দ্বীন প্রতিষ্ঠার সকল প্রচেষ্টাই কি জিহাদ? - ১

লিখেছেন লিখেছেন ঈগল ১৪ এপ্রিল, ২০১৪, ১০:৩৮:৪০ সকাল



কিছু মুসলিম বিশেষত, ডেমোক্র্যাট, সুফিবাদ এবং সেকুলার মুসলিম এরা জিহাদ শব্দটির অপব্যাখ্যা করে সারাধণ মুসলিম জনতাকে বোকা বানায়। কিন্তু আল হামদুল্লিল্লাহ, ধোকাবাজিদের ধোকাবাজি মূর্খদের নিকটই সমাদৃত হয়, জ্ঞানীরা তার প্রতি-উত্তর দিতে সমর্থ।

মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেবের একটি লিখা দিলাম। আশা করছি, এটিই হবে জ্ঞানীদের জন্য যথেষ্ট কিন্তু যদি কেউ সত্যিই এই লিখাটির সাথে দ্বিমত করতে চান অনুরোধ করবো, কমেন্ট করে লিখাটির অসঙ্গতি তুলে ধরতে।

====================

দ্বীন প্রতিষ্ঠার সকল প্রচেষ্টাই কি জিহাদ? জিহাদে আকবার কিসের নাম?

মাওলানা আবদুল মালেক(দাঃ বাঃ)

কোন কোন বন্ধুকে বলতে শোনা যায় যে, ই’লায়ে কালেমাতুল্লাহ, দ্বীন প্রতিষ্টা বা দ্বীনের প্রচার প্রসারের নিমিত্ত যে কোন কর্ম-প্রচেষ্টাই জিহাদের অন্তর্ভুক্ত। বলা বাহুল্য “জিহাদ” আভিধানিক অর্থে শরীয়ত-সম্মত সকল দ্বীনি প্রচেষ্টাকে বুঝায় এবং শরয়ী নুসূসসমূহের (কুর-আন হাদিসের ভাষা) কোথাও কোথাও এই শব্দটি জিহাদের ছাড়াও অন্যান্য দ্বীনি মেহনতের ব্যাপারেও ব্যবহৃত হয়েছে কিন্তু জিহাদ যা শরীয়তের একটি পরিভাষা এবং যার অপর নাম “ক্বিতাল ফি সাবীলীল্লাহ” তা কখনো এই সাধারণ কর্ম প্রচেষ্টার নাম নয় বরং এই অর্থে “জিহাদ” হল “আল্লাহর কালেমা বুলন্দ করার জন্য, ইসলামের হিফাজত ও মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য, কুফরের শক্তি চুরমার করার জন্য এবং এর প্রভাব প্রতিপত্তিকে বিলুপ্ত করার জন্য কাফের মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করা।”

ফিকহের কিতাবসমূহে এই জিহাদের বিধি-বিধানই উল্লেখিত হয়েছে। সিরাত গ্রন্থসমূহে এই জিহাদেরই নববী ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়েছে, কুর-আন হাদীসে জিহাদের ব্যপারে যে বড় বড় ফযীলতের কথা বলা হয়েছে তা এই জিহাদের ব্যাপারেই বলা হয়েছে এবং এই জিহাদে শাহাদাতের মর্যাদায় বিভূষিত ব্যক্তিই হলেন প্রকৃত “শহীদ”।

শরয়ী নুসূস এবং শরয়ী পরিভাষাসমূহের উপর নেহায়েত জুলুম করা হবে যদি আভিধানিক অর্থের অন্যায় সুযগ নিয়ে পারিভাষিক জিহাদের আহকাম ও ফাযায়েল দ্বীনের অন্যান্য মেহনত ও কর্ম প্রচেষ্টার ব্যাপারে আরপ করা হয়। এটা এক ধরণের অর্থগত বিকৃতি সাধন, যা থেকে বেঁচে থাকা ফরজ। তা’লীম, তাযকিয়া, দাওয়াত ও তাবলীগ, ওয়ায-নসিহত বা দ্বীন প্রতিষ্টার জন্য রাজনৈতিকভাবে কোন কর্ম প্রচেষ্টা (যদি শরয়ী নীতিমালা ও ইসলামী নির্দেশনা মোতাবেক হয় তবে তা আমর বিল মা’রুফ ও নাহী আনিল মুনকারের একটি নতুন পদ্ধতি) এইসবই স্ব স্ব স্থানে কাম্য বরং এসব প্রচেষ্টার প্রত্যেকটা খিদমতে দ্বীনের এক একটি প্রচেষ্টা।

এসবের ভিন্ন ফাযায়েল , ভিন্ন আহকাম এবং ভিন্ন মাসাইল রয়েছে এবং কোনটিকেই খাটো করে দেখার অবকাশ নেই কিন্তু এসবের কোনটাই এমন নয় যাকে পারিভাষিক জিহাদের অন্তর্ভুক্ত করা যায় এবং যার ব্যাপারে জিহাদের ফাযায়েল ও আহকাম আরোপ করা যায়। এই বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করা ও মনে রাখা নেহায়েত জরুরী, কেননা আজকাল জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে ইসলামের বহু পরিভাষার মধ্যে পূর্ন বা আংশিক তাহরীফের (বিকৃতি সাধন) প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

কেউ তাবলীগের কাজকে “জিহাদ” বলে দিচ্ছেন, কেউ তাযকিয়া বা আত্মশুদ্ধির কাজকে, আবার কেউ রাজনৈতিক কর্মপ্রচেষ্টা বরং ইলেকশনে অংশগ্রহন করাকেও জিহাদ বলে দিচ্ছেন। কারো কারো কথা থেকেতো এও বোঝা যায় যে, পাশ্চাত্য রাজনীতির অন্ধ অনুসরণও জিহাদের শামিল। আল্লাহর পানাহ!!!

জিহাদে আকবার কিসের নাম?

উপরোক্ত আলোচনা থেকে নিশ্চয়ই ঐসব লোকের ভ্রান্তি স্পষ্ট হয়ে গেছে যারা “জিহাদ মা’আল কুফফার” ও ক্বিতাল ফি সাবীলিল্লাহ’র গুরুত্বকে খাটো করার জন্য জিহাদে আকবার (বড় জিহাদ) ও জিহাদে আসগরের (ছোট জিহাদ) দর্শন ব্যবহার করেন। তাদের বক্তব্য হল, নফসের (প্রবৃত্তি) বিরুদ্ধে জিহাদই বড় জিহাদ এবং ক্বিতাল ফি সাবীলিল্লাহ হল ছোট জিহাদ!

এই ভুল ধারণার ভ্রান্তি প্রমাণের জন্য আমি নিজের পক্ষ থেকে কিছু বলার পরিবর্তে হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলি থানবী (রহঃ)- এর একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা উদ্ধৃত করে দিচ্ছি। হযরত বলেন-

“আজকাল সাধারণভাবে মানুষের ধারণা এই যে, কাফেরদের সাথে লড়াই করা জিহাদে আসগর (ছোট জিহাদ) এবং নফসের মুজাহাদা করা (কুপ্রবৃত্তির দমন ও আত্মশুদ্ধি) জিহাদে আকবার (বড় জিহাদ)। যেন তারা নিভৃতে নফসের মুজাহাদায় নিমগ্ন হওয়া থেকে কাফেরদের সাথে লড়াই করাকে সকল ক্ষেত্রেই নিন্মমানের মনে করে।

এই ধারণা ঠিক নয় বরং বাস্তব কথা হল, কাফেরদের সাথে লড়াই করা ইখলাস শূণ্য হলে বাস্তবিকপক্ষেই তা নফসের মুজাহাদা থেকে নিন্মস্তরের কাজ। এ ধরনের লড়াইকে জিহাদে আসগর এবং এর বিপরীতে নফসের মুজাহাদাকে জিহাদে আকবার বলা হয়েছে।

কিন্তু কাফেরদের সাথে লড়াই যদি ইখলাসপূর্ণ হয় তবে এই লড়াইকে জিহাদে আসগর বলা গাইরে মুহাক্বকিক (অগভীর জ্ঞানের অধিকারী) সূফীদের বাড়াবাড়ি বরং লড়াই অবশ্যই জিহাদে আকবার এবং তা নিভৃতে নফসের মুজাহাদায় নিমগ্ন হওয়া থেকে উত্তম। কেননা যে লড়াই ইখলাসপূর্ণ হবে তাতে নফসের মুজাহাদাও বিদ্যমান থাকবে। সুতরাং এতে উভয় জিহাদের ফযীলতই একত্রিত হচ্ছে।

['কিতাবুল জিহাদ' নামক অনূদিত কিতাবের ভূমিকা থেকে সংগৃহিত!!]

মাওলানা আবদুল মালেক (হাফিযাহুল্লাহ

চলবে----

বিষয়: বিবিধ

১৭০০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

207517
১৪ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১১:০১
খেলাঘর বাধঁতে এসেছি লিখেছেন : চীন জাপান ভারত ইউরোপ আমেরিকার অমুসলিম, নাস্তিক, পৌত্তলিক'দের কাছে ইসলামের জিজিরা করের টাকা পৌছে দেয়ার ফরমান জারি করে দিন। ৭ দিনের ভিতর যদি কড়জোড়ে জিজিরার টাকা না পাঠিয়ে দেয় তা হলে সবার বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে দিন, সবার কল্লা ফেলে দিন। ভয়ের কি? আল্লার আবাবিল পাখি ব্রিগেড আছেনা?
207540
১৪ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১১:৪৪
ভিশু লিখেছেন : ভালো শেয়ার!
Good Luck Happy Rose

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File