নাটক দেখলাম: চূড়ান্ত রায়ের জন্যই অপেক্ষা করবো: মিসেস আযম যা বললেন
লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ১৮ জুলাই, ২০১৩, ১২:৫৪:১৫ রাত
নাটক দেখলাম, চূড়ান্ত রায়ের জন্যই অপেক্ষা করবো: মিসেস আযম বললেন। ১৫ জুলাই,২০১৩
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া ৯০ বছর সাজার রায়কে নাটক মন্তব্য করে তার স্ত্রী মিসেস আফিফা আযম বলেছেন, আল্লাহর চূড়ান্ত রায়ের জন্যই অপেক্ষা করবো।
সোমবার প্রথম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
মিসেস আযম বলেন, ‘অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে দেয়া রায় সম্পূর্ণ ন্যায়ভ্রষ্ট। আমরা এই রায়ে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ, কিন্তু বিস্মিত নই। কেননা সরকারের বেশ ক’জন মন্ত্রী ও সরকারি জোটের শীর্ষ নেতারা রায় অনেক আগে থেকেই ঘোষণা করে আসছিল।
তিনি বলেন, আজ ট্রাইব্যুনালে উনাদের ঘোষিত রায় এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হলো মাত্র। অধ্যাপক আযম তো গ্রেপ্তারের আগেই বলেছেন- রায় তো হয়েই আছে, এখন বিচারের নাটক হবে। আমরা আজ সে নাটকটাই দেখলাম।
বিবৃতিতে বলা হয়, অধ্যাপক আযমের বিরুদ্ধে এই মামলা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। যারা অধ্যাপক গোলাম আযমকে আদর্শিকভাবে এবং রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলায় ব্যর্থ তারাই স্বাধীনতার চার দশক পর কেবলমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য এই মামলা করেছে।
‘উনার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ কল্পিত, মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট এবং একটি অভিযোগও তদন্ত কর্মকর্তা বা প্রসিকিউটরগণ প্রমাণ করতে পারেননি বিবৃতিতে দাবি করা হয়।
মিসেস আযম দাবি করেন, জেরায় তদন্ত কর্মকর্তা সুস্পষ্টভাবে স্বীকার করেছেন, অধ্যাপক গোলাম আযমের বক্তৃতা বা বিবৃতি পড়ে বা উনার প্ররোচনায় কেউ কোনো অপরাধ করেছে এমন কোনো প্রমাণ বা নজির নেই। মাননীয় বিচারকের রায়েও আজ একথা প্রমাণিত, কোনো অপরাধের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন না।
তিনি সরকারের কোনো মন্ত্রী বা আমলা ছিলেন না। শান্তি কমিটিতেও উনার কোনো পদ ছিল না। সুতরাং, সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি উনার ওপর বর্তানোর দাবি হাস্যকর। এছাড়া, অক্সিলারি ফোর্স নেতৃত্ব দিয়েছে সামরিক বাহিনী এবং সেখানেও উনার কোনো কর্তৃত্ব ছিল মর্মে কোনো প্রমাণ নেই’ যোগ করেন তিনি।
মিসেস আযম বলেন, এসবের কোনো কিছুই প্রমাণ না হওয়া সত্ত্বেও আদালত কর্তৃক এই ধরনের রায় প্রদান দুঃখজনক। আদালতে সাক্ষ্য-প্রমাণ বা আইনজীবীদের যুক্তিতর্কের সঙ্গে এই রায়ের কোনো সামঞ্জস্য নেই। সুবিচার হলে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে সসম্মানে মুক্তি পেতেন।
তিনি বলেন, জাতিসংঘসহ দেশ-বিদেশের আইনজীবী সংস্থা ও মানবাধিকার সংস্থা এবং দেশ-বিদেশের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি এই ট্রাইব্যুনালের বৈধতা, স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে শুরু থেকেই সন্দেহ পোষণ করে এসেছেন।
‘স্কাইপ কেলেঙ্কারি এবং এর ফলশ্রুতিতে ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দ্বারা বিশ্ববাসীর কাছে এই ট্রাইব্যুনালের সকল গ্রহণযোগ্যতা লোপ পেয়েছে। সুখরঞ্জন বালীর গুম হওয়া এবং ভারতের কারাগারে তার অবস্থান সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে, এসবই এক গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ’ বলেন মিসেস আযম।
তিনি বলেন, এই ট্রাইব্যুনাল গঠন, এর কার্যক্রম, এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তিবর্গের পক্ষপাতদুষ্ট অবস্থান, ইত্যাদি কোনো কিছুই আর গ্রহণযোগ্য নয়।
মিসেস আযম অভিযোগ করে বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে এই রায় দিয়েছে। তাই, আমরা এই ট্রাইব্যুনালের সকল কার্যক্রম ও রায় প্রত্যাখ্যান করি।
তিনি বলেন, এই রায় আইনের শাসনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের শামিল বিধায় ন্যায়ের শাসনের পরিপন্থী। বিচারকদের এ ধরনের পক্ষপাতদুষ্ট রায় সংবিধান ও তাদের শপথের বরখেলাপ। আমরা তাদের এই রাজনৈতিক রায় প্রদানের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
মিসেস আযম বলেন, অধ্যাপক গোলাম আযম বা আমরা, তার পরিবারের সদস্যরা তার জীবন নিয়ে আদৌ চিন্তিত নই। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জীবন ও মৃত্যু আদালতের রায় বা সরকারের ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল নয়।
যেই আল্লাহর হাতে জীবন-মৃত্যুর ফায়সালা, সেই আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান কায়েমের প্রচেষ্টার কারণেই আজ অধ্যাপক গোলাম আযম এর ওপর এই অপবাদ ও জুলুম। তাই আমরা আল্লাহর কাছেই ফরিয়াদ জানাই এবং আল্লাহর চূড়ান্ত রায়ের জন্যই অপেক্ষা করবো’ বলেন তিনি।
বিষয়: বিবিধ
১৪৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন