মুসলমানদের জন্য এক মাত্র জীবন বিধান হলো আল্ ইসলাম। সুযোগ সন্ধানীরাই বলে অন্যকথা..!
লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৩:১৫:১৪ দুপুর
আমরা মুসলমানেরা ইসলামের অনেক কিছুই জানিনা, না জেনে ইসলামের পক্ষে বি-পক্ষে অনেক মন্তব্যই করে থাকি। কিন্তু জানার জন্য চেষ্টা খুব বেশী একটা করিনা। আমরা অনেকেই মক্কায় অবতীর্ণ সূরা কাফিরুনের উল্লেখ করে বলে থাকি, ‘ইসলামে ইসলামীরাষ্ট্র করার কোনো বিষয় নেই, ধর্ম ব্যাক্তিগত ব্যাপার’।
সূরা কাফিরুন নাজিলের পটভূমিকা সম্পর্কে ইবনে হাতিম, তাফসির ইবনে জারির ও ইবনে হিশামের সিরাতে উল্লেখ রয়েছে, মক্কার অমুসলিম নেতারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একটি সমঝোতা প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
তাতে তারা বলেছিলেন, তারা মুসলিমদের সাথে এক বছর আল্লাহর ইবাদত করবেন; পরের বছর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মুসলিমদেরকে লাত ও উজ্জার পূঁজা করতে হবে।
আল্লাহতায়ালা সূরা কাফিরুন নাজিল করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন, এ ধরনের ইবাদতের মিশ্রণ গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ এবং লাত-উজ্জার ইবাদত এক সাথে করা যায় না। আল্লাহতায়ালা বলেন:
‘হে রাসূল! আপনি বলুন, হে কাফের সম্প্রদায়, তোমরা যাদের ইবাদত করো, আমি তাদের ইবাদত করি না। আমি যার ইবাদত করি, তোমরা তার ইবাদত করো না।.......... তোমাদের ধর্ম (জীবন ব্যবস্থা) তোমাদের জন্য এবং আমার জন্য আমার দ্বীন। তথা আমার জীবন ব্যবস্থা আমার জন্য।
এ সূরায় মূলত ইবাদত পদ্ধতির মিশ্রণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রত্যেকে তার ইবাদতের ক্ষেত্রে স্বাধীন তা-ও বলা হয়েছে। এ সূরার অন্য কোনো তাৎপর্য নেই। যদি এর অর্থ সেকুলারিজম (রাষ্ট্রিয় ক্ষেত্রে ধর্ম বর্জনবাদ) হতো তাহলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে মদিনা গিয়েই একটি রাষ্ট্র গঠন করতে হতো না।
আমরা সবাই ‘মদিনা সনদ’-এর কথা জানি, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহুদিদের সাথে আলাপ- আলোচনা করে জারি করেছিলেন। এ সনদের মূল কথা ছিল নিন্মরূপঃ-
০১- সব মুসলিম এক উম্মাহ (একটি আদর্শভিত্তিক জাতি)।
০২- ইহুদিদের অধিকার সমান, তাদের ওপর অত্যাচার করা যাবে না এবং তাদের শত্রুদের সাহায্য করা যাবে না্
০৩. ইহুদি ও মুসলিমরা মিলে একটি মিল্লাত (তারা একই রাজনৈতিক ও জাতীয়তা অর্থাৎ মদিনা রাষ্ট্রের নাগরিক)।
০৪- তারা উভয়ে মিলিতভাবে মদিনাকে রক্ষা করবেন।
০৫- সনদের আওতাধীন সকলের জন্য এ শহর হবে নিরাপত্তার স্থান।
০৬- সব মতবিরোধপূর্ণ বিষয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে সিদ্ধান্তের জন্য পেশ করা হবে।
মদিনা রাষ্ট্রের আইন ছিল ইসলামী আইন। তবে ইহুদিদের ব্যক্তিগত আইন তাদের শরিয়াহ মোতাবেক নির্ধারিত হতো। এ অবস্থা খেলাফতে রাশিদিনের সময় পরিবর্তন করা হয়নি। তারা সবাই শাসক হিসেবে ইসলামকেই অনুসরণ করতেন।
রাষ্ট্রের আইন ছিল কুরআন ও সুন্নাহভিত্তিক। এর বাইরে আইনের প্রয়োজন হলে তা ইজতিহাদের মাধ্যমে নির্ধারিত হতো। অসংখ্য নতুন বিধান তারা করেছিলেন। এসবের বেশির ভাগই ছিল প্রশাসন সংক্রান্ত (ইসলামী আইনের পরিভাষায় এসব আইনকে ‘সিয়াসা আশশারিয়াহ’ বলে)।
বিচারব্যবস্থা কাজীদের হাতে ছিল। তারাই ইসলামী আইনের ভিত্তিতে বিচার করতেন।
একই অবস্থা উমাইয়া, আব্বাসীয়, উসমানীয়, ফাতিমীয়, মোগল আমলে অব্যাহত ছিল; এমনকি বাংলাদেশের সুলতানি আমলেও। ইসলামী আইনই রাষ্ট্রের ভিত্তি ছিল। কাজীরাই বিচার করতেন। ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও এসব রাষ্ট্রের মূল বৈশিষ্ট্য ইসলাম ও ইসলামী আইনই ছিল।
মুসলিম ইতিহাসে রাষ্ট্র ও ইসলাম কখনোই বিচ্ছিন্ন ছিল না- সে রাষ্ট্রের শাসক সুন্নি, শিয়া, খারাজি যা-ই হোন না কেন। এর পরিবর্তন ঘটেছে উপনিবেশবাদের সময়। যা হোক, ইসলামে বিষয়টি বিতর্কমূলক নয়। বিষয়টিকে বিতর্কিত না করার জন্য সবাইকে অনুরোধ করছি। আল্লাহ আমাদেরকে তার দীনের পূর্ণ অনুস্বারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।।
বিষয়: বিবিধ
১২৭০ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন