শহীদ হাফেজ মোয়াজ্জেমুল হক নান্নুর জানাজায়ও বাঁধা
লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ১৩ মে, ২০১৩, ০১:০০:০১ দুপুর
যশোর থেকে: গত ৫ই মে শাপলা অভিযানে গুলিবিদ্ধ যশোরের হাফেজ মোয়াজ্জেমুল হক নান্নু হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলেন। গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর লালমাটিয়ার আল মানার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
তার পরিবার জানায়, হাফেজ মোয়াজ্জেমুল হক নান্নু যশোর শহরের খড়কী এলাকার বাসিন্দা। আজ সকালে যশোরে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অল্প কিছু সংখ্যক লোক উপস্থিত ছিল।
নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, নান্নুর নামাজে জানাজা সকাল সাড়ে ৭টায় স্থানীয় ঈদগাহ ময়দানে হওয়ার কথা ছিল। সে মোতাবেক গত রাতে এশার নামাজ শেষে বিভিন্ন মসজিদে ঘোষণাও দেয়া হয়।
ঈদগাহ ময়দানে জানাজার জন্য জেলা হেফাজতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও সব রকমের প্রস্তুতি নেয়া হয়। কিন্তু ভোরে নান্নুর পরিবারের সদস্য ও হেফাজতের কর্মীরা ঈদগাহ ময়দানে মাইক টাঙাতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়।
তারা জানায়, ঈদগাহ ময়দানে নান্নুর জানাজা করা যাবে না। উপর মহলের নিষেধ আছে। এক পর্যায়ে হেফাজত কর্মী ও নান্নুর পরিবারের সদস্যরা জোর করে মাইক টাঙাতে গেলে পুলিশ মাইক কেড়ে নেয়।
পরে পুলিশের মধ্যস্থতায় নান্নুর পরিবার যশোর সরকারি এমএম কলেজ মাঠে জানাজার নামাজের আয়োজন করে। কিন্তু সেখানেও পুলিশ কোন মাইক ব্যবহার করতে দেয়নি বলে নিহতের স্বজনরা অভিযোগ করেন।
তারা জানান, পুলিশ শুধু মাইক বন্ধ করেই ক্ষান্ত হয়নি, জানাজায় আগত মানুষকেও কলেজ মাঠে প্রবেশে বাধা দিয়েছে। সাদা পোশাকের পুলিশ এম এম কলেজের উভয় প্রবেশ দ্বারে অবস্থান নিয়ে জানাজায় অংশ নিতে আসা লোকদের প্রবেশে বাধা দিয়ে ফেরত পাঠিয়েছে বলেও অনেকে অভিযোগ করেছেন।
এব্যাপারে জানাযায় যে, লাশ নিয়ে হৈচৈ হতে পারে, হেফাজত কর্মীরা লাশ নিয়ে রাজনীতি করতে পারে, শহরে মিছিল করতে পারে, মাইকে গরম গরম বক্তৃতা দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে পারে বলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মাইক ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন।
এছাড়া, জানাজায় তো সবার যাওয়ার দরকার নেই। কিছু লোক গেলেই তো হয়। এই কারণে সবাইকে অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। কারণ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যত কম লোক যাওয়া যায় ততই ভাল।
বেশি লোক এক জায়গায় জড়ো হলে কোন অঘটন ঘটতে পারে বলে পুলিশ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এই বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। এদিকে নামাজে জানাজা শেষে পুলিশ প্রহরায় হাফেজ মোয়াজ্জেমুল হক নান্নুর লাশ খড়কী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
আর এই সমস্ত কাজই শেষ হয়েছে সকাল ৭টার আগেই।
এদিকে নিহতের পরিবারের অভিযোগ তাদের অনেক আত্মীয়স্বজন শেষ বারের মতো নান্নুর মৃত মুখখানি দেখার জন্য অনুরোধ করায় তারা লাশের দাফন একটু দেরিতে করার জন্য পুলিশের প্রতি অনুরোধ করেছিলেন।
কিন্তু পুলিশ অনেকটা তড়িঘড়ি করে লাশ দাফন করায় অনেকে শেষ বারের মতো নান্নুর মুখটি দেখতে পারেননি। এদিকে হেফাজতের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন, নান্নুর নামাজে জানাজা নিয়ে পুলিশ যা করেছে তা ধর্মের প্রতি আঘাত। পুলিশ জানাজায় মাইক ব্যবহার করতে দেয়নি।
দলীয় নেতাকর্মীদের জানাজায় অংশ নিতে বাধা দিয়েছে। তবে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমদাদুল হক এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, নিহত নান্নুর পরিবারের ইচ্ছামতো সবকিছু হয়েছে।
তারা চায়নি বলে ঈদগাহ ময়দানে নান্নুর নামাজে জানাজা হয়নি। মাইক ব্যবহার করা হয়নি। এব্যাপারে পুলিশকে দোষারোপ করে কোন লাভ নেই। তবে হ্যাঁ, এটা সত্যি, হেফাজত এই লাশ নিয়ে যে রাজনীতি করতে চেয়েছিল পুলিশ সেটা করতে দেয়নি। কারণ বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর।
উল্লেখ্য, গত ৪ঠা মে হাফেজ নান্নু হেফাজতে ইসলামের ডাকা ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নিতে ঢাকা যান। ৫ই মে রাতে তিনি অন্যদের মতো শাপলা চত্বরে অবস্থান করছিলেন। রাত আড়াইটার দিকে "অপারেশন সিকিউরড শাপলা ওয়াচ"-এ তিনি গুলিবিদ্ধ হন।
সেখানে মৃতপ্রায় পড়ে থাকার পর সকালে স্থানীয়রা তাকে প্রথমে ইসলামিয়া হাসপাতালে ভর্তি করেন। চিকিৎসকরা জানান, হাফেজ নান্নুর পিঠে ও বুকে দু’টি গুলি লাগে। ইসলামিয়া হাসপাতালে তার অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় পরদিন তাকে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর লালমাটিয়ার আল মানার হাসপাতালে।
সেখানকার চিকিৎসকরা তার বুকে ও পিঠে বিদ্ধ হওয়া গুলি দু’টি অপারেশন করে বের করতে ব্যর্থ হন। শেষে আজ বিকালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আল্লাহ তাকে শহীদের মর্যাদা দিয়ে জান্নাতে স্থান দিন। আমিন
বিষয়: বিবিধ
১৬৪৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন