আজ বড়ই প্রয়োজন ছিল অসোহায় রোহিংগাদের পাসে শত মীর কাসেম আলীর মত জনদরদী মানুষের..!
লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ২৫ মে, ২০১৫, ০৬:২৩:২২ সন্ধ্যা
আরাকানীদের বলা হয় রোহিংগা। আর অন্য অধিবাসিরা বুদ্ধিষ্ট বার্মিজ বা মগ। ১৯৭৮ সনে এই রোহিংগাদের উপর অত্যাচারের মাত্রা চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়।তারা দলে দলে এই রোহিংগারা বাংলাদেশের টেকনাফ সীমান্তের নাফ নদী পারি দিয়ে প্রবেশ করতে থাকে আমাদের বাংলাদেশে।
বাংলাদেশের উপর বিরাট এক চাপ পড়লো এই রোহিংগা শরনার্থীদের। এমনি যখন অবস্থা তখনই এগিয়ে আসল পবিত্রমক্কা ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা রাবেতা আলমে আল ইসলামী(RABITA-E-ALAM AL ISLAMI)
যার মানে "মুসলিম বিশ্বে ভ্রাতৃত্ব" বিশ্বের যেখানেই মুসলমানেরা সমস্যা গ্রস্থ , বিপদগ্রস্থ রাবেতা সেখানেই তাদের সহায়তা দিয়ে থাকে। বাংলাদেশেও তারা কাজ করার জন্য নিয়োজিত হল।
তখনকার সৌদী রাস্ট্রদূত জনাব ফুয়াদ আল খতীব (রঃ) এই দায়িত্ব অর্পণ করলেন বাংলাদেশের তথা চট্টগ্রামের ক্রীতি সন্তান জনাব মীর কাসেমের উপর। কেবল মাত্র তিনি ছাত্র জীবন শেষ করেছেন। মীর কাসেম আলী তার সংগী সাথীদের নিয়ে ঝাপিয়ে পড়লেন মানবতার কল্যানে।
সদ্যপাশ করা একদল তরুন ডাক্তার বাছাই করা নার্সিং গ্রুপ টগবগে সহকর্মী বাহিনী নিয়ে শুরু হল শরনার্থী অভিবাসনের কাজ। কত কম খরছে কত উত্তম সেবা দেয়া যায় তা সেই প্রজেক্ট না দেখলে বুঝা যাবেনা।
বসবাসের ঘর নির্মাণ হল, খাবার সরবরাহ, চিকিৎসার হাসপাতাল, মসজিদ, বিশুদ্ধ পানির ব্যাবস্থা। জায়গাটা কক্সবাজার শহর থেকে অনেকদূর মরিচ্যা পালং। উঁচু উঁচু টিলা মাঝে অবারিত শস্যক্ষেত, পাশে আবার ছোট্ট নদীর মত স্বচ্ছ পানির ধারা বয়ে যাচ্ছে। গাছ গাছালীর শ্যামল ছায়ায় এক মনরোম পরিবেশ।
ভাগ্যাহত এই মানুষগুলোকে কি এক গভীর মমতায় এই সেবা দিয়ে তাদের সব দুঃখ যন্ত্রনা কষ্ট মুছে দেয়ার সে যে কী আপ্রান প্রচেষ্টা। হাড় জিরজিরে মৃতপ্রায় অপুস্টিতে ভোগা শিশুদের সারিয়ে তোলার সে যে আকুতি তা কি কেবলি দায়িত্ব পালন না আরো কিছু!
রোহিজ্ঞাদের থেকেই বাছাই করে কাজের উপযুক্তদের ট্রেনিং দিয়ে নিয়োগ দেয়া হল বিভিন্ন পদে। শরনার্থী ক্যাম্প আর ক্যাম্প থাকল না। আদর্শ এক জনপদে পরিনত হল।
ডাক্তার কোয়াটার, নার্সিং কোয়াটার, স্টাফ কোয়াটার গড়ে উঠল মেঝেটা পাকা করে বাঁশ দিয়ে। সব কিছুই বাঁশ দিয়ে যেন বাঁশের কেল্লা।
খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান চিকিৎসার পরে শুরু হল শিক্ষা। অক্ষর জ্ঞানের সাথে সাথে আচার আচরন নৈতিক শিক্ষা। মেডিকেল টেকনিশিয়ান লেভেলেও তারা প্রশিক্ষিত হয়ে উঠল।
এরপর তাদের মাধ্যমেই বিয়ে শাদীর মাধ্যমে সবার গড়ে উঠতে লাগল নুতন জুটি। এ এক নুতন জীবন স্পন্দন। হাঁস মুরগী পালন ছাগল কেউ কেউ গরু পালা শুরু করল। যার যার বাসার সামনের জমি চাষ করে সব্জী লাগাল। গড়ে উঠল ফল ও ফুলের বাগান।
মীর কাসেম আলীর অক্লান্ত পরিশ্রম, আন্তরিক প্রচেস্টা আর ধীশক্তিতে রাবেতা বাংলাদেশে একবিশেষ প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়। এই চিকিৎসা সেবা ছড়িয়ে পড়ল গোটা বাংলাদেশে।
এরি মধ্যে ঢাকায় বিহারীদের জন্য জেনেভা ক্যাম্পের পাশে গড়ে উঠল রাবেতা হাসপাতাল। কয়েক বছর পরে আন্তর্জাতিক চাপ রাবেতার প্রচেষ্টায় এই রোহিজ্ঞারা দেশে ফিরে যেতে সক্ষম হয়।
রোহিজ্ঞাদের সাথে সাথে আশেপাশের লোকজন চিকিৎসা সেবা পাচ্ছিল। রোহিংগারা চলে যাওয়ায় মক্কা হেড আফিস রাবিতার ফান্ড বন্ধ করে দিল। ফলে তারা আর সেবা পাচ্ছেনা। দুর দুরান্ত থেকেও আসত রোগী।
তখন মীর কাসেম আলী অন্য সবার সাথে পরামর্শ করে এই প্রজেক্ট চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি নিজে ও ডাক্তারগন তাদের বেতন না নিয়েই কাজ করতে থাকেন। পেয়িং বেড চালু করেন।
প্রত্যেক ষ্টাফকে তাদের উদ্বুদ্ধ করা হয় সব্জী চাষের জায়গা আরো বরাদ্ধ দেয়া হয়। পোল্ট্রি থেকে মুরগী পালার পদ্ধতি শিখিয়ে চাষ করা শুরু করে। মুরগীর বিষ্টাকে মাছ চাষের কাজে লাগান হয়। এইভাবে যখন প্রকল্পটি দাড়িয়ে যায় তখন রাবিতা আবার হাতে নেয়।
এবার গড়ে ওঠে বিরাট হসপিটাল কমপ্লেক্স। ক্রমে উন্নত মানের ক্যান্টিন, লাইব্রেরী, মসজিদ, রাবিতা রেষ্ট হাউজ। দুর দুরান্ত থেকে আসা রুগীদের সুবিধার্থে তৈরী হয় রাবিতা সরাইখানা।
স্থাপিত হয় স্কুল, মাদ্রাসা, নার্সিং ট্রেনিং সেন্টার। মেয়েদের থাকার হোষ্টেল। গ্রাম্য ডাক্তার প্রশিক্ষন। দেশের বড় বড় ডাক্তার নিয়ে বিভিন্ন ক্যাম্প। গড়ে তোলা হয় পুর্নাজ্ঞ অপারেশন থিয়েটার।
এই একই সময়ে কাজ শুরু হয় অবহেলিত উপজাতিদের জন্য রাংগামাটিতে ও হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, ইয়াতিমখানা, মাদরাসা, আমবাগান, আনারস বাগান।
এখানকার বিদ্যুত জেনারেটর নিজেদের চাহিদা পুরন করে অন্যদের চাহিদাও পুরণ করে থাকে। আর্মি ক্যাম্প বিদ্যুত নিয়ে থাকে রাবিতা থেকে। রাবিতা স্কুল শ্রেষ্ঠ স্কুলের মর্হাদা লাভ করে। এখানে উপজাতিদের প্রতি এতটা মনযোগ দেয়া হয়, তাদের সমস্যাকে গুরুত্ব দেয়া হয় যে তারা বাংগালিদের প্রতি বিদ্বেষ ভুলে কাজ করে একাত্ম হয়ে।
উখিয়া হিলাতে রাবিতার পক্ষ থেকে চিকৎসা কেন্দ্র চালু করা হয় জনগনের চাহিদাকে সামনে রেখে। রাংগামাটিতে যারা কাজ করছে তারা মুলতঃ কক্সবাজারে প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত। কক্সবাজারের নার্সিং ট্রেনিং কেন্দ্র থেকে বের হওয়া নার্সগন চাহিদা পুরনকরে থাকে প্রাইভেট হাসপাতালের।
এমনিভাবে রাবিতার বিভিন্নমুখি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তৎপর মীর কাসেম আলী। তখনই রাবিতাকে ব্লাক লিষ্টে ফেলা হয়। বাংলাদেশের সব প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়। মীর কাসেম আলীকে রাবিতা থেকে বাদ দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকে আমাদের সরকার।
মীর কাসেম আলীকে রাবিতা থেকে সরিয়ে মানবতা বিরোধী অপরাধে বিচারের নামে ফাঁসির ব্যবস্থা করা হল। আর অদিকে রোহিংগাদের বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না দিয়ে ঠেলে দেয়া হল সমুদ্রে। আর এ দেশের জনগন নির্যাতিত নিপীড়িত অধিকার হারা হয়ে কাটাচ্ছে বছরের পর বছর।
হে আল্লাহ আর কি আসবেনা সে সিপাহসালার! মানবতার মুক্তির জন্য ছুটে বেড়াবেনা বাংলাদেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলে দৃপ্ত পদভারে? আজ বাংলার জমিনে প্রয়োজন এক জন নয় হাজারো মীর কাসেম আলীর । হে প্রভূ! আজ এই জমিনে বড়ই প্রয়োজর মীর কাসেম আলীর
বিষয়: বিবিধ
১২৯৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন