সত্যজিৎ ও বাংলাদেশঃ 'হীরক রাজার দেশে'
লিখেছেন লিখেছেন সাজিদ করিম ২৫ মার্চ, ২০১৩, ০৮:৩১:১৬ সকাল
চলচ্চিত্র জগতে যে কয়েকটি মাস্টার ক্লাস অ্যালিগোরি (রূপক) মুভি রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম অস্কারজয়ী পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের কালজয়ী সৃষ্টি ‘হীরক রাজার দেশে’। ‘যতবার দেখি ততবার ভালো লাগে’ ক্যাটাগরিতেও একে রাখা যায়।এর ছন্দোবদ্ধ চিত্রনাট্য এক কথায় অসাধারণ। ১৯৮০ সালে সিনেমাটি মুক্তি পেলেও এর যে ইউনিভার্সাল অ্যাপীল, তা এখনও সমানভাবে বিদ্যমান। আমার লেখার বিষয় চলচ্চিত্র সমালোচনা নয়। মূল কথা হল আজ বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ‘হীরক রাজার দেশে’ খুব বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে।
গল্পের স্থান হীরক রাজ্য। যেখানে অন্যায়ভাবে ক্ষমতা দখল করে আছে এক অত্যাচারী রাজা। তার কৃষকেরা ভাত পায় না। হীরার খনির শ্রমিকেরা সারা দিন-মান পেয়াদার চাবুকের ভয়ে খেটে মরে। আর চাটুকার সভাসদবেষ্টিত রাজা দরবারে আনন্দ করেন। মন্ত্রীদের চুপ করানো হয় হীরার হার উপহারের মাধ্যমে। প্রতিনিয়ত রাজকবি (মিডিয়া)বলে যান,
“ধন্য শ্রমিকের দান
হীরকের রাজা ভগবান”
বিরোধী মতকে আশ্রয় নিতে হয় ঘর ছেড়ে দূর পাহাড়ের গোপন গুহায়। শ্রমিক যখন দরবারে অভিযোগ করে তার না খেতে পাওয়ার কথা, তখন রাজার নির্দেশে তার মিডিয়া (রাজকবি) তাঁকে শুনিয়ে দেয়,
“অনাহারে নাহি খেদ
বেশি খেলে বাড়ে মেদ”
এরপর রাজাকে গান শোনাতে আসে এক গায়েন(স্বাধীনচেতা গণমাধ্যম)একতারা নিয়ে গাইতে শুরু করে,
“কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়
ও ভাইরে ও ভাই
আমি যে দিকেতে চাই
দেখে অবাক বনে যাই”
রাজা ও তার সভাসদরা তার মিষ্ট কন্ঠে গান উপভোগ করতে থাকেন। কিন্তু অন্তরায় আসে চমক,
“দেখ ভালো জনে রইল ভাঙা ঘরে
মন্দ যে সে সিংহাসনে চড়ে
সোনার ফসল ফলায় যে তার দুইবেলা জোটেনা আহার
হীরার খনির মজুর হয়ে কানা কড়ি নাই ওরে ভাইরে
কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়……..”
আর সহ্য করতে পারেন না রাজা। নির্দেশ দেন, “গান বন্ধ, ওর হাত বেধে ফেলো, মুখ বেধে ফেলো আর ধরে নিয়ে যাও যন্তর-মন্তর ঘরে(মগজ ধোলাই করার জায়গা)।
চাটুকার রাজার পাশ থেকে তাল মেলায়, ‘ঠিক, ঠিক’ ।
আমার দেশ, চ্যানেল ওয়ান বা কিছু ব্লগের ক্ষেত্রে কি হয়েছে তা সবারই জানা। তবে গল্পের শেষে কি হয় তা জানার প্রয়োজন বোধহয় সবচেয়ে বেশি। রাজাকেও একসময় ঢুকতে হয় যন্তর-মন্তর ঘরে। সে নিজেই দড়ি ধরে সবার সাথে তার মূর্তি ভাঙ্গায় অংশ নেয়।
হীরক রাজ্যকে উদ্ধার করতে মূল ভুমিকা পালন করেন দুই অতিথি। বাঘকে পরোয়া না করে হীরক রাজ্যকে রাজার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় গুপী গাইন-বাঘা বাইন। তাদের পেছনে থেকে কাজ করেন রাজার প্রধান বিরোধীমত, রাজা কর্তৃক ঘোষিত শত্রু- স্কুল শিক্ষক। বাংলাদেশের আকাশে বাতাসেও কিসের যেন একটা গন্ধ পাওয়া যায়।
যাই হোক, সব রূপকেরই অর্থ করতে নেই।
বিষয়: বিবিধ
৩১৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন