রমাদ্বান উপলক্ষ্যে ব্লগ আয়োজনের ৩য় পর্বে নবীয়ে করিম(সাঃ) এর হাদিস বেহেশতের ৮টি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে ১টি দরজার নাম রাইয়ান। রোজাদার ব্যতিত আর কেউ ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।

লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ১৫ জুন, ২০১৬, ০২:২০:২০ দুপুর

২য় হিজরীর শাবান মাসে মদীনায় রোজা ফরজ সংক্রান্ত আয়াত নাজিল হয় æহে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হলো যেভাবে তা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা সংযমী হও”।

(সূরা বাকারা, আয়াত-১৮৩)।

সূরা বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা আরও বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সেই মাসকে পায় সে যেন রোজা রাখে”।

পবিত্র রমজানের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে হাদিসের কিতাবগুলোতে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এর ভেতর থেকে কিছু হাদিস এখানে উল্লেখ করা হলো।

প্রিয় নবীজি (সা.) এর প্রিয় সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেছেন, রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, যখন রমজান মাস আসে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। (বুখারী, মুসলিম)

অপর হাদিসে এসেছে, হযরত সাহ্ল ইবনে সা’দ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (সা.) এরশাদ করেছেন, বেহেশতের ৮টি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে ১টি দরজার নাম রাইয়ান। রোজাদার ব্যতিত আর কেউ ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী, মুসলিম)

বিখ্যাত হাদিস বিশারদ সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, হুজুর (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রোজা রাখবে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমযান মাসের রাতে এবাদত করে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে কদরের রাতে ইবাদত করে কাটাবে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারী, মুসলিম)

হাদিসে আরো এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন, রোজা ছাড়া আদম সন্তানের প্রত্যেকটি কাজই তার নিজের জন্য। তবে রোজা আমার জন্য। আমি নিজেই এর পুরস্কার দেব।

রোজা (জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচার জন্য) ঢাল স্বরুপ। তোমাদের কেউ রোজা রেখে অশ্লীল কথাবার্তায় ও ঝগড়া বিবাদে যেন লিপ্ত না হয়। কেউ তার সঙ্গে গালমন্দ বা ঝগড়া বিবাদ করলে শুধু বলবে, আমি রোজাদার।

সেই মহান সত্তার কসম যার করতলগত মুহাম্মদের জীবন, আল্লাহর কাছে রোজাদারের মুখের গন্ধ কস্তুরীর সুঘ্রানের চেয়েও উওম। রোজাদারের খুশির বিষয় ২টি- যখন সে ইফতার করে তখন একবার খুশির কারণ হয়। আর একবার যখন সে তার রবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রোজার বিনিময় লাভ করবে তখন খুশির কারণ হবে। (বুখারী)।

অপর একটি হাদিস হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, রাসুলে পাক (সা.) বলেছেন, রোজা এবং কোরআন (কেয়ামতের দিন) আল্লাহর কাছে বান্দার জন্য সুপারিশ করবে।

রোজা বলবে, হে পরওয়ারদিগার! আমি তাকে (রমজানের) দিনে পানাহার ও প্রবৃত্তি থেকে বাধা দিয়েছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতের বেলায় নিদ্রা হতে বাধা দিয়েছি। সুতরাং আমার সুপারিশ তার ব্যাপারে কবুল করুন। অতএব, উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে (এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে)। (বায়হাকী)

হাদিস শরীফে আরো এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন রমজানের প্রথম রাত আসে শয়তান ও অবাধ্য জিনদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়। দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। অতপর এর কোনো দরজাই খোলা হয় না।

বেহেশতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। অতপর এর কোনো দরজাই বন্ধ করা হয় না। এ মাসে এক আহ্বানকারী আহ্বান করতে থাকে, হে ভালোর অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে মন্দের অন্বেষণকারী! থামো।

আল্লাহ তায়ালা এ মাসে বহু ব্যক্তিকে দোযখ থেকে মুক্তি দেন। আর এটা এ মাসের প্রতি রাতেই হয়ে থাকে। (তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ)।

হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, যখন রমজান মাস উপস্থিত হতো রাসুল (সা.) সমস্ত কয়েদিকে মুক্তি দিতেন এবং প্রত্যেক প্রার্থনাকারীকে দান করতেন। (বায়হাকী)

নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, কেউ যদি (রোজা রেখেও) মিথ্যা কথা বলা ও খারাপ কাজ পরিত্যাগ না করে তবে তার শুধু পানাহার ত্যাগ করা (অর্থাৎ উপবাস ও তৃষ্ণার্ত থাকা) আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। (বুখারী)

পবিত্র রমজান মাস মহান আল্লাহর সঙ্গে প্রিয় বান্দার প্রেম বিনিময়ের সবচেয়ে উত্তম সময়। এই মাসে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে। তাই এ মাসের ফজিলত ও মর্যাদা বেড়ে গেছে আরো বহুগুণ। রমজানের ফজিলত নিয়ে আরো অনেক হাদিস বিভিন্ন সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে।

প্রিয় নবীর প্রিয় সাহাবী হযরত আবু ওবায়দা (রা.) রমজানের গুরুত্ব সম্পর্কে আরেকটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, হুজুর (সা.) এরশাদ করেছেন, রোজা মানুষের জন্য ঢালস্বরুপ যতক্ষণ পর্যন্ত তা ফেড়ে না ফেলা হয় (অর্থাৎ রোজা মানুষের জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হবে যতক্ষণ পর্যন্ত তা নিয়ম অনুযায়ী পালন করা হয়)। (ইবনে মাজাহ, নাসাঈ)

সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে এ সম্পর্কে আরেকটি বর্ণনা এসেছে। তিনি বলেছেন, হুজুর (সা.) এরশাদ করেছেন, অনেক রোজাদার ব্যক্তি এমন রয়েছে যাদের রোজার বিনিময়ে অনাহারে থাকা ব্যতিত আর কিছুই লাভ হয় না। আবার অনেক রাত জাগরণকারী এমন রয়েছে যাদের রাত জাগার কষ্ট ছাড়া আর কিছুই লাভ হয় না। (নেক আমল যদি এখলাস ও আন্তরিকতার সঙ্গে না হয়ে লোক দেখানোর উদ্দেশে হয় তাহলে এর বিনিময়ে কোনো সওয়াব পাওয়া যায় না)। (ইবনে মাজাহ, নাসাঈ)

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) আরো বলেছেন, নবী করীম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে শরীয়ত সম্মত কোনো কারণ ছাড়া রমজানের একটি রোজাও ভাঙে সে রমজানের বাইরে সারাজীবন রোজা রাখলেও এর বদলা হবে না। (তিরমিযী, আবু দাউদ) রমজানের ফজিলত সম্পর্কে বিখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, নবী করীম (সা.) বলেছেন, রমজানের জন্য বেহেশত সাজানো হয় বছরের প্রথম থেকে পরবর্তী বছর পর্যন্ত। তিনি বলেন, যখন রমজান মাসের প্রথম দিন উপস্থিত হয় বেহেশতের গাছের পাতা হতে আরশের নিচে বড় বড় চোখ বিশিষ্ট হুরদের প্রতি বিশেষ হাওয়া প্রবাহিত হয়। তখন তারা বলে, হে পালনকর্তা! আপনার বান্দাদের মধ্য হতে আমাদের জন্য এমন স্বামী নির্দিষ্ট করুন যাদের দেখে আমাদের চোখ জুড়াবে এবং আমাদের দেখে তাদের চোখ জুড়াবে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে পবিত্র রমজানের ফজিলত জেনে বেশি বেশি নেক আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন

বিষয়: বিবিধ

১৯১৯ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

372049
১৫ জুন ২০১৬ দুপুর ০৩:৫২
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ খাইরান। আল্লাহ সুবহানাতায়ালা আমাদের রামাদান এর হক যথাযথভাবে আদায় করার তাওফীক দিন। বেশি বেশি নেক আমল ও রমজানের শিক্ষাকে সর্বদা কাজে লাগানোর তাওফীক দিন। আমীন।
১৫ জুন ২০১৬ দুপুর ০৩:৫৮
308822
কুয়েত থেকে লিখেছেন : আল্লাহ আমাদেরকে রামাদান এর হক যথাযথভাবে আদায় করার তাওফীক দিন। পড়ে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ
372054
১৫ জুন ২০১৬ বিকাল ০৪:০০
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ্।
বিশাল এবং সমৃদ্ধ কালেকশন।
খুব মন দিয়ে পড়লাম।
প্রতিকূলতা সত্ত্বেও কষ্টসাধ্য পোস্টটি করার জন্য শুকরিয়া।
আল্লাহ্ আমাদেরকে উক্ত হাদীসগুলো বুঝে আমল করার তাওফীক দিন।
আল্লাহ্ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিক
১৫ জুন ২০১৬ বিকাল ০৪:০৯
308825
কুয়েত থেকে লিখেছেন : আল্হামদুলিল্লাহ সুম্মা আল্হামদুলিল্লাহ.!আপনি মনদিয়ে পড়েছেন তাই খুবই আনন্দীত হলাম গতকাল খুবই পেরেশানিতে ছিলাম গাড়ীটি এখনো গেরেজে আজ সন্ধায় হয়ে যাবে দোয়া করবেন ভালো থাকুন ধন্যবাদ
372071
১৫ জুন ২০১৬ রাত ০৮:১৫
শেখের পোলা লিখেছেন : জাজাকল্লাহু খাইরান। আল্লাহ আমাদের সেই রোজার গুরুত্ব ও মাহাত্ব বোঝার তৌফিক দিন। ধন্যবাদ।
১৬ জুন ২০১৬ রাত ০৩:২৩
308887
কুয়েত থেকে লিখেছেন : জাজাকল্লাহু খাইরান। আল্লাহ আমাদের রোজার গুরুত্ব ও মাহাত্ব বোঝার তৌফিক দিন।
372083
১৫ জুন ২০১৬ রাত ১০:১৭
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ,
মা-শা আল্লাহ, কুরআন হাদিস সমৃদ্ধ লিখাটি দারুন লেগেছে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে রাইয়ান দরজায় প্রবেশ করার সৌভাগ্য দান করুক। আমাদের সবাইকে রোজার হক পরিপূর্ণ ভাবে আদায় করার তাওফীক দান করুক। আমীন।

জাযাকাল্লাহ খাইর

১৬ জুন ২০১৬ রাত ০৩:২৪
308889
কুয়েত থেকে লিখেছেন : পড়ে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ
১৬ জুন ২০১৬ রাত ০৩:২৫
308890
কুয়েত থেকে লিখেছেন : পড়ে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ جزاكم الله خيرا وكل عام وانتم بخير
372101
১৬ জুন ২০১৬ রাত ০৩:২০
আফরা লিখেছেন : আল্লাহ্ আমাদেরকে উক্ত হাদীসগুলো বুঝে আমল করার তাওফীক দিন ।আমীন

জাজাকাল্লাহ খায়ের ।
১৬ জুন ২০১৬ রাত ০৩:৪৮
308899
কুয়েত থেকে লিখেছেন : পড়ে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ جزاكم الله خيرا وكل عام وانتم بخير
372114
১৬ জুন ২০১৬ রাত ০৪:৪১
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : রোজা নিয়ে অনেকগুলো খুবই প্রয়োজনীয় আর সুন্দর হাদিস আপনি এই লিখে একসাথে করেছেন|ভালো লেগেছে হাদিসগুলো একসাথে পড়তে পেরে|আল্লাহ আমাদের সবাইকে সবচেয়ে বেশি আন্তরিকতার আর তাকওয়ার সাথে এবারের রোজা গুলো করার তাওফিক দিন |
১৮ জুন ২০১৬ দুপুর ০৩:২৩
309163
কুয়েত থেকে লিখেছেন : মনোযোগ সহ নবীজির হাদিস গুলো পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের মূলপুঁজিই হলো আল্ কুরআন এবং সহীহ হাদিস। ভালো থাকুন
372164
১৬ জুন ২০১৬ বিকাল ০৪:১৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১৮ জুন ২০১৬ দুপুর ০৩:২৫
309164
কুয়েত থেকে লিখেছেন : ভালো লাগার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ
372195
১৬ জুন ২০১৬ রাত ০৮:০৯
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।

অনেক মেহনত করে কোরআন ও হাদীস থেকে অনেক অমূল্য রত্ন ভাণ্ডার তুলে এনেছেন মাশাআল্লাহ। গাজী ভাইয়ের লিখায় আপনার বিপদের কথা জেনে খুবিই খারাপ লেগেছে। এতোকিছুর পরও পোষ্ট দিয়েছেন। পড়ে ভীষণভাবে আপ্লূত হলাম।

মহান রব আপনিসহ সকলকেই উত্তম প্রতিদান দিন এই প্রার্থনা।
372390
১৮ জুন ২০১৬ দুপুর ০৩:৩০
কুয়েত থেকে লিখেছেন : وعليكم السلام ورحمةالله وبركاته আল্ হামদুলিল্লহ সকল অবস্থায়! লেখাটি পড়ে অনেক মূল্যবান মন্তব্য করেছেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদجزاكم الله خيرا وكل عام وانتم بخير

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File