত একটা বিদ্যুৎ কেন্দ্র হবে। প্রতিবেশীরও বিদ্যুতের দরকার আছে কিন্তু নিজের বাড়ির পরিবেশের কথা চিন্তা করে তারা আপনার বাড়িতেই কেন্দ্রটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু করতে খরচ হবে ১০০ টাকা। ১৫ টাকা দিবেন আপনি, ১৫ টাকা আপনার প্রতিবেশী আর ৭০ টাকা আপনাকে সুদে ধার নিতে হবে প্রতিবেশি থেকে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু করতে যত কয়লা লাগবে তার সবটুকুই আপনার প্রতিবেশি থেকেই কিনতে হবে যদিও আপনার প্রতিবেশি নিজেরাই কয়লা অন্য দেশ থেকে আমদানি করে।

আমরা নিজে অনেকবার ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা নিয়ে গিয়েছি আপনার প্রতিবেশির বাড়িতে। তাহলে বুঝতেই পারছেন যে,যারা নিজেরাই কিনে আনে তারা আপনার কাছে লাভ ছাড়া নিশ্চয়ই বিক্রি করবে না। অথচ আপনি নিজেই এই কয়লা কিনে আনতে পারতেন।

ব্যাপারটা অনেকটা এরকম যে,আপনার বাসা ঢাকার কাউরানবাজারে আর বাংলা মোটরেই কয়লা বিক্রি হয়। আপনি কয়লা বাংলামোটর থেকে না কিনে কিনছেন আপনার প্রতিবেশির বাড়ি ফার্মগেট থেকে যারা নিজেরাই কয়লা বাংলামোটর থেকে কিনে আনে। যাই হোক। এই কয়লা কিন্তু আপনার উঠোনের বাগান দিয়েই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নেয়া হবে।

এতসব কিছুর পরে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হলে যে লাভ হবে তার ৫০ ভাগ আপনি পাবেন আর ৫০ ভাগই নিয়ে যাবে আপনার বড়লোক প্রতিবেশি!! যদি আপনি আপনার প্রতিবেশির ভাগ থেকে কিনতে চান তাহলে চড়া দাম দিয়েই কিনে নিতে হবে। এখানেই শেষ নয়।

পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সব ধরনের ঝুঁকি আর ক্ষতির ভার আপনাকেই বহন করতে হবে। এবার ভেবে বলুন তো যে, আপনার বিবেক কি এই ধরনের চুক্তিকেও অন্ধভাবে সমর্থন দেয় !! আপনার বিবেক বুঝি এভাবেই বিক্রি হয়ে গিয়েছে !!

এর পরেও যদি মনে করেন যে, আমি এর প্রতিবাদ করতে পারব না তাহলে অন্তত নিরব থাকুন। মানুষকে ভুল বুঝাবেন না।খোঁড়া যুক্তি দেখাবেন না। আপনাদের খোঁড়া যুক্তি দেখলে ভয় হয় যে,অন্ধত্ব কিভাবে মানুষকে আচ্ছন্ন করে রাখে,গোলামীর নেশা কিভাবে মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে, কিভাবে মানুষকে বাকরুদ্ধ করে আর গোয়ার্তমির নেশা কিভাবে মানুষকে বিবেকহীন করে !!

অলাভজনক চুক্তির যেসব কাঁটা মধ্যবিত্তের এই বাংলাদেশের গলায় একের পর এক বিদ্ধ হচ্ছে এগুলো একসময় অনেক বেশি ব্যথার কারন হয়ে দাঁড়াবে, এর থেকে মুক্তি পেতে এক সময় বাংলাদেশ ছটফট করবে। আফসোস, এতে শুধু ব্যথাই বাড়বে কিন্তু মুক্তি এত সহজে মিলবে না। এটা আমি হলফ করেই বলে দিতে পারি। আপনি লিখে রাখতে পারেন।

বিষয়: বিবিধ

১৫১৩ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

376651
২২ আগস্ট ২০১৬ রাত ১১:৩৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আজকে কয়েকজন ভারতিয় বিশেষজ্ঞের মতামত পড়লাম। তারা সুস্পষ্টভাবে বললেন যে অবশ্যই ক্ষতি হবে।
২৩ আগস্ট ২০১৬ রাত ০২:১২
312276
কুয়েত থেকে লিখেছেন : অর্থমন্ত্রী বলেছেন যে সুন্দরবনের ক্ষতি হলেও সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা হবে না
২৩ আগস্ট ২০১৬ রাত ০২:১৬
312278
কুয়েত থেকে লিখেছেন : অর্থমন্ত্রী বলেছেন যে, সুন্দরবনের ক্ষতি হলেও সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা হবে না
376667
২৩ আগস্ট ২০১৬ রাত ০১:০৬
আসমানি লিখেছেন : লাভ ক্ষতি বুঝতে চাই না।
আমার বাড়িতে কেন্দ্র টি না বানিয়ে প্রতিবেশীর বাড়িতে বানাতে চাই।
২৩ আগস্ট ২০১৬ রাত ০২:১৪
312277
কুয়েত থেকে লিখেছেন : চুক্তির যেসব কাঁটা মধ্যবিত্তের এই বাংলাদেশের গলায় একের পর এক বিদ্ধ হচ্ছে এগুলো একসময় অনেক বেশি ব্যথার কারন হয়ে দাঁড়াবে
376677
২৩ আগস্ট ২০১৬ সকাল ০৯:০১
হতভাগা লিখেছেন : ভারত আমাদের স্বাধীনতা পাইয়ে দিয়েছে । নিজেদের বুক পেতে দিয়েছে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য। না হলে আমরা আজও পশ্চিম পাকিস্তানীদের সাথে যুদ্ধ করে যেতাম ।

সেই ভাররতের জন্য আমরা এই সামান্য ক্ষতিটুকুও সহ্য করতে পারবো না ? এতটা অকৃতজ্ঞ কেন হব আমরা ?
২৩ আগস্ট ২০১৬ দুপুর ০৩:৩৭
312317
কুয়েত থেকে লিখেছেন : পাকিদের সাথে আমাদের যুদ্ধের প্রয়োজন ছিলনা কারন মুজিব কাকু আরে ভুট্টো মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ওদর তোম্ এদর হাম্। ২৫শে মার্চ কালো রাতের আগেই মুজিব কাকু পাকিদের আশ্রয়ে চলে গেলেন নিজের পরিবারের দায়িত্ব দিয়ে গেলেন পাকি সৈনিকদের নিকট। আপনার হাসুবু ভালো জানেন।যুদ্ধ করেছেন বাংলার দামাল সন্তানেরা ভারত পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করেছিল যখন দেখলো বিজয় নিকটে তারা সরিক হলো লুঠকরার জন্য আমাদের স্বাধীনতা। ধন্যবাদ


২৩ আগস্ট ২০১৬ দুপুর ০৩:৪০
312319
হতভাগা লিখেছেন : মুজিব কাকুকে নিয়ে উল্টা পাল্টা কিছু বলেছেন তো ধরা খেয়েছেন

যাবৎজীবন /+ ১ কোটি টাকা জরিমানা
২৫ আগস্ট ২০১৬ রাত ০২:২২
312369
আসমানি লিখেছেন : কুয়েতি ভাই,
গুমের লিস্টে আপনার নাম ও এসে যেতে পারে!
সাবধান।
কাক্কু রে কিছুই কইয়েন না।
376685
২৩ আগস্ট ২০১৬ দুপুর ০১:১৭
নকীব আরসালান২ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ।
২৩ আগস্ট ২০১৬ দুপুর ০৩:৪০
312318
কুয়েত থেকে লিখেছেন : আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদGood Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File