জামায়াতের নিবন্দন বাতিল করে আওয়ামী সরকারের আঙ্গুল কি কলা গাছ হয়েগেছে...?

লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ০২ আগস্ট, ২০১৩, ০৬:২২:৫৯ সন্ধ্যা

দেশের হাইকোর্ট একটি বিভক্ত রায়ে ইলেকশন কমিশনের দেয়া জামায়াতের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করেছে। কেউ কেউ এখন জামায়াতের রাজনীতিই পুরোপুরিভাবে নিষিদ্ধকরন, জামায়াত নেতা-সাপোর্টারদের ভোটাধিকার বাতিলকরণ সহ নানামুখী এডভেঞ্চারাস দাবিদাওয়া নিয়েও কথা বলা শুরু করেছেন।

যারা ১৯৭১ কে কেন্দ্র করে তাদের ইহকালীন জীবনের প্রতিটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তারা এসব শুনে খুশি হতে পারেন। কারন তারা রাজনীতি করেছে নিজেদের ভাগ্য পরির্বতনের জন্য, দেশ জাতি এবং ইসলামের জন্য তারা কেনদিন কিছুই করেনি।

কিন্তু যারা একাত্তর পরবর্তী ৪২ বছরের বাংলাদেশের রাজনীতি এবং সর্বপরি বিশ্ব রাজনীতির আলোকে বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে একটু ভাবতে শিখেছেন, তারা বুঝতে পারবেন রেজিস্ট্রেশন বাতিলের এই ঘটনায় দেশকে আরো একধাপ বিভক্ত এবং অনিশ্চয়তায় ফেলা হয়েছে এবং এটি ইসলামের উপর চরম আঘাত।

একদল ছোটখাটো ইসলামী দলকে দিয়ে দেশের বৃহত্তম ইসলামী রাজনৈতিক দল জামাতের রেজিষ্ট্রেশন বাতিলের মামলা করা হয়েছিল। মামলা পরিচালনা করেছেন কিছু চিন্হিত ব্যক্তি যারা দেশে আর যাই হোক, ইসলামের খাদেম হিসেবে পরিচিত নন।

সুতরাং কিছু জনসমর্থনহীন ইসলামী দল দ্বারা আপিলকৃত এবং প্রতিষ্ঠিত সেকুলারিস্ট দ্বারা পরিচালিত এই মামলার আপাত ফলাফল যাই হোক, দীর্ঘ মেয়াদী ভিত্তি মজবুত হবে না।

বিশেষ করে একদল অখ্যাত ইসলামী দল যখন অনুকূল পরিবেশ পেয়ে দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী দলের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করতে সক্ষম হয়, তা কিন্তু কিছুটা দৃষ্টিকটুই দেখায়।

সেকুলারদের সাথে এই মাজার পুজারিদের কি গভীর সম্পর্ক! তাহলে সেকুলারিস্ট আর মাজার পুজারিরা কি এক হয়ে গেল? এদিক থেকে চিন্তা করলে, মামলাটা আওয়ামী লীগ কিংবা গণজাগরণ মঞ্চ করলে এর চাইতে ভালো হতো।

রেজিষ্ট্রেশন বাতিলের চারটি কারণের প্রথম কারণ হিসেবে যা দেখানো হয়েছে তার উৎস হলো সরাসরি কুরআনের একটি আয়াত। "ইনিল হুকমু ইল্লাল্লাহী" বা "স্বার্ব ভৌমত্ব কেবল আল্লাহর" এই বানীটি আল্লাহর।

কুরআনের একটি নোকতা পরির্বতন করার সাধ্য দুনিয়ার কোন মানুষের নেই।ওরা হাত দিল একটি আয়াতের উপর। যারা ইসলাম বোঝেন, কুরআন-সুন্নাহ মানেন, তাদের পক্ষে এই আয়াত অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।

তাই বলে যে দেশের সবাই এই মুহুর্তে শরিয়া আইন চাচ্ছেন তাও না। তবে এটা ঠিক, জোড় জরবর্দস্তি বেশি করলে, অনেককেই পাওয়া যাবে যারা এই আয়াতের প্রতি আনুগত্যই আগে দেখাবেন, অন্য কিছু মানার পরিবর্তে।

উপরের বাস্তবতার কারণেই সংবিধানে "বিসমিল্লাহ", "স্বর্ব শক্তিমান আল্লাহয় পূর্ণ আস্থা" ইত্যাদি বাক্য জুড়ে দিয়ে জনগনের স্বার্বভৌমত্ব ও আল্লাহর স্বার্ব ভৌমত্বের মধ্যে মোটামোটি কাজ চালানোর মতো একটা মিলন ঘটানো হয়েছিল।

আল্লাহ ও জনগনের স্বার্বভৌমত্যর যে কাজ চালানোর মতো মিলন আমাদের সংবিধানে ছিল, সেই মিলন ইসলামপন্থী কিংবা সেকুলার কারো জন্যেই হয়তো আইডিয়াল ছিল না। তবে প্রাক্টিকাল ছিল নিঃসন্দেহে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সমর্থনও ছিল।

বলা বাহুল্য আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা বাক্যটি এই সরকার এসেই বাতিল করেছে। গতকালকের রায়ের মাধ্যমে এই প্রাক্টিকাল সলুশনটি আরও এক ধাপ ছুড়ে ফেলা হলো। মানুষকে ইসলাম ও জাগতিক আইনের মধ্যে সুনির্দিষ্ঠ পক্ষ বেছে নেবার দ্বায়িত্ব দেয়া হলো।

এক্ষেত্রে কোন সাইডে মানুষের সিমপেথী বেশি থাকতে পারে তা বুঝতে খুব বেশি অক্ষরজ্ঞানের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।

রায়টির সবচাইতে বেকায়দা দিকটি হলো আওয়ামী লীগ রাজনীতির মাঠে গলা খুলে বলতে পারবে না কি কারণে তারা জামায়াত এর নিবন্ধন নিষিদ্ধ করিয়েছে। গ্রামে গঞ্জের মানুষকে এ কথা বলার দু:সাহস কোনো রাজনীতিবিদের নাই।

যে "আল্লাহর উপর স্বার্ব ভৌমত্ব" অর্পণ করার অপরাধে কারো নির্বাচন করার অধিকার হরণ হয়েছে। এটা একটা রাজনৈতিক বাস্তবতা। আওয়ামী লীগ কি ভাবে এটা হ্যান্ডল করে দেখার অধীর অপেক্ষায় রইলাম।

দেশের আইন বিভাগকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে একের পর এক যথেচ্ছা ব্যবহার করার আরো একটি নজির হয়ে ধরা দিতে পারে এই রায় কারো কারো চোখে।

একাধিক বৈজ্ঞানিক জরিপে মাত্র কিছুদিন আগেই বেরিয়ে এসেছে যে দল হিসেবে জামায়াতের সমর্থন আগের মতো থাকলেও, দলটি নিষিদ্ধের ব্যাপারে দেশের ৬৫ ভাগ মানুষের সমর্থন নেই।

বিচার বিভাগ এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা উঠিয়ে দিয়েছে। ধারণা করা হয় সেক্ষেত্রে ৭০-৮০ ভাগ নাগরিকের সমর্থনের বিরুদ্ধে যাওয়া হয়েছে। জনমত ও বিচারকদের মতের এই বিশাল পার্থক্যগুলো বিচার বিভাগের জন্যে সুফল বয়ে নাও আনতে পারে।

ইতিহাস বলে নির্বাহী বিভাগের রাজনৈতিক চালের গুটি হয়ে গেলে কোন প্রতিষ্ঠান অতীতে শান্তিতে থাকতে পারেনি। নির্বাচনী হিসেব নিকেশে শাসক গোষ্ঠির সত্যিকারের কোন লাভও হয়নি এই রায়ে।

জামাতের সমর্থকরা যদি অন্তত জানটা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারেন এবং ভোট দিবার অধিকার রাখেন, তাহলে তারা জীবনে আর কবে আওয়ামী লীগের সাথে নির্বাচনী সমঝোতায় যাবেন তা একমাত্র আল্লাহই বলতে পারবেন।

মাত্র ক'মাস আগেও আওয়ামী লীগ জামাতের সাথে নির্বাচনী গুটি চালাচালি করেছে বলে শুনা যায়। আর মাত্র ক'বছর আগেও জামাতের শীর্ষ নেতৃত্বকে বিএনপি ছেড়ে চলে আসার বিনিময়ে বিচার প্রক্রিয়ায় ছাড় দেবার অফার দেয়া হয়েছিল বলে গুজব রয়েছে।

সেই জামাতকেই এই রায়ের মাধ্যমে আনফিসিয়ালি বিএনপির কিংবা আরো কট্টর পন্থী কোন ইসলামী দলের ভোটার বানিয়ে দেয়া হলো। অন্য ভাবে বললে বলা যায়।

জামাতের সমর্থকদের মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার অধিকার ও ভোটাধিকার বাতিল করা ছাড়া ভোটের রাজনীতিতে সুবিধা আদায়ের তেমন কোন অপশন শাসক গোষ্ঠী আর নিজেদের জন্যেই রাখলেন না।

পরাক্রমশালী শাসকশ্রেণী সব কিছুকেই কেমন জানি ডু অর ডাই মোমেন্ট-এ নিয়ে যাচ্ছেন । দেয়ালে পিঠ ঠেকানোর এই খেলায় কেউই হয়তো জয়ী হবে না। তবে নিশ্চিতভাবে হারবে অনেকেই ।

বিষয়: বিবিধ

১১২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File