ইতিহাস কেন আমরা ভুলে যাই..! ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারী চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানের জনসভায় যোগ দিতে যাবার পথে শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে পুলিশের গুলি।
লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০২:৪২:২৩ দুপুর
১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারী চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানের জনসভায় যোগ দিতে যাবার পথে শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিল সরকারী হিসেবে ৯ জন, বেসরকারী হিসেবে ২৪ জন আর আওয়ামী লীগের ওয়েব পেজের হিসেবে ৮০ জন।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই হামলাকে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই চালানো হয়েছিলো বলে বর্ণনা করা হয়।
এই হামলার প্রতিবাদে ঢাকায় শহীদ মিনারে আওয়ামী লীগ ও তৎকালীন ৮ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে ২৬ জানুয়ারী একটি বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছিলো।
রহস্যজনকভাবে সেই সমাবেশে শেখ হাসিনা যোগ দেন নাই, কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেই সমাবেশে যোগ দেন।
তিনি স্বৈরাচারী এরশাদ কর্তৃক শেখ হাসিনার গাড়িবহরে পুলিশের গুলি এবং গণহত্যার প্রতিবাদে ঐ সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্বও দিয়েছিলেন।
খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সেই মিছিলে অংশ নিয়ে ছিলেন ইনু, মেনন, শাহজাহান খান, শিরিন সুলতানা, শেখ সেলিমসহ বর্তমান সরকারী দলের অনেক নেতা।
ঐ ঘটনার পর হাসিনা বলছিলেন, স্বৈরাচার এরশাদ আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমার দলের কর্মীরা জীবন দিয়ে আমাকে রক্ষা করছে।
আমার ধারণা ছিল, ২১ আগস্ট বোমা হামলায় যেমন শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করার কারণে ঐ মামলাটি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে তেমনি ৮৮ সালে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করার কারণে ঐ মামলাটিও গুরুত্ব দিয়ে পরিচালনা করা হবে।
ভাগ্যের পরিহাসে সেই স্বৈরাচারী এরশাদ আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত! অথচ নিহত হাসান মুরাদ, মহিউদ্দিন শামীম, স্বপন কুমার বিশ্বাস, এলবার্ট গোমেজ কিশোর, স্বপন চৌধুরী, অজিত সরকার, রমেশ বৈদ্য, বদরুল আলম, ডি কে চৌধুরী, সাজ্জাদ হোসেন, আব্দুল মান্নান, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, বি কে দাশ, পংকজ বৈদ্য, বাহার উদ্দিন, চান্দ মিয়া, সমর দত্ত, হাসেম মিয়া, মোহাম্মদ কাসেম, পলাশ দত্ত, আব্দুল কুদ্দুস, গোবিন্দ দাশ ও শাহাদাত হোসেন এর পরিবার ২৮ বছর যাবৎ বিচারের জন্য অপেক্ষা করছে।
সেদিন শেখ হাসিনার উপর নির্মম আক্রমণের প্রতিবাদে যে সর্বদলীয় মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া, আজ সেই খালেদা জিয়ার প্রতি শেখ হাসিনার নির্মম আচরণগুলো দেখি আর চিন্তা করি মানুষে মানুষে কত পার্থক্য!
গত বছর এই ২৪ জানুয়ারীতেই বেগম খালেদা জিয়া যখন তাঁর ছোট ছেলেকে হারিয়েছিলেন তখন শেখ হাসিনারই নির্দেশে বেগম খালেদা জিয়াকে বালুর ট্রাক ও হাজার খানেক পুলিশ দিয়ে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। ২৭ বছর আগের উপকারের প্রতিদান তিনি এভাবেই দিয়েছিলেন।
নির্মমতার চুড়ান্ত প্রকাশ ঘটাতে তিনি গত বছর এইদিন বেগম খালেদা জিয়ার নামে গাড়ী পোড়ানোর মামলা দিয়ে রাতে তাঁকে শোক জানানোর নাটক করতে পোষা সাংবাদিক এবং মিডিয়া কর্মীদের নিয়ে ঐ অবরুদ্ধ কার্যালয়ের গেট পর্যন্ত গিয়ে ফিরে এসেছিলেন।
উনার যদি আসলেই শোক প্রকাশের ইচ্ছা থাকত, তাহলে তিনি যোগাযোগ করে যেতেন। সেই অনুযায়ী এসএসএফ ঐ কার্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করতো (এসএসএফ এর কোডবুক তাই বলে)।
যেহেতু উনার ইচ্ছা ছিল গেইট পর্যন্ত গিয়ে নাটক করা, তাই এসএসএফ গেইট পর্যন্তই নিরাপত্তা বিধান করেছিল। নাটক শেষে তার পোষা বুদ্ধি ও বিবৃতিজীবীরা যথারীতি পুত্রহারা শোকে মূহ্যমান বেগম খালেদা জিয়াকেই দোষারোপ করেছিল, যাঁকে সেই সময় চিকিৎসকরা ঘুমের ঔষধ দিয়ে ঘুম পারিয়ে রেখেছিলেন।
বিষয়: বিবিধ
১৪৭০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই কাজে যে পুলিশ কর্মকর্তাকে দায়ি করা হয়েছিল তাদের দুইজন এখন দুই সিটি পুলিশ কমিশনার!
মন্তব্য করতে লগইন করুন