এই জাতি মীরজাফর মুক্ত কোন দিন ছিলনা! আজঐতিহাসিক পলাশী ট্র্যাজেডির ২৫৬ তম বার্ষিকী

লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ২৩ জুন, ২০১৩, ১২:৫৯:১২ দুপুর

আজ ২৩ জুন। ঐতিহাসিক পলাশী ট্র্যাজেডির ২৫৬তম বার্ষিকী। ১৭৫৭ সালের এই দিনে পলাশীর প্রান্তরে রবার্ট কাইভ, মীরজাফর, রায়দুর্লভ, ইয়ার লতিফচক্র একটি কালো দিবসের জন্ম দেয়।

সেই ঘৃণীত কলঙ্কজনক অধ্যায় সৃষ্টির নেপথ্যে জড়িত ছিল বিশ্বাসঘাতক জগৎশেঠ, মাহতাব চাঁদ, উমিচাঁদ, মহারাজা স্বরূপচাঁদ, মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র, রায়দুর্লভ, মীরজাফর, ঘষেটি আজ ঐতিহাসিক পলাশী দিবস

বেগম, রাজা রাজবল্লভ, নন্দকুমা চক্রের ষড়যন্ত্র।

এই স্বার্থান্বেষী ষড়যন্ত্রীদের প্রথম শিকার হন স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরী, মুক্তিসংগ্রামের প্রথম সিপাহসালার নবাব সিরাজউদ্দৌলা এবং তার বিশ্বস্ত সেনাপতি মীর মদনও প্রধান অমাত্য মোহনলাল কাশ্মিরি।

সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। মুর্শিদাবাদ থেকে ৩০ মাইলদক্ষিণে ভাগীরথী নদীর তীরে পলাশীর আম্রকাননে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যাসহ সমগ্র উপমহাদেশের স্বাধীনতার কবর রচিত হয়েছিল।

২৩জুন পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও লর্ড কাইভের মধ্যে যুদ্ধের নাটক সাজানো হয়। যুদ্ধে নবাব বাহিনীর পক্ষে সৈন্যসংখ্যা ছিল প্রায় ৬৫ হাজার এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষেমাত্র তিন হাজার।

যুদ্ধেরময়দানে নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রধান সেনাপতি মীরজাফর ও তার অনুসারী সৈন্যরা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।ফলে পরাজয় অনিবার্য হয়েদাঁড়ায়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের সেবাদাসদের সাহায্যে এভাবেই বাংলায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।

সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এরপরদীর্ঘ ১৯০ বছর এ দেশ শাসন-শোষণ করে। কোটি কোটি টাকার অর্থসম্পদ ইংল্যান্ডে পাচার করে।বাংলাদেশ থেকে লুণ্ঠিত সম্পদ ও পুঁজির সাহায্যে ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লব ঘটায়। আর এককালের প্রাচ্যের স্বর্গসোনার বাংলা শ্মশান হয়ে বিশ্বের দরিদ্রতম দেশে পরিণত হয়।

পৃথিবীর ইতিহাসে, বিশেষ করে উপমহাদেশের ইতিহাসে পলাশীর যুদ্ধএকটি অন্যতম মোড় পরিবর্তনকারী যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। মূলত পলাশীর যুদ্ধে বিজয়ই অন্য ইউরোপীয়দের হটিয়ে ভারতে ইংরেজ আধিপত্য বিস্তারের পথ তৈরি করে দেয়।

পলাশীর যুদ্ধে জয়ের খবরে লন্ডনে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শেয়ারের দাম নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়, কারণ বিনিয়োগকারীরা বুঝতে পারছিলেন, বাংলার সম্পদে কোম্পানিটি এখন হৃষ্টপুষ্ট হয়ে উঠবে।

বাংলার ঐশ্বর্যে রবার্ট কাইভ এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, তিনি মুর্শিদাবাদকে তার দেশের লন্ডন নগরীর সাথে তুলনা করেছিলেন।

পলাশীর ইতিহাস রক্তাক্ত ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস, বেদনাময় এক শোকস্মৃতির ইতিহাস। এই কলঙ্কজনক ঘটনার মাধ্যমে এক দিকে যেমন মুসলিম সালতানাতের মৃত্যু ঘটে, অন্য দিকেকলকাতাকেন্দ্রিক একটি নতুন উঠতি পুঁজিপতি শ্রেণী ও রাজনৈতিক শক্তিরউত্থান ঘটে।

মুসলমানদের কাছ থেকে রাজনৈতিক ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে ইংরেজ ও তাদের এ দেশীয় দালালগোষ্ঠী দেশবাসীর ওপর একের পর এক জুলুম-নিপীড়ন চালাতে থাকে। ফলে দেশীয় কৃষ্টি-কালচার ও সামাজিক জীবনে ব্যাপক বিপর্যয়নেমে আসে।

বিকাশমান ব্যবসায়-বাণিজ্য ও চাকরি-বাকরির ক্ষেত্রেতারা মারণকামড় দেয়। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এদেশে তৈরি করে দালাল শ্রেণী। দালালদের হাতেরাখতে তারা প্রবর্তন করে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তব্যবস্থা।

এই বন্দোবস্তেরমাধ্যমে জমির মালিকানা দেয়া হয় জমিদারদের হাতে। কৃষকেরা জমির ওপর থেকে মালিকানা হারায়। জমি ক্রয়-বিক্রয়, বন্ধক রাখা সবকিছু থেকেই অধিকার হারায় এ দেশের সাধারণ মানুষ।

অথচ নবাবদের অধীনেকৃষকেরা সামান্য কর দিয়েই খালাসপেতেন। যে যতটুকু জমি চাষ করতেন, সেইজমির মালিকানা ছিল তার। কিন্তু এই চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত শুরুর পর তাদেরজীবন আবদ্ধ হয় জমিদার নামে এক নতুন সামন্ত প্রভুদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার অধীনে।

নতুন এই সামন্ত প্রভুরা কৃষকদের ওপর চালায় শোষণ-নির্যাতন। আগের মতো সামন্ত প্রথা এখন আর নেই। তবেকৃষকসহ সাধারণ মানুষেরজীবন এখনোআবদ্ধ নানা গোলামির জিঞ্জিরে। পলাশী বিপর্যয়ের পর শোষিত-বঞ্চিত শ্রেণী এক দিনের জন্যও তাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম বন্ধ রাখেনি।

শুরু থেকেই প্রতিরোধের সম্মুখীন হয় ব্রিটিশ শক্তি। ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, ফরায়েজি আন্দোলন, তিতুমীরের বাঁশের কেল্লাকেন্দ্রিকআন্দোলন,১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ ইত্যাদি বিদ্রোহের মাধ্যমে এ দেশের মুক্তিকামী মানুষ বারবার তাদের অবস্থান জানান দিয়েছে।

এ জন্যই ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ সাধারণ জনগণকেই একমাত্র প্রতিপক্ষ মনে করত। দীর্ঘ২০০ বছর ধরে তাদের আন্দোলন সংগ্রামের ফলে ব্রিটিশরা শেষ পর্যন্ত এ দেশের মাটি থেকে তাদের লেজ গুটাতে বাধ্য হয়।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ও ভারত নামে দু'টি স্বাধীন রাষ্ট্র জন্মলাভ করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। দীর্ঘ সংগ্রামের পর আমরা পেয়েছিস্বাধীন একটি ভূখণ্ড। কিন্তু থেমে নেই সেই ষড়যন্ত্র।

এখনো ভিন্ন নামে মীরজাফর, ঘষেটি বেগম, জগৎশেঠরা দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা আর ন্যায্য প্রাপ্তিনিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। পলাশীর ইতিহাস তাই আমরা ভুলে যেতে পারি না। পলাশী ফিরে আসে বারবার নতুনরূপে।

প্রাসাদ ষড়যন্ত্র কি এখনো হচ্ছে না? জগৎশেঠের মতো বিশ্বাস ঘাতকেরা কি এখানো তৎপর নয়? মীরজাফরের মতো সেনা প্রধানরা কি এ দেশে বিরল? অন্ধকূপ হত্যার গল্প লেখা মিডিয়া কি সারা দেশে এখনো চষে বেড়াচ্ছে না? তাই পলাশীর চেতনার নির্যাস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতেই হবে।

অন্তত ইয়াদ আলাবি, আহমদ সালাবি ও হামিদ কারজাইদের রোধকল্পে। সময় এখন এসব মীরজাফরদের চিনে রাখার। প্রতিরোধকরার। পলাশীর আম্রকাননে যে সূর্যঅস্ত গেছে, সে সূর্য ফিরেছে আবার।

কিন্তু গুনতে হয়েছে ২০০ বছর। এ রকম কোনো দুর্দিন আর না আসুক আমাদের জীবনে এটাই আজকের প্রত্যাশা। বাংলাদেশ আল্লাহর নেয়ামতে ভরপুর, এখানে শুধূ অভাব রয়েছে নীতি নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষের। যার কারনে সাধারণ জনগণ বন্চিৎ।

আল্লাহর এই নেয়ামত পূর্ণ জমিন এক মাত্র আল্লাহর দেয়া বিধানেই পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে। এবং মানুষ পাবে তার ন্যায্য অধীকার।

বিষয়: বিবিধ

১৫১৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File