শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী শাহাদাতের আগে বলে গেছেন আমার এ শাহাদাত বাংলাদেশের রাজনীতি ও জাতীয় জীবনে পরিবর্তনের সূচনা করবে।
লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ১৬ মে, ২০১৬, ০৪:৪৫:৩৭ বিকাল
শহীদ নিজামী শাহাদাতের আগে বলে গেছেন আমার এ শাহাদাত বাংলাদেশের রাজনীতি ও জাতীয় জীবনে পরিবর্তনের সূচনা করবে। কথাটাকে তখন সিরিয়াসলি চিন্তা না করলেও, এর গভীর তাৎপর্য এখন চোখের সামনে ভেসে উঠছে।
তিনি পরিবর্তনের কথা বলেছেন; কী সেই পরিবর্তন?
তিনি চলে গেলে জামায়াতের আমীর পরিবর্তন হবে, জামায়াতের ও কিছুটা পরিবর্তন হবে, এমন দিকে কি ইংগিত করেছেন?
না, তা নয়। তিনি যে পরিবর্তনের কথা বলেছেন তা গভীরভাবে চিন্তার দাবি রাখে। তিনি তার শাহাদাতের মধ্য দিয়ে যে পরিবর্তনের আভাস দিয়েছেন তা হচ্ছে গোটা বিশ্ব ব্যবস্থায় পরিবর্তন। world order এর পরিবর্তন।
কীভাবে হবে তা?
শহীদ নিজামীর পবিত্র রক্ত মাটিতে পরার একমিনিট আগেও আমরা তা জানতাম না। নিষ্পাপ মানুষটির রক্ত ঝরার সাথে সাথে গোটা বিশ্বব্যস্থায় পরিবর্তনের আভাস ফুটে উঠেছে। সূচনাটি করেছেন মুসলিম বিশ্বের বীর সিপাহসালার রজব তাইয়েব এরদোগান।
তিনি ঘোষণা দিয়ে তুরস্কের রাষ্ট্র দূতকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বাংলাদেশ থেকে।
বিষয়টা নিয়ে নানা মাত্রিক ভাবনায় পড়ে গেছে বিশ্বমোড়লেরা।
এর আগের কিছু বিষয় ভাবা দরকার।
বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের নেতারা একসাথে বসেছিলেন সারাবিশ্বে নির্যাতিত মুসলমানদের বিষয় নিয়ে। ক্ষুদ্র পরিসরে মিটিংটি হয় মালয়েশিয়ায়। তাতে স্থান পায় বাংলাদেশে ইসলামিস্টদের ফাঁসি দেয়ার বিষয়টা। মিটিং থেকে ১০ জনের প্রতিনিধি দল কথা বলেন সৌদি বাদশাহ সালমানের সাথে। বাদশাহ সালমান তারই প্রেক্ষিতে ডেকে পাঠান মিঃ মোদীকে।
_ বাংলাদেশে ইসলামিস্টদের ফাঁসি হচ্ছে, এতে তোমার কোনো হাত আছে?
- জ্বি না হুজুর, বিষয়টা সম্পূর্ণ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের।
মোদীর এমন চরম মিথ্যাচারে হতভম্ব হয়ে যান বাদশাহ।
তারপর ও ইসলামি কূটনৈতিক রেওয়াজ হিসেবে উপহার উপঢৌকন এওয়ার্ড দেয়া হয় মোদীকে।
আর বলে দেয়া বাংলাদেশে আর কোনো ইসলামিস্টের ফাঁসি দেখতে চাই না।
কিন্তু তারপরো 47 এর প্রতিশোধ নিতে মোদিরা মাওলানা নিজামীর ফাঁসি দিতে বদ্ধপরিকর।
শেষমহূর্তে উপায় না দেখে স্বয়ং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ফোন করেন ভারত নিয়ন্ত্রিত বাংলার প্রধানমন্ত্রী কে। অনুরোধ করেন ফাঁসি স্থগিত করতে।
স্বয়ং বারাক ওবামা এই দুঃসাহস করতেন কি না সন্দেহ, সেই কাজটি করলো বাংলাপ্রধান। ফলে তুরস্ক তথা মুসলিম বিশ্বের কাছে ব্যাপারটা শোভনীয় থাকল না।
হয়ত অনেকেই জানেন ভারত ব্লক চেইঞ্জের পথে এগুচ্ছে খুব কৌশলে। এমেরিকাকে উপেক্ষা করে চিন রাশিয়া পাকিস্তান কে সাথে নিয়ে ভিন্ন ব্লক তৈরি করতে সচেষ্ট ইণ্ডিয়া। যে কারণে চিরশত্রু মনেকরা পাকিস্তানকে এবং চির বৈরি চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের যাবতীয় ব্যবস্থা নেয় ভারত।
একাধিক সফর দেয় চীনে
পাকিস্তান সফর করে নেওয়াজ শরীফের মা কে কদমবুচি করে মোদি।
তার আগে পাকিস্তানের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপনের জন্য নির্মাণ করা হয় পিকে মুভি। যেখানে হিরো বানানো হয় পাকিস্তানের একটি চরিত্রকে। মেসেজ দেয়া হয় মুসলমান গাদ্দার নয়, প্রতারক নয়। রং নাম্বার নয়।
নির্মাণ করা হয় বজরঙ্গী ভাইজান। যা মূলত ভারত পাকিস্তানের কাঁটাতারের বেড়াকেই ভিলেন বানায়। সীমানা ঘুচিয়ে ফেলার অদম্য স্পৃহা জাগায়। এ ছবি দিয়ে ভারত পাকিস্তানকে মেসেজ দেয় আমরা কিন্তু তোমাদের ভালো চোখে দেখি। কতো গভীর রাজনীতি ভারতীয় চলচ্চিত্রে।
যাই হোক এরপর মোদির পাকিস্তান সফর, উষ্ণ অভ্যর্থনা সবি আমরা দেখলাম।এর পেছনে যে দুরভি সন্ধি তা হলো অখণ্ড ভারতবর্ষ প্রতিষ্ঠা এবং আমেরিকার বলয় ছেড়ে নতুণ বলয় তৈরি।
প্রশ্ন হচ্ছে এতে আমাদের ক্ষতি কী?
বিষয়টা গভীরভাবে ভাবতে হবে। ভারত কেন আমেরিকার বলয় ছাড়তে চায়? এরিমধ্যে বেশ কিছু ঘটনায় আমরা দেখেছি ভারত-আমেরিকার সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না।কিন্ত কেন?
এর প্রধান কারণ হয়তো বারাক ওবামা। সে একজন মুসলিম পরিবারের সন্তান। তার দাদী মুসলিম। তিনি আশা করেন বারাক হোসেন ওবামাও মুসলিম হবেন। এমনকি খোদ আমেরিকানরাও মনে করেন ওবামা মুসলিম।পরপর দুই টার্ম ওবামা ক্ষমতায় থাকায় মুসলিম রাষ্ট্রের উপর বড়ধরনের কোনও যুদ্ধ চাপিয়ে দিতে পারেনি ইহদীবাদি শক্তি। বরং তারা ওবামা সরকারের পেছনে চর লাগিয়ে রেখেছে সার্ব
ক্ষণিকাভাবে।
আমেরিকার একটি দল সবসময় মুসলিমদের চরমবিরোধী এবং ইহুদীবান্ধব অপর গ্রুপটি অতোটা ইসলাম বিদ্বেষী নয়, এমনকি ইহুদীরাও খুব একটা সুবিধা করতে পারে না।ইসলামের ঘনিষ্ট বন্ধু এমনটিও মনে করার কারণ নেই।
অন্যদিকে ভারত এখন সেকেন্ড ইহুদী ল্যান্ড।ইহুদীদের দ্বিতীয় বূমি হচ্ছে ভারত। ভারতের অর্থনীতিও ঘুরছে ইহুদী অর্থপরিকল্পনা অনুযায়ী। অনেকরই মনে থাকার কথা, ফিলিস্তিরে যখন ইহুদীরা ব্যাপক ধংসযজ্ঞ চালাচ্ছিল তখন সব দেশ এর নিন্দা জানালেও ভারত বলেছে তারা ইসরাইলের পাশে আছে।
অর্থাৎ বারত এখন চলছে তেলআবিবের পরামর্শে। আর তেলআবিবই চাইছে ভারতকে পরাশক্তিতে রূপান্তরিত করতে। এতে তেলআবিবের সবচেয়ে বড় স্বার্থ অর্থনীতি। ভারতের প্রায় দেড়শ কোটি জনগণ তেলআবিবের বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত সহায়ক।
দ্বিতীয়ত হিন্দুধর্ম যেহেতু কোনও আসমানী ধর্ম নয় সেহেতু এখানে জায়নবাদি তৈরি করা খুবই সহজ। আর মোদি যেহেতু উগ্রবাদী হিন্দু দলের নেতা সেহেতু তার মাধ্যমে এটা আরও বেশি সহজ। কেননা জায়নবাদিরা প্রথমে ধর্মে ধর্মে সংঘর্ষ সৃষ্টি করে তারপর এন্টিবায়োটিক হিসেবে সেক্যুলারিজম প্রতিষ্ঠা করে। আর এই সেক্যুলারিজমই তৈরি করে জায়নবাদি, ইহুদী । সেক্যুলারিজম এর আদর্শ ওতোপ্রোতোভাবে জায়নিস্টদের আদর্শ। ইসরাইল নামকরণের কারণ হচ্ছে এরা খোদাকে হত্যার দাবিদার। ইসরা তথা উর্ধগমন এবং ইল তথা তীরবিদ্ধ করে খোদাকে হত্যা করেছে তারা। এই দাবি থেকেই খোদার চেয়ে শক্তিশালী হিসেবে নিজেদর প্রতিষ্ঠা করতে চায় ইহদীরা।খোদার ধর্ম নয় বরং বড় হচ্ছে ধর্মহীনতা। এই মতবাদ আজ প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে তারা।
তেলআবিবের যোগসাজশে ভারত তাই এগিয়ে চলেছে দুর্বার গতিতে। তার হাসিমুখের সফরে অনেকেই কুৎসিৎ গন্ধ পেলেও কূটনৈতিক বদান্যতায় এড়িযে যেতেও পারছে না। এদিকে মোদির এসব সফরকে ভালো চোখে দেখছে না আমেরিকা।
আমেরিকাও ভাবছে ভারত বেরিয়ে গেলে তাকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। আমেরিকার নজর তাই মুসলিম বিশ্বের দিকে। বিশেষকরে আরববিশ্বকে হাতে রাখার সব চেষ্টাই সে করবে।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত দেশ তুরষ্কে যে বিপ্লব ঘটে গেছে তাতে ঘুরে তাকাতে হচ্ছে পুরো বিশ্বকে। একই সাথে সৌদি আরবের গতানুগতিক পাপেট বাদশাহের বদলে ইসলামী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তি বাদশাহ হওয়ায় মুসলিম বিশ্বও আজ ঘুরে দাঁড়ানোর পর্যায়ে। বিশেষকরে ৩০-৩৫টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত ইসলামী জোট গঠন এরই মধ্যে গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে।
সিরিয়া ইস্যুতে আমেরিকার বৈরি রাশিয়াকে এক হাত দেখে নেয়ার কারণে ভিতরে ভিতরে একাজে সমর্থন জানিয়ে আসছে আমেরিকা। তবে স্বভাবসুলভ মোড়েলিপনার কারণে সিরিয়া ইস্যুতে দূতিয়ালি টাইপের ভূমিকা রেখেছে আমেরিকা।
কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা হলো সৌদি জোটের বিরুদ্ধে কোনও অভিব্যক্তি প্রকাশ করেনি আমেরিকা।
এই যখন পরিস্থিতি তখন বাংলাদেশের ঘটনা একটি টার্নি পয়েন্টে এগিয়ে যাচ্ছে। ভারত যে স্বপ্ন দেখেছিল নতুন বলয় সৃষ্টির তা হয়ত অনেকটাই ধুলিস্যাত হতে বসেছে। কেননা বাংলাদেশের মুসলমানদের সবচেয়ে বড় সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর আমীরকে ফাঁসি দেয়ার পেছনে ভারতের হাত সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এদিকে এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসলামী জোটের অন্যতম নেতা রজব তাইয়েব এরদোগান।প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাকিস্তান। স্বভাবসুলভ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিশ্বমোড়লেরা।
বাংলাদেশ ইস্যুকে কেন্দ্র করে মুসলিম বিশ্ব একটি বলয় সৃষ্টি করলে তাতে আমেরিকার সায় পাওয়া স্বাভাবিক। কেননা তাতে ভারত এবং চিন রাশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী তৈরি হতে পারে।
অন্যদিকে তুরস্কের প্রতি অহেতুক অভিযোগ আরোপ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আর সেই অভিযোগকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে তুরস্ক। অর্থাৎ মুসলিম বিশ্বকে এখন নতুন বলয়ে নিয়ে আসা যেন সবার জন্যই অনিবার্য হয়ে উঠেছে। এদিকে ন্যাটোভুক্ত দেশ তুরস্ককে চাইলেই ঠেলে ফেলার শক্তি নেই ভারত বাংলাদেশের।
ইসলামী জোট যদি সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে অবিলম্বে শুধু বাংলাদেশে নয় সারাবিশ্বে পরিবর্তন সূচিত হবে। তবে তার জন্য আমেরিকার মতো একটি পরাশক্তিতে পাশে চাইবে ইসলামী জোট আর তার জন্য প্রচণ্ড ইসলামবিদ্বেষী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নয় হিলারীকেই চাইবে তারা।অপেক্ষা করতে হবে সে পর্যন্ত।
তবে হিলারীর জয়ে সবচেয়ে খুশি হবে বাংলাদেশ। কেননা আওয়ামী লীগের অভিভাবক ভারতের ফেভরিট টিম ট্রাম্প আর বিএনপির বন্ধু হিলারী ক্লিনটন। যিনি শেখ হাসিনার ক্রোধের শিকার ড. ইঊনূসের অত্যন্ত ঘনিষ্ট।
কী হয় তা বলা কঠিন। তবে জামায়াত নেতাদের ফাঁসিতে যেভাবে বিশ্ব ইসলামী জোট নেতারা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন তাতে বাংরাদেশে অচিরেই শুভ পরিবর্তন আসবে এমন আাশা আমরা করতেই পারি।
ইনশআল্লাহ শহীদ মতিউর রহমানের শেষমুহূর্তের সেই কথাটির বাস্তবতা আমরা অচিরেই দেখতে পাবো।
”আমার এ শাহাদাত বাংলাদেশের রাজনীতি ও জাতীয় জীবনে পরিবর্তনের সূচনা করবে।”
বিষয়: বিবিধ
১৫৪৩ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর জামায়াত শিবির ? কয়েকদিন পর এদের মালামাল যখন বাজেয়াপ্ত করা শুরু হবে ,দলও নিষিদ্ধ হবে - তখন লাকি-ইমরানেরা এদেরকে খুজে খুজে পেটাবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন