কার্পেটে ঘুমানো এক রাষ্ট্রপ্রধানের বিদায়।

লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ০৬ আগস্ট, ২০১৩, ০৫:৪৯:৩০ বিকাল

কার্পেটে ঘুমানো এক রাষ্ট্রপ্রধানের বিদায়।

টাইমসের প্রতিবেদনটি কি আপনারা খেয়াল করেছেন? ইরানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে মাহমুদ আহমেদিনেজাদের আট বছরের শাসনকালকে বিখ্যাত ম্যাগাজিনটি বর্ননা করেছে কোলাহলপূর্ণ হিসেবে।

এটাতো ঠিকই নিজের শাসনামলে সবসময়ই পশ্চিমাদের এক ধরনের টেনশনে রেখেছেন আহমেদিনেজাদ। ইসরায়েলের সমালোচনায় বরাবরই মুখর ছিলেন তিনি। যে কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও ছিলেন চক্ষুশূল।

বিপরীত আদর্শের হয়েও ক্যাস্ট্রো, শ্যাভেজের সঙ্গে ছিল তার সখ্যতা। আহমেদিনেজাদের সবচেয়ে বড় সফলতা সম্ভবত বিশ্ব রাজনীতির দৃষ্টি পশ্চিম থেকে সরিয়ে নিয়ে আসার মধ্যে।

তবে মানুষ আহমেদিনেজাদ নিশ্চিতভাবে ছাড়িয়ে গেছেন

রাজনীতিবিদ আহমেদিনেজাদকেও। আট বছর আগে তার

প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগের সময়ের কথা টাইমসকে বলেছেন জাফর সালদি নামে এক

ইরানি নাগরিক।

তিনি বলেন, আমি তাকে প্রথম টিভিতে দেখেছিলাম। দেখে মনে হলো তিনি আমাদের মতই একজন। আমি আমার সন্তান আর পরিচিতদের বললাম

তাকে ভোট দিতে।

পেশায় শিক্ষক আহমেদিনেজাদ রাজনীতিতে আসেন ১৯৭৯

সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পরপরই। ২০০৩ সালে মেয়র নির্বাচিত হন তেহরানের। এরপর ক্রমশ এগিয়ে যান তিনি।

দুই বছর তেহরানের মেয়র থাকার পর জনগনের বিপুল

ভোটে নির্বাচিত হন ইরানের প্রেসিডেন্ট। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরপরই তিনি তার অফিসে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনেন।

প্রেসিডেন্ট ভবনের দরজা-জানালা খুলে দেয়া হয় সাধারণের জন্য। প্রেসিডেন্ট অফিসে সপ্তায় পাঁচ দিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সাধারণ ইরানিদের চিঠি গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়।

প্রেসিডেন্ট হয়েও আহমেদিনেজাদের জীবনধারণ ছিল

একেবারেই সাধারণ। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েই প্রেসিডেন্ট

ভবনের দামি কার্পেটগুলো তেহরাণের মসজিদে দান করে দেন।

এরপরিবর্তে সাধারণ মানের কার্পেট বিছানো হয় প্রেসিডেন্ট

ভবনে। প্রেসিডেন্ট ভবনের ভিআইপি অতিথিশালাও বন্ধ

করে দেয়া হয়। একটি সাধারণ ঘরেই ভিআইপিদের

সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা রাখা হয়। রাতে যখন ঘুমাতে যেতেন প্রেসিডেন্ট হয়ে যেতেন আরও সাধারণ।

মেঝেতে বিছানো কমদামি কার্পেটেই ঘুমাতেন তিনি।

সকালে অফিসে আসার সময় একটি সাধারণ ব্যাগে করে স্ত্রীর তৈরি করে দেয়া খাবার নিয়ে আসতেন আহমেদিনেজাদ।

প্রেসিডেন্টের জন্য আলাদা বিমান পরিসেবার ব্যবস্থা থাকলেও তা তিনি পরিণত করেন সাধারণ কার্গো বিমানে। শনিবার ইরানের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বিদায় নেয়ার আগেও ইতিহাস তৈরি করে গেলেন আহমেদিনেজাদ।

ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান আয়াতুল্লাহ সাদেক লারিজানির কাছে লেখা এক চিঠিতে আট বছরে অর্জিত সম্পদের হিসাব দিয়ে যান তিনি। যে হিসাবে দেখা যায়, ২০০৫ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর তার সম্পদে যে পরিবর্তন এসেছে।

তা হলো- তিনি তার পুরোনো বাড়িটি পুনর্নিমাণ করেছেন।

তবে বাড়িটি পুনর্নিমাণের জন্য তিনি ব্যাংক ও প্রেসিডেন্ট

দপ্তরের ফান্ড থেকে ঋণ নেন। প্রেসিডেন্টের দপ্তরের ফান্ড

ও ব্যাংক থেকে বাড়ি নির্মাণের জন্য অসংখ্য মানুষ ঋণ

নিয়েছেন।

প্রেসিডেন্টও সাধারণ একজন নাগরিক হিসেবে সেই ঋণ নিয়েছেন। ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট হিসেবে কোন

ধরনের প্রভাব খাটাননি। একইসঙ্গে বাড়ি পুনর্নিমাণের

ক্ষেত্রে তার স্ত্রী, সন্তান ও স্বজনরাও সহযোগিতা করেছেন।

পুনর্নিমিত দুই তলা ভবনে চারটি ফ্লাট রয়েছে। ওই ভবনেই তিনি ও তার স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বসবাস করবেন। যে জমিতে বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে, সেটার আয়তন মাত্র ১৭৫ বর্গমিটার। জমিটুকু বাবার কাছ থেকে পাওয়া।

এরইমধ্যে তিনি সরকারি বাসভবন ছেড়ে দিয়েছেন।

জাফল সালদির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলি,

আহমেদিনেজাদ আমাদেরই একজন। তবে আমাদের মত নন। আমাদের প্রেসিডেন্ট হলে তার হাজার হজার কটি টাকা থাকতো

বিষয়: বিবিধ

১৪৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File