২৮ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা একটি নীপীড়িত জনপদ হে আল্লাহ এই জনপদের শহীদদের কবুল করুন।
লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৮:৩৫:১০ রাত
২৮ ফেব্রুয়ারি এবং সাতক্ষীরার নীপীড়িত জনপদ!
সাতক্ষীরার বেশিরভাগ মানুষ জন্ম গতভাবেই ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের ধারণা নিয়ে বেড়ে উঠে।
এই জমিনকে আরো বেশি উর্বর ও জাতীর প্রত্যাশা পুরণে উপযোগী করার জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পছন্দ করে নিয়েছে বাগানের সবথেকে প্রিয় ৩৭ টি তাজা গোলাপ।
যে গোলাপের পাপড়িগুলো ঝরে পড়ার পরে আরও বেশি সুগন্ধ ছড়িয়ে যাচ্ছে। শহীদ আলী মোস্তফা, আমানউল্লাহ, শামসুজ্জামান খান রেজা, রফিকুল ইসলাম, মোস্তফা আরিফুজ্জামান, আরিজুল ইসলাম, হোসেন আলী, ইকবাল হাসান তুহিন, আলী মোস্তফা, আবু হানিফ ছোটন, আবুল কালাম ও শহীদ আমিনুর রহমানসহ অনেক ভাই শাহাদাৎ বরণ করেছে বাতিল শক্তির হাতে।
২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ -পুলিশের নির্মমতায় একে এক ঝরে পড়ে ১০ টি তাজা প্রাণ। গুলিবিদ্ধ হয় প্রায় অর্ধশতাধিক। গুলিবিদ্ধদের টেনে হিছড়ে গ্রেফতার করে ফেলে রাখা হয় রাস্তার উপরে।
এই ঘটনায় নিহতরা হলেন শশাডাঙ্গার শিবিরের সাথী প্রার্থী আলি মোস্তফা (২০), হরিশপুরের শিবির কর্মী ইকবাল হাসান তুহিন (২০), খানপুরের জামায়াত কর্মী সাইফুল্লাহ (২০),সদরের ঘোনার জামায়াত কর্মী রবিউল ইসলাম (৩০), বকেরডাঙ্গার জামায়াত কর্মী শাহিন (২০), মোশরাফ হোসন (৩০), ইমদাদ হোসেন (৩০), ঘোনার জামায়াত কর্মী আনারুল ইসলাম (৩০) ও ইকবাল।
গুলিবিদ্ধ হয়ে চিরতরে পঙ্গু হন সাবেক সিটি কলেজ সভাপতি ও সাংবাদিক আব্দুল আহাদ , শিবিরের সাথী মুস্তাকিম বিল্লাহ , চোখ হারান শিবির কর্মী আরিফুল ইসলাম সহ গুলিবিদ্ধ হন অর্ধ শতাধীক জামায়াত-শিবির কর্মী ।
সাতক্ষীরা জেলায় সাম্রাজ্যবাদী, অপশক্তির নির্মমতায় এ পর্যন্ত প্রাণ দিয়েছেন ১৯৯৩ সালে ৩ জন, ১৯৯৯ সালে ১ জন, ২০০০ সালে ১ জন, ২০১৩ সালে ১২জন এবং ২০১৪ সালে ২০ জন। মোট ৩৭
ইসলাম বিদ্বেষী শক্তি দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার যেন সেদিন কিছুটা পূর্ণ হয়। সাতক্ষীরায় ইসলাম বিদ্বেসীরা প্রথম আঘাত হানে ১৯৮৭ সালে। সাতক্ষীরা সরকারী কলেজে। ছাত্রলীগ, ইউনিয়ন , জাসদ ও বাসদ সহ সকলে মিলে ছাত্রশিবির ধ্বংসের ঘড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় ।
অতর্কিত হামলা চালিয়ে আহত করে অনেক ভাইকে। এখানে তারা ক্ষান্ত হয়নি। ক্ষুনের নেশায় মত্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে যাওয়া ভাইদের হাসপাতালের গেইটে পূনরায় হামলা করে সকল পৈশাচিকতাকে হার মানায় সেদিন।
এরপর ১৯৯৪ সালের ৩০ মার্চ অধ্যপক গোলাম আযমের সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের সহযোগিতায় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা সমস্ত শহরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। রাস্তা-ঘাট, শহর বন্দর সকল জায়গায় দাড়ী-টুপি দেখলেই অতর্কিত হামলা শুরু। সেদিন গন গ্রেফতার ও মামলা করা হয় অসংখ্য নেতাকর্মীর নামে।
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের প্রতিবাদে সাতক্ষীরা শহরের কদমতলায় বিক্ষোব সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করে জামায়াত ইসলামী সাতক্ষীরা জেলা শাখা।
নিজেদের আবেগ আনুভুতি নিয়ে এই রায়ের প্রতিবাদ জানাতে উপস্থিত হয় সাঈদী ভক্ত হাজার হাজার তৌহিদী জনতা। বিক্ষুব্ধ মানুষের ঢল নামে।
হাজার হাজার মানুষ সমাবেশ শেষে মিছিল সহকারে শহর অভিমুখে যাত্রা শুরু করে।
অন্যদিকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সকল সন্ত্রাসীদের একত্র করে ইসলামী আন্দোলনের সূর্যকে চিরতরে নিভিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশের ছত্রছায়ায় উৎ পেতে থাকে আ’লীগের সন্ত্রাসীরা।
মিছিলটি সার্কিট হাউজ মোড়ে পৌছানো মাত্র শুরু হয় অবিরাম গুলি বর্ষণ। যে বিজিবি দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে সিমান্ত রক্ষায় দায়িত্বে নিয়জিত থাকে ।
আভ্যন্তরীন শান্তি শৃংখলা রক্ষাত্রে যে পুলিশ বাহিনী দিন-রাত পরিশ্রম করে, সন্ত্রাস দমনের জন্য যে র্যাবের প্রতিষ্ঠা। সেই আইন রক্ষার বাহিনীই ঝাপিয়ে পড়ে কিছু রাসুল প্রেমিক মুসলমানদের উপর। একে একে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তৌহিদী জনতা।
পিচঠালা রাজপথ রক্তে ফোটায় ফোটায় লালবর্ণ ধারন করে। শহীদের মিছিল দীর্ঘ থেকে হয় দীর্ঘতর। আহতদের তালিকা বাড়তে থাকে । কাকে রেখে কাকে হাসপাতালে নিবে এ চিন্তায় অনেকে বেসামাল হয়ে পড়ছিল ।
একজনের পাসে গেলে বলে , আমার থেকে ঐ সামনের ভাইটি বেশি আহত উনাকে হাসপাতালে নেন । স্বরণ করিয়ে দেয় উহুদ যুদ্ধে আহত সাহাবীদের পানি পান করানোর সেই ঘটনা।
হাজার হাজার মানুষের ক্রন্দন ও আহজারিতে আকাশ বাতাস ভারী হতে থাকে । সকলের চোখ যেন পানিতে টলমল করছে । এতগুলা মানুষ কেন চোখের পানি ফেলছে , এদের তো রক্তের সম্পর্কের কেউ না।
তাহলে কেন? উত্তর খুঝতে চেষ্টা করি । এটা সেই বন্ধন , যেটা রক্ত দিয়ে বাধা যায় না , সুতো দিয়ে গাথা যায় না , সেটা আত্মা ও ভালবাসায় জন্ম নেওয়া এক বিরল বন্ধন ।
লোহার সিকল সিড়ে আমরা আমাদের গন্তব্য যাত্রা অব্যহত রাখতে পারি , কিন্তু ভালবাসা ও আত্মার বন্ধন মাড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই । কেননা এটা দুনিয়ার কোন বৈষাকিয় স্বার্থ উদ্ধারের জন্য গড়া সম্পর্ক নয় ।
এটা আসমান ও জমিনের মালিকের তরফ থেকে বিনা সুতায় বাধা এক প্রেরণা – যাতে উদ্ভুদ্ধ হয়ে আমরা আমাদের একজন সাথীকে আহার্যে ভাগ দিচ্ছি , বসত বাড়ী ছেড়ে দিচ্ছি , অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করছি এবং একজন নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে আন্য ভাইকে বাচানোর চেষ্টা করছি ।
এ ইতিহাস যদি একজন ভাই অন্য ভাইয়ের জন্য সৃষ্টি করতে পারে তবে একবার ভেবে চিন্তে আমাদের বিরোধিতা করা উচিৎ । অত্যাচার ,নির্যাতন ও শহীদ করে আমাদের এ আন্দোলনের অগ্রযাত্রাকে রোধ করা যাবে না ।
আমরা যদি আল- কুরআন ও রাসুল (স আদর্শ আমাদের বুকে ধারণ করতে পারি , আমাদের যাত্রা রুখবে এ সাধ্য কার আছে । বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত ।
প্রিয় শহীদ ভাইরা আপনারা শুনে রাখুন , আপনাদের শহীদ হওয়াতে আমরা ভয় পাইনি , রক্ত থেকে আমরা প্রেরণা ও সাহস নিয়ে এগুয়ে চলেছি , থামবো না , হতাশ হবো না , বিজয়ের ঝান্ডা উড়াতে প্রচন্ড প্রেশানী আমাদের তাড়া করেছে , হয় বিজয় নচেৎ আপনাদের কাতারের একজন।
শাহদাতের সিদ্ধান্ত অবশ্যই মহান আল্লাহর নিজস্ব এখতিয়ার । কিন্তু দুনিয়ার পর্যালোচনায় শহীদের পিতা-মাতার কাছে অবশ্যই আমরাই দায়ী । ক্ষমা চাই প্রিয় শহীদের মা-বাবর কাছে ।
আল্লাহর পথে তাদের লড়াই করা উচিত ,যারা আখেরাতের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবন বিকিয়ে দেয় । তারপর আল্লাহর পথে লড়বে এবং মারা যাবে অথবা বিজয়ী হবে তাকে নিশ্চয়ই আমি মহাপুরষ্কার দান করবো । ( আন নিসা -৭৪)
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সকল শহীদদের কবুল করুন। এবং সহীদদের রেখে যাওয়া দায়িত্ব যেন আমরা যতাযত ভাবে আন্জাম দিয়ে যেতে পারি।
বিষয়: বিবিধ
১৫৮৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন