স্পেন তথা বিশ্বে মুসলমানদের পরাজয়ের কারন
লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ২৮ জুন, ২০১৩, ০৬:২৭:৩২ সন্ধ্যা
প্রায় ৭০০ বছর আগের কথা। স্পেন তখন মুসলিমদের করতলে। ক্রুসেড নেতারা মাঝেমধ্যেই গুপ্তচর পাঠাত মুসলিমদের খবর নেওয়ার জন্য তাঁদের উপর আক্রমণের সময় হয়েছে কি না বুঝতে।
এমনি এক সময়ে একবার গুপ্তচর এসে ক্রুসেড নেতাকে বলল-এখনো আক্রমণের সময় হয়নি। নেতা বলল-"কী করে বুঝলে তুমি ?" গুপ্তচর জবাব দিল-"স্পেনে গিয়ে দেখি ফটকের কাছে এক বাচ্চা ছেলে কাঁদছে।
কেন কাঁদছে-জিজ্ঞেস করতে সে জবাব দিল যে,তার ছোড়া অনেকগুলো তীরের মধ্যে নাকি একটা তীর লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে। তাই মনের দুঃখে কাঁদছে। কীসের তীর-জিজ্ঞেস করতে সে জানাল,ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে ছোড়া তীর। সে চায়নি তার একটা তীরও মিস হয়ে যাক।"
বেশ কয়েকবছর পর গুপ্তচর আবার স্পেন ঘুরে এল। এবার সে ফটকের কাছে এক কিশোরকে কাঁদতে দেখল। কী হয়েছে- জিজ্ঞেস করতে কিশোর বলে-"আমার গার্লফ্রেন্ড আরেক ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে। তাই কাঁদছি"।
গুপ্তচর এবার ক্রুসেড নেতার কাছে ফিরে এসে বলল-"মুসলিমদের উপর আক্রমণের সময় হয়েছে।"মুসলিমরা কেন আজ সবচেয়ে নিগৃহিত-এই প্রশ্ন প্রায়ই মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়। প্রশ্নটার জবাব উপরের গল্পের মধ্যে লুকিয়ে আছে।
ফার্স্ট জেনারেশনের সাহাবারা ভাবতেন তাঁদের জন্মই হয়েছে আল্লাহ ও রাসূল (সা) এর জন্য জীবন উৎসর্গ করতে। সে যুগে মায়েরা ভাবতেন তাঁরা সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন আল্লাহর রাস্তায় কুরবানি করার জন্য।
তার পরবর্তী বেশ কয়েক জেনারেশন পর্যন্ত মুসলিমরা এই মানসিকতা লালন করত। যতদিন করত,পৃথিবী ছিল মুসলিমদের করতলে। একজন মুসলিম নারীর সম্মান নষ্ট করার চেষ্টা করায় গোটা কাফির দুর্গ গুড়িয়ে দেওয়ার দৃষ্টান্ত রাখতেন মুসলিম যুবকেরা।
তাঁদের ভয়ে কাঁপত কাফিরদের মসনদধারীরা। আল্লাহ ও রাসূল (সা) কে নিয়ে কটুক্তি করার কথা চিন্তা করারও সাহস পেত না তারা। হ্যাঁ,আজকের যুগেও মুসলিম যুবক আছে। তবে তাদের জীবনের লক্ষ আর ইসলামের জন্য আত্মোৎসর্গ নয়,বরং সুন্দরী গার্লফ্রেন্ড আর উচ্চ বিলাশী সিজিপিএ।
পরীক্ষায় একটা নাম্বার কম পাওয়াতে তাদের যে পরিমাণ হতাশ দেখা যায় তার সিকিভাগও দেখা যায়না ওয়াক্তের পর ওয়াক্ত নামাজ মিস হলে। ধর্ম মানে তাদের কাছে নামাজ-রোজা আর ভিক্ষা দেওয়া।
আজ তাদের রাত কাটে রিয়াল-বার্সার ম্যাচ আর হলিউডি মুভি দেখে, তাদের হিরো দিগ্বিজয়ী বীর বিশ্ব ইতিহাসের সর্ব শ্রেষ্ঠ সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদ নন, বরং হলিউডের শুটিং বাহাদুরেরা।
লা লিগার পয়েন্ট তালিকা আর গার্লফ্রেন্ডকে মশা কামড়েছে কিনা-এই খোঁজ নিতেই তাদের সময় শেষ। বিশ্বজুড়ে নির্যাতিত মুসলিমদের পক্ষে দাঁড়ানোর তাদের সময় কোথায়? বিশ্বের কথা বাদই দিলাম, বার্মায় হাজার হাজার মুমলিম নর নারীকে র্নিবিচারে হত্যা করলো আমরা টু সব্দটিও করতে পারিনি।
পাশের বাড়ির মেয়েটি ধর্ষিত হলে তার পক্ষে দুটো কথা বলবে-এমন যুবক আজকাল কজন পাবেন? ঐ যে বললাম না,এদের সময় নেই ! আজ মুসলিম নারীর সম্মান তাই বড় সস্তা,বড় বেশি সুলভ।
বর্তমান যে উম্মাহর যুগে মুসলিম যুবকেরা রাসূল (সা কে কটাক্ষ করাকে বাকস্বাধীনতার দোহাই দিয়ে জাস্টিফাই করে, মুসলিমদের উপর কাফির রাষ্ট্রের আক্রমণের প্রতিক্রিয়াকে কাঁটাতারের বেড়ার সীমানা আর জাতীয়তাবাদের রূপরেখা দ্বারা পৃথক করে।
নেতানেত্রীরা প্রকাশ্যে ইসলামকে নিয়ে কটুক্তি করলেও যুবকেরা কফিতে চুমুক দিয়ে আয়রন ম্যান থ্রি দেখা নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়,রাসূল (সা) কে ব্যাঙ্গকারীর বিরুদ্ধ প্রতিবাদ কারীদের "জঙ্গি" বলে আখ্যায়িত করে।
মুসলিমদের পাখির মত গুলি করে মারার ঘটনার চেয়ে বার্সেলোনার পরাজয় বেশি দুঃখজনক ঘটনা হয়,সেই যুগে ইসলাম আর মুসলিমেরা সবচেয়ে বেশি নিগৃহিত হবে-এটাই স্বাভাবিক। এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই।
আসুন আমরা ইসলামের সে ঐতিয্যকে পূণরুদ্ধার করি, এবং নিজেদের কে ঈমানের বলে বলিয়ান করে, কুরআন হাদিস বেশী বেশি অধ্যায়ন করি তাহলেই সম্ভব, হারিয়ে যাওয়া সম্পদ পূণরুদ্ধার করা। এ ছাড়া অন্য কোন বিকল্প পথ নেই।
বিষয়: বিবিধ
২৩৭২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন