আমাদের সমাজে স্বামী স্ত্রী কেউ কাউকে গোসল দিতে দেওয়া হয়না, অথচ এটা খুবই
লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০২:০৮:১৬ দুপুর
মৃত স্বামী স্ত্রী বা স্ত্রী স্বামী কেউ কাউকে দেখতে ও দেওয়া হয়না গোসল করাতেও দেয়া হয়না। সমাজে এমন কুধারণা চালু আছে যে,স্বামী বা স্ত্রী কেউ মারা গেলে একে অপরের জন্য তালাক হয়ে যায়।
তাই একে অন্যেকে গোসল দেয়া কিংবা দেখতে দেয়া নাজায়েয। সমাজে উক্ত অভ্যাস ব্যাপকভাবে প্রচলিত। কথিত আলেমরাও এ ফৎওয়া জারি করে রেখেছেন। অথচ এটা মূর্খতা ও সুন্নাতের বিরুদ্ধাচরণ। কারণ উক্ত মর্মে স্পষ্ট ছহীহ হাদীছ এসেছে।
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ رَجَعَ رَسُوْلُ اللهِ ص مِنَ الْبَقِيْعِ فَوَجَدَنِىْ وَأَنَا أَجِدُ صُدَاعًا فِىْ رَأْسِىْ وَأَنَا أَقُوْلُ وَارَأْسَاهُ فَقَالَ بَلْ أَنَا يَا عَائِشَةُ وَارَأْسَاهُ ثُمَّ قَالَ مَا ضَرَّكِ لَوْ مِتِّ قَبْلِىْ فَقُمْتُ عَلَيْكِ فَغَسَّلْتُكِ وَكَفَّنْتُكِ وَصَلَّيْتُ عَلَيْكِ وَدَفَنْتُكِ.
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বাক্বীউল গারক্বাদ (জান্নাতুল বাক্বী) থেকে যখন ফিরে আসলেন, তখন তিনি আমাকে মাথার যন্ত্রণা অবস্থায় পেলেন। আমি বলছিলাম, হ্যায় আমার মাথা ব্যথা!
তখন রাসূল (ছাঃ) বলছিলেন,হে আয়েশা! বরং আমার মাথায় ব্যথা হয়েছে। অতঃপর তিনি বলেন, তোমার কোন সমস্যা নেই। তুমি যদি আমার পূর্বে মারা যাও তবে আমি তোমার পাশে থাকব, তোমাকে গোসল দিব, তোমাকে কাফন পরাব এবং তোমার জানাযার ছালাত আদায় করব।
ইবনু মাজাহা হা/১৪৬৫, পৃঃ ১০৫, জানাযা অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৯; সনদ হাসান,
عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ عُمَيْسٍ قَالَتْ غَسَّلْتُ أَنَا وَعَلِىٌّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ فَاطِمَةَ بِنْتَ رَسُوْلِ اللهِ ص
আসমা বিনতে উমাইস (রাঃ) বলেন, আমি এবংহযরত আলী (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর কন্যা ফাতেমাকে গোসল দিয়েছি।
হাকেম হা/৪৭৬৯; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৬৯০৭; বায়হাক্বী, মা‘রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/২১৫৭; দারাকুৎনী হা/১৮৭৩; সনদ হাসান, অন্য দিকে হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন,
لَوِ اسْتـَقْـبَلْتُ مِنْ أَمْرِىْ مَا اسْتـَدْبَرْتُ مَا غَسَّلَهُ إِلاَّ نِسَاؤُهُ
‘পরে যা জানলাম তা যদি আগে জানতাম, তবে রাসূল (ছাঃ)-কে তাঁর স্ত্রীরা ছাড়া কেউ গোসল দিতে পারত না ।-আবুদাঊদ হা/৩১৪১, ২/৪৪৮ পৃঃ, জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩২; সনদ হাসান, ইরওয়াউল গালীল হা/৭০২, ৩/১৬২ পৃঃ। -
অতএব স্বামী আগে মারা গেলে স্ত্রী, কিংবা স্ত্রী আগে মারা গেলে স্বামী উভয় উভয়কে গোসল দেয়ার বেশী হকদার। এর বিরুদ্ধাচরণ করার অর্থই হল শরী‘আতের মর্যাদা নষ্ট করা।
মৃত্যুর পর সম্পদের ভাগাভাগি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, অথচ তাকে দেখতে পারবে না, গোসল দিতে পারবে না কেন? এগুলো স্রেফ মূর্খতা। অথচ জীবিত অবস্তায় একে অন্যের কত প্রিয় মৃত্যেু হতেই তালাক হবে কেন..?
বিষয়: বিবিধ
৫৯৫৪ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মুহাদ্দিসীনগন তো হাদীস বর্ননার ক্ষেত্রে সনদ হাজির করেছেন কিন্তু ৫০০ হিজরীতে হেদায়া লেখক কোন সনদ দেন নাই যে উনি কিভাবে ইমাম আবু হানীফা থেকে এই মাসআলা পেয়েছেন। ইমাম আবু হানিফা (র) ১৫০ হিজরীতে ইন্তেকাল করেছেন।
হযরত আলী প্রথম মুসলিম হিসেবে তাঁর কাছে দ্বীন শিখেছেন, তাঁর এই চাচাত ভাইকে রাসূল (সাঃ) প্রতিপালন করে বড় করেছেন, মা খাদিজার আর সব সন্তানদের সাথে একই পরিবারে আলী মানুষ হয়েছেন। তিনি নিজে তাঁর স্ত্রী, ফাতিমা (রাঃ)’র মৃত্যুর পর তাকে গোসল দিয়েছেন।
অন্যদিকে, রাসূল (সাঃ) এর প্রিয় বন্ধু, সাওর গুহার সাথী, হিজরতের সাথী- তাঁর শ্বশুর, আবু বকর (রাঃ) । তাঁর মৃত্যুর পর, তাঁর স্ত্রী তাঁকে গোসল দিয়েছেন।
এগুলোর লিখিত রেকর্ড রয়েছে।
সমস্যা হল, এগুলো পড়ার মত সময় এ যুগের মোল্লাদের অনেকেরই নেই। দেশাচার মেনে চলার কারনে অনেক অপসংস্কৃতিও ইসলামের জীবন বিধানে অনুপ্রবেশ করেছে! অর্থাৎ যুগ যুগ ধরে ইসলামের নামে ‘অনৈসলামিক আচরণ ও আমাদের জীবন ধারায় ঢুকে গেছে। ‘মোল্লাদের দোষ দিলেই হবে না- তাঁদের অনেকে এ পেশাকে আর সব পেশার মত জীবন ধারন বা অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে নিয়েছেন। বেতন নেয়া যদি উদ্দেশ্য হয়, সেক্ষেত্রে অত গভীর অধ্যয়ন বা গবেষণা দরকার পড়ে কি? আমাদেরও সচেতন হওয়া দরকার!
মন্তব্য করতে লগইন করুন