এক হাজার আদেশ, এক হাজার নিষেধ, এক হাজার হেকমত, এক হাজার কাহিনী ও সংবাদ বিশিষ্ট সুরা আল্ বাকারা। আসুন জেনে নি এর গুরুত্ব ও ফজিলত।।
লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ১৪ এপ্রিল, ২০১৬, ০৩:৩০:৫৮ দুপুর
সূরা বাকারা এটা কুরআনের দ্বিতীয় সূরা। সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি সূরা যা মদিনায় অবতীর্ণ। এতে মোট ২৮৬টি আয়াত আছে এবং ৪০টি রুকু।
নামকরণ : এই সূরার মধ্যে যেহেতু গাভী সম্পর্কে আলোচনা আছে তাই এর নামকরণ করা হয়েছে সূরা বাকারা। বিষয়বস্তু, মাসায়েল ও আহকাম বর্ণনার দিক দিয়েও এই সূরা বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এতে এক হাজার আদেশ, এক হাজার নিষেধ, এক হাজার হেকমত, এক হাজার কাহিনী ও সংবাদ বা খবর ইত্যাদি স্থান পেয়েছে।
এ সূরা পাঠ করার জন্য হুজুর (সাঃ) উৎসাহিত ও তাগিদ দিয়েছেন এবং পাঠ না করা দুর্ভাগ্য ও অনুতাপের কারণ সাব্যস্ত করেছেন। যেমন নবী করিম (সাঃ) ইরশাদ করেন, তোমরা সূরা বাকারা বেশি বেশি পাঠ করো।
কারণ এই সূরা পাঠ করলে বরকত লাভ হয় ও পাঠ না করা অনুতাপ ও দুর্ভাগ্যের কারণ। যে ব্যক্তি এ সূরা পাঠ করে, কোনো জাদুকরের জাদু কখনো তার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে না (বুখারি)।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল সা: ইরশাদ করেন, তোমরা তোমাদের ঘরকে কবর বানিয়ে রেখো না। কারণ যে ঘরে সূরা বাকারা তিলাওয়াত করা হয় সে ঘরে শয়তান প্রবেশ করতে পারে না।
অপর এক রেওয়ায়েতে রাসূল সা: থেকে বর্ণিত আছে, তোমরা তোমাদের ঘরকে কবরস্থান বানিও না, নিশ্চয় শয়তান ওই ঘর থেকে পলায়ন করে যেখানে সূরা বাকারা তিলাওয়াত করা হয়।
অন্য এক রেওয়ায়েতে হজরত আবু উমাশ রা: সূরা বাকারা ও সূরা আল ইমরানের ফজিলত সম্পর্কে হুজুর সা: থেকে নকল করেন। তিনি বলেন, তোমরা কুরআন পাঠ করো, কেননা কিয়ামতের দিন কুরআন পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করা হবে এবং কুরআনের দুই দীপ্তিময় আলো তথা সূরা বাকারা ও আল ইমরান পাঠ করো কেননা কিয়ামতের দিন উভয় সূরা যেন
দু’টি মেঘমালা অথবা দু’টি তারা কিংবা দু’টি কাতারবদ্ধ পাখির ঝাঁকরূপে এসে তিলাওয়াতাকারীর পক্ষে বিতর্ক করবে। (মুসলিম, আবু দাউদ)।
হজরত ইবনে মাসউদ রা:-এর ভাষ্যমতে, এ সূরার মাঝে এমন দশটি আয়াত আছে, যে ব্যক্তি রাতের বেলায় নিয়মিত আয়াতগুলো পাঠ করবে শয়তান সে ঘরে প্রবেশ করতে পারবে না।
অনুরূপভাবে সকালে যদি কেউ পাঠ করে তাহলে সে সবধরনের মুসিবত, চিন্তা, পেরেশানি ইত্যাদি থেকে মুক্ত থাকবে। যদি কোনো বিকৃতমস্তিষ্ক ব্যক্তির ওপর পড়ে দম করা হয় তাহল সে সুস্থ হয়ে যাবে।
আয়াত দশটি হলো- সূরার প্রথম চার আয়াত, আয়াতুল কুরসি ও পরের দুই আয়াত এবং সূরার শেষের তিনটি আয়াত। এই আয়াতগুলোর ভিন্ন ফজিলতও রয়েছে।
আয়াতুল কুরসির ফজিলত যেমন- কোনো ব্যক্তি যদি প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করে তাহলে ওই ব্যক্তির জান্নাতে যাওয়ার জন্য কেবল মৃত্যুই বাধা হয়ে দাঁড়াবে। অর্থাৎ জান্নাতে পৌঁছার জন্য মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা তার সামনে থাকবে না।
রাসূলে করিম সা: বলেন, ‘যে লোক প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর নিয়মিত আয়াতুল কুরসি পাঠ করে তার জন্য বেহেশতে প্রবেশের একমাত্র বাধা মৃত্যু ছাড়া আর কিছুই নেই। অর্থাৎ মৃত্যুর পরপরই সে জান্নাতে চলে যাবে। (নাসায়ী শরীফ)।
এ আয়াতের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে মুসনাদে আহমদে অন্য আরেকটি রেওয়ায়েত করা হয়েছে যে, রাসূল সা: উবাই ইবনে কাব রা:কে জিজ্ঞেস করেছেন, কুরআনের কোন আয়াতটি সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ? উবাই ইবনে কাব রা: উত্তর করলেন, তা হচ্ছে আয়াতুল কুরসি।
রাসূল সা: তা সমর্থন করলেন ও বললেন, হে আবুল মানজার, এ উত্তম জ্ঞানের জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।’
আর সূরা বাকারার শেষ আয়াতদ্বয়ের ফজিলত হলো- রাসূল সা: বলেন, কোনো ব্যক্তি যদি রাতের বেলায় এ আয়াত দু’টি পাঠ করে তাহলে তা তার মুক্তির জন্য যথেষ্ট হবে।
ইবনে আব্বাস রা: রাসূল সা: থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহ তায়ালা এ আয়াত দু’টি জান্নাতের খাজানা থেকে অবতরণ করেছেন। জগৎ সৃষ্টির অনেক আগে আল্লাহতায়ালা স্বহস্তে তা লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি আরো বলেন, এই আয়াত দু’টি এশার নামাজের পর পাঠ করলে তা তাহাজ্জুতের স্থলাভিষিক্ত হবে।
এমনি আরো অনেক ফজিলত বর্ণিত আছে, যা একজন মুমিনের জীবন পথের পাথেয়। যা দ্বারা তার এবং প্রভুর মাঝে গড়ে ওঠে প্রেমের এক সুদৃঢ় বন্ধন।
সফলতা আসে উভয় জগতে। আসমানি নূরের আলোয় আলোকিত হয় হৃদয়জগৎ। কুরআন পাঠে বেড়ে যায় মনের প্রফুল্লতা, পাওয়া যায় মনে শান্তি।
বিষয়: বিবিধ
১৬৭৫ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন