সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ যাওয়ার হিড়িক! এত সফর কি দেশের উন্নয়নে?

লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ০৪ আগস্ট, ২০১৩, ০৮:১৩:৪৫ রাত

বছরে চারবার বিদেশ সফরের নির্দেশনা থাকলেও বেশিরভাগ সরকারি কর্মকর্তা তা মানছেন না। ঘন ঘন বিদেশ সফর পরিহার করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বারবার সতর্ক করা হলেও তা কোনো কাজে আসছে না। বরং সরকারের শেষ সময়ে এসে বিদেশে সফরের হিড়িক পড়েছে।

সচিবালয়ে গেলে দেখা যাবে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব থেকে শুরু করে প্রশাসসেন মূল কর্তা ব্যক্তি সচিব পর্যন্ত প্রত্যেকেই বিদেশ যাওয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। আর এ বিষয়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন মন্ত্রী, সচিবের পিএস, এপিএসরা।

মন্ত্রণালয়ের যেকোনো ধরনের বিদেশ ভ্রমণে তাদের সফরসঙ্গী হতেই হবে। অভিযোগ রয়েছে, মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীকে দিয়ে যেকোনো সফরের ফাইলে সম্মতি পেতে তাদের হাতে রাখেন কর্মকর্তারা।

জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, যারা চারবারের বেশি বিদেশ ভ্রমণে যাচ্ছেন তাদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যালোচনা করতে পারে।

তারা কেন বিধিবহির্ভূত বিদেশ যাচ্ছেন বা তিনি ছাড়াও অন্য কোনো কর্মকর্তা যেতে পারতেন কি না এসব বিষয় পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নিলে এ প্রবণতা কমে যাবে।

দায়িত্ব নিয়েই আমলাদের বিদেশ সফরের বিষয়টি বিবেচনায় নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৯ সালের ১৫ জুন সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে অনিয়ম দূর করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশ দেন তিনি।

একজন কর্মকর্তা বছরে সর্বোচ্চ কতবার বিদেশ যেতে পারবেন, তা নির্দিষ্ট করে দেয়ার কথা বলেন তিনি।এ পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জরুরি ভিত্তিতে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেন।

বৈঠকে ব্যক্তিগত ও দাফতরিক কারণে কারা বিদেশে যেতে পারবেন, তা নির্ধারণ করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ওই বছরের ১৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. আবদুল করিম সরকার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি ও কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ প্রসঙ্গে চার দফা নির্দেশনা দিয়ে একটি পরিপত্র জারি করেন।

পরিপত্রে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব, যুগ্ম সচিব ও সংস্থাপ্রধানের একসঙ্গে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পাশাপাশি সচিবকে বছরে চারবারের বেশি বিদেশ ভ্রমণে যেতে নিষেধ করা হয়।

এরপরও অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায় সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর নিয়ন্ত্রণে আনতে একটি নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। এ নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা অনেক দিন ধরে কাজ করে নীতিমালার খসড়াও চূড়ান্ত করে।

পরে কর্মকর্তাদের বিরোধিতায় দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে মন্ত্রণালয়। নীতিমালা প্রণয়নে দেরি হওয়ায় গত বছরের ১৯ জুন আবারও একটি পরিপত্র জারি করা হয়।

অবশেষে নীতিমালা প্রণয়নের বিষয় থেকে সরে আসে মন্ত্রণালয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে অনেক আগে।

তবে অজ্ঞাত কারণে নীতিমালা প্রণয়নের বিষয় থেকে সরে এসেছে সরকার। এটি আর কখনো আলোর মুখ দেখবে বলে মনে হয় না।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুর রব হাওলাদার। ২০১১ সালের ৭ মার্চ তিনি চার দিনের সফরে জার্মানিতে যান। ১২ এপ্রিল যান ইন্দোনেশিয়ায়। দেশে ফিরে ২৫ দিন পর ১১ মে যান দক্ষিণ কোরিয়ায়। ওই মাসেরই ৩১ তারিখ আবারও আট দিনের সফরে রাশিয়ায় যান। দেশে ফেরার ২০ দিনের মাথায় ২৭ জুন ১২ দিনের সফরে ফ্রান্স এবং ৯ আগস্ট আমেরিকায় যান। এর ৪০ দিন পর ২৬ সেপ্টেম্বর যান অস্ট্রিয়ায়। বিদ্যমান বিধি অনুযায়ী বছরে সর্বোচ্চ চারবার বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ থাকলেও এই সচিব সাত মাসে সাত দফায় ৪০ দিন বিদেশ ভ্রমণ করেছেন।

একইভাবে খাদ্য বিভাগের সাবেক সচিব বরুণ দেব মিত্র গত এক বছরে ১১ বার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। এর মধ্যে ভিয়েতনামে দুইবার, থাইল্যান্ডে তিনবার, ইতালিতে দুইবার, ভারত, তুরস্ক,আমেরিকা ও ইউক্রেনে একবার করে যান। ইউক্রেন থেকে তিনি রাশিয়ায়ও যান। এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে চাইলে ‘এটা ঠিক নয়’ বলে রেগে জানান-‘সাংবাদিকদের কোনো কাজ নেই যে কে কতবার বিদেশে গেল তা খুঁজতে হবে?’ বলেই মোবাইল ফোনের সংযোগ কেটে দেন তিনি। আবার ফোন করলে তিনি রিসিভ করেননি।

নৌসচিব আবদুল মান্নান হাওলাদার গত বছর ৯ দফায় ১৩টি দেশ ভ্রমণ করেছেন। তবে তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এক বছরে নয়, দুই বছরে নয় বার বিদেশে গেছেন।

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব মেসবাহ-উল-আলমও ছয় মাসে বিদেশ সফর করেছেন ছয়বার। অতিরিক্ত সচিব অরূপ চৌধুরী গত দেড় বছরে ১৫ বার, উপসচিব মঞ্জুরুল হান্নান খান দেড় বছরে ১৪ বার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন।

তবে তারা প্রত্যেকেই ‘তথ্য ঠিক নয়’ বলে দাবি করেছেন। এ অবস্থা শুধু পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়েই নয়, অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগের একই চিত্র। দেশ প্রেমিক জনদরদী সরকার ও জবাবদিহির মানশিকতা না থাকলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে।

বিষয়: বিবিধ

১৪২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File