সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজীব প্রতিটি মুসলমানের উপর ঈদুল ফিতরের দিন দেয়া সদকাকেই সদকাতুল ফিতর বলা হয়। একে যাকাতুল ফিতর বা ফেতরাও বলা হয়ে থাকে।
লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ২৯ জুন, ২০১৬, ০৬:১৯:০৫ সকাল
সদকাতুল ফিতর অর্থ ফিতরের দিনের সদকা। ফিতর বলতে ঈদুল ফিতর বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, ঈদুল ফিতরের দিন দেয়া সদকাকেই সদকাতুল ফিতর বলা হয়। একে যাকাতুল ফিতর বা ফেতরাও বলা হয়ে থাকে।
বিধান : সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজীব।
যে কারণে ওয়াজীব : হাদীসে আছে,
فرض رسول الله صلى الله عليه وسلم صدقة الفطر ، صاعا من شعير أو صاعا من تمر ، على الصغير والكبير ، والحر والمملوك
ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) সদকাতুল ফিতর আবশ্যক করেছেন। এর পরিমাণ হলো, এক সা যব বা এক সা খেজুর। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সবার ওপরই এটা আবশ্যক। (বুখারী : ১৫১২)
কার ওপর ওয়াজীব : প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিম ব্যক্তির ওপর সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজীব।
‘সামর্থ্যবান’ শব্দের ব্যাখ্যা হলো, প্রয়োজনিতিরিক্ত (ব্যবহৃত, ঋণ ইত্যাদি) যাকাতের নেসাব পরিমাণ সম্পদের (৫২.৫ ভরি রূপা) মালিক হওয়া। তবে যাকাতের ন্যায় এক্ষেত্রে এক বৎসর অতিক্রান্ত হওয়া জরুরী নয়। অতএব কেউ যদি ঈদের আগের দিনও এই পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, তাকেও তা আদায় করতে হবে।
সামর্থ্যবান না হলে সদকাতুল ফিতর ওয়াজীব হবে না। রাসূল (সাঃ) বলেছেন,
خير الصدقة ما كان عن ظهر غن
সর্বোত্তম সদকা সেটাই, যেটা সামর্থ্যবান কেউ আদায় করে। (বুখারী : ১৩৬০)
অতএব পুরুষ, নারী সবার ওপরই এই সদকা ওয়াজীব।
কার পক্ষ থেকে আদায় করা ওয়াজীব : নিজের পক্ষ থেকে এবং নিজের অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান বা অবিবাহিত মেয়ের পক্ষ থেকে আদায় করা ওয়াজীব। সন্তানের নামে সম্পদ থাকলে সেখান থেকে আদায় করা যাবে। প্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানের পক্ষ থেকে আদায় করা ওয়াজীব নয়।
কোনো এতিম শিশুর ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়ে থাকলে তার পক্ষ থেকেও আদায় করতে হবে।
কখন ওয়াজীব হয় : সদকাতুল ফিতর ঈদুল ফিতরের ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওয়াজীব হয়। কাজেই সেদিন ভোরের আগে যে জন্ম নিয়েছে, বা এই পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছে, তাকেও এই সদকা আদায় করতে হবে।
কেউ যদি সেদিন ভোরের আগে মারা যায়, তার ওপর সদকা ওয়াজীব হবে না। আবার ভোর হবার পর কেউ জন্ম নিলে তার পক্ষ থেকেও সদকা আদায় করা ওয়াজীব হবে না।
কখন আদায় করতে হয় : ঈদুল ফিতরের দিন সকালে ঈদের নামায পড়তে যাওয়ার আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করা উত্তম। তবে যাকাতের ন্যায় সেই সময়ের আগেও আদায় করা যেতে পারে।
আবার কোনো কারণে সময় মতো আদায় করতে না পারলে পরেও আদায় করা যাবে। কেউ আদায় না করে মৃত্যুবরণ করলে তার পক্ষ থেকে তার উত্তরাধিকারী আদায় করে দিলেও আদায় হয়ে যাবে।
সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ :
প্রথমে তিনটা হাদীস উল্লেখ করি।
১.
فرض رسول الله صلى الله عليه وسلم صدقة الفطر ، صاعا من شعير أو صاعا من تمر ، على الصغير والكبير ، والحر والمملوك
ইবনে ওমর রা. বলেন, রাসূল স. সদকাতুল ফিতর আবশ্যক করেছেন। এর পরিমাণ হলো, এক সা যব বা এক সা খেজুর। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সবার ওপরই এটা আবশ্যক। (বুখারী : ১৫১২)
২.
كنا نخرج زكاة الفطر ، صاعا من طعام ، أو صاعا من شعير ، أو صاعا من تمر ، أو صاعا من أقط ، أو صاعا من زبيب
আমরা সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম এক সা খাদ্য দ্রব্য দিয়ে। তা এক সা যাব, এক সা খেজুর, এক সা পনীর বা এক সা কিসমিস দিয়ে হত। (বুখারী : ১৫০৬)
৩.
خطب ابن عباس رحمه الله في آخر رمضان على منبر البصرة فقال أخرجوا صدقة صومكم فكأن الناس لم يعلموا فقال من هاهنا من أهل المدينة قوموا إلى إخوانكم فعلموهم فإنهم لا يعلمون فرض رسول الله صلى الله عليه وسلم هذه الصدقة صاعا من تمر أو شعير أو نصف صاع من قمح على كل حر أو مملوك ذكر أو أنثى صغير أو كبير
ইবনে আব্বাস রা. একবার রমজানের শেষ দিকে বসরায় খুতবা প্রদান করেন। সেখানে তিনি বলেন, তোমাদের রোজার সদকা আদায় করো। লোকেরা যেন ব্যাপারটা বুঝতে পারে নি। তখন ইবনে আব্বাস রা. বললেন, এখানে মদীনার কে আছে দাঁড়াও। তোমাদের ভাইদেরকে বলো, তারা তো জানে না। বলো যে, রাসূল সা. এই সদকা আবশ্যক করেছেন। এক সা খেজুর বা যব অথবা আধা সা গম প্রত্যেক স্বাধীন-দাস, পুরুষ-নারী, ছোট-বড় সবার ওপর ওয়াজীব। (আবু দাউদ : ১৬২২)
উপরোক্ত হাদীস তিনটির ভাষ্য অনুযায়ী নিম্নের শস্যগুলো দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করা যায়। নাম ও পরিমাণ নিম্নে দেয়া হলো :
যব :এক সা
খেজুর : এক সা
কিসমিস : এক সা
পনির : এক সা
গম : আধা সা (যা তিন নং হাদীস থেকে বোঝা যায়)
এই পাঁচ প্রকার শস্যের কথা হাদীসে এসেছে। এই পাঁচ প্রকার শস্য সরাসরি দিলেও হবে, আবার এসবের মূল্য দিলেও হবে। তবে অন্য কোনো শস্য দিতে চাইলে এই পাঁচ প্রকারের কোনো এক প্রকারের মূল্য হিসাব করে দিতে হবে।
এই সদকা দেয়ার উদ্দেশ্য হলো ঈদের দিন গরীবের প্রয়োজন পূরণ করা, যেন তাকে কোথাও চাইতে না হয়। কাজেই সামর্থ্যানুযায়ী বেশি মূল্যটা পরিশোধ করাই উত্তম হবে।
সা –এর বর্তমান পরিমাপ :
১ সা = ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম
.:. ১/২ সা = এক কেজি ৬৫০ গ্রাম
কাজেই যব, খেজুর, কিসমিস বা পনীর হিসাব করে দিলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর মূল্য দেয়া যাবে। আর গম হিসাবে দিলে এক কেজি ৬৫০ গ্রাম বা এর মূল্য দেয়া যাবে।
কাকে আদায় করা যাবে : যার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ৫২.৫ ভরি রূপা পরিমাণ সম্পদ নেই, তাকেই এই সদকা দেয়া যাবে।
পরিবারের কয়েক জনের সদকা মিলিয়ে একজন গরীবকে একসঙ্গে দেয়া যেতে পারে।
বিষয়: বিবিধ
১৫৫২ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কেমনে কি ?
কথিত বন্দুকযুদ্ধের মত ছেলেখেলা সব কিছু নয়,এমনটা পুলিশের বোঝা উচিত।বন্দুকযুদ্ধ এক পক্ষীয় সাজানো,তাই পুলিশ কখনোই আহত হয় না,কিন্তু এটা সন্ত্রাসী কাজ,এটা বোঝা উচিত ছিল।
এদের মৃত্যু যতটা না বিচলিত করেছে তারচেয়ে ভয়ঙ্কর হল নতুন প্রেক্ষাপট সৃষ্টির স্পেইস নিয়ে।২ জনের মৃত্যুর মাধ্যমে সাধারণ আরও হাজার হাজার মানুষের উপর যে অত্যাচারের ষ্টীমরোলার চলবে তা হবে আরও লোহমর্ষক এবং সেটাই সবচেয়ে উদ্বেগ ও কষ্টের বিষয়।
বহির্বিশ্ব বিশেষ করে ভারত আর আমেরিকা ইতিমধ্যে জায়গা চাচ্ছে যা আধিপত্যবাদিদের চিরায়ত সিস্টেম এবং যদি তা সত্যি প্রস্তাব আকারে চলে আসে তবে কোল দিয়ে দেয়া সরকার সেটাও দিতে বাধ্য থাকবে যা আরেকটি ইরাক অথবা আফগানিস্তান তৈরি করবে এবং সেই কুরুক্ষেত্রের জ্বালানী কিন্তু আমরা সাধারণ জনগণই হব।
একাত্তর টিভি নারায়ে তাকবীর আবিষ্কার করে ফেলেছে,ভারত ইন এডভান্স খবর দিয়েছে অনেক দূর থেকে,আমারিকাকে আইএসআইএস ইতিমধ্যে কনফার্ম করেছে তাদের কাজের অগ্রগতি।সব যদি তাদের হাতেই থাকে তবে পিছনের কুশীলব কারা?
উদ্ধাকৃত কেউ কেউ বলেছে জিম্মিকারিদের হিন্দি এবং ইংলিশ বলতে শোনা গেছে,যদি তাই হয় তবে একাত্তর টিভির প্রত্যক্ষদর্শী কারা?
জঙ্গিদের উদ্যেশ্য কি ছিল?নাকি স্ক্রিপ্ট রেডি হয় নি এখনো?সবাই কোন ম্যাসেজ বা আস্কিং ছাড়া আসলো,খেললো আর মারা গেলো-এটা খুব বেশী সাদামাটা নাটক নয়তো নাকি দক্ষতা অদক্ষতার প্রথম সাময়িক এসিড টেস্ট এর মাধ্যমে বার্ষিক পরীক্ষার আগমনী বার্তা?
উদ্ধার অভিযানে সরকারী ভূমিকা বা পুলিশের শারীরিক বা কর্মকাণ্ডের ভাষা কোনটাই সিরিয়াস ছিল বলে পরিলক্ষিত হয় নি এমনকি এ ধরনের উদ্ধার কার্জে যে ড্রেসআপ বা ব্যাকআপ দরকার সে ধরনের কোন প্রস্তুতিও দেখা যায় নি,এটা কি ইচ্ছাকৃত নাকি কিংকর্তব্যবিমুড় হয়ে যাওয়া?
দুঃখজনক ঘটনায় চরম ঘৃণা আসলেও প্রধামন্ত্রির বক্তৃতার একটি অংশকে কোট না করলেই নয় "নামাজ পরে এমন ভাবে জিঘাংসা মূলক হত্যাকাণ্ড করতে পারে?যা দেখে গা শিউরে উঠে"
প্রথমত নামাজ পরে এ খবর আপনাকে কে দিয়েছে?দ্বিতীয়ত আপনিও তো ফরজ নামাজ শুধু না তাহাজ্জুদও পড়েন,তারপরেও ২০০৬ সালের ২৮ শে অক্টবার লগি বৈঠার মাধ্যমে যে চরম অবমাননামূলক হত্যাকাণ্ড করেছিলেন সেটা কিভাবে পেরেছিলেন এবং আজ পর্যন্ত সে জন্য কি নুন্যতম কোন ক্ষমা প্রার্থনা পর্যন্ত করেছেন?
তবুও জাতীয় সঙ্কটে বিভেদ নয় দেশকে ভালোবেসে এক হয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চাই কিন্তু শঙ্কার বিষয় হল ক্ষমতাশীলরা যদি টেবিলের নিচ দিয়ে পর্দার আড়ালে দেশের কর্তিত্বভার অন্যের হাতে সমর্পণ করে দিয়ে থাকে তবে ঐক্যবদ্ধতার আহবান বা প্রত্যাশা চটকদার কথা বই আর কিছু নয়।
গুলশান হলি অার্টিজান----
সফল ''অপারেশন থান্ডার বোল্ট''
তবুও ভাবতে গেলেই হার্টে শুরু হয় কম্পন !
গুলশান মানেই কূটনৈতিক মহল্যা,
যদি এখানেই মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে নিরাপত্তা,তবে কোথায় মাথাগুজবে নীরহ জনতা ?
এই স্বাধীন দেশে
একজন বাঙালী জিম্মি হওয়া মানেই
তামাম বাঙালীর অস্তিত্ব জিম্মি !
একজন বিদেশী অতিথী জিম্মি মানেই
স্বাধীন মানচিত্রের পুরো সন্মানটাই জিম্মি !
দেশ জুড়ে পদে পদে নিরাপত্তা বাহিনী,
তবুও হতবাক ! সাত জন অস্ত্রধারী-
দশ ঘন্টায় কাঁপিয়ে তুলল সারা পৃথিবী !
কথিত বন্দুক যুদ্ধে ক্রসফায়ারে-
অাহত সন্ত্রাসীদের মুখ দেখি,
স্বগর্বে উচ্চারিত হয় জঙ্গি মুক্ত মাতৃভূমি;
অাজ কোথায় রাখব এই লজ্জা ?
অাজ প্রত্যেকটি নিঃশ্বাসে নাগরিক জীবন হুমকির মুখে,
প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হই নিজেদের দ্বারাই !
অাজ বিশ্বাস হারিয়ে গেছে-
সত্য-অসত্যের সংমিশ্রণে,
শত-রহস্যে, শুধু ঘুরপাক খায় হাজারো প্রশ্ন ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন