সিয়াম তথা রোযা মানুষকে মহত গুনাবলী এবং ত্বাকওয়ার প্রশিক্ষন দেয় যা রমদান আমাদেরকে বাঁকি ১১ মাস চলতে সাহায্য করে। আসুন মহান প্রভূর আনুগত্ব জোরদার করি।

লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ০৩ জুলাই, ২০১৬, ০২:৫২:২৫ রাত

রমদান আমাদের থেকে বিদায় নিচ্ছে আমরা কি অর্জন করলাম নিজেদের গুনাহ সমুহ কি মাফ করে নিতে পেরেছি..? আসুন একটু পর্যালোচনা করি। এবং পাঁচটি বিষয়ের দিকে একটু মনোযোগ দিয়ে দেখী নিজের মধ্যে গুন গুলো অর্জিত হলো কিনা।

১. রোযা রেখে প্রচন্ড ক্ষুধা তৃষ্ণায় যতই কষ্ট পাক তবুও রোযাদার কিছুতেই পানাহার করে না। অথচ তার উপর কোনো পাহারাদার নিযুক্ত করা হয়নি। সে তার না দেখা রবের ভয়েই খায় না। এটা গায়েবে বিশ্বাসের প্রধান বিষয়। আমাদের ছোট একটা বাচ্চা পর্যন্ত জানে রোযা রাখলে দুনিয়াতে কিছু পাওয়া যায় না। এর প্রতিদান পাওয়া যাবে আখেরাতে। জাহান্নামের আযাব থেকে মুক্তি, জান্নাতের শান্তি, সর্বোপরি আল্লাহর সন্তুষ্টি । এই প্রত্যেকটি বিষয়তো গায়েবে বিশ্বাস। রমযানে আল্লাহ তা'য়ালা এমন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছেন যাতে এই গায়েবে বিশ্বাস মজবুতও দৃঢ় হয়।

২. মুত্তাকীদের দ্বিতীয় গুণ হলো সালাত বা নামায কায়েম করা। একমাত্র রমযান মাসেই এই প্রশিক্ষণটি পরিপূর্ণভাবে হয়। তাইতো দেখা যায় সারা বছর নামায না পড়লেও এ মাস থেকে অনেকে নামায পড়তে শুরু করে। শুধু ফরয নামাযই নয় সুন্নত ও নফল নামাযও বান্দা তখন আগ্রহের সাথে পড়ে। আল্লাহ তায়ালাকে তখন সে খুব কাছে মনে করে। সারাদিন রোযার ক্লান্তির পর রাতে দীর্ঘতম তারাবীহর নামাযেও সে শৈথিল্য করে না।

মুসলমানগণ তাদের যাপিত জীবনে সর্বত্র আল্লাহর হুকুম পালন করতে প্রস্তুত কিনা এর পরীক্ষা নেয়ার জন্যেই আল্লাহ পাক তাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করেনা তাদের মুসলমান বলে দাবী করার কোনো অবকাশ নেই। সে যদি বলে আমি আল্লাহ এবং রাসূল (সাঃ) কে বিশ্বাস করি তা একেবারেই অর্থহীন। এ জন্যেই আল্লাহ পাক বলেন “নিশ্চয়ই নামায বড় কঠিন কাজ, তবে তাদের জন্যে নয় যারা তাদের রবকে ভয় করে। (সূরা বাকারা ৪৫)

৩. দানের প্রশিক্ষণ: বান্দা জানে রমযানের কর্মসূচীর মধ্যে একটি প্রধান কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে খরচ করা। আরও জানে অন্য মাসের দানের চেয়ে এ মাসের দানে সত্তর থেকে সাত শত গুণ বেশি সওয়াব। তাইতো সে এ মাসে দাতা হয়ে যায়। ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করে। রোযাদারকে ইফতার করায়, বস্ত্রহীনকে বস্ত্র, দরিদ্রকে অর্থদান করে। ইয়াতিম মিসকিনের খোঁজ খবর নেয়। মাহে রমযানে আল্লাহর বান্দা যেনো গরীবের বন্ধু হয়ে যায়। প্রতিবেশীর হক আদায় করে, তাদের বাড়িতে ইফতারি পাঠায়। এই মাসেই মালদার ব্যক্তি যাকাত আদায় করে। ফেতরা আদায় করে। প্রতিদানে তারা সুনাম সুখ্যাতিও চায় না। আল্লাহর ঘোষণা মতে-তারা বলে আমরা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যেই তোমাদের খাবার দিয়েছি। তোমাদের কাছ থেকে কোনো প্রতিদান বা কোনো কৃতজ্ঞতা কামনা করিনা। (সূরা দাহর: ৯)

৪.আল্লাহর কিতাব অনুশীলনের প্রশিক্ষণ : পূর্ববর্তী কিতাবের উপর বিশ্বাস মানে পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব গুলো আল্লাহর তরফ থেকেই নাযিল করা হয়েছে এ কথা আমরা বিশ্বাস করি। কিন্তু বর্তমানে আমাদের হেদায়েতের জন্যে আল কুরআনই একমাত্র গ্রন্থ যা আমাদের পড়তে হবে, জানতে হবে এবং সেই অনুযায়ী জীবনকে ঢেলে সাজাতে হবে। এই কিতাবের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী নিজেকে, পরিবারকে,সমাজ ও রাষ্ট্রকে গড়ে তুলতে হবে। এই মাস আল-কুরআন নাযিলের মাস। এই মাসে বেশি বেশি কুরআন অনুশীলন করতে হবে। পরিপূর্ণভাবে কুরআন বুঝতে হবে। তাহলে তার আমল আখ্লাক কুরআনের আলোকে গড়ে উঠবে এবং ঘরে ঘরে ভালো মানুষ তৈরী হবে।

৫.আখেরাতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসের প্রশিক্ষণ : আখেরাতের উপর দৃঢ় বিশ্বাস না থাকলে কুরআনের কোনো নির্দেশই পালন করা যায় না। বান্দার যদি দৃঢ় বিশ্বাস থাকে দুনিয়ার এই জান ও মালের পরিবর্তে আখেরাতে আমি জান্নাত পাবো তাহলেই সে এই পার্থিব জান ও মাল আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক তুচ্ছ জ্ঞান করতে পারে। অকাতরে আল্লাহর রাহে বিলিয়ে দিতে পারে। কিন্তু বিশ্বাসে সামান্যতম ত্রুটি থাকলেতো তা আর সম্ভব নয়।

এই দৃঢ় বিশ্বাসের কারণেই বান্দা সর্ব প্রকারের নাফরমানিমূলক কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখে। মিথ্যা কথা, ফাহেশা কাজ, গীবত, চোগলখোরী, অশ্লীল কথা, কারো জিনিষ না বলে নেয়া, কাউকে অনর্থক গালি দেয়া, কষ্ট দেয়া, ঝগড়া করা, ওজনে কম দেয়া ইত্যাদি সর্ব প্রকারের পাপ কাজ থেকে নিজেকে স্বযত্নে দূরে রাখে। কারণ তাকে দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে- যে ব্যক্তি রমযানের একমাস সিয়াম পালন করল সে যেন নিষ্পাপ হয়ে গেলো।

আবার বলা হলো- কিছু রোযাদার আছে যারা না খেয়ে থাকার কষ্ট ছাড়া আর কিছুই পাবেনা। আরও বলা হচ্ছে- যে রমযানের রোযা রাখলো অথচ নিজেকে নিষ্পাপ করতে পারলো না তার উপর আল্লাহর লা'নত।

কি কি কারণে রোযা কবুল হবেনা তা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন রাসূল (সাঃ) বলেছেন- যে মিথ্যা কথা আর মন্দ কাজ ছাড়তে পারলো না তার রোযায় আল্লাহর কোনো দরকার নেই।

রোযার সময় কেউ যদি ঝগড়া করতে চায় তাকে বলে দাও আমি রোযা আছি। অর্থাৎ রোযাদারকে কেউ খেতে বললে সে যেমন খেতে অস্বীকার করে ঠিক ঝগড়া ফাসাদকেও রোযা রেখে তেমনি এড়িয়ে চলবে এটাই রমযানের শিক্ষা।

আল-কুরআনে নির্দেশিত সকল আদেশ এবং উপদেশ অনুযায়ী পথ চলবে, কথা বলবে। নিজেদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সর্বদিকের সর্বপ্রকার সমস্যার সমাধান নেবে আল-কুরআন থেকে। তাইতো এই কুরআন নাযিলের মাসে বেশি বেশি করে কুরআন পড়তে বলেছেন মহান আল্লাহ বারী তা'য়ালা এবং কুরআন থেকে যে শিক্ষা সে পাবে তার প্রতি রাখতে বলেছেন দৃঢ় বিশ্বাস।

উপরে বর্ণিত এই পাঁচটি গুণ যার মধ্যে আছে তার নাম মুত্তাকী। এই মুত্তাকীকেই বলে ভালো মানুষ। আল্লাহপাক আমাদের উপর এই মাহে রমযানে একমাস ব্যাপী একটা ট্রেনিং সেন্টারের ব্যবস্থা করেছেন প্রতিবছর।

প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় এই ট্রেনিং সেন্টার। আর এই ট্রেনিং সেন্টারে যা কিছু কর্মসূচী আল্লাহ তায়ালা গ্রহণ করেছেন তা সব হলো ভালো মানুষ তৈরির কর্মসূচী। এই কর্মসূচী অনুযায়ী যদি নিজেদের জীবনকে পরিচালিত করতে পারি, চরিত্রে ত্রুটি বিচ্যুতি থাকলে সংশোধন করে নিতে পারি, তওবা করে ফিরে আসতে পারি আল্লাহর পথে, তাহলেই সফলতা-দুনিয়ায় শান্তি আর আখেরাতের মুক্তি।

জীবন থেকে অনেক মাহে রমযান চলে গেছে। আল্লাহ তায়ালার দেওয়া কর্মসূচী সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারিনি। আসুন এই মাহে রমযানের শেষের দিকে ওয়াদাবদ্ধ হই, সচেষ্ট হই, আল্লাহর কাছে তৌফিক চাই। হে আল্লাহ আমাকে এবং আমাদের সকলকে পরিপূর্ন ত্বাকওয়াদার বান্দাহ হিসেবেই কবুল করুন এবং ত্বাকওয়াদার হওয়ার তৌফিক দাও।।

বিষয়: বিবিধ

১৪৭৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

373799
০৩ জুলাই ২০১৬ রাত ০৩:৪৪
মামুন আব্দুল্লাহ লিখেছেন : আল্লাহ তায়ালা আমাদের রোজাগুলো কবুল করুন ! এবারের রোজাগুলো খুব দ্রুত চলে গেলো । সকলকে অগ্রীম ঈদ মোবারক ! আল্লাহ সবাইকে ভালো রাখুন !
০৩ জুলাই ২০১৬ সকাল ০৫:১২
310190
কুয়েত থেকে লিখেছেন : আল্লাহ আপনাকেও ভালো রাখুন। মূল্যবান সময় দ্রুতই চলে যায় যতবেশী এবাদত করা যায় এতেই কল্যাণ। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ
373815
০৩ জুলাই ২০১৬ সকাল ১০:১৭
হতভাগা লিখেছেন : রোজার সময় খায় দিনে
ঈদের ফূর্তি তারাই কিনে

একজন প্রকৃত রোজাদারের মনে ঈদের সময় ফেলে আসা রোজার দিন গুলোর কথা মনে পড়ে । ভাল সময় আসলেই খুব দ্রুত পার হয়ে যায় ।

এবারের রোজায় দেখেছি ফুটপাতে আখের সরবত বিক্রি করতে এবং তা নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে পান করছে । বয়ষ্ক লোকেরা সিগারেট খাচ্ছে । শপিং মলগুলোতে ফুড কোর্ট ওপেন থাকতে ।
০৩ জুলাই ২০১৬ দুপুর ০১:১৭
310205
কুয়েত থেকে লিখেছেন : উত্তম ও ভালো কল্যাণময় সময় খুব দ্রুতই পার হয়ে যায়। সারা দিন প্রায় ১৬ ঘন্টা ফরজ রোযা আধায় করে হালাল ইফতার দিয়ে। সাথে সাথেই হারাম সিগারেট দিয়ে হালাল রোযাকে ম্লান করেদেয়। রোযাদারের উচিৎ এই বদঅভ্বাস ত্যাগ করা। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ

373833
০৩ জুলাই ২০১৬ বিকাল ০৪:১৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০৪ জুলাই ২০১৬ রাত ০৩:৪১
310270
কুয়েত থেকে লিখেছেন : আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File