ছাত্রলীগের আন্ত:কোন্দলে ৫ শতাধিক সংর্ঘষ..! সোনার ছেলেদের হাত থেকে বাঁচতে নিজের হিন্দু ধর্মীয় পরিচয় দিয়েও বিশ্বজিত রক্ষা পায়নি।
লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ১৬ আগস্ট, ২০১৬, ০৪:১০:১৮ বিকাল
ছাত্রলীগের আন্ত:কোন্দলে ৫ শতাধিক সংঘর্ষ
আক্রান্ত অবস্থায় ছাত্রলীগের অস্ত্রের আঘাত থেকে বাঁচতে নিজের ধর্মীয় পরিচয় দিয়ে বার বার কাকুতি-মিনতি করেও শেষ রক্ষা হলো না পুরান ঢাকার দোকান কর্মচারী বিশ্বজিতের।
ওই ঘটনার বিভৎসতা মিডিয়ার কল্যাণে বিশ্ববাসী জানতে পেরেছিল। ঘটনার পর দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনার মুখে অপরাধীদের গ্রেফতার করতে হয়েছে। কেউ কেউ শাস্তির আওতায়ও এসেছে। কিন্তু থামানো যায়নি ছাত্রলীগের নৃশংসতা।
প্রকাশ্যে কুপিয়ে নিজ দলের নেতাকর্মীর পিঠ এবরো-থেবরো করে দেওয়ার ঘটনা হয়েছে বরিশাল পলিটেকনিক্যালে। গুলি করে নিজ দলের নেতাকর্মী হত্যা করার রেকর্ড সৃষ্টি করেছে ছাত্রলীগ।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর দেশের প্রায় প্রতিটি আলোচিত ক্যাম্পাসে তাণ্ডবে মেতে ওঠে ছাত্রলীগ। ওই সময় নানা ঘটনায় তীব্র সমালোচনার মুখে সংগঠনটির সাংগঠনিক পদ থেকে সরে দাঁড়ান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ওই নির্বাচনের পর ক্ষমতার সাড়ে সাত বছরে বিভিন্ন সময় পাঁচ শতাধিক সংঘর্ষে জড়িয়েছে ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতীম এই সংগঠনটি। বিভিন্ন সময় কেন্দ্রীয় নেতাদের পক্ষ থেকে সতর্ক করলেও প্রকৃত জড়িতদের কার্যত শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।
আলোচিত সংঘর্ষগুলোতে জড়িতদের অনেককেই আইনের আওতায় আনা না হওয়ায় ঘটনাগুলোর ধারাবাহিকতা থেকেই গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১ আগস্ট কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জীবন হারিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা খালিদ সাইফুল্লাহ।
ছাত্রলীগ ক্ষমতার আমলে যেসব সংঘর্ষে জড়িয়েছে তার কিছু খণ্ডচিত্র বিভিন্ন সময়ে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যের আলোকে দেখা যাচ্ছে এই সংগঠনটির অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও সংঘর্ষে কমপক্ষে ৭১ জন প্রাণ হারিয়েছে।
অপর এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ১ আগস্ট পর্যন্ত গত সাড়ে সাত বছরে ছাত্রলীগ ৫শ’র বেশি সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এসব সংঘর্ষের বেশিরভাগই ঘটছে নিজেদের মধ্যে।
সংঘর্ষে জীবন হারানো ৭১ জনের মধ্যে ৫৫ জনই নিহত হন নিজেদের কোন্দলে। ২০০৯ সালে ৪ জন, ২০১০ সালে ১২, ২০১১ সালে ৫, ২০১২ সালে ৮, ২০১৩ সালে ৩, ২০১৪ সালে ৮ এবং ২০১৫ সালে ৭ জন অন্তঃকোন্দলে মারা গেছেন।
বাকিরা প্রতিপক্ষের কর্মী অথবা সাধারণ মানুষ। কুমিল্লায় মো. খালিদ সাইফুল্লাহ নিহতের আগে জুলাইয়ে আরও বেশকিছু সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গত ১৭ জুলাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অন্তত ২৩ জন বিভিন্ন ফৌজদারি মামলার আসামি স্থান পাওয়াকে কেন্দ্র করে অবরোধ ও শাটল ট্রেনে হামলা চালায় ছাত্রলীগ।
এতে দুই রেলকর্মী আহত হন। গত দেড় বছরে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ১৫ জন খুন হয়েছেন। এ বছরের ২৭ মে বরিশালে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে পলিটেকনিক ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম মারা যান।
২৯ মার্চ দুপুরে চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াসা মোড় ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম নগর কমিটির উপসম্পাদক নাসিম আহমেদ সোহেল।
এর আগে ২১ মার্চ নোয়াখালী সরকারি কলেজের পুরোনো ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নোয়াখালী সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সদস্য ফজলুল হুদা রাজিব, জেলা ছাত্রলীগের সদস্য সাইফুল ইসলাম ওয়াসিম ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ইয়াসিন মারা যান।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে ছাত্রলীগ। বিভিন্ন ঘটনার পর সংগঠনটির সংশ্লিষ্ট শাখা কার্যক্রম স্থগিত রাখা হলেও কিছুদিন পর আবার সক্রিয়া হয়ে ওঠে জড়িতরা। ফলে ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সব সময়ই আতঙ্কে থাকে।
ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের মনে করেন নিজেদের মধ্যে এমন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে তৃতীয় পক্ষ সুযোগ পাবে। অপরদিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সংঘর্ষের ঘটনাগুলোকে অন্তঃকোন্দল বলতে চান না।
তিনি মনে করেন, যেসব জায়গায় হামলা ও মারামারি হচ্ছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বহিরাগত বা সন্ত্রাসীরাই তা ঘটাচ্ছে। এ জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করা যাবে না। ওরা সোনার ছেলে বলে কথা এবং ক্ষমতাসীন দলেরই অবৈধ সরকারের বৈধ ছাত্রলীগ।
বিষয়: বিবিধ
১৫০৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন