মাতা-পিতা পৃথিবীর শ্রেষ্ট সম্পদ
লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ২১ মে, ২০১৩, ১০:০৮:৩০ রাত
আমাদের পিতা-মাতার আমাদের জন্য পৃথিবীর শ্রেষ্টতম সম্পদ, যা আল্লাহ প্রদত্ব নেয়ামত, তাদের খেদমত করা আমাদের ঈমানি দায়িত্ব। তাদের মাধ্যেমেই এই পৃথিবীতে আমাদের আগমন। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে আমরা গড়েউঠেছি। আমাদের কোন আচরন যেন এমন না হয় যা তাদের মনোকষ্টের কারন হয়।
পবিত্র কুরআনের আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন,তথা আমাদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন যে। তোমার পালনকর্তা নির্দেশ দিয়েছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না, এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যববহার করো (সুরা বনী ইসরাইল:২৩)।
ইমাম কুরতুবি (রহ বলেছেন, এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা পিতা-মাতার আদব, সম্মান ও তাদের সাথে সদ্ব্যববহার করাকে নিজের ইবাবদতের সাথে একত্র করে ফরজ করে দিয়েছেন।
পিতা-মাতার আনুগত্য এবং তাদের সাথে সদাচরণকে জিহাদের ওপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
যত ধরনের বান্দার হক আছে এর মধ্যে সর্বাগ্রে পিতা-মাতার হক। এর চেয়ে সম্মানিত ও বাধ্যতামূলক হক দুনিয়াতে আর কিছুই নেই। কেননা আল্লাহ তায়ালা পিতা-মাতাকে মানুষ সৃষ্টির মাধ্যম বানিয়েছেন।
এ জন্য তাদের হকও সবচেয়ে বেশী উলামায়ে কেরাম লিখেছেন, পিতা-মাতার নিজ সন্তানাদির সাথে যে মহব্বত রয়েছে, এতে কোনো উদ্দেশ্য থাকে না। এ ভালোবাসায় নিজের কোনো উপকারও উদ্দেশ্য হিসেবে শামিল হয় না।
এ ছাড়া দুনিয়ায় কোনো ভালোবাসাই উদ্দেশ্যমুক্ত নয়। যেমন স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসায়ও উদ্দেশ্য থাকে। ভাই ভাইকে ভালোবাসে, বন্ধু বন্ধুকে ভালোবাসে, এসবের মধ্যেও উদ্দেশ্য থাকে।
কিন্তু এক মাত্র ভাল বাসা হচ্ছে পিতা-মাতার ভাল বাসা যা সব উদ্দেশ্য থেকে পবিত্র। এটি পিতা-মাতারই মহব্বত। অর্থাৎ পিতা-মাতা তার সন্তানকে যে মহব্বত করে, তাতে তার সত্তার কোনো উদ্দেশ্য সম্পৃক্ত হয় না।
তাদের কামনা হয় যে, জীবনের বিনিময়ে হলেও সন্তান যেন উপকৃত হয়। এ জন্য আল্লাহ তায়ালা হকগুলোর মধ্যে তাদের অবস্থানকে সর্বোচ্চ রেখেছেন। এমনকি আল্লাহর পথে জিহাদের ওপরও তাকে অগ্রগণ্য করেছেন।
মনে রাখতে হবে, যতদিন পিতা-মাতা জীবিত থাকবেন, এটা এত বড় নেয়ামত যে, ভূপৃষ্ঠে মাটির উপরি ভাগে এর চেয়ে বড় কোনো নেয়ামত আর নেই। যেমন রাসূলে করিম(সা বলেছেন, যদি কেউ পিতা-মাতাকে ভক্তি-শ্রদ্ধা ও মহব্বতের নজরে দেখে, তাহলে এক হজ ও উমরার সমপরিমাণ সওয়াব তার আমলনামায় লিখা হয়।
অন্য এক হাদিসে নবীজী(সা ইরশাদ করেছেন, বঞ্চিত হোক ঐ ব্যক্তি যে তার পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাবস্থায় পেয়ে থাকে, তারপরও তাদের সেবা যত্ন করে নিজের গুনাহ ক্ষমা করাতে পারল না। তার চেয়ে হতভাগ্য আর কেউ নেই।
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খিদমতে উপস্থিত হয়ে প্রশ্ন করলেন যে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! গোটা দুনিয়ার মানুষের মধ্যে সদাচরণের অধিকারী কে? কার সাথে আমি সবচেয়ে বেশি ভালো ব্যবহার করব?
তিনি বললেন, তোমার মাতা। অর্থাৎ তোমাদের সদাচরণের উপযুক্ত তোমাদের মাতা। সে আবার প্রশ্ন করল যে, তারপর কে? তোমার মাতা। ওই ব্যক্তি আবার প্রশ্ন করল যে, তারপর কে? তোমার মাতা।
তারপর কে? তখন চতুর্থবার বললেন তোমার পিতা। আল্লাহর রাসূল (সা তিনবার মায়ের নাম নিলেন, শেষে চতুর্থবার বললেন তোমার পিতা। এ জন্য উলামায়ে কেরাম বলেছেন, যদি কোনো উপহার উপঢৌকন দিতে হয় তাহলে মাকে বেশি দেয়া উচিত।
তারা আরো বলেছেন যে, তবে দু'টি জিনিস ভিন্ন ভিন্ন একটা হলো সম্মান। এতে পিতার হক মায়ের চেয়েও বেশি। আর দ্বিতীয়টি হলো সদাচরণ এবং সেবা। এতে মায়ের হক পিতার চেয়েও অগ্রগণ্য।
সম্মানের উদ্দেশ্য হলো অন্তরে তার প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা বেশি থাকবে। অবশ্য সম্মানের শর্তাবলি ও আদবে পিতার হক অগ্রগণ্য। কিন্তু যেখানেই সেবার সম্পর্ক আছে সেখানে মায়ের হক বা অধিকার অগ্রগণ্য। আর পিতার তুলনায় তিন-চতুর্থাংশ বেশি।
তা ছাড়া হাদিস শরিফের দ্বারা প্রমাণিত যে, পিতা-মাতার খিদমতের মাধ্যমে জান্নাত প্রাপ্তি সহজ হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে পিতা-মাতার খিদমত করার তাওফিক দান করুন।
এবং পিতা-মাতার জন্য দোয়া করা যা আল্লাহ শিকিয়ে দিয়েছেন।হে আল্লাহ আমার মাতা-পিতার উপর রহম করুন যেভাবে তারা ছোট কালে আমাদের প্রতি রহম করেছিল।
বিষয়: বিবিধ
১৭৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন