১৯৭১ এ যুদ্ধ অপরাধিদের বিচার হতেই হবে (দ্বিতীয় পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ১৪ এপ্রিল, ২০১৩, ০২:৩০:৫৪ দুপুর

(১) বিচারপ্রতি আব্দুস সাত্তার ৭০ এর নির্বাচনে পাকিস্তানের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন । নতুন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশের আনুগত্য না করে পাকিস্তানের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ছিলেন

এবং ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে আসলে বাংলাদেশ জীবন বীমা কর্পোরেশনের পরিচালক মন্ডলীর চেয়ারম্যান (১৯৭৩-৭৪) এবং সংবাদ পত্র বেতন বোর্ডের চেয়ারম্যান (১৯৭৪-৭৫)হলেন

তখন আওয়ামিলীগ এবং শেখ মুজিবুর রহমান কিভাবে মুক্তিযুদ্ধের সময়একজন পাকিস্তানপন্থীকে এসব পদে নিয়োগ দিলেন ? বিচারপ্রতি আব্দুস সাত্তার ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশের উপরাষ্ট্রপতি এবং ১৯৮১ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হলেন , তখন মুনতাসীর , শাহরীয়াররা কোন প্রতিবাদ বা হরতাল করেছিলেন ? (তথ্যসূত্রঃ বাংলা পিডিয়া ) ।

(২) শাহ আজিজুর রহমান জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছিলেন । তিনি স্বাধীনতার মাত্র ৮ বছর পর ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রি হয়েছিলেন । শুধু তাই নয় পাকিস্তান হতে আসার পর বাংলাদেশে যখন তিনি জেলে বন্দী ছিলেন ,

সে সময় তার পরিবারকে শেখ মুজিবুর রহমান ৩ হাজার টাকা মাসিক ভাতা দিতেন এবং পরে জেল হতে মুক্ত করে দেন । (তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া, প্রথম আলো ২৬ শে মার্চ , ২০০৮)

। সে সময়ের প্রজন্ম,যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেছিল, তারা কেন এসব বিষয় নিয়ে সারা দেশে বিক্ষোভ -প্রতিবাদ করেন নাই ? শাহ আজিজুর রহমান প্রধানমন্ত্রি হওয়ার কারণে সে সময়ের আওয়মিলীগের ৩৯ জন সদস্য কেন সংসদ বর্জন করলেন না ?

(৩) পাকিস্তান রাষ্ট্রের পক্ষে অবস্থানকারী আব্দুস সবুর খান গোলাম আযমের চেয়েও বড় নেতা ছিলেন । ৭১ এর সামরিক সরকারের উপর তার প্রভাব খুব বেশি ছিল । কিন্তু তিনিও স্বাধীনতার মাত্র ৮ বছর পর ১৯৭৯ সালে সংসদ নির্বাচনে জিয়াউর রহমানের বিরোধী দল মুসলীমগীগ এর সদস্য হিসেবে একাই খুলনার ৩টি আসন হতে বিজয়ী হয়েছিলেন । (তথ্য সূত্রঃ বাংলাপিডিয়া) ।

পাকিস্তান রাষ্ট্রের পক্ষে অবস্থানকারী শান্তি কমিটির লোকেরা যদি এতই খারাপ হত , তবে মুক্তিযুদ্ধ প্রত্যক্ষকারী ১৯৭৯ সালের জনগণ সবুর খানকে কিভাবে ৩টি আসন হতে বিজয়ী করলেন ?

(৪) স্বাধীনতার মাত্র ৮ বছর পর ১৯৭৯ সালে সংসদ নির্বাচনে আওয়ামিলীগ পেল ৩৯টি আসন , নাস্তিকদের দল কম্যুনিষ্ট পার্টি কোন আসন পায়নি , অন্যদিকে ৭১ এ পাকিস্তান রাষ্ট্রের পক্ষে অবস্থানকারী মুসলিম ডেমোক্রেটিক দল ২০ টি আসন পেল কিভাবে ? তাহলে কি মুক্তিযুদ্ধ প্রত্যক্ষকারী ১৯৭৯ সালের জনগণ এদেরকে ৭১ এর ঘাতক মনে করেনি ?

(৫) মাওলানা ভাসানী, অলি আহাদ এর মত লোকেরা ৭২ হতে ৭৫ সাল পর্যন্ত ৭১ এ পাকিস্তান রাষ্ট্রের পক্ষে অবস্থানকারী লোকদের বিচারের তীব্র বিরোধীতা করেছিলেন । তারা দালাল আইন বাতিলের দাবী তুলেছিলেন ।

যদি ইসলামপন্থিরা আজকের চিন্তাধারা অনুযায়ী ঘাতক হতেন , তাহলে আমাদেরকে এটা কি বিশ্বাস করতে হবে মাওলানা ভাসানী , অলি আহাদ ঘাতকদের পক্ষে ছিলেন ? আসলে তারা ভাল করেই জানতেন , ইসলামপন্থিরা ‘পাকিস্তান’ রাষ্ট্রিয় কাঠামোয় বিশ্বাসী হলেও কোন ধরনের হত্যার সাথে জড়িত ছিলেন না ।

অলি আহাদ তাঁর “জাতীয় রাজনীতি” বইয়ে স্বীকার করেছেন, শান্তি কমিটির সদস্যরা অনেক লোককে সেনাবাহিনীর হাত হতে বাঁচিয়েছে । এখানে তরুণ প্রজন্মের খটকা লাগে , তাহলে এত হত্যাকান্ড , যা শুনে এসেছি , তা করল কে ? এজন্য নেতাজী শুভাষ চন্দ্র বসুর নাতীন শর্মিলা বসুর বই “ডেড রেকনিং” পড়ার অনুরোধ করছি ।

(৬) ৭২-৭৫ সালে বিচার করার পরও আবারও যদি ৪০ বছর পর বিচার করতে হয় , তবে কেন ১৪ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবি হত্যাকান্ডের বিচার দিয়ে এ বিচার শুরু হল না কেন ? ১৪ ডিসেম্বর এর বুদ্ধিজীবিদের কাদের সিদ্দিকী (২৭/৯/২০১১ ইং তারিখে ‘দৈনিক আমার দেশ’)

এবং শেখ মুজিবুর রহমান (‘মুক্তিযুদ্ধঃ আগে ও পরে ’ পৃঃ ১৬৩ , পান্না কায়সার) উভয়ই দালাল বলেছেন । তাহলে কি এদের বিচার এজন্য করা হয়নি যে, বিচার করলে প্রকৃত হত্যাকারী পাকিস্তানী আর্মি না ভারতের আর্মি না অন্য কেউ , তা বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা থাকে ?

(৭) মানবেন্দ্র লারমা , সন্তু লারমা ১৯৭৫ সাল হতে বাংলাদেশ রাষ্ট্র ভেঙ্গে পাবর্ত্য চট্টগ্রাম স্বাধীন করার জন্য অসংখ্য বাঙ্গালী নারী-পুরুষ-শিশুদের হত্যা করল । এরা পাবর্ত্য চট্টগ্রাম স্বাধীন করতে ব্যর্থ হয়ে তথাকথিত শান্তি চুক্তির মাধ্যমে দেশে ফিরে আসল ।

কিন্তু তাদের মাধ্যমে সংঘটিত হত্যাকান্ডের কোন বিচার হল না । অন্যদিকে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত না হয়ে পুরাতন রাষ্ট্রিয় কাঠামোয় থাকার অপরাধে ইসলামপন্থিদের ৪০ বছর পর মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে ।

সময়ের ব্যবধানে মিডিয়া শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নাস্তিক ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা যুদ্ধাপরাধীর বিচারের নামে নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করছে । ২০১৩ সালে কোন সচেতন ব্যক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধী নয় ।

এমনকি যারা ৭১ এ বিরোধীতা করেছে তারাও , তবে নাস্তিক ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা কথা ভিন্ন । কারণ এরা এখনও ৭১ নিয়ে কাঁদে , কিন্তু সীমান্তে ফেলানীর লাশ দেখে এরা কাঁদে না

বিষয়: বিবিধ

১৩৭৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File