শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার বিষয়টি জাসদ নেতারা অবহিত ছিলেন...!
লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ১৬ আগস্ট, ২০১৪, ০৪:০৬:১১ বিকাল
শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার বিষয়টি জাসদ নেতারা অবহিত ছিলেন। কর্নেল তাহের ও তার ভাই জাহাংগীর নগর বিশ্বদ্যালয়ের বহুল আলোচিত ভিসি সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের ভুমিকা ছিলো অত্যন্ত উগ্রবাদী। প্রবলভাবে শেখ মুজিব বিরোধী।
আওয়ামীলীগ শেখ মুজিব হত্যার সাথে জিয়াউর রহমানকে দায়ি করলেও জাসদের নেতাদের ভুমিকা নিয়ে অদ্ভুত নীরবতা পালন করছে। কর্নেল তাহের শেখ মুজিবুর রহমানের লাশ কবর দেয়ার বিরোধী ছিলেন। তিনি তার লাশ বঙ্গোপসাগর ফেলে দেয়া উচিত ছিলো বলে মন্তব্য করেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের ঘটনা প্রসংগে মহিউদ্দিন আহমদ লিখেছেন, শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের আকস্মিকতায় অনেকেই হতবুদ্ধি হয়ে পড়লেও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে তেমন উত্তেজনা লক্ষ করা যায়নি। হুদা বাতেনকে বলেছিলেন, এ রকম একটা ঘটনা দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া সবার কাম্য ছিল।
শুধু দুটো বিষয়ে তাঁদের অনেকের অজ্ঞতা ছিল। প্রথমত, ঘটনাটি কবে ঘটানো হবে এবং দ্বিতীয়ত, শেখ মুজিবকে হত্যা করা হবে কি না। রশিদ-ফারুকের পরিকল্পনায় এই অভ্যুত্থানে যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন, তাঁরা সবাই হত্যা পরিকল্পনার কথা জানতেন না।
মেজর নুর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে পিকিংপন্থী ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য ছিলেন। পরে তিনি সর্বহারা পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন। সিরাজ শিকদারের নিহত হওয়ার ঘটনায় তিনি ক্ষুব্ধ হন।
১৫ আগস্টের কয়েক দিন পর সর্বহারা পার্টির কয়েকজন নেতা কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডের পাশে একটা বাসায় সন্ধ্যাবেলা বৈঠক করেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন লে. কর্নেল জিয়াউদ্দিন, আকা ফজলুল হক ও মহসীন আলী। তাঁরা নূর ও ডালিমকে ডেকে পাঠান।
নূর একাই এসেছিলেন। শেখ মুজিবের পরিবারের সবাইকে হত্যা করার বিষয়ে জানতে চাইলে নূর বলেন, ‘ওরা আমার নেতাকে খুন করেছে, আমি সবাইকে মেরে প্রতিশোধ নিয়েছি।’ নূরের উদ্ধত আচরণে এবং নৃশংসতার পরিচয় পেয়ে জিয়াউদ্দিন ক্ষুব্ধ হন।
মুজিব হত্যার পরিকল্পনায় বিমানবাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তার অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরে তাঁদের বাদ দিয়েই এই অপারেশন চালানো হয়। এ রকম একটা ‘অ্যাডভেঞ্চারে’ শরিক হতে না পেরে তাঁরা মনঃক্ষুণ্ন হয়েছিলেন। এর প্রকাশ ঘটেছিল নভেম্বরে।
কর্নেল তাহের সম্ভবত জানতেন না, ১৫ আগস্ট তারিখটিই অভ্যুত্থানের জন্য নির্ধারিত হয়ে আছে। তবে এ রকম একটা ঘটনা যে ঘটতে পারে, তা তাঁর অজানা থাকার কথা নয়। প্রশ্ন ছিল, কবে, কখন? শেখ মুজিবের সরকারকে উৎখাতের জন্য তাহেরের নিজস্ব পরিকল্পনা ছিল। শেখ মুজিবের প্রতি তাঁর ক্ষোভ ছিল অপরিসীম।
তাহের মনে করতেন, ‘মুজিব সরকার সেনাবাহিনীর উন্নয়নে চরম অবহেলা দেখিয়েছে এবং রক্ষীবাহিনীর মতো একটা কুখ্যাত আধা সামরিক বাহিনী তৈরি করেছে। তিনি সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। যুদ্ধের সময় ভারতের সঙ্গে করা গোপন চুক্তির ব্যাপারেও তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।
বাহাত্তর সালের নভেম্বরেই এসব ঘটেছিল এবং এ কারণেই লে. কর্নেল জিয়াউদ্দিন এবং তিনি যাঁর যাঁর রাজনৈতিক লাইন বেছে নিয়েছিলেন। অবশ্য তাঁরা পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করতেন।’
ছিয়াত্তরে তাহের ও অন্যদের বিচারের সময় ট্রাইব্যুনালে দেওয়া জবানবন্দিতে তাহের এসব কথা উল্লেখ করেন।
শেখ মুজিব সম্পর্কে কর্নেল তাহেরের মূল্যায়ন ছিল এ রকম: শেখ মুজিব জনগণের নেতা ছিলেন। এটা অস্বীকার করার অর্থ হবে সত্যকে অস্বীকার করা।
চূড়ান্ত বিশ্লেষণে তাঁর ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের ভার জনগণের ওপরই বর্তায়। জনগণের জন্য সঠিক পথ হবে জেগে ওঠা এবং প্রতারণার দায়ে মুজিবকে উৎখাত করা। আমার দৃঢ়বিশ্বাস, যে জনগণ মুজিবকে নেতা বানিয়েছে, তারাই একদিন স্বৈরাচারী মুজিবকে ধ্বংস করবে। জনগণ কাউকে ষড়যন্ত্র করার অধিকার দেয়নি।
বিষয়: বিবিধ
১৩৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন