বিতর্কিত এসব মন্তব্য এখনই বন্ধ হওয়া উচিত। রায় ঘোষণার আগেই দু’জন মন্ত্রী ও সাবেক এক বিচারপতি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা বিব্রতকর।
লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ০৭ মার্চ, ২০১৬, ০৩:৪১:৫১ দুপুর
রায় ঘোষণার আগেই প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে দুই মন্ত্রী ও সাবেক এক বিচারপতির বিতর্কিত মন্তব্যে বিচার অঙ্গনসহ দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সর্বমহলে সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় উঠেছে।
আইন বিশেষজ্ঞরা তাদের বক্তব্যকে অসাংবিধানিক, অনাকাঙ্খিত এবং বিচার বিভাগের ইতিহাসে নজিরবিহীন বলে অভিহিত করেন। আর দুই মন্ত্রীর বিচার দাবি করেছে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি।
ওদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের বক্তব্যকে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও আদালত অবমাননাকর হিসেবে দাবি করা হয়। এছাড়া রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তার মতে, প্রধান বিচারপতিকে বিতর্কিত করা মানেই বিচার ব্যবস্থাকে বিতর্কিত করা।
বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে একজন আইনজীবী ও প্রাক্তন আইন প্রতিমন্ত্রী (বর্তমানে খাদ্যমন্ত্রী) এবং আপিল বিভাগ থেকে সদ্য অবসর নেয়া একজন বিচারপতির কাছ থেকে যেসব অভিযোগ ও মন্তব্য এসেছে তা বিচার বিভাগের ইতিহাসে নজিরবিহীন।
তদুপরি সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে উত্থাপিত অভিযোগ সত্য বলে পক্ষান্তরে দাবি করা ভয়ানক বিবেচনাহীনতার পরিচায়ক। সর্বোপরি এ ধরনের মন্তব্য সবার মধ্যে আস্থাহীনতার জন্ম দেবে।
পাশাপাশি রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তার ব্যাপারে সাংঘাতিক বিরূপ মন্তব্য শুধু নিন্দনীয়ই নয়, রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরির কারণ হতে পারে।
এ ধরনের বক্তব্য বিচার বিভাগের জন্যও হুমকি স্বরূপ। রাষ্ট্র, বিচার বিভাগ ও বিচারপ্রার্থীদের স্বার্থে বিতর্কিত এসব মন্তব্য পাশপাশি দায়িত্বহীন ব্যক্তিদের অবিবেচনাপ্রসূত বক্তব্য
এদিকে আইন বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলেন, রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর অঙ্গটি হচ্ছে ‘বিচার বিভাগ’। বিচার বিভাগ মানুষের ন্যায়বিচারের শেষ আশ্রয়স্থল।
তাই বিচার বিভাগকে সব সময় বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে হবে। কিন্তু এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে বিচার ব্যবস্থাকে প্রকারান্তরে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নেয়ার প্রচেষ্টা চলছে।
বিতর্কিত এসব মন্তব্য এখনই বন্ধ হওয়া উচিত।যুগ যুগ ধরে ট্র্যাডিশন হচ্ছে বিচারাধীন বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করা। কিন্তু রায় ঘোষণার আগেই দু’জন মন্ত্রী ও সাবেক এক বিচারপতি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা বিব্রতকর।
মীর কাসেম আলী সংক্রান্ত ট্রাইব্যুনাল সম্প্রতি সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে এর শুনানিও শেষ হয়েছে। রায় ঘোষণার দিন ধার্য হয়েছে আগামীকাল।
কিন্তু রায় ঘোষণার আগে ৫ মার্চ শনিবার একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সরকারের দু’জন মন্ত্রী এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতিকে জড়িয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন।
খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে নতুন বেঞ্চ গঠন করে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মীর কাসেম আলীর আপিল শুনানি পুনরায় করা উচিত।
অপরদিকে একই অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, আর প্রধান বিচারপতি যদি উন্মুক্ত আদালতে এমন কথা বলে থাকেন তাহলে দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে তার এটা বোঝা উচিত। এটা করে থাকলে এটার প্রতিকার কী- এটা তিনি নিশ্চয় জানেন।
আর না হয় প্রধান বিচারপতির আসনে থাকার সুযোগ কতটুকু আছে তা তার ওপরই রাখতে চাই।’ তারা (দুই মন্ত্রী) ওই আলোচনা সভায় এমন অনেক মন্তব্য করেন যা আদালত অবমাননাকর হওয়ায় উল্লেখ করার মতো নয়।
দুই মন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাপারে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এগুলোর ব্যাপারে মন্তব্য না করাই ভালো। সম্পূর্ণভাবে এগুলো অসাংবিধানিক উক্তি।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মন্ত্রীকে সংবিধান রক্ষার শপথ নিতে হয়।
কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেলের ভাষায় উনারা অসাংবিধানিক মন্তব্য করে থাকলে সেক্ষেত্রে তাদের শপথ ভঙ্গ হয়েছে। আর শপথ ভঙ্গ হলে তাদের মন্ত্রী থাকার কোনো অধিকার নেই।আস
বিষয়: বিবিধ
১১১৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন