মুসলিম ব্রাদারহুড সমর্থকদের ওপর পরিকল্পিতভাবে গণহত্যা চালায় সেনাবাহিনী।
লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ২১ জুলাই, ২০১৩, ০৫:২১:২১ বিকাল
গত ৮ জুলাই শেষ রাতে মিশরের রাজধানী কায়রোর রিপাবলিকান গার্ড ক্লাবের সামনে মুসলিম ব্রাদারহুড সমর্থকদের ওপর পরিকল্পিতভাবে গণহত্যা চালায় দেশটির আমেরিকান সমর্থনপুষ্ট সেনাবাহিনী।
সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ওই ঘটনায় ৫৪ জন নিহত হয়েছে। তবে ব্রাদারহুড বলছে, ফজরের নামাজরত মুরসি সমর্থকদের ওপর গুলিতে নিহত হয়েছে ১০৩ জন।
সেনাবাহিনী বলছে, তাদের ওপর ‘সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা’ আক্রমণ চালালে আত্মরক্ষার জন্য তারা গুলি চালাতে বাধ্য হয়। ব্রাদারহুড বলছে, নামাজরত মুরসি সমর্থকদের ওপর বিনা উস্কানিতেই গুলি চালায় সেনাবাহিনী।
আসলে কী ঘটেছিল সেই রাতে?
এ নিয়ে অনুসন্ধান চালায় ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক গার্ডিয়ান। এতে দেখা যায়, শান্তিপূর্ণ এবং নিরস্ত্র মুরসি সমর্থকদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞ চালায় সেনাবাহিনী। গতকাল এ নিয়ে একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশ করে গার্ডিয়ান।
পেট্রিক কিংসলের সেই আলোচিত রিপোর্টের সারসংক্ষেপ আরটিএনএন পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:-
গত ৮ জুলাই ভোর রাত ৩ টা ১৭ মিনিটে পূর্ব কায়রোর রিপাবলিকান গার্ড ক্লাবের বাইরে ফজরের নামাজে সেজদারত ছিলেন ড. ইয়াহিয়া মুসা। তিনি মিশরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। কয়েক ঘণ্টা পরই তার অফিসে যাওয়ার কথা। তিনি সেখানে গিয়েছিলেন ব্যক্তিগত উদ্যোগে। সেখানে আরো ছিল প্রায় দুই হাজার মুরসি সমর্থক। ধারণা করা হতো, এখানেই মুরসিকে আটক রাখা হয়েছে।
মুসার সাথেই ছিলেন আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ড. রেদা মোহাম্মদী এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োক্যামেস্ট্রির অধ্যাপক ড. ইয়াসির তাহা। ছাত্রজীবন থেকে বন্ধু এই তিন জন সেই রাতে সেখানে তাবুতে ছিলেন।
এর এক ঘণ্টার মধ্যে ঘাড়ে গুলি লেগে নিহত হন তাহা। উরুতে গুলি লেগে অজ্ঞান হয়ে পড়েন মোহাম্মদী। মুসার দুপায়েই গুলি লেগে তর্জনী ছিটকে যায়। হোসনি মোবারকের পতনের পর এরা তিনজনই ৮ জুলাই শেষ রাতে সরকারের রক্তাক্ত গণহত্যার শিকার।
সামরিক বাহিনী বলছে, সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে তারা ওই আক্রমণ চালায়। তাদের ভাষ্য হলো, চারটার দিকে ১৫ জন মোটরসাইকেল আরোহী রিপাবলিকান গার্ড কম্পাউন্ডের কাছাকাছি এসে গুলি করতে শুরু করে এবং কম্পাউন্ড ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা চালায়। তখন রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি রক্ষায় তাদের গুলি করা ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না।
তবে এক সপ্তাহ ধরে অনুসন্ধান, প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় অধিবাসী এবং চিকিৎসকসহ ৩১ জনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ এবং ভিডিও প্রমাণাদি বিশ্লেষণ করে মোটরসাইকেল আরোহীদের আক্রমণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
বরং পাওয়া গেছে একটি ভিন্নতর বিবরণ। দেখা গেছে, মূলত শান্তিপূর্ণ ও নিরস্ত্র বেসামরিক জনতার ওপর নিরাপত্তা বাহিনী পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে।
সেই সময় সেনা সদস্য সেখানে দায়িত্ব পালন করছিলেন তাদের সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য চারবার সেনাবাহিনীকে অনুরোধ করা হলেও তারা তাতে রাজি হয়নি।
সেনাবাহিনীর মুখপাত্র যে ভিডিও সরবরাহ করেছে তাতে দেখা যায়, মুরসি সমর্থকরা কিছুটা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে বটে, তবে তা গণহত্যার পরে। হামলার আধাঘণ্টা আগে মুরসি সমর্থকরা শুধু পাথর নিক্ষেপ করেছে।
৩:১৭: আজান
৩ জুলাই শুক্রবার থেকেই মুরসি সমর্থকরা রিপাবলিকান গার্ড ক্লাবের বাইরে অবস্থান নেয়। ৮ জুলাই রাত ৩টার কিছুটা আগে তারা জেগে উঠেন। তারা কায়রোর প্রধান মোড় সালাহ সালেম স্ট্রিট বন্ধ করে দেয়। অবস্থানের প্রথম দিনই তিনজন মুরসি সমর্থককে গুলি করে হত্যা করা হয়।
সোমবার ৩ টা ১৭ মিনিটের দিকে ফজরের আজান হয়। এ সময় সবাই ছিলেন শান্ত। তাবুর ভেতরে অনেক নারী ও শিশুও ছিল। কাঁটাতারের বেড়ার ভেতরে অলস সময় কাটাচ্ছিল এক প্লাটুন সেনা সদস্য। তখনও অনেকে ঘুমাচ্ছিলেন। তবে বেশিরভাগ লোকই নামাজের জন্য কাতারে দাঁড়ান।
এর আধা কিলোমিটার দূরে রাবা আল আদাবিয়া মসজিদের সামনে ছিল মুরসি সমর্থকদের আরো বড় অবস্থান। তরুণ চিকিৎসক ড. মোস্তফা হাসনাইনের সেদিন ছিল নৈশ দায়িত্ব। তিনি ৩টার দিকে সেখানে যান।
তিনি বলেন, ‘সব কিছুই ছিল শান্ত। লোকজন নামাজ পড়ছিল। সেনাবাহিনীও শান্ত ছিল। কেউ কেউ কাঁটাতারের বেড়ার পাশের বিক্ষোভকারীদের সাথে কথা বলছিলেন।’
এরপর কী ঘটেছিল তা নিয়ে জোর বিতর্ক রয়েছে। তবে বেশিরভাগ প্রত্যক্ষদর্শী একমত, সাড়ে ৩টার আগে এক বার হামলার ঘটনা ঘটে। সে সময় নামাজিরা দ্বিতীয় রাকাতের সেজদায় ছিলেন।
মুসা বলেন, ‘দ্বিতীয় রাকআতের সিজদার সময় আমরা অবস্থানরত লোকদের দিক থেকে শোরগোল শুনতে পেলাম। এ অবস্থায় ইমাম সাহেব মুনাজাত সংক্ষিপ্ত করে দ্রুত নামাজ শেষ করলেন।’
আরো অনেকে তার সাক্ষ্যেরই পুনরাবৃত্তি করেন। এ সময় ব্যারিকেডের পাহাড়াদারারা অ্যালার্ম বাজাতে থাকে। এটি ২০১১ সালের বিপ্লবের সময় বাজানো হতো। এর মানে হচ্ছে হামলা আসন্ন।
৩:২৫: সেনা চলাচল শুরু
ঘণ্টা বাজার শব্দ পেয়ে ওই স্থানের ২০০ মিটার দূরের একটি অ্যাপার্টমেন্টে তরুণ প্রকৌশলী গামাল জেগে ওঠেন। তিনি এগিয়ে গিয়ে দেখেন, সালাহ সালেম স্ট্রীট অবস্থান নিয়েছে সশস্ত্র পুলিশ ও অস্ত্রধারী লোকজন।
গামাল বলেন, ‘সাঁজোয়া পুলিশি গাড়িতে করে আসছিল অনেক সেনাসদস্য। তারা ধীরে ধীরে ব্যারিকেডের একশ’ গজের মধ্যে এসে অবস্থান নেয় এবং মিনিট দুয়েক পরেই টিয়ারগ্যাস ছুড়তে থাকে।’
তবে সেই সময় গুলি করা হয় কিনা তা তার কাছে স্পষ্ট নয়। তিনি সেই দৃশ্য ভিডিও করেন। এ সময় ব্যারিকেডের পশ্চিম দিক থেকে টিয়ারগ্যাস ছোঁড়া হয়। এরপর পূর্ব দিক থেকেও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করা হতে থাকে।
বিষয়: বিবিধ
১১৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন